একটি ভয়ানক ভুতের গল্প, তথা একটি রোমাঞ্চকর ভূতের গল্প নিয়ে আজকের আয়োজন। এই ভয়ঙ্কর ভূতের গল্প সম্পর্কিত আপনার মতামত আমাদের জানাতে ভুলবেন না কিন্ত!

রোমাঞ্চকর ভূতের গল্প। ভয়ঙ্কর ভূতের গল্প। ভুতুড়ে বাড়িঃ-

বাড়িটা কয়েকদিন থেকেই চোখে পড়ছে সৃজার। কিছু একটা তো আছে, এই বাড়িটাতে। অসীম আর সৃজা দুইজনই ছোট বেলা থেকেই বন্ধু। প্যারানরমাল জিনিসের প্রতি ঝোঁক, ওদের আগা-গোঁড়া থেকেই। দুইজনই একই ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। যেদিন থেকে সৃজা বাড়িটাকে দেখেছে, সেদিন থেকেই যেন তাকে কিছু একটা ভাবাচ্ছিল। কিছু বিশেষ একটা তো অবশ্যই আছে ওই বাড়িটাতে।

তার মনের মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকা এই ব্যাপারটা সে অসীম কে জানায়। দুইজনের মধ্যে ঠিক হয় তারা ওই বাড়িটাতে প্রবেশ করে দেখবে, যে ভিতরে কি আছে। সচরাচর ওই বাড়িটাতে কাউকেই যেতে দেখা যায় না। বাড়িটি অনেকটা ভূতুড়ে ধরনের। স্থানে স্থানে পলেস্তারা খসে পড়ছে, জানালাতে মাকড়শার জাল। রাতে কোনো দিনও ওই বাড়িতে আলো জ্বলে না।

অসীম আর সৃজা ঠিক করল, বাড়িটিতে ঢোকার আগে, স্থানীয়দের কাছে থেকে ওই বাড়িটা সম্পর্কে জানতে হবে। কিন্তু স্থানীয়রা কেউই সেই বাড়িটির ব্যাপারে বিশেষ কিছু বলতে পাড়ল না। সবার মুখে শুধু একটিই কথা- “বাড়িটিতে ঢোকা নিষেধ আছে।“ শেষে একজন বৃদ্ধের সাথে তাদের দেখা হল, তিনি তাদের জানালেন- “ওই বাড়িটিতে একসময় জমিদারেরা বসবাস করত, আমি সেই বাড়ির দারোয়ান ছিলাম। কাজের ফাঁকে ছুটি নিয়ে এখান থেকে ১০ ক্রোশ দূরে মামা বাড়িতে আমি বেড়াতে যাই, এসে দেখি ওই বাড়িতে কেউই নেই।

রোমাঞ্চকর ভূতের গল্প
রোমাঞ্চকর ভূতের গল্প ভুতুড়ে বাড়ি

এভাবে আমাকে কিছু না কয়ে, বাবুরা অন্যত্র চলে যাবেন আমি ভাবতে পারিনি। তারা যে ওই চলে গেলেন, ঠিক ওইভাবেই পড়ে আছে বাড়িটি। এমনকি তারা যখন অন্যত্র চলে যান বাড়িটিতে তালা পর্যন্ত দিয়ে যান নি। আমি পড়ে সদর দরজায় তালা এঁটে দিয়েছি।“

সৃজা কৌতূহল ভড়ে জিজ্ঞাসা করল- “তাহলে নিশ্চয়ই চাবি আপনার কাছে?” লোকটি মাথা নাড়ল। অসীম বলল- “একরাতের জন্য চাবিটা আমাদের দেওয়া যাবে? বাড়িটা ঘুরে দেখতাম।“ কথাটা শেষ হতে না হতেই লোকটা যেন রেগে গেল। তিনি বললেন- “ওই বাড়িতে কাউকে ঢুকতে দেওয়া যাবে না।“ অনেক কাকুতি-মিনতি করা সত্ত্বেও কাজের কাজ কিছুই হল না। লোকটি তার সিদ্ধান্তে অনড়।

এমনিতেই বাড়িটি সম্পর্কে বিশেষ কেউ জানে না, তারপর আবার যেই না একজনকে খুঁজে পাওয়া গেল তিনিও বাড়িটিতে প্রবেশ করতে বাঁধা দিচ্ছেন। “বুঝলি সৃজা, বাড়িটাতে অবশ্যই কিছু একটা ব্যাপার আছে, তা না হলে লোকটা প্রবেশ করার কথা বলতেই কেমন দুম করে রেগে গেল!”

