আজ দাদা কে নিয়ে কিছু কথা হয়ে যাক! দাদাকে নিয়ে লেখা এই গল্প টিতে, ভাই-বোনের মধুর সম্পর্কটি দেখানোর চেষ্টা করেছেন লেখিকা।।

দাদা কে নিয়ে কিছু কথাঃ- “দাদা”

এই “দাদা” শব্দটা উচ্চারণগত দিক দিয়ে ঠিক যতটা ছোট ততটা কিন্তু অর্থগত দিক দিয়ে নয়। এঞ্জেল বলে আদৌ পৃথিবীতে কিছু আছে কিনা জানানেই তবে প্রতিটা বোনের জীবনে তার দাদাই কিন্তু সত্যিকারের এঞ্জেল। কেন বলছি এত্তু খানি ব্যাখ্যা করে বলি, কি বলেন?

রিমি কোনোদিনও ভাবেনি ওকেও কোনোদিন একা পথ চলতে হবে, একাই নিজের জীবন টা কে নতুন করে শুরু করতে হবে।

সেই কোন নার্সারি স্কুল থেকে দাদার আঙ্গুল ধরে গুটি গুটি পায়ে যেভাবে ওর বেড়ে ওঠা ঠিক সেভাবেই দাদার নেওটা ভক্ততে পরিণত হওয়া। বাড়ির সামনের রোড ক্রস করে ওপারের দোকান যাওয়াই হোক বা খেলার মাঠে ছুটতে ছুটতে পড়ে গিয়ে হাজার টা নালিশ করাই হোক, সকালের শুরু থেকে রাত্রের শেষ অব্দি সবের মাঝেই যেন দাদাকে চাই ,এই মনোভাব নিয়ে বেড়ে ওঠা ওর।

দাদা কে নিয়ে কিছু কথা
দাদা কে নিয়ে কিছু কথা

আর পাঁচটা ভাইবোনের মতো ঝগড়া ঝাটি ওরা করে না, এমনকি খুব সীমিত বন্ধু মহলের মাঝে রিমির প্রিয় বন্ধু ওর দাদাই। রিমি প্রাইমারি লেভেল পেরিয়ে হাই স্কুলে ভর্তি হলে দাদার সাথে আর যেতে পারবে না ভেবে, স্কুলে ভর্তি হবেনা বলে কান্নাকাটি শুরু করে। স্কুল যেতে হলে নাকি ওর গার্লস স্কুলেই ওর দাদাকেও ওর সাথে যেতে হবে, নইলে বয়েস স্কুলে ওকে ভর্তি করতে হবে ওর দাদার সাথে । এমন অদ্ভুত বায়নার কোনো মানে খুঁজে না পেয়ে রিমির বাবা। শেষমেশ সামনের এক সাধারণ বিদ্যালয়ে ওদের ভর্তি করে দিলেন । রিমি নোংরা পরিবেশকেও মানিয়ে নিতে রাজি কিন্তু দাদা ছাড়া নামি বিদ্যালয়ে যেতে রাজি নয় । তাই সব মিলিয়ে , সকলের কাছে যেন দৃষ্টান্ত এই দুই ভাই বোন।

তবে একসাথে স্কুলের গণ্ডি শেষ হয়নি ওদের, রিমি যখন দশম শ্রেণীর ছাত্রী তখনই ওর দাদার উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে কলেজে ভর্তি হলো । তবে ওর দাদা ওকে কোনোদিনও একা স্কুল যেতে দেয়নি । সেই ছোটবেলার মতোই হাত ধরে রোড ক্রস থেকে শুরু করে পড়া বুঝিয়ে দেওয়া অব্দি সব দায়িত্বটাই পালন করেছে।


পড়ুনঃ- 
নেতাদের দাদাগিরি- জনগণের রক্তে সুখ খোঁজা নরপিশাচ 

পথ-শিশুদের নিয়ে একটি বাস্তব গল্প 

ভাই-বোনের ভালোবাসা-দিদিকে নিয়ে গল্প 

রিমিও স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে উঠলে, তার দাদার সাথে গেলে নানান মানুষের নানান কটূক্তির সম্মুখীন হয় । কোনোদিনও নিজের দাদা ছাড়া অন্য কোনো ছেলের দিকে না তাকানো মেয়েটাকে যখন তার দাদার নাম জড়িয়েই খারাপ কথা বলা হয় তখনি সবার মুখের ওপর উত্তর নিয়ে দাদার প্রতি ভালোবাসা টা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। পুরো কলেজে দুই ভাই বোনের আদা – গোলমরিচের মতো সম্পর্কটা ছড়িয়ে পড়ে, অনেকের চোখে তো “BEST BRO – SIS” এর দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠে ওরা ।

