রহস্যজনক ভাবেই গ্রামের প্রাণীর মৃতদেহ উদ্ধার হতে থাকে। এরপর গভীর রাতে পাহারা দেওয়ার কাজ শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত কীভাবে এই রহস্যের সমাধান হল তা রয়েছে এই গল্পে।

গভীর রাতের ভূতঃ- “অশরীরী আত্মা”

রাত পোহাতে না পোহাতেই পরেশ হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আমাদের বাড়ি এসে আঙিনায় পরে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিল। বাবা তখন সবে মাত্র ঘুম থেকে উঠে চোখ ঘষতে ঘষতে বারান্দার গ্রিলের তালা টা খুলছে। পরেশকে এরকম কাঁদতে দেখে বাবা চমকে উঠল। এদিকে পরেশের কান্নায় তখন আমার আর মায়ের ঘুম ও উড়ে গেছে।

বাবার পিছু পিছু আমরাও পরেশের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। কোনোমতে দিন এনে রাত খাওয়া পরেশের জীবনে ভালোবেসে বছর বিশ আগে বিয়ে করা স্ত্রী ছাড়া আর কেউ নেই। ভালোবেসে বিয়ে করেছে বলে মা-বাবার ঘরে তার ঠাঁই হয়নি। স্ত্রী ছাড়াও পরেশের জীবনে রয়েছে আদরের কয়েকটি ছাগল।

নিজের সন্তান নেই, তবে সন্তান স্নেহে আদর করে বড় করে তুলেছে সে ছাগল গুলোকে। পরেশ এবং তার স্ত্রী এই ছাগল গুলিকে খুব ভালোবাসে হয়ত তাদের নিজের জীবনের চেয়েও বেশি।

গভীর রাতের ভূত
গভীর রাতের ভূত

বাবা পরেশকে জিজ্ঞাসা করল কি হয়েছে। সে কাঁদতে কাঁদতে বলল- “দাদা বাবু আমার যে সাদা কালো ছাগল টা আছে, ধবলী সে আর নেই।“ এই বলে সে আবার কাঁদতে লাগল। মা জিজ্ঞাসা করল কীভাবে কি হল!

পরেশ জানাল যে, গতকাল সে এবং তার স্ত্রী শ্বশুর ঘরে গিয়েছিল, ফিরতে সন্ধ্যা হয়েছিল কিন্তু তাদের ধবলী নাকি ঘরে নেই। এরপর তারা দুইজনে মিলে খুঁজতে থাকে ধবলীকে। খুঁজতে খুঁজতে রাত হয়ে যায় কিন্তু ধবলীর দেখা নেই। এরপর সারারাত তারা খুঁজতে থাকে। অবশেষে ওই তেপথার মোড়ের বাঁশ বাগানে ধবলীকে তারা খুঁজে পায়। তবে জীবিত নয় মৃত।

প্রথম অবস্থায় ধবলীকে দেখে তারা চিনতে পারেনি কারণ স্বাস্থ্যবান ধবলীর শরীর পুরো চুপসে গেছে কেউ যেন তার শরীর থেকে সমস্ত রক্ত বেড় করে নিয়েছে। ধবলীর গলায় শুধু দুটো রক্তের টোপ লেগে আছে।

এরপর আমি পরেশকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ঘরে পাঠিয়ে দিলাম এবং তাকে আশ্বস্ত করলাম যে আমি কীভাবে এরকম হয়েছে সেটা যাচাই করে দেখব।

পড়ুনঃ- একটি সত্যিকারের ভূতের গল্প 

পরের দিন সকালে শোনা গেল আরেক দুঃসংবাদ। বিরজু কাকার কালো গরুটা মারা গেছে রাতে। আর তার শরীর ঠিক ধবলীর মত অর্থাৎ কেউ যেন রক্ত শুষে নিয়েছে আর পুরো শরীর চুপসে পরে আছে, ঠিক একই ভাবে গলায় দুটো রক্তের টোপ।

