কয়েকটি সেরা অনুগল্প থাকছে আজ। এই অনুগল্পের মধ্যে রয়েছে ২ টি শিক্ষণীয় অনুগল্প, ৪ টি বাস্তব জীবনের অনুগল্প। ছোট অনুগল্প থেকে শুরু করে, একটু বড় ধরণের গল্প যাকে ছোট গল্প বলে, সেগুলিও রইল আজ।

সেরা অনুগল্প। সেরা ছোট গল্পঃ-

শিক্ষণীয় অনুগল্পঃ-

জীবনের স্বাদঃ-

কয়েকজন ছাত্র তাদের প্রাক্তন শিক্ষকের বাড়িতে যায় শিক্ষক মহাশয় তাদের জন্য চা নিয়ে আসেন কিন্তু তিনি ভিন্ন ভিন্ন কাপে চা নিয়ে আসেন। এর মধ্যে ছিল সুন্দর দেখতে চিনামাটির কাপ, একটু কম সুন্দর কাগজের কাপ এবং অসুন্দর প্লাস্টিকের কাপ। এখন চিনামাটির কাপটি কোন ছাত্রটির প্রাপ্য তা নিয়ে ছাত্রদের মধ্যে চর্চা শুরু হয়। তাদের এই কথার মাঝেই শিক্ষক মহাশয় বললেন আমি ইচ্ছা করেই এই তিন রকমের কাপ নিয়ে এসেছি। এর থেকে জীবনের একটা সত্য তোমাদের বোঝানোর জন্য। সবাই মন দিয়ে শোনো এই কাপটাকে ধর আমাদের জীবন-যাপনের বিভিন্ন বিলাসিতা, যেমন-দামি গাড়ী,দামি বাড়ি, অঢেল টাকা ইত্যাদি ইত্যাদি।

আর এই কাপে রাখা চা টাকে ধর আমাদের জীবন। তুমি যে কাপেই চা টা খাও না কেন প্রতিটি কাঁপের চায়ের স্বাদ কিন্তু একই। অর্থাৎ জীবন-যাপনের স্ট্যাটাস আলাদা হলেও জীবনের স্বাদ সবার একই।

শিক্ষণীয় ছোট গল্প জীবনের স্বাদ
শিক্ষণীয় ছোট গল্প জীবনের স্বাদ

নিজেকে মহৎ করার সহজ রাস্তাঃ-

শিক্ষক ক্লাসে ঢুকে ব্ল্যাকবোর্ডে একটা লম্বা দাগ টানলেন। এবার সবাইকে উদ্দেশ্য করে জানতে চাইলেন, “আচ্ছা তোমাদের মধ্যে কে আছো, যে এই দাগটিকে ছোট করতে পারবে? কিন্তু শর্ত হচ্ছে তোমরা একে মুছতে পারবে না! না মুছেই ছোট করতে হবে ! তারপর, ছাত্ররা সবাই অপারগতা প্রকাশ করলো। কারণ, মোছা ছাড়া দাগটিকে ছোট করার আর কোনো পদ্ধতি তাদের মাথায় আসছে না! ছাত্রদের কাছ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে, এবার শিক্ষক দাগটির নীচে আরেকটি দাগ টানলেন, যা আগেরটির চেয়ে একটু বড়। ব্যস, আগের দাগটি মোছা ছাড়াই ছোট হয়ে গেলো!

শিক্ষক বললেন, বুঝতে পারলে তোমরা? কাউকে ছোট করতে বা হারাতে হলে তাকে স্পর্শ না করেও পারা যায়! নিজেকে বড় করো, মহৎ করে গড়ে তোলো, তাহলে অন্যের সমালোচনা আর দুর্নাম করে তাকে ছোট করতে হবে না, তুমি বড় হলে এমনিতেই সে ছোট হয়ে যাবে!

পড়ুনঃ- বাজ হয়ে উঠার লড়াইটা মোটেও সহজ নয়

বাস্তব জীবনের অনুগল্পঃ-

জীবনটা অনেক দামীঃ-

রত্নার রোজ মনে হতো আত্মহত্যা করলেই বেঁচে যাবো। কিন্তু আত্মহত্যা করতে গিয়েও করতে পারত না। কেন সে জানে না।
তবে একদিন সে রাস্তায় যেতে যেতে মৃত্যু দেখল। মৃত্যু! খুব কঠিন সত্য! সময় এলে সবাইকেই চলে যেতে হবে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে। কিন্তু রত্না দেখে মৃত্যুপথগামী লোকটা কাতরাতে কাতরাতে বলছে, “আমি মরতে চাই না, জীবন টাই বড় সুন্দর। হোক না জীবনের ক্ষয়। কিন্তু জীবনের যে এটাই মন্ত্র, যে যত বেশি ক্ষইতে হবে সে তত দিন বাঁচতে পারবে। আমি জীবন চাই, মৃত্যু নয়। সারাজীবন টা যখন ছিল তখন মৃত্যু চাইতাম কিন্তু আজ প্রকৃত মৃত্যুর সময়ে আমি জীবনের মর্ম বুঝতে পারছি, জীবন কি তা বুঝতে পারছি। আমি বাঁচতে চাই, আমি বাঁচতে চাই…”