সৃজা বলল- “আমারও তাই মনে হয়, আর এবার সেই বাড়িটাতে ঢোকার জন্য আমার মন আরও বেশি উৎসুক হয়ে যাচ্ছে।“

অবশেষে তারা ঠিক করে, দেওয়াল টপকে ভিতরে প্রবেশ করবে। কিন্তু টর্চ নিয়ে গেলে তো আবার সমস্যা, কারণ যদি কেউ টর্চের আলো দেখে ফেলে আর পুলিশে খবর দেয়, তাহলে গোটা প্ল্যান ভেঙ্গে যাবে। তাই তারা ঠিক করে, পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় তারা সেই বাড়িটিতে প্রবেশ করবে। আর ভিতরে গিয়ে টর্চ জ্বালাবে।

চারিদিকে পূর্ণিমার উজ্জ্বল আলো। কিন্তু এরই মাঝে সবারই অজান্তে দুই প্রাণী সবার অগোচরে একটি ভূতুড়ে বাড়িতে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। অসীম আরামে দেওয়াল টপকে পেরিয়ে গেল, কিন্তু সমস্যা দাঁড়াল সৃজাকে নিয়ে। সে দেওয়াল টপকানো তো দূর, দেওয়ালটির উঁচু প্রান্তটাকেও ঠিক মত ধরতে পাড়ছে না। অবশেষে নীচে কয়েকটি ইট দিয়ে সেও দেওয়াল টপকে ভিতরে প্রবেশ করল। কিন্তু দেওয়ালের পাশে থাকা একটি রড দিয়ে তার হাত অনেকটা কেটে গেল। রক্ত ঝড়তে লাগল। অসীম পকেট থেকে রুমাল বেড় করে সৃজার হাত বেঁধে দিল। অসীম কিছু বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু সৃজা বলল- “আমি জানি তুই কি বলতে চাস, যে ভাবেই হোক আজ এখান থেকে আমরা ফিরছি না, এখানে এসে পড়েছি যখন, বাড়িটি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে তবেই ফিরব। 

বাড়িটি দেখেই বোঝা যায়, অনেক কাল কেউ প্রবেশ করে নি। গাছ গুলিও মনমরা হয়ে আছে। গাছে বিশাল বড় বড় মাকড়শার জাল, তারা দুইজনে হাত দিয়ে সেগুলি সরাতে সরাতে এগোতে লাগল, কোনায় থাকা শ্যাওড়া গাছটা থেকে নাম না জানা এক পাখি, বিকট শব্দ করতে করতে উড়ে গেল। তবে তাদের কাছে এই সব নতুন কিছুই নয়, এর আগেও দুইজনে মিলে অনেক ভূতুড়ে বাড়িতে গেছে, ধীরে ধীরে সবই সহ্য হয়ে গেছে।

তারা একটি ঘড়ের দরজায় এসে উপস্থিত হল, কোনো দরজাতেই তালা দেওয়া নেই। নীচের তলায় তারা খুব একটা সময় কাঁটাল না, শীঘ্রই উপরের তলায় চলে গেল। অসীম একটি দরজায় হালকা ধাক্কা দিতেই দরজাটা কড়কড় আওয়াজ করে খুলে গেল। একটা বিশ্রী ভ্যাঁপসা গন্ধ তাদের নাকে এল। সৃজা টর্চ দিয়ে ঘড়ের ভিতরে দেখল, সিলিং-এ কিছু একটা জ্বলজ্বল করছে, সে যেদিকেই টর্চ জ্বালায় সেইদিকেই এই জ্বলজ্বল আলোটা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু তারা এতে বিন্দু মাত্র ভয় পেল না, কারণ তারা জানে এগুলি হল বাদুড়ের চোখ। দলে দলে বাদুড় ডানা ঝাঁপটাতে ঝাঁপটাতে পালাতে লাগল।