না বিষয়টা কিছুতেই ঠিক লাগছে না। এভাবেই পরবর্তী সাত দিনে গ্রামে ২০ টি গরু ছাগলের হত্যা হয়েছে ঠিক একই ভাবে। ঠিক করা হল আমরা গ্রামের ছেলেরা মিলে পাহারা দেবো। ঠিক করা হল প্রতিজনের দায়িত্বে ৫ টি করে বাড়ি থাকবে।

আমি একটি টর্চ লাইট আর কোমরে একটি ছুঁড়ি সাথে হাতে একটি মোটা লাঠি নিয়ে রাত ১২ টার দিকে বেড়িয়ে পরলাম দায়িত্বে থাকা বাড়িগুলি পাহারা দিতে।

অশরীরী আত্মা
অশরীরী আত্মা

রাত তখন আনুমানিক ২ টে। রাহুলদের বাড়ির ভিতর থেকে একটা অদ্ভুত শব্দ আমার কানে এলো। প্ল্যান মত সবার বাড়ির মেন দরজা খোলা ছিল। আমি তাড়াতাড়ি বাকি ছেলেদের ফোন করে ছুটে গেলাম তাদের বাড়ির ভিতরে। আমি গিয়ে দেখি রাহুলদের গোয়াল ঘরে যে বাছুরটা ছিল সেটি আজব অঙ্গভঙ্গি করছে। ততক্ষণে প্রায় সব ছেলেগুলি ছুটে এসেছে।

সবাই মিলে গেলাম গোয়াল ঘরে বাছুরটির কাছে। চোখের সামনে বাছুরটির শরীর চুপসে যাচ্ছে। আর অসহায় বাছুরটি আমাদের সবার দিকে তাকিয়ে যেন নিরাশ হয়ে চোখ বন্ধ করে মাটিতে পরে গেলো। আর আমরা নির্বাক হয়ে সব কিছু দেখছিলাম কিন্তু কিছুই করতে পারছিলাম না।

যেন হাওয়াতে রক্ত শুষে নিল। ঠিক কি হল ব্যাপারটা আমরা কিছুই বুঝলাম না। দিনু বলল এটা কোন রোগ হবে বুঝলি অসীম। কিন্তু হঠাৎ করে হাওয়ায় রক্ত শুষে নেওয়ার ব্যাপারটা আমার কাছে রোগ মনে হল না। আমি দিনুকে বললাম, আমার মন অন্যদিকে ঠেলছে রে। এটা আলাদা কিছু।

আমার কথা শুনে শ্যামল বলল, আলাদা কিছু মানে! তুই কি ভূত এইসবের কথা বলতে চাইছিস!

আমি জবাব দিলাম বলতে চাইছি নয় বলছি। আগামীকাল এর হয়ত একটা সুরাহা হয়ে যাবে।

পড়ুনঃ- রোমাঞ্চকর ভূতের গল্প 

পরের দিন রাতে সবাই আরও সতর্ক হয়ে পাহারা দিতে লাগলাম। আজ আমার কাছে আছে দুটো বিশেষ যন্ত্র। একটি E M F মিটার আরেকটি থার্মাল মিটার। রাত তখন কাটায় কাটায় ২.১৫। রুনু আমাকে কল করেছে। সে জানাল, সে যদুর ঘরে আজব কিছু শব্দ শুনতে পারছে।

আর দেড়ি না করে ছুটে গেলাম সেদিকে। প্রায় এক মিনিট লাগল বাইকে যেতে। গিয়ে দেখি গতকালের দৃশ্যের প্রতিফলন। যদুদের লাল গাভিটা আজব অঙ্গভঙ্গি করছে।

আমি আর দেড়ি না করে EMF মিটার টা অন করলাম, এরপর সেটি নিয়ে গেলাম গরুটির কাছে। দেখি লাল সিগন্যাল অর্থাৎ গতিক ভালো নয়। আশু আমাকে জিজ্ঞাসা করল, কি বুঝছিস। আমি বললাম এখানে অশরীরী কিছু আছে। আশু আর শ্যামল এক সুরে বলে উঠল- “মানে!”