এতটুকু বলতে বলতেই লোকটার চোখ চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল। আর এই দেখে রত্নার মনে কি যে হলো কে জানে! লোকটার কথা গুলো কানে বাজতে লাগল। আর মনে পড়ে গেল, কবিগুরুর প্রাণ কবিতার প্রথম লাইনটা, “মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে, মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই।”

কয়েকটি সেরা অনুগল্প বাস্তব জীবনের গল্প
কয়েকটি সেরা অনুগল্প বাস্তব জীবনের গল্প

পরমায়ুঃ-

আমরা মনে করি হয়তো পৃথিবীর সবথেকে অসুখী আর দুর্ভাগ্যের অধিকারী আমরাই। কিন্তু আশপাশের জগৎটা ভালো করে ঝেঁকে দেখলে, আমরা দেখতে পাবো আমাদের থেকেও অনেকে, অনেক বেশি দুর্ভাগ্যের অধিকারী। যাদের দুঃখের ভাগীদার কেউ নেই, অর্থাৎ তারা কারুর সাথে দুঃখ ভাগাভাগি করতেও অক্ষম। বাস্তবটা কঠিন হলেও মধুর, সেটাই আমরা বুঝতে অক্ষম ।

এমন অভিজ্ঞতা টা হলো আমার সেদিন, রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ভাবছিলাম , ” সত্যি কি অদ্ভুত জীবন যেখানে নিজে কিছু করবার অদম্য ইচ্ছে, কিন্তু ডেস্ট্রাকশন এর অভাব নেই আবার বাবা মায়ের চরম আশা মেয়েকে নিয়ে, দাদাদের ইচ্ছে বড়ো কিছু করুক বোন আমাদের! ভালোই তো ছিলাম এই কয়েকটা বছর আগে, সিলেবাস ভিত্তিক পড়াশোনা আর ক্লাসে প্রথম হওয়ায় প্রতিবারের অর্জন করা প্রশংসা নিয়ে, লেখালিখির স্বভাব তখন তো ছিল না, ছিল না ভবিষ্যত নিয়ে কোনো চিন্তা। কি সুন্দর ইউটিউবার আর গুড স্টুডেন্ট পরিচয় নিয়ে সবার কাছে প্রিয় ছিলাম।

কিন্তু হটাৎ কি হলো কেন বদলে গেলো সব। এসব কি কলেজ এ ভর্তি হওয়ার জন্য হলো! আমি কি কলেজ এ ভর্তি রাতারাতি খুব বড়ো হয়ে গেলাম ? যে জিনিস গুলো নিয়ে এত আনন্দে থাকতাম সেই জিনিস গুলোই সব হারিয়ে গেল জীবন থেকে। এখন পড়াশোনা আর চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি ছাড়া কিছুই তো নেই জীবনে তাই নতুন করে জীবন খুঁজে পেলাম লেখার মধ্যে দিয়ে তবে সেটাও শেষ অব্দি কতদূর সাথ দেবে তাও তো জানিনা।”

এসব ভাবনার মাঝেই হটাৎ করে একটা আওয়াজ উঠলো তারপর যখন জ্ঞান ফিরলো তখন ধোঁয়াশা লাগছিল সবকিছু, কিন্তু বুঝতে পারছিলাম প্রচুর মানুষের সমাগম আর অ্যাম্বুলেন্স এর আওয়াজ, বুঝলাম আমি হসপিটালে আছি। পরের দিন যখন হুঁশ ফিরল তখন বেশ অবাক আমি, একটা সাদা কাপড় ঢাকা শরীর কে জড়িয়ে ধরে আমার মায়ের মতই একজন মহিলা কাঁদছেন, তার মুখটা ঠিক বুঝতে পারলাম না সেখান থেকে বেরিয়ে দেখলাম একটি বৃদ্ধ ব্যাক্তি হুইল চেয়ার এ বসে আছে। তার একটি পা নেই , শুনলাম তার ছেলে নাকি বিদেশে থাকে তাই তার বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে গেছিলো। কিন্তু তার বাবার পায়ে ক্যান্সার ধরা পড়ার জন্য তার পা টি বাদ দিতে হয়েছে অথচ এসব কথা তার ছেলে জানার পরেও কর্মব্যস্ততার অজুহাতে কিছু টাকা পাঠিয়েই নিজের কর্তব্য পূরণ করেছে।