কিন্তু সুখ কখনোই স্থায়ী হয়না। রিমি যখন দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ওর দাদার কলেজ জীবন শেষ । একা আসার ভয়ে রিমি দাদার সঙ্গ ছাড়া কলেজ যাওয়াই বন্ধ করে দেয়। দুশ্চিন্তায় পড়েন রিমির বাবা , তার ছেলেকে ডেকে বলেন “সারাটা জীবন কি বুনুর আঙ্গুল টা ধরেই থাকবে! ওকে ছোট থেকে এক মুহূর্তও একা ছাড়নি,এমন অভ্যেস করেছ যে এখন একা কলেজ টিউশন কোথাও যাচ্ছে না । এরকম ভাবে চলতে থাকলে তোমার ভবিষ্যত , এমনকি রিমির ভবিষ্যত এর কি হবে ?” সব কথাগুলো সেদিন চুপচাপ সহ্য করে রিমির দাদা ।

দাদাকে নিয়ে গল্প
দাদাকে নিয়ে গল্প

কয়েক মাস পর হটাৎ করে একদিন দাদার সাথে কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার সময় রিমি কে তার দাদা জিজ্ঞাসা করে ” আমি না থাকলে তোর কি হবে ?”

কথাটার আগাগোড়া কিছু মানে বুঝতে না পারলেও দাদার মুখে এরম কথ শুনে রিমির চোখে অশ্রুর বাঁধ যেন ভেঙে পড়ে।
” ধুর ক্ষেপি তোর সাথে ইয়ার্কি করাও চলে না ” বলে তার দাদা তাকে জড়িয়ে ধরে আড়ালে নিজের চোখের জল লুকিয়ে রিমির চোখের জল মোছাতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে।


পড়ুনঃ- 
বাছাই করা সেরা কয়েকটি অনুগল্প 

গল্পের মাধ্যমে নৈতিক শিক্ষা 

গৌতম বুদ্ধের বাণী 

এরপর বাড়ি ফিরলে রিমির বাবা খুব আনন্দের সাথে একটা মিষ্টি রিমির মুখে দিয়ে বলে, “জানিস কত বড় একট সুখবর পেয়েছি আজ, তোর দাদা বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেরে বিদেশে। বাবু তাড়াতাড়ি ব্যাগ গোছা, আমি তোর জন্য ফ্লাইট বুক করে দিয়েছি ।”
রিমির উৎফুল্ল দুটো চোখ আসন্নতায় ভরে ওঠে, কাপা গলায় জিজ্ঞাসা করে ,” বাবা দাদা কোথায় যাবে ?”

আমেরিকা রে আমেরিকা, তোর দাদা যে কোম্পানি তে চাকরির জন্য আবেদন জানিয়ে ছিল সেটাতে ও সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভালো পোস্টের জন্য নির্বাচিত হয়েছে। কালকে সন্ধ্যাতেই ওর ফ্লাইট।

দাদার ভালোবাসা
দাদার ভালোবাসা
<

রিমি নিজেও বুঝতে পারেনা এটা ওর কাছে আদৌ সুখবর না খারাপ খবর । তবে যাই হোক নিজের জন্য নিজের দাদার ভবিষ্যত ও নষ্ট হতে দিতে পারবে না ভেবে, আড়ালে চোখের জল ফেললেও সবার সামনে হাসি মুখেই ও দাদাকে বিদায় জানায় ।

নতুন জন্ম হয় আবার রিমির তৃতীয় বর্ষে উঠে, বন্ধু মহল সীমিত হলেও প্রিয় বন্ধু দাদাকে কাছে না পেলেও পড়াশোনায় হয়ে ওঠে ওর প্রিয় বন্ধু । মাঝে মধ্যে রাত জেগে দাদার সাথে ভিডিও কল বা ম্যাসেজে কথা হলেও রিমির মনে হয় কোথাও যেন সম্পর্কটা আর আগের মত নেই। ব্যস্ত কর্মজীবনে তার দাদার কাছে আর , তার অহেতুক সারাদিনের গল্প শোনার মতো সময় নেই ।

দাদার অর্থ, বিনাপয়সায় বডি গার্ড এই হোক বা দঙ্গল ছাড়া মারপিটের সাথী, মাঝে মধ্যে উষ্ণ কফির মতো অভিমান এই হোক বা কারণ ছাড়া পাগলের মতো হাসি , পেছন থেকে মেরে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়া মানুষটাই জীবনের এক-মাত্র সেরা সাথী। যেখানেই থাক তোকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি…।

আলোরানি মিশ্র

গল্পের ভাবনায়-
WhatsApp এর মাধ্যমে আপনার গল্প পাঠানোর জন্য এখানে ক্লিক করুন আপনার গল্পটি আমাদের মেইল করতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ।
আলোরানির যে লেখা গুলি পাঠকের পছন্দ হয়েছে- 

ফানি কল্প কাহিনী- কুমিকম্প 

বাবাকে নিয়ে শিক্ষণীয় গল্প 

ছোট হাসির গল্প 
ছাড়পত্রের সমস্ত আপডেটের জন্য চলে আসুন একই ছাঁদের নীচে- 
ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

দাদা কে নিয়ে কিছু কথা। দাদাকে নিয়ে গল্প। দাদার ভালোবাসা। আমার দাদা। 1 new bengali story of elder brother

Spread the love

Leave a Reply