প্রথাগত শিক্ষার রাস্তায় না এগিয়েও কিভাবে একজন ছাত্রকে কোনো বিষয়ের সার বোঝানো যায় তার প্রতিফলন দেখানো হয়েছে প্রথম- “ছাত্র শিক্ষক সম্পর্ক নিয়ে গল্প” টিতে। আর দ্বিতীয় গল্পটিতে রয়েছে সার্টিফিকেটের অন্তরালে থাকা প্রকৃত শিক্ষার আসল বাহক।

ছাত্র শিক্ষক সম্পর্ক নিয়ে গল্প।। প্রকৃত শিক্ষাঃ-

ছাত্র শিক্ষক সম্পর্ক নিয়ে গল্প।। প্রকৃত শিক্ষকঃ-

বারুইপুর গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে সুমেধা। বাবা মা আর মেয়ে মিলে তাদের ছোট্ট পরিবার । সুমেধাকে তার বাবা মা ছোট থেকেই শিখিয়েছেন আত্মনির্ভরশীল হতে। তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন সুমেধা সেই ছোট থেকেই স্কুল এ প্রথম হয়ে এসেছে । এবার এর HS এক্সামে সে ব্লক এর প্রথম হয়েছে তাই ওর খ্যাতি ও চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে।

রেজাল্ট বেরোনোর পর থেকে অনেকেই সুমেধার বাড়িতে টিউশন পড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে এসেছে। কিন্তু সুমেধা নিজের পড়াশোনার কথা ভেবে সবাইকেই না করেছে । কিছুদিন পর তার গ্রামের এক কাকু এসে সুমেধার কাছে কাকুতি মিনুতি করতে শুরু করলেন , তিনি বললেন ” মা তুইই আমার শেষ ভরসা। আমার মেয়ে হিয়াকে তো তুই চিনিস , পড়াশোনাতে একদম মন নেই । সারাদিন ফোন নিয়ে বসে থাকে, আর সামনের বছর ওর তো HS এক্সাম, আর দেখ একটু ও পড়ে না এমনকি টিউশন ও যায় না।

সে বলে সাইকেলে চেপে টিউশন গেলে পায়ে ব্যাথা হয় তাই আমি যেতে পারব না। একটাই মেয়ে সেও যদি ফেল করে তাহলে আমার আর মান সন্মান থাকবে না । তুই এই পারবি মা,যেমন করে হোক পাস নম্বর টুকু যেন তুলতে পারে।

ছাত্র শিক্ষক সম্পর্ক নিয়ে গল্প
ছাত্র শিক্ষক সম্পর্ক নিয়ে গল্প source

সুমেধা বললো কাকু আমি নিজেই সবে মাত্র HS পাস করলাম আর আমি HS এর স্টুডেন্ট পড়াব। এটাও কি সম্ভব আদৌ বলতো। এতটা অগাধ বিশ্বাস করো না আমার ওপর ।

কাকু বললেন মা তুই এই শেষ ভরসা আমার নইলে আর কার কাছে যাবো বল । তুই দেখ নিশ্চই পারবি। এত কথা শোনার পর আর সুমেধা না করতে পারলো না । সে বলল ঠিক আছে কাল থেকে পাঠিয়ে দিও। পরের দিন থেকে হিয়া টিউশন এলেও পড়া কোনোদিনও করে আনছিল না। সুমেধা এক সপ্তাহ এসব সহ্য করার পর হিয়ার বাবাকে ডেকে পাঠাল, বললো ” কাকু এই মেয়েকে আমি পড়াতে পারবো না ” । আবার কাকুর একই কথা ” তুই ছাড়া কার ওপর ভরসা করবো বল!”

সুমেধা সিদ্ধান্ত নিলো হিয়াকে ভালো রেজাল্ট করিয়েই ছাড়বে নইলে কাকু তাকে ছাড়বে না।

পরের দিন থেকে টিউশন এলে সুমেধা আর পড়াশোনার কথা বলে না , শুধু জিজ্ঞাসা করে স্কুলে কি হলো, তার বন্ধুদের নাম কি, তার কি করতে ভালো লাগে , তার পছন্দ অপছন্দের বিষয় কি কি , এসব জানতে শুরু করে । কিছুদিনের মধ্যেই সুমেধা হিয়ার ভালো বন্ধু হয়ে উঠলো। এবার আস্তে আস্তে গল্পের ছলে পড়া বোঝানো, পড়া ধরা , এসব শুরু করলো সুমেধা। হিয়া একদিন ও টিউশন কামাই করে না আর। প্রতিদিন সুমেধার সাথে সময় কাটাতে ওর বেশ ভালো লাগে তাই সময়ের আগেই চলে আসে। এভাবে দেখতে দেখতে ৮ টা মাস কেটে গেলো ।