সেখান থেকে বেরিয়ে দেখলাম একটি emergency পেসেন্ট কে নিয়ে আসা হয়েছে , তার রক্তের খুব প্রয়োজন কিন্তু কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। তাই অপারেশন শুরু করতে না পারার জন্য আমার চোখের সামনে ৫ মিনিটের মধ্যে মানুষটি মারা গেলো। কি বিভৎস দৃশ্য! সেখান থেকে তৎক্ষণাৎ বেরিয়ে গেলাম। বেরিয়ে দেখি একটি নবজাত শিশু যার সবে মাত্র জন্ম হয়েছে , পিতৃ পরিচয় এর অভাবে তাকে নাকি এক মহিলা হাসপাতালেই ফেলে রেখে চলে গেছেন। মনে মনে ভাবলাম এই সবে মাত্র জন্মেই বাচ্চাটি অভিভাবক হীন এর চেয়ে তো আমার অবস্থা ঢের গুন ভালো।

তারপর ভাবলাম, আমার বাবা ,মা তো এখনও আমার দাদু দিদার খুব যত্ন করে সাথে সাথে এটাও মনে হলো প্রত্যেক বার ব্লাড ক্যাম্পে দাদারা রক্ত দান করে। এসব ভেবে খুব গর্ব বোধ করছিলাম তার সাথেই ভাবলাম আমার তো দুঃখ করার মতো কিছুই নেই, আমি তো এদের চেয়ে ঢের ভালো আছি । তখন দৌড়ে বাড়ি ফেরার জন্য যখন দুয়ার থেকে বেরোতে যাচ্ছি তখন দেখলাম মা বাবা দাদারা সবাই কাঁদতে কাঁদতে একটা স্ট্রেচার এ করে কাকে যেন নিয়ে আসছে। গলা শুকিয়ে এলো আমার। ভাবলাম তাহলে বুঝি দাদু বা দিদার কিছু হলো! দৌড়ে গিয়ে মুখ থেকে কাপড় টা সরাতেই মাথায় চড়ক খেলে গেল। এ কি! এ কার মুখ দেখছি আমি ? এটা কে ? মা কে ছুঁতে গেলাম কিন্তু ছোঁয়া পেলাম না।

চিৎকার করে বললাম ও মা , মা , মা গো, একবার জড়িয়ে ধরো মা। কিন্তু মা কোনো উত্তর দিলো না, সবার চোখে জল। আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না , আমি আর এই পৃথিবীর কেউ নই , চাইলেও আজ আমি আর নিজেকে সুখী ভাবতে পারি না। জীবনটা শুরু হয়েছিল এই হাসপাতাল দিয়েই আবার শেষ হলো এই হাসপাতালেই, বাকি রয়ে গেলো কিছু চাওয়া পাওয়া। বিদায় নিলাম আমি চিরতরে ।

যার জন্য যতটুকু স্থির করা আছে ততটুকু নিয়েই আনন্দে বাঁচা উচিত। জীবনটা কারুর নিজের হাতে নেই। এখন জীবিত কিন্তু পর মুহূর্তেই মৃতুর হাতছানি ডাক দিতে পারে। তাই প্রতিটা মুহূর্ত নিজের মতো করে বাঁচো।

বাংলা অনুগল্প আত্মা
বাংলা অনুগল্প আত্মা
<

গরীবের অধরা স্বপ্নঃ-

স্বপন চা বেচে ওই গিরিশ পার্কের দিকে। রাস্তা দিয়ে কত মানুষ যায়, তাকিয়ে থাকে সে। তার স্বপ্ন ছিল সে বড়ো ব্যবসায়ী হবে। কিন্তু ছোটো বোনের বিয়ে আর তার মায়ের হৃৎপিন্ডের সার্জারিতে সব টাকা বেড়িয়ে যায়৷ অনেক চেষ্টা করে তার শেষ সম্বল এই দোকানটা চালাচ্ছে সে। আবার প্রমোটারের চোখও এদিকে পড়েছে। মাঝে মধ্যেই তিনি শাসানি দিয়ে যান।

বর্ষার রাত ছিল, খুব বৃষ্টি হচ্ছে তখন রাত প্রায় ১০ টা হবে, দোকানের ঝাঁপ ফেলে একটা প্লাস্টিক মাথায় দিয়ে বাড়ির পথে যেতে যেতে সে পুরো ভিজে গেলো। এই সময় তার মনে হতে লাগল –