bengali vuter golpo
bengali vuter golpo রোমাঞ্চকর ভূতের গল্প

এটি একটি সংগ্রহশালা মনে হচ্ছে। ধীরে ধীরে তারা ঘড়ের ভিতর প্রবেশ করল। বোঝাই যাচ্ছে যারা এখানে ছিলেন তারা বেশ ধনবান ব্যাক্তি ছিলেন। দামী দামী আসবাব পত্র থরে থরে সাজানো আছে। তবে সব গুলোতেই পুরু ধূলোর আস্তরণ জমে গেছে।

হঠাৎ তাদের পিছনে বিকট আওয়াজ করে কিছু একটা পড়ে গেল, শব্দটা অনেকটা কাঁচ ভাঙ্গার শব্দের মত। আচমকা এই আওয়াজের জন্য বিন্দুমাত্র প্রস্তুত ছিল না দুইজনে। ভয়ে কিছুটা পিছিয়ে আসতেই দুইজনই একে অপরকে ধাক্কা খায়। তারা পিছন ঘুরে দেখল একটি ফটোফ্রেম পড়ে আছে, সেখানে একজন ব্যাক্তির ছবি। তিনিই হয়ত এই ভূত বাংলোর শাসক ছিলেন এক সময়।

তারা আরেকটু ঘড়ের ভিতরে যায়, সেখানে একটি জিনিসের প্রতি বরাবরই সৃজার নজর যাচ্ছিল। দেওয়ালে টাঙ্গানো রয়েছে একটি সুন্দর মুক্তো খোচিত আয়না। ধুলোর পুরু আস্তরনেও তার সৌন্দর্য বিন্দুমাত্র নষ্ট হয়নি।

সৃজা হাত দিয়ে আয়নার ধুলো গুলি পরিস্কার করতেই সে দেখল আয়নায় রক্ত লেগে আছে, সে ভীষণ ভয় পেয়ে গেছে, তার যেন কথা আঁটকে যাচ্ছে। এটি দেখে অসীম হাঁসতে লাগল। অসীমের এই আজব হাঁসি দেখে সৃজা আরও বেশি ভয় পেয়ে গেল, তার মুখ ভয়ে কালো  হয়ে যাচ্ছে। সৃজার তন্দ্রা কাঁটিয়ে অসীম বলে উঠল- “আরে পাগল মেয়ে, তোর হাত কেটে গিয়েছিল মনে নেই, আবার সেই রক্ত মাখা হাতেই আয়না পরিস্কার করলে রক্ত তো লাগবেই।“ সৃজা যেন কিছুটা স্বস্তি পেল।

এবারই শুরু হল নানান ভৌতিক ঘটনা, হঠাৎ তাদের মনে হল দরজায় কে যেন দাঁড়িয়ে আছে। তারা সেই দিকে টর্চ জ্বালাল, কিন্তু সেখানে কেউই নেই, মনের ভ্রম ভেবে নিয়ে অসীম অন্য বস্তু গুলিকে দেখে যাচ্ছে, আর সৃজা এখনও সেই আয়নাটার সামনে দাঁড়িয়ে, সত্যি কি অসাধারণ এই আয়নাটি!