এরপর ওদের কথার উত্তর না দিয়ে আমি থার্মাল মিটার টি তাক করে ধরলাম গরুর দিকে। দিনু বলল- “তুই কি পাগল রে, এখুনি বললি অশরীরী মানে সোজা কথায় ভূত। মেনে নিলাম সেটা অশরীরী, কিন্তু সেই অশরীরীর শরীর এই তো নেই। তাহলে এই থার্মাল ডিভাইস কাজ করবে কীভাবে শুনি। আমি কিছু জবাব দিলাম না। ডিভাইস টি সোজা তাক করে গরুটির আশেপাশে ঘুরতে লাগলাম।

oshoriri atmar golpo
oshoriri atmar golpo
<

এরপরের দৃশ্য সত্যি ভয়ানক। সেই থার্মাল ডিভাইসে দেখা গেল রক্তের প্রবাহ। রক্ত গরুর শরীর থেকে চলে যাচ্ছে হাওয়ায়। আমি সেই রক্তের প্রবাহ পথ অনুসরণ করতে গিয়ে পেলাম যে, হাওয়ায় ভাসমান কোন একটা থলের আকারে জমা হচ্ছে রক্তটি অথচ আজব বাপার হল খালি চোখে এই পুরো ঘটনার কিছুই দেখা যাচ্ছে না।

এরপর আমি বললাম অশরীরীর শরীর থেকে কোন উষ্ণতা মিটারে না এলেও রক্তের তো একটা তাপমাত্রা আছে, তাই সেটাই ধরা পড়ছে ডিভাইসে। বোঝা তো গেল যে এটি একটি অশরীরী কিন্তু এই অশরীরীর হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে কি করে!

এদিকে আবার যদুর মা এইসব দৃশ্যের কথা শুনে মূর্ছা গেছে। এরপর সবাই যদুর মায়ের জ্ঞান ফেরাতে লেগে পরল।

কেটে গেল আরেকটা রাত। পরের দিন ঠিক করা হল, এই অশরীরীর হাত থেকে রেহাই পেতে প্রতি বাড়ির গোয়াল ঘরে সারারাত আগুন জ্বালানোর ব্যবস্থা করতে হবে সাথে ধুপ দেওয়া হবে সারারাত।

আশ্চর্যজনক ভাবে পরের দিন গ্রামে আর কোন প্রাণ হারানোর খবর এলো না। আর এভাবেই গোটা গ্রাম সেই অশরীরীর হাত থেকে রেহাই পেলো।

তবে আজীবন ভূত প্রেতে বিশ্বাস না করে আসা আমার মনেও এই ঘটনার পর থেকে একটু একটু ভূত প্রেত নিয়ে বিশ্বাসের জন্ম হয়েছে।  

গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।

ব্ল্যাক শ্যাডো

গল্পের ভাবনায়-
নিচে দেওয়া WhatsApp গ্রুপ টি শুধু মাত্র অ্যাক্টিভ মেম্বারদের জন্য। যাদের মনে হবে ব্যস্ত জীবনের অল্প সময় ও এখানে ব্যয় করতে পারবেন আড্ডা আলোচনার মধ্যে তাদের জন্য।  
বি.দ্র. - ইউটিউবার দাদা দিদিরা যারা কনটেন্ট খুঁজতে গ্রুপ এ আসেন তারা এখানে অহেতুক ভিড় জমিয়ে নিজেদের ক্ষতি ডেকে আনবেন না। 

WHATSAPP GROUP LINK- ছাড়পত্রিয়ানস (CHARPATRIANS)  👈🏻 ক্লিক করুন
পড়ুনঃ- 
অভিশপ্ত ভূতের গল্প 

রহস্যময় ভূতের গল্প 
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

গভীর রাতের ভূত। ছোট গল্প অশরীরী আত্মা। oshoriri atmar golpo best Bengali horror story.

Spread the love