HS এক্সাম সামনেই ,হিয়া জিজ্ঞাসা করলো সুমেধা কে ” দিদি আমি কিছুই পারবো না মনে হয় , আমি তো বই পড়ি এই নি তেমন” সুমেধা হিয়ার কাঁধে হাত রেখে বলল তোর চিন্তা কিসের , একদম ভয় পাবি না । আমি তো আছি নাকি । প্রশ্ন পত্র দেখার পর সব বুঝতে পারবি। হিয়া কিছুই তেমন বুঝলো না কারণ ও জানতো যে সারাবছর ও সুমেধার কাছে নানান পড়াশোনার বিষয়ে গল্পঃ শুনেছে , কিছু লিখেওচে কিন্তু সিলেবাস ভিত্তিক তো কিছুই পড়ে নি । তবে সুমেধার প্রতি ওর অগাধ বিশ্বাস তাই আর এক্সাম নিয়ে চিন্তা না করে সুমেধা ওকে যা বলে ও তাই তাই করে ।

HS এক্সাম এর প্রথম দিন , ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন পত্রটা খুলছিল হিয়া কিন্তু খোলার পর অবাক , যাসব প্রশ্ন এসেছে সেগুলো তো তার সুমেধা দি আগেই এসব নিয়ে গল্প করেছে । প্রথম দিন তার এক্সাম খুব ভালোই হয় । পরের পর সব এক্সাম এই ভালো হয় কিন্তু সুমেধা তাকে এডুকেশন সাবজেক্টটা নিয়ে কোনোদিনও কিছু বলেও নি বা করায় ও নি তাই ওটা নিয়েই ওর আশঙ্কা থেকে যায়।

এক্সাম এর পর যখন হিয়া, সুমেধার বাড়ি যায় দেখা করতে তখন সুমেধার মায়ের কাছে সোনে, হিয়ার জন্যই এতদিন সুমেধা গ্রামে ছিল ,, তার এক্সাম শেষ শুনে সে শহরে পড়াশোনার জন্য চলে গেছে । হিয়ার মন খারাপের সাথে সাথে রাগ ও হয়।
রেজাল্ট এর দিন হিয়ার বাবা অধীর আগ্রহে বসে আছেন কখনো ১০ টা বাজবে আর সাইট এ রেজাল্ট পাবলিশ হবে । ১০ টা বাজতে ঠিক তখন ৫ মিনিট বাকি , হিয়ার বন্ধ ঘরে কে যেন এসে কড়া নাড়ে,, হিয়া চিৎকার করে বলে আজ কেউ আমাকে বিরক্ত করবে না ।

কিন্তু বারবার কড়া নাড়ার আওয়াজে রাগে গজগজ করতে করতে গিয়ে হিয়া দরজা খোলে , দেখে সামনে দাড়িয়ে তার প্রিয় সুমেধা দিদি। আধো আধো গলায় কাঁদতে কাঁদতে বলে তুমি না বলেই আমায় ছেড়ে কেন চলে গিয়েছিলে। ইতিমধ্যে হিয়ার বাবাও ছল ছল দৃষ্টিতে হাত জোড় করে সুমেধার সামনে এসে বলে মা তুই তোর কথা রেখেছিস , আমি কি বলবো খুঁজে পাচ্ছি না আর । হিয়া তার বাবার হাত থেকে ফোন টা নিয়ে দেখে সে এই প্রথম বার ফার্স্ট ডিভিশন এ পাশ করেছে আর এডুকেশন এও ওর পাস মার্ক উঠে গেছে । সুমেধা পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে গেলে সুমেধা ওর হাত টা ধরে বলে ধুর খেপি তুই না আমার বোনের মতো মাত্র ১ বছর এর ছোটো। আর তুই আবার আমার পায়ে কি হাত দিবি ?

প্রকৃত শিক্ষক
প্রকৃত শিক্ষক

হিয়া কাঁদতে কাঁদতে বলে দিদি প্রকৃত শিক্ষক আর প্রকৃত শিক্ষা যে আসলে কি আমি তা তোমার কাছে শিখেছি ।তাই আজ তুমি মানা করলেও আমি শুনবো না ,এই বলে সে সুমেধার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে । সুমেধাও কেঁদে ফেলে । আজ শিক্ষক আর শিক্ষা উভয়ের এই জয় হয়েছে তা সুমেধা প্রমাণ করেছে।
প্রকৃত শিক্ষক হওয়ার জন্য বয়স নয় মানসিকতার প্রয়োজন। যোগ্য নাগরিক হতে গেলে পুঁথিগত শিক্ষা ছাড়াও নৈতিক শিক্ষার প্রয়োজন। শিক্ষকদের হাতেই থাকে সেই শক্তি যা দিয়ে তারা গড়ে তুলতে পারেন পরের প্রজন্মকে শ্রেষ্ঠ নাগরিক হিসেবে। একজন শিক্ষকের হাত ধরেই শুধুমাত্র গড়ে উঠতে পারে এক সুশৃঙ্খল সভ্য সমাজ।

