আজ মেয়েদের জীবনের কিছু বাস্তব গল্প থাকছে। এই বাস্তব জীবনের প্রতিটি গল্পের মাধ্যমে বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার বাস্তব প্রতিফলন দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে।

মেয়েদের জীবনের কিছু বাস্তব গল্পঃ-

বাস্তব জীবনের গল্প-

কলকাতার অলিতে-গলিতে দীর্ঘকাল ধরে তার আসা যাওয়া। সঞ্জিতের বউ এর শাড়ি থেকে সর্বানীর ডিটারজেন্ট আনা তার নিত্যদিনের সময়যাপন। সে যখন বাড়িতে ফেরে তখন কলকাতার শহরতলিতে নাইট ক্লাব আর ডিউটি করা মানুষ ছাড়া তেমন কেউ জেগে থাকে না বোধহয়। বাড়িতে ফিরে তার একমাত্র ছেলের জন্যে সে প্রতিদিন অপেক্ষা করে রাতের আকাশে একমুঠো স্নেহ ছুঁতে। তার নাম শ্রীমতি সুমিত্রা হাজরা, বয়স আন্দাজ প্রায় সত্তর হবে।

শরীরে ব্লাড প্রেসার উর্ধ্বগামী আর, তা নিয়েও তিনি ছুটছেন বয়সের ভারকে নিয়ে। বিয়ে হয়েছিল বিশাল এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে, শাশুড়ি বলেছিলেন, “বাড়িতে স্বয়ং অন্নপূর্ণা এল যে”। শুধু বাড়ি নয় পাড়ার সব মানুষই সুমিত্রাকে ভালোবাসতো, এটা খুব ভালো চোখে দেখতো না তার শাশুড়ি। কিছু বছর ঘুরতেই সুমিত্রার শাশুড়ির ‘অন্নপূর্ণাকে’ আর ভালো লাগলো না। সে মনে করলো তার অন্নপূর্ণা নয়, লক্ষীর প্রয়োজন। তাই সুমিত্রার স্বামী মায়ের লক্ষী ছেলের মতো আবার বিয়ের পিঁড়িতে গিয়ে বসলো। সুমিত্রা তখন সন্তান সম্ভবা। সন্তান হতে যখন একমাস বাকি তখন, তার শাশুড়ি তাকে অকথ্য অত্যাচার করে বাড়ি থেকে বের করে দেয় আর তার স্বামী সেই সন্তানের বাবা নয় বলে সুমিত্রাকে দুশ্চরিত্রের অপবাদ দেয়।

একটি সরকারী হাসপাতালে সুমিত্রা একটি সুন্দর শিশুপুত্র প্রসব করে কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সেই শিশুটি জন্মানোর কিছু সময় পরেই পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়। সেদিন সুমিত্রা খুব কেঁদেছিল, বর্ষার আদ্রর্তার থেকেও সে নিজের চোখের জলে ভিজিয়ে ছিল তার নিঃস্ব অন্তরটাকে। কিন্তু ধীরে ধীরে একা নিজের জীবনের 50 বছর কাটিয়ে দিল, এক টিনে আর তার নীচের নদর্মার ছাউনির ঘরে।

মেয়েদের জীবনের কিছু বাস্তব গল্প
মেয়েদের জীবনের কিছু বাস্তব গল্প

কিন্তু ভাগ্যের আর সময়ের পরিবর্তনে সে আজ প্রায় ৫০-১০০টি অনাথ বাচ্ছার মা। নিউ আলিপুরে একজন ব্যবসায়ী তার বাসভূমিকে একটি NGOতে দান করেন, যারা অনাথ শিশুদের জন্য কাজ করে। সেখানে সুমিত্রা হাজরা প্রতি রবিবার নিজের পরিশ্রমের অর্থ দিয়ে তাদের জন্য অনেক লজেন্স, চকোলেট, নানা রকম খাবার নিয়ে যান আর তাদের মধ্যে নিজের মৃত ছেলের মুখটা দেখতে পান। কিন্তু সে কষ্ট পায় না, তিনি আনন্দে বুকে জড়িয়ে ধরে তাদের। যদি রাস্তায় কেউ জিজ্ঞাসা করে সুমিত্রাদি কেমন আছো?

উত্তরে সুমিত্রা দেবী বলেন “খুব ভালো, কারন জীবন যুদ্ধে আমি যে রানী “।

প্রেরক- সৌগত প্রামাণিক

গল্পটির পরিপূর্ণতা প্রাপ্তি যার কলমে-
পড়ুন- মেয়েদের জীবন নিয়ে গল্প- স্পর্শ 

জীবনের গল্প-

বাবা মা বাড়িতে ছিলেন না। কয়েকদিনের জন্য দার্জিলিং ট্যুরে গেছেন। বাড়িতে আমরা দুই ভাই বোন।
সেদিন সন্ধ্যায় বোনের সাথে ঝগড়া বেধে গেল। বোন হন হন করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। আমিও তাকে আটকানোর কোনো চেষ্টা করলাম না।

বেশ কয়েক ঘন্টা কেটে গেছে, বোন এখনও বাড়ি ফিরছে না। চিন্তায় মাথাও ঠিক মত কাজ করছে না। রাগী বোন, সঙ্গে মোবাইলটাও নিয়ে যায়নি। নিজের উপর বড্ড রাগ হতে লাগল।

হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম রাত প্রায় এগারো টা। বোন এতক্ষণ তার কোনো বান্ধবীর বাড়ীতে কাটায় না। আর বসে থাকতে পারলাম না। বোনকে অনেক খুঁজলাম। কোনো বান্ধবীর বাড়িতে এমন কি কোনো আত্মীয়ের বাড়িতেও সে যায়নি।

বোনের চিন্তা, এই শীতের মরশুমেও আমাকে ঘামিয়ে দিচ্ছে। বাবা মা কে ভয়ে বিষয়টা জানাইনি। থানায় গেলাম, পুলিশের সাহায্য চাইলাম। তারাও কোনো প্রশ্ন না করে আমার সঙ্গে বোনকে খুঁজতে ছুটল।

রাত তখন প্রায় দুটো, বোনের নাম্বার থেকে কল আসে ” দাদা তুই কোথায় আমি বাড়িতে আছি। তাড়াতাড়ি আয়।” ছুটলাম বাড়ির দিকে।

বোনকে জিজ্ঞাসা করে জানলাম, রাতে সে রাস্তা হারিয়ে ফেলেছিল। তার কথায়- “কয়েকজন ছেলে ব্রিজের নিচে আড্ডা দিচ্ছিল। আমাকে দেখেই তারা আমার পিছু নিল, এদিকে ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। কিন্তু আমি অবাক হলাম তখনই যখন ছেলেগুলি আমার পাশে এসে বলল – বোন তুমি এত রাতে একা একী কি করছ?”

আমি রাস্তা হারিয়ে ফেলেছি, বলতেই তারা আমাদের অ্যাড্রেস নিয়ে আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে গেল, সম্পূর্ন নিরাপদে।”

বাস্তব জীবনের গল্প
বাস্তব জীবনের গল্প image

কলিং বেলের শব্দে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। দরজা খুলে দেখি, বোন টিউশনি থেকে ফিরেছে। সময় দুপুর দুটো।

সত্যি এমন অলীক স্বপ্ন আমি কোনোদিনও দেখি নি যে, মাঝ রাতে একটি মেয়েকে কিছু ছেলে নিজের বোনের মত সুরক্ষিত বাড়িতে দিয়ে গেছে, আর বোন হারা দাদাকে পুলিশ কোনো টু শব্দটি না করে এক কথায় সাহায্য করেছে!

” সর দা, দরজা থেকে। আমার দিকে দেখে কি এত ভাবছিস!”

উত্তরে আমি বললাম- “দেখছি আমার বোনটা আজ, নিরাপদেই বাড়ি ফিরেছে তো!”

কিন্তু কি এক কাল্পনিক স্বপ্ন আমি দেখলাম, তা বোনকে বোঝানোর ক্ষমতা আমার নেই!

পড়ুন-  সেরা শিক্ষণীয় গল্প 

বাস্তব জীবনের গল্প- বর্ণাঢ্য শোকযাত্রা

শহরে ফিরতেই দেখি, একদল যুবক যুবতী মোমবাতি মিছিল করছে। সবার মুখে একটাই কথা shoot the Rapist… মোমবাতি মিছিল চলে দিন দুয়েক পর যথারীতি আবার শান্ত হয় শহরটা।

রেল স্টেশনের পাশের বিরাট গাছটার নীচে, যে পাগলীটা তার পোটলা পুঁটলি নিয়ে থাকত, লক্ষ্য করলাম তার শরীরের অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে। আর কিছুই বুঝতে বাকি রইল না আমার!

অবশ্যই এটি কোনো বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষের কাজ নয়। যে সমাজে, একজন মানসিক ভারসাম্য হীন নারী কাম লোভী পিশাচ দের হাত থেকে রক্ষা পায় না, সেখানে আমার আপনার ঘরের নারী রক্ষা পাবে কিভাবে!

কয়েকদিন লক্ষ্য রাখলাম সেই পাগলীটার উপর। কিছুদিনের মাথায় আবিষ্কার করলাম সেই পিশাচটা আর কেউ নয়, সেইদিন মোমবাতি মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন যে ব্যাক্তিটি তারই আদরের পুত্র!

জীবনের গল্প অবহেলিত নারী
জীবনের গল্প অবহেলিত নারী image
<

আমার কয়েকজন সহকর্মীকে ব্যাপারটা জানাতেই তারা বলল – তাতে কি! পাগলিটাকে নিয়ে তোর এত মাথা ব্যাথা কিসের?

বড়ই আশ্চর্য্য হলাম। মানুষ পৃথীবির শ্রেষ্ঠ জীব হলেও সে এটা আজও বোঝে না যে, সমাজ সেইদিনই কলুষ মুক্ত হবে, যেদিন একজন নারী পুরুষের মত সাহস করে মাঝরাতে একা বাড়ি ফেরার মনোবল পাবে।

All © copyright reserved by the admin of charpatra.com charpatra does not allow anyone to re-create any content either in video format nor in other format
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

“মেয়েদের জীবনের কিছু বাস্তব গল্প। বাস্তব জীবনের গল্প। জীবনের গল্প”

Spread the love

Leave a Reply