ইতিমধ্যে তাদের মনে হল, দরজার একটি পাল্লা যেন নড়ছে, তারা আবারও টর্চ জ্বালাল কিন্তু কিছু দেখতে পেল না। সিলিংএ লাগানো ঝাড়বাতিটা হঠাৎ করেই জ্বলে উঠল, গোটা ঘড় আলোকময় হয়ে গেল। কিন্তু সৃজার এই দিকে কোনো খেইয়ালই নেই, সে এখনও আয়নাটির সামনে দাঁড়িয়ে।

এদিকে অসীমের মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। সে কিছুটা আতংকিত কিছুটা ভীত। কারণ তার জীবনে সে এরকম পরিস্থিতির মুখে কোনো দিনও পড়ে নি। হঠাৎ ঝাড়বাতিটা পড়ে যেতে লাগল। অসীম যদি সৃজাকে না টানত সৃজা হয়ত ঝাড় বাতিটার নীচে চাঁপা পড়ে যেত। “কি হচ্ছে, সেদিকে খেয়াল আছে তোর? চল তাড়াতাড়ি চল, এখানে আর এক মুহূর্তও থাকা যাবে না।

সৃজা বলল- “আমি ওই আয়নাটাকে নিয়ে যাব।“

“না না এখানকার কোনো কিছুই নিয়ে যাওয়া উচিত হবে না” নাছোড় বান্দা সৃজা অসীমের কোনো কথাই মানল না। অসীমও আর বিশেষ জোর করল না। কারণ সে সৃজাকে ভালো মতই চেনে।

সৃজা আয়নাটা হাঁতে নেওয়ার সাথে সাথেই বাইরে প্রচণ্ড হাওয়া শুরু হল, কিন্তু সৃজার সেই দিকে কোনো খেয়াল নেই। সে আয়না টাকে হাঁতে নিয়ে আয়নার দিকেই চেয়ে আছে। অসীম বাধ্য হয়ে তার হাত ধরে তাকে সেই ঘড়টি থেকে টেনে বাইরে নিয়ে যেতে লাগল। “বাড়ি গিয়ে আয়নাটাকে দেখিস, এখন জীবন নিয়ে পালা।” তারা সেই ঘড়টি থেকে বেড় হতে না হতেই ঘড়টির দরজা দড়াম করে বন্ধ হয়ে গেল।

bengali best horror story
bengali best horror story ভুতুড়ে বাড়ি
<

সেদিন কোনো ক্রমে তারা দেওয়াল টপকে বাইরে এসেছিল। কিন্তু বাইরের পরিবেশের সাথে ভিতরের পরিবেশের কোনো মিলই নেই। ভিতরে এত্ত হাওয়া অথচ বাইরে একদম শান্ত। এরপর যে যার বাড়ি চলে যায়।

দিন পাঁচেক সৃজা আর অসীমের মধ্যে কোনো কথা হয় না। বারংবার সৃজাকে ফোন করেও ফোন তুলেনি সৃজা। সৃজার বাড়ি গিয়ে অসীম দেখে, সৃজাকে যেন চিনতে পারাই দায়! তার শরীর শুঁকিয়ে একেবারে পাঠকাঠির মত হয়ে গেছে।

পড়ুনঃ- ভয়ানক ভূতের গল্প- বদলা

কি ভাবে কি হল অসীমের মাথায় কিছুই ঢুকছে না। সৃজার মাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানালেন- “কয়েকদিন ধরেই ও কিছুই মুখে নিচ্ছে না। নিজের রুম থেকেও বাইরে আসে না। আমি ভাবলাম তোমাদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছে বুঝি। তাই কিছু বলিনি। কিন্তু এভাবে চার দিন কেটে গেল, তোমার ডাক শুনেই সে বাইরে এল, দুইদিন আগে তাকে জবরদস্তি ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু ডাক্তার কিছুই ধরতে পেলেন না। মেয়েটার শরীরটার দিকে তাকিয়ে আমার ভয় লাগে।“ বলতে বলতেই সৃজার মা কেঁদে উঠল। অসীম তাকে সান্তনা দিতে থাকে।

অসীম সৃজার সাথে কথা বলে বুঝতে পাড়ল- সে আর আগের মত কথা বলতে পাড়ছে না, কথা গুলিয়ে যাচ্ছে। কিছু একটা তো হয়েছে ওর সাথে। হঠাৎ অসীমের মনে পড়ল সেই আয়নাটার কথা। তার মনে পড়তে লাগল, কিভাবে আয়নাটিকে ছোঁয়ার সাথে সাথে বাইরের আবহাওয়া পরিবর্তন হয়ে যায়, কিভাবে ঝাড়বাতিটা জ্বলে উঠে আবার সৃজার উপর পড়ে যায়। অবশ্যই সেটি কোনো সাধারণ আয়না নয়। যেভাবেই হোক তাকে এই রহস্যের সমাধান করতেই হবে, আর নিজের প্রিয় বন্ধুর প্রাণ তাকে বাচাতেই হবে।

