ভাই বোনের ভালোবাসা এমন একটি বিষয়, যা অন্যান্য ভালোবাসার থেকে অনেকটাই ভিন্ন, এই ভালবাসায় আছে কিছুটা শাসন কিছুটা কথা কাটাকটি কিছুটা মারামারি। কিন্তু দিন শেষে একটাই কথা, তারা একই রক্তে গড়া ভাইবোন।

আজকের এই সুন্দর বাংলা গল্পটি আপনাদের অনেক ভালো লাগবে, এই আশাই রাখি।

ভাই বোনের ভালোবাসা। হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া গল্পঃ-

ভাই বোনের ভালোবাসাঃ- ১

টিউশন থেকে ফিরতেই দেখি দিদির পড়ার টেবিলে কয়েকটা লাড্ডু। দিদি ওদিকে মুখ ফিরিয়ে কি যেন করছে। চুপিচুপি গিয়ে গপ করে একটা লাড্ডু মুখে পুরে হাতে একটা নিয়ে কেটে পরলাম। জানি দিদি জানতে পারলেই বকা খেতে হবে। ও সহ্য হয়ে গেছে আমার!

কিছুক্ষন পর দিদি আমাকে ডাকতে লাগল। এই বার আমি গেছি! দিদির কাছে যেতেই দিদি লাড্ডুর প্যাকেট টা বাড়িয়ে দিয়ে বলল নে, দুটো নে। আমি বললাম আমি তোর আগেই নিয়ে নিয়েছি। দিদি বলল, তাতে কি হয়েছে, আমার ভাইকেই তো দিচ্ছি।

আশ্চর্য দিদির মধ্যে এত পরিবর্তন আসল কেমন করে! সব বুঝেছি, দিদি আসলে মায়ের হাতে আমাকে বকা খাওয়ানোর প্ল্যান করছে।

কিন্তু দিদি মাকে কিছুই বলল না।

রাতে খাওয়ার টেবিলে দিদির থালা থেকে কাকের মত ছো মেরে মাংসের টুকরোটা নিয়ে নিলাম। কিন্তু দিদি এবারও কিছু বলল না। মা বলল :- আর অসীম করছিস টা কি? তোর দিদি আর আছে কয়দিন এই বাড়িতে বলত?

ভাই বোনের ভালোবাসা
ভাই বোনের ভালোবাসা

আছে কয়দিন মানে! দিদি কোথায় যাচ্ছে? মায়ের সংক্ষিপ্ত উত্তর জামাইবাবুর ঘরে। আর খেতে পারলাম না। দম দম করে নিজের ঘরে চলে গেলাম।

কিছুক্ষন পর দিদি আমার রুমে আসতেই নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না। দিদির চুলে হালকা টান মেরে বললাম :- তুই আমাকে ছেড়ে চলে যাবি রে মুটকি! তুই চলে গেলে আমি কাকে বিরক্ত করব বলত! আমি আর কথা বলতে পারলাম না। দিদিকে জড়িয়ে ধরে কাদতে থাকলাম।

ছোট বেলা থেকে যে দিদিকে দেখে আসছি। যার সাথে এত মারামারি ঝগড়া সে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে, এক অচেনা লোকের কাছে। না না এটা আমি মেনে নিতে পারব না।

দিদিও অনেক ইমোশনাল হয়ে গেছে। কাদো কাঁদো গলায় দিদি বলল – ধুর পাগল ভাই আমার, তুই বড় হয়েছিস না। কাদছিস কেন! তোর আমার মধ্যে যে সম্পর্ক সেটা কোনো দূরত্বও দমাতে পারবে না রে। নে এবার ঘুমিয়ে পর লক্ষী ভাই আমার। কাল তোকে তোর ফেবারেট চকলেট দিব।

আমি চাই না, চকোলেট আমি শুধু আমার দিদিকেই চাই। দিদিও নিজেকে সামলাতে পারল না, আমার কপালে চুমু দিয়ে চোখে কিছু একটা পড়েছে বলে চোখ ঘষতে ঘষতে আমার রুম থেকে বেরিয়ে গেল।

পড়ুনঃ- ' সন্দেহ' একটি অন্যরকম ভালোবাসার গল্প 

ভাই বোনের ভালোবাসাঃ-২

সকাল থেকেই প্রতিমের মনটা ভালো নেই, কারণ দিদির হাত থেকে পড়ে তার মোবাইলের ডিসপ্লে কিছুটা ভেঙ্গে গেছে। রাগে গজগজ করতে থাকা প্রতিম, দিদির উপর রাগ ঝাড়তে থাকে। দিদি আর রাগ সহ্য করতে পাড়ল না, সেও বলে উঠল- “আমি কি ইচ্ছে করে ভেঙ্গেছি?” দিদির এই কথা শুনে প্রতিম আরও রেগে যায়। নানান ভাবে দিদির উপর রাগ ঝাড়তে থাকে। দিদির মেকআপ, ফান্ডেশন সব ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেয়, এমনকি ছাড়ে নি, দিদির প্রিয় নাক ছাবিটাকেও। সেটাকেও সে নষ্ট করে দেয়। দিদি সবকিছু দেখেও চুপ করে থাকে। এদিকে প্রতিম রাগে গজগজ করতে করতে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়।

