অসাধারণ একটি স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা গল্প নিয়ে আজকের আয়োজন। ভালোবাসা থেকে সন্দেহ এবং শেষে সন্দেহকে কিভাবে ভালোবাসার মাধ্যমে মিটিয়ে নেওয়া যায় তারই নির্যাস হল আজকের ভালোবাসার গল্প টি।
স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা গল্পঃ- সন্দেহ
প্রতিদিনের মত সেইদিনেও আমি এবং আমার অফিসের দুইজন বন্ধু টিফিনের টাইমে একটি জনপ্রিয় নিষিদ্ধ লাইভ স্ট্রিমিং সাইটে দেশ- বিদেশের বিভিন্ন সুন্দরী মেয়ের ছোট ছোট ড্রেস পরিধান করা নাচের দৃশ্য উপভোগ করছিলাম। যদিও আমরা সবাই বিবাহিত, ২ বছর আগেই আমারও বিবাহ হয়ে গেছে। কিন্তু জানিনা কেন, এই সাইটের এই বিষয়টি আমাদের দারুন আনন্দিত করে। পুরো টিফিন টাইমটা আমরা এইভাবেই কাঁটাই।
এমনই একদিন টিফিনের সময় সেই সাইটে আমরা সময় কাটাচ্ছিলাম। স্ক্রল করে একের পর এক মজাদার ভিডিও আমরা দেখছি। কিন্তু একজনের ভিডিওতে এসে আমার চোখ থেমে গেল। মেয়েটা দেখতে অনেকটা আমার স্ত্রী স্নেহার মত। ক্যাট মাক্স পরিধান করে থাকায়, যদিও তার মুখটা ভালমত দেখা যাচ্ছে না।
পরক্ষনেই নজরে এল, সেই মেয়েটার হাতের দিকে। তার হাঁতে একটি গোলাপের ট্যাটু রয়েছে। ঠিক একই রকম ট্যাটু আমার হাতেও রয়েছে। ওয়েডিং অ্যানিভারসারিতে আমরা এই ট্যাটুটা বানিয়েছিলাম। কিন্তু স্নেহা এরকম করতে যাবে কেন! হয়ত আমার ভ্রম হচ্ছে কোথাও! তবুও সন্দেহের বাতাবরণ কিন্তু রয়েই গেল আমার মনে।
বাড়ি ফিরে, ভিডিওর সেই মেয়েটার পিছনের ব্যাকগ্রাউন্ডের জায়গাটার সঙ্গে মিল থাকতে পারে এরকম জায়গা আমার ঘড়ে আছে কি না ভাবতে লাগলাম। ভাবলাম মেয়েটা যে ছোট ড্রেসটা পরিধান করে ছিল খোঁজ লাগাতে হবে স্নেহারও সেরকম ড্রেস আছে কি না!

স্নেহাকে দেখালাম সে রান্না ঘড়ে ব্যস্ত আছে। আমি সোজা আমাদের রুমে চলে এলাম, রুমে এসে ব্যাগটা রেখেই শুরু করলাম তন্ন তন্ন করে খোঁজা। আলমারির সব কাপড় একে একে বাইরে বেড় করলাম কিন্তু কোথাও ভিডিওর মেয়েটির মত জামা খুঁজে পেলাম না।
মেয়েটিকে স্নেহা বলে সন্দেহ হত না, যদি না তার হাঁতে সেই ট্যাটুটা দেখতাম! আমার সুন্দরী বউ স্নেহা এরকম কাজ যে করবেনা সেটা আমি ভালমতই জানি। কিন্তু মন যে মানতে চাইছে না। ইতিমধ্যে রান্নাঘর থেকে স্নেহা রুমে আসতেই সে জিজ্ঞাসা করল, রুমের অবস্থা এরকম কেন? আমিও বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে বললাম, “আমার নীল রঙের টি-শার্টটা খুঁজে পাচ্ছি না।“
স্নেহা- “আমাকে বললেই হত, সব কাপড় বের করলে কেন?”
স্নেহার কণ্ঠস্বর শুনে মনে হল, যেন কিছুই হয়নি! আমার কি স্নেহাকে আমার সন্দেহের কথা বলে দেওয়া উচিত হবে! না, উচিত হবে না, কারণ যদি সেই মেয়েটা স্নেহা না হয়, তাহলে স্নেহা মিছিমিছি রাগ অভিমান করে বসে থাকবে।
পড়ুন- পোড়ো বাড়ির রক্ত খেঁকো ভূতুড়ে আয়না
সেই দিনটা চিন্তায় চিন্তায় এইভাবেই গেল। পরের দিন অফিসে টিফিনের সময় আবার সেই সাইটে গিয়ে মেয়েটার লাইভ স্ট্রিমিংএর খোঁজ করতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর পেয়েও গেলাম। কিন্তু সেই দিন স্নেহার উপর সন্দেহটা আরও বেড়ে গেল। আমিও মেয়েটার ভিডিওর নীচে কমেন্ট করলাম- “আচ্ছা তুমি কি ব্যালেট ডান্স পারো।“ কিছুক্ষণের মধ্যেই মেয়েটা ব্যালেট ডান্স শুরু করল।
আমি ভালমত জানি যে, স্নেহা ব্যালেট ডান্সে খুবই পারদর্শী। মেয়েটার প্রতিটা ডান্স মুভ একদম হুবহু স্নেহার নাচের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে! আশ্চর্য, আমার স্ত্রী কি তবে কি তবে…!