আলোরানি মিশ্র

“ছাত্র শিক্ষক সম্পর্ক নিয়ে গল্প” শীর্ষক গল্পটি পরিপূর্ণতা পেয়েছে যার কলমে-
আলোরানির লেখা কয়েকটি অনবদ্য গল্প- 

ছাত্রদের সফলতার গল্প- বিজয়ী 

সেরা বন্ধুত্বের গল্প- রুনিমা

প্রকৃত শিক্ষাঃ- সার্টিফিকেট

তখন স্কুলে খুব হৈ হৈ কান্ড। স্কুলের দিনগুলো বড় সুন্দর ও নস্টালজিক। স্বাধীনতা দিবসের জন্য অনেক অনেক ছবি আঁকতে হবে। দলে দলে ভীড় করছে অনেক স্টুডেন্ট। রঙে তুলিতে চতুর্দিক একাকার। দিদিমণিরা স্টুডেন্টদের এমন আগ্ৰহ ও উদ্যোগ দেখে বড়োই আনন্দিত। নানা জনকে নানা দায়িত্ব দেওয়া হলো। সবাই খুব খুশি। খুশি আরেকজনও, মিঠাই। তার উপরেও আছে আঁকার দায়িত্ব। মিঠাই তার দলবল কে নিয়ে খুব নিষ্ঠার সাথে কাজ শুরু করে।

কিন্তু হঠাৎ ছন্দ পাল্টে যায় একটা কথায়, তুলিটা থেমে যায় একটা কথায়, অপমানে নিমজ্জিত হয় একটা কথায়, আচ্ছা তোর কাছে কি আঁকা শেখার কোর্স এর সার্টিফিকেট আছে! নিশ্চ্য়ই নেই, তাহলে তুই কেন আঁকছিস? সর এই আঁকাটা পুরোটাই মুছতে হবে, ঠিক হয়নি একদম।

চোখের সামনে গোটা ছবিটা পাল্টে যায়। মিঠাই চুপ করে দেখে তার সার্টিফিকেট পাওয়া বন্ধুদের হাতের কাজ। দিদিমণিরা ছবি তোলেন সকলের তবে মিঠাই থাকে না সেই ছবিতে। তার কাছে যে সেই প্রথাগত সার্টিফিকেট নেই।
এরপর অনেক দিন কেটে গেছে।হঠাৎ খবর তাদের এলাকাতেই একটা বড় ড্রইং কম্পিটিশন। আঁকার প্রতিযোগিতা। বিষয় ,বাস্তব চিত্র। মিঠাই এর বান্ধবী রা অংশগ্ৰহণ করে । মিঠাইও আড়াল থেকে অংশগ্ৰহণ করে।

প্রকৃত শিক্ষা
প্রকৃত শিক্ষা
<

যথাসময়েই প্রতিযোগিতা শুরু হয় এবং সবাই যে যার চোখে দেখা বাস্তবতা কে তুলিতে রুপ দেয়। মিঠাইও আঁকে তবে একটা সার্টিফিকেট আর সেখানে লেখা, আমার কাছে সার্টিফিকেট মানে এই একটা মাত্র কাগজ দেখিয়ে পাশে থাকা সুপ্ত প্রতিভার মানুষটাকে সুযোগ না দিয়ে অপমান করা নয়। বরং আমার কাছে সার্টিফিকেট বা শংসাপত্র সেটাই যেটা মানুষের কাজের উপর নির্ভর করছে, যোগ্যতার ভিত্তিতে নির্ভর করছে। আর তাকে যথাযোগ্য সুযোগ দেওয়া হচ্ছে নিজেকে প্রমাণ করার। সার্টিফিকেট ওয়ালা অনেক মানুষই আছে যারা সার্টিফিকেট ছাড়া মানুষের চেয়ে অনেক কম যোগ্যতা রাখে।

অবশেষে মিঠাইয়ের চোখে ও তার জীবনে ঘটা বাস্তবতাই সেরার সেরা সার্টিফিকেট টা পায় , যেটা সে সুযোগের সদ্ব্যবহার করে নিজ যোগ্যতায় পেয়েছে।

সুস্মিতা গোস্বামী

“সার্টিফিকেট” শীর্ষক গল্পটির পরিপূর্ণতায় –
সুস্মিতার লেখা কয়েকটি অনবদ্য গল্প- 

কলেজ লাইফের লাভ স্টোরি  

স্কুল জীবনের দুষ্টুমি- গন্ধ চক্রান্ত
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
Spread the love

Leave a Reply