‘মা’ ডাকটা সরল হলেও এর ভীত খুঁজে পাওয়া একজন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। আর মাকে নিয়ে গল্প হবেনা তা কি কখনো হয়! আজ ছাড়পত্রের পাতায় থাকছে মা কে নিয়ে লেখা দুটি অসাধারণ গল্প।

মাকে নিয়ে গল্প। মাকে নিয়ে লেখাঃ-

সময় থাকতেই মায়ের কদর করতে শেখঃ-

রাস্তার মোড়ের মাথায় একটি ছোট্ট ফুলের দোকান। সেই ফুলের দোকানের সামনে BMW গাড়িতে করে একজন ব্যবসায়ী নামলেন। গাড়ি থেকে নেমেই তিনি ফুলের দোকানের কাছে গিয়ে একটি ফুলের বাকেট ভালমত প্যাক করে দিতে বললেন। তিনি তার মাকে এই ফুলের বাকেট টি পার্সেল করবেন।

ইতিমধ্যে তার নজর ফুলের দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ছোট বাচ্চার দিকে গেল। তিনি দেখলেন চুপচাপ তারই তাকিয়ে আছে। ব্যবসায়ীটি কিছু বলার আগেই বাচ্চাটি বলল- “কাকু আমি আমার মায়ের জন্য ওই লাল টকটকে গোলাপটি কিনতে চাই, কিন্তু গোলাপের দাম ২০ টাকা আমার কাছে আছে কেবল ১০ টাকা। যদি কিছু মনে না করেন, আপনি কি আমাকে ফুলটি কিনার জন্য প্রয়োজনীয় বাকি মূল্যটি দিবেন!

এটি শুনে ব্যবসায়ীটি মৃদু হাসলেন এবং বললেন- “ঠিক আছে, তুমি নিয়ে নাও আমি মূল্য চুকিয়ে দিচ্ছি।” এই কথাটি শোনা মাত্রই বাচ্চাটি অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে উঠল।

ব্যবসায়ীটির ফুল নেওয়া হয়ে গেলে, তিনি গাড়িতে উঠতে যাবেন, এমন সময় বাচ্চাটি বলল- “কাকু, আপনি কি এই রাস্তা দিয়ে যাবেন! যদি আপনার কোনো অসুবিধা না হয়, তাহলে আমিও আপনার সঙ্গে যাব!” ব্যবসায়ীটি জবাব দিল- “না না অসুবিধে হবে কেন! আমিও তো ওইদিকেই যাচ্ছি।”

মাকে নিয়ে গল্প
মাকে নিয়ে গল্প মাকে নিয়ে লেখা

এরপর একটি কবর স্থানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বাচ্চাটি বলল- “কাকু এখানে আমাকে নামিয়ে দিন।” ব্যবসায়ীটি কিছুটা আশ্চর্য হল, এই ছোট বাচ্চাটা এখানে এই কবর স্থানে নামছে কেন, তবে কি! তবে কি! বাচ্চাটি নেমে যাওয়ার পর ব্যবসায়ীটি চুপি চুপি তার পিছু নিল।

সে দেখল বাচ্চাটি কবর স্থানের ভিতর গিয়ে একটি কবরের সামনে গিয়ে থেকে গেল। সেখানে তার হাতের গোলাপ ফুলটি অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে রাখল। তার চোখে জল ছল ছল করছে। আর সে তার মায়ের কবরের উপরের পাথরটিকে জাপটে ধরে বলছে- “I miss you mom”.

এই দৃশ্যটি দেখার পরই সেই ব্যস্ত ব্যবসায়ীটি যিনি তার মায়ের জন্য ফুলের বাঁকেট পার্সেল করবেন বলে ভেবেছিলেন তিনি ঠিক করলেন নিজে গিয়েই তার মাকে এই ফুলের বাঁকেটটি উপহার দিবেন। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিং তিনি বাতিল করে দিলেন, কারণ সে সব কিছু বুঝে গেছে, তার কাছে বর্তমানে মিটিং- এর থেকে ‘মা’ বেশি প্রয়োজনীয়। তিনি ঠিক করলেন হাজার ব্যস্ততার মাঝেও সপ্তাহে অন্তত কয়েকদিন মায়ের সাথে সময় কাটাবেন। কারণ মাকে হারানোর বেদনা পৃথিবীর অন্যান্য প্রিয়জনদের হারানোর বেদনার থেকেও অনেক গুনে বেদনা দায়ক।

পড়ুন- বাবাকে নিয়ে একটি শিক্ষণীয় গল্প 

‘মা’ এক অব্যক্ত ভালবাসাঃ-

একটা গাছ যেমন তার ছত্রছায়ায় আগলে রাখে অনেক প্রাণীকে ঠিক তেমন একটা সংসারকে দু হাত দিয়ে আগলে রাখে মা। মা শব্দটা উচ্চারণ এর দিক দিয়ে ছোটো হলেও এর অর্থটা লিখতে বসলে অসংখ্য বইও কম পড়ে যায়। পৃথিবীতে আমরা জন্ম গ্রহণ করি মানুষ রূপে কিন্তু কালক্রমে বুঝতে শেখার পর মাই হয়ে ওঠে আমাদের পৃথিবী। যাই বলি কমই মনে হয় , মা মানে অন্ধকারের মাঝে একমাত্র দীপ্তিমান আভা, পথের দিশারী। মা মানে হাজার দুঃখের মাঝে এক টুকরো আনন্দের ছোঁয়া। মা মানেই অভিমানি আবার মা মানেই সবচেয়ে বেশি মূল্যবান দামী ।