সেদিন অসীম আর বাড়ি গেল না, সৃজার অজান্তেই অসীম তার রুমে ঘাপটি মেরে বসে রইল, অথচ সৃজা কিছুই বুঝতে পেল না। সৃজা তার রুমেই আছে, কিন্তু সে যেন কিরকম ব্যস্ত! সে যেন কিছুতেই শান্তি পাচ্ছে না। কেটে গেল কয়েকটা ঘণ্টা। দেওয়াল ঘড়ি জানান দিল সময় রাত ১২ টা। গুপ্ত স্থানে অসীম যে কখন ঘুমিয়ে গেছে তার কিছুই মনে নেই।

হঠাৎ কার ফিস ফিস শব্দে যেন তার তন্দ্রা কেটে গেল, সে গুপ্ত স্থান থেকে দেখল সৃজা আয়নাটি উপর ঝুঁকে আছে, আর কার সাথে যেন কথা বলছে। তার কথা অনেকটা এরকম-

 “কি ভাবে তোমাকে বাইরে নিয়ে আসি বলতো?”

“আমি দিন দিন তোমার নেশায় পড়ে যাচ্ছি”  

কার সাথে কথা বলছে সৃজা? এরপর গুপ্ত স্থান থেকে কিছুটা বেড়িয়ে এসে অসীম দেখল এক ভয়ংকর দৃশ্য, আয়নায় এক সুন্দর যুবক। তার সাথেই কথা বলছে সৃজা। এবারে যে দৃশ্যটি অসীম দেখল সেটি আরও ভয়ানক- সে দেখতে পারল সৃজার শরীর থেকে রক্ত হাওয়ায় উড়ে উড়ে আয়নার ভিতর গিয়ে ঢুকছে। কিন্তু সৃজা কি কিছুই বুঝতে পাড়ছে না? অসীমের আর কিছুই বুঝতে বাকি রইল না।

অনেক হয়েছে, আর নয়। হঠাৎ করেই অসীম সৃজার সামনে এসে হাজির হল। সৃজা কিছুটা থতমত হয়ে বলল- “একি অসীম তুই এখানে কি করছিস? কিভাবে এলি তুই?”

আয়না থেকে আওয়াজ এল- “কার সাথে কথা বলছ? আমার চোখের দিকে তাকাও। তুমি আমার চোখের দিকে না তাকালে আমার যে কষ্ট হয়।“

অসীম আর দেড়ি করল না, সৃজার হাত থেকে আয়নাটা ছিনিয়ে নিয়ে সৃজার রুম থেকে বেড়িয়ে সোজা দৌড়াতে লাগল সেই ভূতুড়ে বাড়ীটির দিকে।চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। অসীমের পিছু পিছু সৃজাও দৌড়াচ্ছে আর বলছে- “ওকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে দিও না অসীম। ওকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারব না।“ চেঁচামেচি আর পায়ের শব্দে সৃজার মাও ঘুম থেকে উঠে গেলেন। তার মা চিল্লাতে লাগলেন- “এত রাতে কোথায় যাস শ্রী?”