সেই মোবাইল নিয়ে নদী পাড়ে বসে আছে সে। তার প্রিয় মোবাইল দিদি ভেঙ্গে ফেলেছে। দিদিকে মোবাইল ছুঁতে দেওয়াটাই ভুল হয়েছে। নিজে তো কোনোদিনও মোবাইল কিনতে পাড়বে না, শুধু ভাইয়ের উপর অত্যাচার করে, এই তো সেদিন বিছানায় রাখা ব্লুটুথ হেডফোনের উপর বসতে যাচ্ছিল দিদি, সে যদি না চিৎকার করে উঠত তাহলে হেডফোন জোড়া আজ হয়ত আস্ত থাকত না।

bengali heart touching story
bengali heart touching story

সেই ভাঙ্গা মোবাইল পুনরায় অন করে প্রতিম। সে দেখে নোটিফিকেশন বাড়ে ক্যালেন্ডার থেকে আসা একটি নোটিফিকেশনে লিখা আছে- “Happy Raksha Bandhan, Having a sister is like having a best friend you can’t get rid of. You know what you do, they’ll still be there.” কথা গুলি তার শরীরে যেন বিদ্যুতের মত শিহরণ খেলে গেল। মুহূর্তে তার রাগ উধাও হয়ে গেল। আজ রাখি পূর্ণিমা! কিন্তু সে তার দিদিকে যাচ্ছেতাই বলে ফেলেছে। এমনকি দিদির প্রিয় জিনিস গুলিও ভেঙ্গে ফেলেছে। ঈশ, রাগের মাথায় দিদিকে অনেক যন্ত্রণা দিয়ে ফেলেছে সে।

সে আর দেড়ি করল না। সে তাড়াতাড়ি দোকানে গিয়ে তার দিদির নষ্ট করা রিং বানিয়ে নিল, দিদির নষ্ট করা সব জিনিস সে আবার কিনে ফেলল- দিদিকে যে সে বড্ড কষ্ট দিয়ে ফেলেছে আজ। মায়ের পড় দিদিই সবথেকে কাছের, সবথেকে আপন। দিদি সবথেকে প্রিয় বন্ধু , আর সেই প্রিয় বন্ধুকেই সে আঘাত দিয়ে ফেলল! না না কাজটা সে ঠিক করে নি। অনেকের তো দিদিও নেই। তারাই জানে দিদি না হওয়া কত্তটা বেদনা দায়ক!

সে বাড়ি ফিরতেই দেখল, দিদি কাঁসার থালায় কি যেন একটা সাজাচ্ছে! সে কাছে গিয়ে দেখে, দিদি ধান-দূর্বা দিয়ে থালা তৈরি করছে, আর রয়েছে একটি রাখি। আর টেবিল, প্রতিমের প্রিয় খাবারে ভর্তি। দিদি প্রতিমকে দেখে বলল- “তুই এলি ভাই! যা তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে আয়।“ দিদির এই কথাটা শুনে প্রতিম আর চোখে জল আটকাতে পাড়ল না, যে দিদিকে সে কিছুক্ষণ আগে এত্ত যন্ত্রণা দিল, তার প্রিয় সব জিনিস ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিল সেই দিদি একটি কথাও না বলে ভাইয়ের জন্য এত্ত কিছু আয়োজন করে ফেলেছে!

তার হাঁতে থাকা ব্যাগ গুলি সে দিদির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় বলল- “সরি রে দিদি, রাগের মাথায় তোকে অনেক কিছু বলছি, তোর জিনিস নষ্ট করেছি। কিন্তু এটা বুঝিনি যে, তুই তো আর ইচ্ছে করে সব করিসনি। তোর জিনিস নষ্ট করছি দেখেও তুই কিছু বললি না। এই নে তোর সব জিনিস আমি আবার নিয়ে এসেছি। তুই কিছু মনে করিস না, প্লিজ প্লিজ। এরকম আর কোনোদিনও করব না। 

হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া গল্প
হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া গল্প
<

দিদি প্রতিমকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল- “ধুর পাগল, কাঁদছিস কেন?আমি কিছু মনে করতে যাব কেন বলতো? দুষ্টুমি করবে, আমার সাথে মারামারি করবে, আমার চুল টানবে, এই না হলে আমার ভাই। আর ওই সব জিনিস আমার কাছে কিছুই না। যে দিদির কাছে ভাই নামে একটা বিশাল সম্পদ আছে, তার অন্য সম্পদের কি দরকার বলতো!” কথা গুলি বলতে বলতেই দিদির চোখের কোনাতেও জল চলে এসেছে। এই জল দুঃখের জল নয়, এই চোখের জল আনন্দের চোখের জল, এই চোখের জলে মিশে আছে স্নেহ-মমতা। আর এই কারণেই হয়ত বলা হয়- “দিদি মায়ের আরেক রূপ”

© কপিরাইট ছাড়পত্রের অ্যাডমিনের অধীনে, অনুমতি ব্যতীত গল্পের অন্য কোনো মাধ্যমে পুনঃপ্রচার আইনত অপরাধ। ছাড়পত্রের নজরে বিষয়টি এলে, কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য হবে।

পড়ুনঃ- 

দুটি অসাধারণ শিক্ষণীয় গল্প 

জীবন যুদ্ধের গল্প 
এক ক্লিকেই আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

“ভাই বোনের ভালোবাসা। bengali heart touching story।”

Spread the love

Leave a Reply