সেদিন অফিস থেকে বাড়ি ফিরেই স্নেহার সঙ্গে আর আগের মত ভাব জমল না, ছিঃ আমার স্ত্রী ছোট ছোট ড্রেস পরিধান করে, ওই সাইটে লাইভ স্ট্রিম করছে! না জানি কোন মানুষ কি নজরে তাকে দেখছে! ছিঃ ছিঃ…!
বাইরে প্রচুর বৃষ্টি, কিন্তু সেই বৃষ্টির থেকেও অধিক বর্ষণ আমার হৃদয়ে চলছে। আমার স্ত্রী কিভাবে এই বাজে কাজটা করে! এটা তার নেশা হয় গেছে, প্রতিদিন একই সময়ে সে ওইভাবেই লাইভ স্ট্রিম করে, সবাইকে ছোট ড্রেস পরে ডান্স দেখায়। বন্ধুরা জানতে পারলে আমার মান সম্মান সব মাটিতে মিশে যাবে।




স্নেহা সেই রাতে আমার আদর পেতে চাইলেও, আমি মাথা ব্যাথার ভান করে, বেড রুম থেকে বেড়িয়ে টিভির রুমের সোফায় ঘুমাতে গেলাম। কিন্তু সারারাত আমার স্ত্রীর কীর্তি কলাপের কথা মনে পরতে লাগল। তার এই সব কুকীর্তি আমার চোখের সামনে ভাসছে। সেই রাতে আমার আর ঘুম আসেনি।
আমার কি তাকে জিজ্ঞাসা করা উচিত হবে যে, সে এই সব কেন করছে! কিন্তু তাহলে তো আমিও ধরা পরে যাব। কারণ আমিও যে সেই নিষিদ্ধ সাইটের একজন দর্শক।
এরপরের দিন অফিসে অপেক্ষা করছি কখন স্নেহা বা সেই মেয়েটা লাইভে আসবে। আর বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না। কিন্তু সেই দিন মনে কিছুটা হলেও শান্তি এল। কারণ আমি আজ সকালে বেশ ভালভাবেই দেখে এসেছি যে, স্নেহা নীল রঙের নেলপলিস পরে ছিল। কিন্তু ভিডিওর মেয়েটি লাল রঙের নেল পলিস পরে আছে।
আমি জানতাম, স্নেহার উপরে আমার সন্দেহ মিথ্যে। স্নেহা এরকম কাজ কখনো করতেই পারে না। খুশি হয়ে সেদিন অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে, স্নেহার জন্য তার পছন্দের সন্দেশ নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হলাম।
বাড়িতে ফিরে স্নেহাকে দেখে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে তার হাঁতে সন্দেশের বাক্সটা দিতে গিয়েই আমার মাথায় যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল। আশ্চর্য! আজ সকালে অফিস যাওয়ার সময় আমি পরিষ্কার ভাবে লক্ষ্য করেছিলাম যে, স্নেহার হাতের নেল পলিসের রং ছিল নীল, আর এখন অফিস থেকে ফিরে দেখছি লাল রঙের নেল পলিস!
পড়ুন- বাবা- একটি শিক্ষণীয় গল্প
আমার মনের মধ্যে মেঘ কাঁটিয়ে সূর্য উঠা, সন্দেহের ঘন মেঘটা আবার ঘনীভূত হয়ে গেল। আমি আর চুপ থাকতে পাড়লাম না। আমি স্নেহাকে জিজ্ঞাসা করলাম- “তুমি সকালে নীল রঙের নেল –পলিস পরে ছিলে না! এখন তো আবার লাল দেখছি!”
স্নেহা- “ওঃ বাবা, তুমি তাহলে এবার আমার দিকে একটু খেয়াল দেওয়া শুরু করেছ তাহলে! শুনে খুব আনন্দিত হলাম যে, তুমি ধীরে ধীরে আমার প্রতি খেয়াল রাখছ।“
স্নেহা মৃদু হেঁসে চলে যায়। সেই রাতেও আমার ঘুম হল না। আর নয়, স্নেহার এই অসভ্য কাজ আমাকে বন্ধ করতেই হবে। কিন্তু আমার কাছে তার এই কুকীর্তির যে কোনো প্রমান নেই!
