ছাড়পত্রের গল্পের ঝুড়ি থেকে একটি দমদার কল্প কাহিনী আজ প্রকাশিত হচ্ছে। এই কল্প কাহিনীটিতে কিছুটা হাসির ছোঁয়াও খুঁজে পাবেন পাঠক।

কল্প কাহিনীঃ- ‘কুমিকম্প’

চুকচুক রাজ্যের তুকাতাক জেলার হুলুলু থানার কুলুলু গ্রামে এমন এক ঘটনা ঘটেছে যার জন্য আজ সমস্ত পৃথিবী স্তম্ভিত ইয়ে মানে কম্পিত। আজ্ঞে ভূমিকম্পের জন্য নয় কুমিকম্পের জন্য । কুমিকম্প জিনিস টা আসলে কি সেটা বোঝার জন্য মন নয় মাথা নয় গাধার পিঠে চেপে দু-পাক ঘুরে নিজের কান দুটো মলে চরকার মতো পাকপাক ঘুরে কোনো এক পাক ভর্তি ডোবায় গিয়ে পড়তে হবে, তবেই নাকি উদ্ধার করা যাবে কুমিকম্প এর রহস্য ।

না না ভয় পাবেন না জিনিসটা ঠিক ভয়ের নয়, আবার নয় কোনো আদিম যুগের মাটির তলে লুকিয়ে রাখা কোনো প্রত্ন আবার নয় কোনো কুবেরের রত্ন । তবে যাই হয়ে থাক জিনিসটি সম্পর্কে ব্যাখ্যা না করলেই নয় । আসুন তাহলে শুরু করি ।

সময়টা ছিল আজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর পূর্বের যখন মানুষের হাত গুলো ঠ্যাং অব্দি ঝুলত । খুলিতে বুদ্ধি নয় বৃদ্ধি ছিল প্রয়োজনীয় চাহিদা । ঠিক সেই সময় থেকে চলে আসছে ওই গ্রামে এই কুমিকুম্প এর ঘটনা । তবে প্রথম দিকে এতটাও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি কিন্তু মানুষ যখন উন্নত হতে শুরু করলো, মানে মানুষের লেজ টা উবে কোমরের হাড়ে পরিণত হলো । আবার হাত গুলো ঠ্যাং থেকে উঠে হাঁটুর ওপর অবস্থান করলো, খুলির বৃদ্ধিতে মানুষ শিখল কৃষিকাজ আবার পোষ মানালো কুকুরকে সাথে সাথে শিখল চাকার আবিষ্কার এরপর কয়েকটা যুগ পেরিয়ে গেলো দেখতে দেখতে ।

কল্প কাহিনী
কল্প কাহিনী

এল আধুনিক যুগ যেখানে মানুষ বিজ্ঞান চর্চার মধ্যে দিয়ে মাটি থেকে খুঁটি পুতে চাঁদে গিয়ে মতি আবিষ্কারের অলিখ কল্পনায় মেতে উঠলো । ঠিক সেই সময় কোন এক অজ্ঞাত বিজ্ঞানীর নজর পড়ল এই কুলুলু গ্রামের দিকে । গ্রামটি সত্যিই বড্ডো অদ্ভুত। কারণ সেখানে বসতি গড়ে উঠেছে কিন্তু জনজাতি শূণ্য । খুব কম সংখ্যক মানুষের বাস এই গ্রামে। গ্রামবাসীদের চেহারাও যেন পৃথিবীর অন্যান্য মানুষদের থেকে আলাদা। মানুষের যেখানে পায়ের অবস্থান সেখানে এদের হাতের অবস্থান। আর হাতের জায়গায় পায়ের অবস্থান ।