বাবা মায়ের আদরের মেয়ে প্রীতি । তার বাবা আদতে একটু রাগী আর গাম্ভীর্য পূর্ণ হলেও মা খুব শান্ত আর মিষ্টি স্বভাবের।ছোট থেকেই বাবার কাছে ভালোবাসার সাথে সাথে শাসন এ বড়ো হয়েছে প্রীতি । মা কে ভয় বা সন্মান কোনোটাইও খুব বেশি করে না । ও মনে করে অফিসার বাবার কাছে শাসন , বকা খাওয়াটাও গর্বের কিন্তু উচ্চমাধ্যমিক পাস মায়ের কাছে শাসনটা ঠিক মানান সই না। প্রীতি স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে যেই কলেজে ওঠে তখনই ওর বাবার ট্র্যান্সফার হয়ে যায় অন্য রাজ্যে। কিন্তু মেয়ের ভালো শিক্ষার তাগিদে তার বাবা, মেয়ে ও বউ কে দিল্লিতেই রেখে যান।

মাকে নিয়ে লেখা
মাকে নিয়ে লেখা

বাবার চলে যাওয়ার পর অগাধ স্বাধীনতা লাভ করে প্রীতি। মায়ের কোনো কথাই সে শোনে না , পড়াশোনার পাট চুকিয়ে , টিউশন কলেজ যাওয়ার নামে বন্ধুদের সাথে মুভি দেখতে যাওয়া, ট্রিপ এ যাওয়া , লং ড্রাইভে যাওয়াটা ওর সখে পরিণত হয়। এদিকে ওর মা অক্লান্ত চেষ্টা করার পরেও মেয়েকে বোঝাতে অক্ষম। প্রীতিকে তার মা কিছু বলতে এলে সে তার শিক্ষা, পড়াশোনা এসব নিয়ে অপমান করতে শুরু করে, দিনদিন মেয়েটা বিশৃঙ্খল জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। প্রীতির বাবা এসব জানতে পারলে প্রীতিকে বাড়ি থেকে বের করে দেবে ভেবে ওর মা, ওর বাবাকে কিছুই জানাতে সাহস পায়না।

কিছুদিন পর পেপার এ একটা নিউজ দেখে প্রীতির বাবা হটাৎ করে বাড়িতে এসে হাজির হন। তিনি ঠিক যেটার আশঙ্কা করেছিলেন সেটাই হয়েছে , কিন্তু প্রীতি নয় প্রীতির মাকে পুলিশ অ্যারেস্ট করে নিয়ে গিয়েছে । কারণ টা হলো একটি মেয়েকে খুন করা হয়েছে আর তার বাবা মা প্রীতির নামে কেস করেছে। এই বলে যে ” প্রীতি নামের মেয়েটি জোর করে আমার মেয়েকে সেদিন রাত্রে ওদের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল তারপর মাঝ রাত্রে খবর দিলো আমার মেয়ে সুইসাইড করেছে , সবটাই মিথ্যে,বানানো , আসলে ওই আমার মেয়েকে খুন করেছে।” পুলিশ অ্যারেস্ট করতে এলে খুনের দায় প্রীতির মা নিজের ওপর নিয়ে প্রীতিকে নির্দোষ বলে নিজে জেলে যায়।

প্রীতির বাবা প্রীতির কাছে সবটা জানতে চাইলে, সে কিছুতেই তার বাবার প্রশ্নের উত্তর দেয় না। মেয়ের কুকীর্তির কথা যে এভাবে তাকে নিউজ থেকে জানতে হবে তা তিনি কোনোদিন আশা করেন নি।

মামলাটা এখনও চলছে , বিচারক তারিখের পর তারিখ দিচ্ছেন, কিন্তু এখনও প্রমাণিত হয়নি আসল দোষী কে। প্রীতি নিজের ভুল হয়তো বুঝেছে। কারুর সাথে কথা না বললেও নিজের মায়ের সাথে কথা বলে। জেলে গিয়ে মায়ের সাথে দেখা করে । সে তার মা কে কথা দিয়েছে সে নিজে উকিল হয়ে তার মা কে নির্দোষ প্রমাণিত করবে। কিন্তু আসল দোষী কে? আর প্রীতি জোর করে সেদিন কেন মেয়েটাকে এনেছিল? এই প্রশ্নের উত্তর আজও মেলেনি। কে দোষী আর কে নির্দোষ তা জানা না গেলেও, এটা অবশ্যই জানা গেছে একটি মা নিজের মেয়ের জন্য নিজের জীবনটা কিভাবে নরক বানাতে পারে! মা সন্তানের জন্য সব করতে পারে যা হয়ত অলৌকিক কিছুও হতে পারে।

মা নিয়ে গল্প
মাকে নিয়ে গল্প মা নিয়ে গল্প image
<

মা শিক্ষিত বা অশিক্ষিত হননা। মা হন ভগবানের রূপ ,যিনি নিজের সবটুকু দিয়ে তার সন্তান কে গড়ে তোলেন সর্বশ্রেষ্ঠ রূপে । মায়ের বিচার যে করে সে প্রকৃত সন্তান হওয়ারই যোগ্য নয়। আর মা -ই হলো চলমান জীবনের গাড়ির ইঞ্জিন , যাকে ছাড়া জীবন টাই বৃথা!

পড়ুন- জীবনের চরম বাস্তবতা- নেতাদের দাদাগিরি 

প্রেরক- আলোরানি মিশ্র

‘মা’ এক অব্যক্ত ভালবাসা শীর্ষক গল্পটির পরিপূর্ণতা যার কলমে- মাকে নিয়ে গল্প
আপনার লেখা গল্প সহজেই আমাদের পাঠান- charpatrablog@gmail.com -এর মাধ্যমে। 
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

“মাকে নিয়ে গল্প। মা নিয়ে লেখা। মা নিয়ে গল্প ”

Spread the love

Leave a Reply