পরের দিন অফিসের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে গেলাম। প্রতিদিনের মত স্নেহা আমাকে বাসে উঠিয়ে দিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে গেল। কিন্তু আমার উদ্দেশ্য অফিসে যাওয়া নয়, আমার উদ্দেশ্য একদম ভিন্ন।
কিছুদূর যাওয়ার পড়েই আমি বাস থেকে নেমে বাড়ির দিকে হাঁটতে শুরু করলাম। নিঃশব্দে বাগানের বসার জায়গাটায় গিয়ে ঘাপটি মেরে বসে থেকে প্রতীক্ষা করতে লাগলাম কখন স্নেহা লাইভে আসবে।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর স্নেহা আবার সেই ছোট ড্রেস পরে লাইভে এসেছে। আমি আর দেড়ি করলাম না। দরজায় একটু ঠেলা দিয়ে বুঝলাম, ভিতর থেকে বন্ধ করা আছে। আমার কাছে থাকা চাবিটা দিয়ে নিঃশব্দে দরজাটা খুলে সোজা আমাদের রুমের দিকে পা বাড়ালাম। রুমের দরজা লক করা নেই।
দরজার ফাঁক দিয়ে ভিতরের দৃশ্য দেখেই আমার সমগ্র শরীরের টনক নড়ে গেল, লাইভের সেই মেয়েটাই স্নেহা। আমার সন্দেহ সঠিক। আমি দড়াম করে দরজা খুলে রুমে ঢুঁকে গেলাম। আমাকে আচমকা এই ভাবে দেখে স্নেহা ঘাবড়ে গেছে, সে তাড়াতাড়ি মোবাইলটা অফ করে, আমার দিকে তাকিয়ে থতমত হয়ে বলল- “তু তু তু, তুমি এ এ এ এই সময়ে…!”
আমি- “হ্যাঁ একটা দরকারি ফাইল ফেলে গেছিলাম, সেটাই নিতে এলাম। কিন্তু তুমি এগুলি কি করছ!”
আমি জানি এইসব সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে শান্ত মাথায় আলোচনা করতে হবে। তাই শান্ত হয়ে বললাম- “স্নেহা তুমি এমন বেশ ধারণ করেছ কেন! ওই ভাবে ছোট ছোট ড্রেস পরিধান করে সবার সামনে নিজের শরীরকে উজাড় করছ কেন?”




স্নেহা আমাকে ভালমতই চেনে, তাই সে কাঁদতে কাঁদতে সরাসরি সত্যি কথাটাই বলল- “তু তু তুমি আমাকে সময় দাও না কেন! তুমি আআআআমাকে আদর করো না কেন! দেখ দেখ মানুষ আমাকে কত প্রশংসা করছে, অথচ তোতোতোমার কাছে আমি সশরীরে উপস্থিত থাকলেও তুমি আমার খেয়াল রাখো না।“ এই বলে সে আমাকে ভিডিওর কমেন্টগুলি দেখাতে লাগল।
আমি কমেন্ট গুলি দেখে আর নিজেকে থামাতে পাড়লাম না, এত রাগের মাঝেও হো হো করে হেঁসে উঠলাম- “পাগলী আমার…” এই বলে আমি আমার মোবাইল বের করে তার ভিডিওতে করা আমার কমেন্ট গুলি দেখাতে লাগলাম।
তাকে কাছে টেনে কপালে একটা চুমু খেয়ে জড়িয়ে ধরে বললাম- “আমি আদর করি না বলে, তোমাকে সবার সামনে নিজেকে উজাড় করে দিতে হবে…!” স্নেহা অবিরাম কেঁদেই যাচ্ছে।
আমি বুঝতে পেড়েছি, আমার স্ত্রীকে সময় দেওয়া উচিত, নাহলে সে নিজের কামনা পূর্ণ করতে এর থেকেও খারাপ রাস্তা বেঁছে নিতে পারে। তাই আর কোনো ঝামেলা না করে, আমি স্নেহাকে সময় দেওয়া শুরু করি।
আর সেই নিষিদ্ধ সাইটটি থেকে চিরদিনের মত আমরা নিজেকে দূরে সরিয়ে দিই। না জানি এরকম মিথ্যে প্রশংসার জালে পরে কতই না মেয়ে তাদের শরীর সবার সামনে উজাড় করে দিচ্ছে! যদি পুরুষেরা এই সমস্ত নিষিদ্ধ জিনিসে সময় না কাঁটিয়ে নিজের প্রিয় মানুষটিকে সময় দেয় তাহলে হয়ত সম্পর্কের বন্ধনটা মজবুত হবে, আর কোনো স্ত্রী বা মেয়েও এই সব ভুল রাস্তা বেঁছে নিবে না!
পড়ুন- মেয়েদের জীবনের কিছু বাস্তব গল্প
© reserved by admin of charpatra.com Re-use of this content is illegal. charpatra.com will take legal action against the violator.
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- ফেসবুক Group - গল্প Junction ফেসবুক- ছাড়পত্র টেলিগ্রাম- charpatraOfficial WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
“স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা গল্প। ভালোবাসার গল্প বাংলা। সন্দেহ ভালোবাসা।”




কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।
দারুন লিখেছেন লেখাটা।বাহ্ আজকের প্রেক্ষাপটে লেখা আপানার রচনাটি অসাধারণ। সুন্দর বচ্চনভঙ্গি। অসাধারণ ভাবনা চিন্তা লেখাটাকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে।। দারুন লিখেছেন।