মুখশ্রী গুলো যেন একই রকম তবে নাক একটা নয় কানের জায়গায় ২ টা করে নাক। আর নাকের জায়গায় একটা ছোট্ট মতো কান । ওদের চোখ গুলো ঠোটের নিচে থাকে আর ঠোঁট টা কপালের ওপর এ। ওদের চেহারার বিবরণ থেকে বোঝাই যায় ওরা যেন এই পৃথিবীর কেউ নয় অন্য কোনো গ্রহের জীব। ওদের সাথে সমগ্র পৃথিবীর কোনো প্রান্তের মানুষের যোগাযোগ নেই । গভীর জঙ্গলের মাঝে এই কুলুলু গ্রামে ওরা একাকী বাস করে । ওদের খাদ্য হলো মাটি আর হাওয়া । কোন সেই প্রাচীন যুগ থেকেই ওদের অবস্থান ওখানেই । কিন্তু কিছু মাস আগে কোনো এক বিজ্ঞানী এই জায়গার খোঁজ পেলে নিজের দলবল নিয়ে কুলুলু গ্রামে হানা দেয় কিন্তু জঙ্গলের রাস্তা অতিক্রম করতে পারে না।


পড়ুনঃ- 
ছেলেদের কিছু সাইকোলজিক্যাল ফ্যাক্ট 

অদ্ভুত কিছু অমীমাংসিত ঘটনা 

অদ্ভুত ভাবেই যেন দলের সব সদস্যরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। মৃত প্রায় হয়ে কোনরকমে নিজেরা যে যার বাড়ি ফিরে যায়। কিন্তু ওই দলের পান্ডা মানে বিজ্ঞানী সাহেব হাল ছাড়েন না । শুরু করেন তার জঙ্গল অভিযান আর সেই অভিযানের অভিজ্ঞতায় হলো কুমিকম্পের রহস্য।

যখন দলের বাকিরা সব ফিরে গেলো অথচ বিজ্ঞানী গেলো না তখন সবাই যেন মনে মনে আগে থেকেই তার আত্মার শান্তি কামনা করে বিদায় নিল । কিন্তু নাছোড়বান্দা বিজ্ঞানী কোথা থেকে একটা মশাল জোগাড় করে একা একাই হানা দিল ওই জঙ্গলে । জঙ্গলের মধ্যে প্রবেশ মাত্রই বাঘের ভয়ংকর গর্জনে তার রক্ত শুকিয়ে লাল পনির হয়ে গেলো । তখনই হটাৎ করে কোথা থেকে যেন এক গাধা এসে উপস্থিত হলো । গাধাটি এসে বিজ্ঞানীর পায়ের কাছে বসে পড়লো। বিজ্ঞানী গাধার মাথায় হাত বুলিয়ে তার পিঠে চড়েই জঙ্গল অতিক্রমের পরিকল্পনা করলো। তবে চাপার পরেই শুরু হলো গাধার খেলা ।

কল্প বিজ্ঞানের কাহিনী
কল্প বিজ্ঞানের কাহিনী

সে বিজ্ঞানী কে পিঠে নিয়ে চরকার মতো দুই পাক খেয়ে বলে উঠলো “দুই বার কান মল ” বিজ্ঞানী নির্বোধের মতো গাধার মুখে মানুষের আওয়াজ শুনে বিস্মিত হয়ে মলে নিলো নিজের কান । আর কান মলা মাত্রেই গাধা বিজ্ঞানীকে নিক্ষেপ করল একটা কাদা ভর্তি পুকুরে । তারপর গাধা হাওয়াতে উবে গেলেও বিজ্ঞানী জীবন নিয়ে উবলো না। সে কোনরকমে উঠে এলো ঘাসের ছিবড়ে ধরে । কিছুক্ষন নিজেকে সামলানোর পর ধীর গতিতে যাত্রা শুরু করলো । কিন্তু বারেবারে তার মনে হলো কেউ যেন তাকে ধাওয়া করছে তখন সে লুকিয়ে পড়লো একটি গাছের আড়ালে।