‘”এই বৃষ্টির জলে সব কিছু ভিজবে কিন্তু এই গরিবের চোখের জলে কারো মন এতটুকুও ভিজবে না”

পড়ুনঃ- সেরা কয়েকটি শিক্ষণীয় গল্প 

বয়ঃসন্ধিঃ-

মনটা খুব খারাপ ছিল প্রতিমার। সে অল্প একটু ভুলের জন্য দিদিমণির কাছে খুব বকা খেয়েছে স্কুলে। সে ভাবতে থাকে গোটা উত্তরটা ঠিক অথচ ঐটুকু ভুলের জন্য বাকি ঠিকটার কোনো দাম নেই?

যাই হোক সারাদিন বিষন্ন মন নিয়ে থেকে বাড়ি ফেরে প্রতিমা। বাড়িতেও এক অশান্তি। প্রতিমা ইদানীং খেয়াল করে তার প্রতি তার মা অত্যন্ত বিরক্ত। বাবা বেশিক্ষণ থাকেন না, তাই বাবাও বিরক্ত কিনা তা ঠিক বোঝা যায় না। তবে মা অত্যন্ত বিরক্ত। কাজ করলেও বলে কিছু করে না বসে বসে খায় আর ঘুমায়। ছোটখাটো ভুল হলেই বাড়ি মাথায় তোলে। সবকিছু শেয়ার করলেও মায়ের আদালতে শেষপর্যন্ত প্রতিমাই দোষী সাব্যস্ত হয়। প্রতিমা একটা সম্পর্কে ছিল কিন্তু পরে সেটা ভেঙে যায় আর এই নিয়ে মায়ের কথার শেষ নেই।

বলা বাহুল্য বাড়িতে আসলেই সবসময় একটা অপরাধ করা পোষা জন্তুর মত হয়ে থাকে প্রতিমা। ভাল করে কথা বলতে পারে না আর আগের মতো। কথায় কথায় মা রেগে যায় তার উপর। প্রতিমা মনে খুব কষ্ট পায়, একা একা কাঁদে। আচ্ছা ভুল থেকেই তো মানুষ নতুন করে শেখে। অথচ তার শেখার দিকে কারোর উৎসাহ নেই। বরং সবাই ভরসা করে ছেলে অর্থাৎ প্রতিমার ভাইয়ের উপর। ভাই শাসন করে তার দিদিকে কিন্তু দিদি একটু জোরে কথা বললে মা বলে, “তুই আমাদের আর কি দেখবি, ছোট ভাই কে হিংসে করিস। ঐ তো এক ছেলেকে নিয়ে পড়েছিলি, গোল্লায় যাচ্ছে পড়াশোনা, তুইও গোল্লায় যাবি!”

প্রতিমা এই শুনে আরো কষ্ট পায়। হঠাৎ একদিন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “ছুটি” গল্পটা পড়ে আর সেইরাতেই শ্বাসরোধ হয়ে মারা যায় সে। তার মৃতদেহের পাশে একটা কাগজে লেখা ছিল। “মেয়েদের বয়ঃসন্ধি কালে বেঁচে থাকা মানে, পরিবারের জন্য বোঝা আর নিজের কাছে জীবন্ত লাশ ছাড়া কিছুই নয়, বিশ্বাস করো মা, তোমাদের আশীর্বাদ আর একটু উৎসাহ মেয়েদের কে ঐ শিখরে পৌঁছে দিতে পারে, কিন্তু অবজ্ঞা মাটিতেও মিশিয়ে দিতে পারে!”

গল্প গুলির প্রেরক- সুস্মিতা গোস্বামী, আলোরানি মিশ্র, সৌগত প্রামাণিক এবং অমিত দে যাদের গল্প গুলি আজ প্রকাশিত হল না, তাদের গল্প গুলিও শীঘ্রই প্রকাশিত হবে।

গল্প গুলি যাদের কলমের কালিতে লিখিত হয়েছে…

আপনার লেখা গল্প প্রকাশিত হোক ছাড়পত্রের পাতায়। আপনার লেখাটি আমাদের মেল করুন- charpatrablog@gmail.com এ। অথবা নীচের লিংক গুলিতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পাড়েন।

আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবেঃ- 
WhatsApp Group- ছারপত্র(২)

ফেসবুক- ছাড়পত্র

ফেসবুক গ্রুপ- গল্প junction

টেলিগ্রাম- CharpatraOFFICIAL

“শিক্ষণীয় অনুগল্প। সেরা অনুগল্প। বাছাই করা ছোট গল্প।”

Spread the love

Leave a Reply