সামনে ছুটছে অসীম আয়নাটি নিয়ে, তার পিছু পিছু সৃজা আর সৃজার পিছনে তার মা। অবশেষে অসীম সেই বাড়ীটির দিকে ছূড়ে দিল সেই আয়নাটি। ভেতর থেকে আয়না ভাঙ্গার শব্দ তার কানে এল। সে ফিরে এসে দেখে রাস্তায় সৃজা পড়ে আছে। আর তার মা দৌড়ে আসছে। দুইজনে মিলে সৃজাকে বাড়ি নিয়ে গেল।

এরপর কেটে গেছে কয়েকদিন, সৃজা আবার আগের মত সুস্থ হয়ে গেছে।

আসলে, সেই বাড়ীটিতে বসবাস করত এক বনেদী জমিদার পরিবার। সেই জমিদারের ছোট ছেলের মেয়েদের প্রতি দুর্বলতা অনেক বেশি। আর কোনো এক অজানা কারণে, সে ছোট বেলা থেকেই রক্ত পান করতে বেশি ভালবাসত। তাই জমিদার বাধ্য হয়েই তার সেই ছেলেকে হত্যা করে। কারণ ছেলের এই স্বভাব তাকে জনসম্মুখে প্রশ্নের মুখে ফেলছিল। রাতেই সেই তল্লাট ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে যান তিনি, ছেলের মৃতদেহ ফেলে রেখে যান সংগ্রহশালায়।

সেই যুবকের আত্মা, ধীরে ধীরে গোটা ঘড়ে নিজের অস্তিত্ব বিকাশ করে। তার আশ্রয় হয় সেই আয়নাটি। আর সেই বুড়ো দারোয়ান যিনি অসীম আর সৃজাকে সেই ভূতুড়ে বাড়িতে যেতে বাঁধা দিয়েছিলেন তার বোন, স্ত্রী এমনকি তার দুই কন্যাও সেই আয়নার পাল্লায় এসে নিজের জীবন হারিয়েছে। কিন্তু এই কথা তিনি কাউকেই জানান নি।

ভয়ঙ্কর ভূতের গল্প
ভয়ঙ্কর ভূতের গল্প bengali vuter golpo

সুন্দর আয়না দেখে প্রথমে মেয়েরা সেই আয়নাটিকে নিজের করতে চায়, এরপর যখন সেই আয়নায় নিজেদের মুখ দেখে, তখনই ভেসে উঠে জমিদারের পুত্রের ছবি। সেই যুবক সবাইকে বলে- “আমাকে এখানে থেকে বেড় হতে সাহায্য কর। আমি খুব কষ্টে আছি।“ ধীরে ধীরে কথার জালে সে অন্যদের ফেলে দেয়। এরপর সেই VICTIM দের অজান্তেই শুরু করে রক্ত পান করা। তাদের শরীর শুকিয়ে যেতে থাকে, অবশেষে তারা মারা যায়।

শোনা যায়, এই ভাবে কয়েক শতক ধরে সেই আয়না প্রায় দুইশত মেয়ের প্রাণ নিয়েছে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে।

সৃজার ভাগ্য খুবই ভালো যে, তার বন্ধু অসীম সময় থাকতেই ব্যাপারটা বুঝে যায় আর সেই অভিশপ্ত ভূতুড়ে আয়নার কবল থেকে সৃজার সাথে সাথে ভবিষ্যতের অনেক মেয়ের প্রাণ বেঁচে যায়। কারণ সেই আয়নাটি আর আস্ত নেই। আয়নাটি ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে কি না, তা নিশ্চিত করতে অসীম পড়ে, দিনের আলোয় সেই ভূতুড়ে বাড়িতে প্রবেশ করে আর অনেক খোঁজা খুঁজির পড় সে আয়নাটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পায়।  

পড়ুনঃ- 
ভূতের বশে তনু

কি ভয়ানক ছিল সেই রাত!
আপনার গল্প আমাদের E-mail করুন- charpatrablog@gmail.com 
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবেঃ- 

WhatsApp Group:- ছাড়পত্র (২)

ফেসবুক গ্রুপ- গল্প Junction

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOFFICIAL

“রোমাঞ্চকর ভূতের গল্প। ভয়ঙ্কর ভূতের গল্প। ভুতুড়ে বাড়ি। bengali vuter golpo”

#রোমাঞ্চকর ভূতের গল্প। #ভয়ঙ্কর ভূতের গল্প। #ভুতুড়ে বাড়ি। #bengali vuter golpo #রহস্য

Spread the love

Leave a Reply