বিবর্ণ রঙের ওই গাছের থেকে একটা নিংড়ে নিংড়ে কান্নার আওয়াজ ঝালা পালা করে দিলো তার কান । বিভৎস একটা মূর্তি ভেসে এলো তার চোখের সামনে ,মাংসহীন কঙ্কাল শরীরের একটা জীব। অদ্ভুত তার চেহারা, ঠিক যেন মানুষের বিপরীত । সেই জীবটি বিজ্ঞানীর খুব কাছে এসে তার গন্ধ শুঁকে শুঁকে ” লুলোলো হহকন বিকির তান কুমি ক ক ক ম্প” বলে চিৎকার করতে শুরু করলো । সেই অদ্ভুত ডাকে তার অন্যান্য সাঙ্গপাঙ্গরা গাছের ডাল , পাতা, মাটির ফোকর , কুমি ক ক ম্প বাতাসের মধ্যে থেকে থেকে নেমে এলো । সবাই মিলে বিজ্ঞানীকে ভালো করে যাচিয়ে দেখে “টুমকমক নুইটু হটি ” বলে আস্তে আস্তে সরে গেলো । এমন অদ্ভুত অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়ে বিজ্ঞানী অজ্ঞান হয়ে পড়ে রইলো ।


পড়ুনঃ-
 সাহসিকতার গল্প- ধৈর্য শক্তি মহাশক্তি 

হাসির গল্প- বউ নাকি গোয়েন্দা! 

পরের দিন জ্ঞান ফিরলেও সাহস করে আর জঙ্গলের ভেতরে না গিয়ে সোজা নিজের রিসার্চ সেন্টারের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। এরপর নিজের অভিজ্ঞতা থেকে আবিষ্কার করলো কুলুলু গ্রামের অধিবাসীদের রহস্য । সে নিজেই তাদের ভাষা উদ্ধার করতে না পেরে শেষের কুমিকম্প টা মনে রেখে ওই জাতির নাম দিলো কুমিকম্প। এরপর থেকে ওই জায়গা নিয়ে অনেক বিজ্ঞানী অনেক গবেষণা করার চেষ্টা করলেও কেউ শেষ অব্দি জঙ্গলের মধ্য দিয়ে যেতে পারেনি বা গেলেও জীবন নিয়ে আর ফিরে আসেনি। আর সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার কেউ ওই কুমিকম্প প্রজাতিকে সচক্ষে দেখেনি ।

fiction story in bengali
fiction story in bengali
<

অনেক গবেষণার পরেও যখন এই প্রজাতিকে কেউ আবিষ্কার করতে পারেনি তখন ওই অজ্ঞাত বিজ্ঞানীর গবেষণা কে মিথ্যে বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করলে ওই বিজ্ঞানী গাধার পিঠে চেপে কুমিকম্প আবিষ্কারের থিওরি আবিষ্কার করে। পৃথিবীর বুকে এমন প্রাণীও যে আছে তার অস্তিত্ব প্রমাণে সেই বিজ্ঞানী নিজেও অনেকবার সেখানে যায় কিন্তু কোনো গাধাকেই আর দেখতে পায়না তাই দ্বিতীয় বার আর কুমিকম্পদের সাথে সাক্ষাৎ করার সুযোগ তার হয়না। তবে তার গাধার থিওরি পুরো পৃথিবীকে স্তম্ভিত করে দেয়। অজ্ঞাত বিজ্ঞানী থেকে তার পরিচয় হয়ে ওঠে ” ASS king”

তবে কূমিকম্প চিরকাল ঐ জঙ্গলের আড়ালেই থেকে যায়।
গল্প হলেও কিন্তু সত্যি ,তাই আপনারাও না হয় একবার চেষ্টা করে দেখতেই পারেন , হয়তো আপনাদের মধ্যেই কেউ আবার হয়ে উঠবেন অজ্ঞাত বিজ্ঞানী থেকে পরম জ্ঞানী।

আলোরানি মিশ্র

গল্পের কল্পনায়-
আপনার লেখা সরাসরি WhatsApp এর মাধ্যমে পাঠানোর জন্য এখানে ক্লিক করুন অথবা আপনার লেখাটি আমাদের মেল করুন- charpatrablog@gmail.com -এ। 
আলোরানির কিছু জনপ্রিয় লেখা- 

মা কে নিয়ে একটি হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া গল্প 

অসম্পূর্ণ ভালোবাসার গল্প- 'প্রেমিক' 

হাসির গল্প- রোগা মানুষের উপাখ্যান 
ছাড়পত্রের সমস্ত আপডেটের জন্য- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

কল্প কাহিনী। কল্প বিজ্ঞানের কাহিনী। 1 new fiction story in bengali

Spread the love

Leave a Reply