দুটি নিউ ভালোবাসার গল্প আজ ছাড়পত্রের পাতায় প্রকাশিত হচ্ছে। প্রেম বা ভালোবাসা এমন একটা বিষয় যেটা মানুষকে ভিতর থেকে নাড়িয়ে দেয়। অজানা দুটি মানুষের মধ্যেও সৃষ্টি হয় নাড়ির বন্ধন।

নিউ ভালোবাসার গল্প- হলুদ ট্যাক্সিঃ –

বাবার কাছে হাত পেতে আর কিছু চাইতে লজ্জা করে। চাকরি না পেয়ে তাই ড্রাইভারের চাকুরীতে যোগ দিলাম। বাবা চুপচাপ হয়ে গিয়েছিলো কয়েকটি দিন ধরে। তবে আমি যে চেষ্টার ত্রুটি রাখেনি সেটা তিনি ঠিক জানতেন। আজ হঠাৎ সকাল ঘুম থেকে উঠে খেতে বসে দেখি, ভাতের সাথে এক বাটি পায়েস, বুঝতে পারলাম  আজ আমার জন্মদিন। তারপর মা একটা চাবির রিং দিয়ে বললো “যা বাবাকে আর কাকাকে প্রনাম করে আয়।”

বোনের বিয়ের জন্য রাখা পয়সাটাও দিয়ে দিয়েছে কাকা আমার এই উপহারটির জন্য। লাল টুকটুকে জবার মালা পড়ে এই পরিবারের নতুন সদস্য হলুদ ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে রয়েছে রাস্তায়। মাকে বললাম ” তোমারা তৈরি হয়ে নাও ,প্রথম  ভাড়াটা বাড়ি থেকে শুরু করি। দক্ষিণেশ্বর থেকে ঘুরে আসি …”

মা বাবা বোন কাকাকে নিয়ে ঘুরে এলাম। শুধু মাত্র সেই মানুষটিকে পেলাম না, যে সব সময় আমার পাশে থেকেছে। ওর ফোন বন্ধ। হয়তো কাজে ব্যাস্ত। নয়তো দিনে তো দুই তিন বার ফোন করে। এ বাড়ির সদস্য না হয়েও ও অনেক দায়িত্ব পালন করে, তাই মা বিশেষ করে ওর কথা বার বার বলছিললেন।

কাকা ওকে প্রথম প্রথম পছন্দ করতো না। আমার বোন নীপার বিয়ে নিয়ে কাকা বেশি চিন্তিত ছিলেন। কাকার আশা ছিল আমি যদি সরকারী চাকুরী পাই ,তাহলে আমার বিয়েতে যে পন পাওয়া যাবে,  তা দিয়েই বোনের বিয়েটা দিয়ে দেবেন। কিন্তু ও আমার জীবনে আসায় সে আশায় মাটি পরেছিলো, তাই হয় ছিলো চক্ষুশূল।

নিউ ভালোবাসার গল্প
নিউ ভালোবাসার গল্প

কিন্তু ও নিজেই সেই সমস্যার সমাধান করে দিলো। আমার বোন নীপাকে ইঞ্জিনিয়ারিং- এ ভর্তি করে দেয় ও ওর নিজের টাকায়। ও বলেছিলো ” পন ঘুষ দিয়ে মেয়ে না বেঁচে, মেয়েকে যোগ্যতম করুন। যাতে মেয়ে তার জীবনের সঙ্গী নির্বাচন করতে পারে নিজে।” তারপর থেকে কাকার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে গেলো। ও হয়ে গেলো এ পরিবারের নয়ন মনি।

রাত বারোটা বাজে হাওড়ার দিকে চলে এলাম। প্রথম দিন তো, উৎসাহটা একটু বেশি। ওর মোবাইল থেকে একটা মেসেজ এলো। ” Happy birthday, Sorry আজ কথা হবে না। Good night, ঘুমিয়ে পরো “। ওকে রিপ্লাই করতে যাবো, প্যাসেঞ্জার পেয়ে গেলাম।
বস আর তার পারসোনাল আসিটেন্ট। কথাবার্তাতে বস দিঘায় ঘুরতে নিয়ে গিয়েছিল। এখন বাড়িতে পৌঁছে দিতে ট্যাক্সি করেছে। আমার উপস্থিতিতে বস বেশি সুবিধা করতে পারলোনা বোধহয়। মেয়েটাকে বস বাড়ি অবধি ছেড়ে দিলো।

আমি বাড়তি ভাড়ার আশায় বস ভদ্রলোককে ছেড়ে দিয়ে এলাম উনার বাড়িতে। মেয়েটি আমাকে কিছু বলতে চাইছিলো কিন্তু পারলো না। অনেক রাতে ওর ফোন এলো আমার ফোনে। কান্না মেশানো গলায় ও বললো ” সুজন বাবু কিন্তু তোমার বোনের ভর্তির ফিসটা দিয়েছিলো। আমার মায়ের চিকিৎসা খরচটাও দেন…”

আমি  চাপা গলায় বললাম ” সীতা হয়তো লক্ষণ রেখা অতিক্রম করেছিলো , কিন্তু রাম চন্দ্রের কি তাতে কোনো দোষ ছিলো না? যাইহোক আমি রাম না তাই তোমাকে অগ্নি পরীক্ষা দিতে হবে না। কাল ভোরে এসো, আমার হলুদ ট্যাক্সি করে ময়দানে ঘুরিয়ে আনবো তোমাকে।”

মানব মণ্ডল

গল্পের ভাব যার ভাবনায়-
পড়ুন- অসাধারণ সব প্রেমের গল্প 

ভালোবাসার বিচ্ছেদ গল্প- সঞ্জীবনের বন্দনাঃ-

লোকে বলে পাহাড়ি ঝরনায় নাকি পাহাড়ি সুর শোনা যায়। কখনো সেই সুরে আনন্দের বা বিরহের, মানুষের জীবনের ইতিকথা বয়ে যায় সেই সময়ের ও স্রোতের সঙ্গে। বন্দনা তখন পড়তো ক্লাস ১০ এ, এক ঝকঝকে চনমনা পাহাড়ি মেয়ে। তার সখ ছিল পাহাড়ি পাখি পোষা। বন্দনার খুব প্রিয় একজন বন্ধু ছিল, নাম সঞ্জীবন তামাং। বন্দনা নিজের চেয়েও বেশী ভালোবাসতো তার এই বন্ধুটিকে। কোনো বিশেষ কাজ করতে হলে তারা দুজনেই একসাথে করতো। একদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে সঞ্জীবন বন্দনাকে একটা ঝরনার পাশে নিয়ে গেলো।

খুব নিবিড়ভাবে ঝরনাটা ঝরছে, সঞ্জীবন কিছুক্ষন বন্দনার দিকে অপলক তাকিয়ে বলল “তুই খুব ভালো মেয়ে জানিস, আর তোর দিকে তাকালে আমার ভেতরটা যেন কেমন হয়ে ওঠে, তাই আজ তোকে বলছি, আমি তোকে খুব ভালোবাসি”। বন্দনা যেন একটু ঘেমে যায়, সে বলে “আমিও খুব ভালোবাসি রে তোকে” বলতে বলতে বন্দনা সঞ্জীবনের হাতটা আঁকড়ে ধরে।

নতুন ভালোবাসার গল্প
নতুন ভালোবাসার গল্প

আর ভালোবাসার চিহ্ন হিসেবে ঝরনার ধারে এক জঙ্গলী গাছে হৃদয়ের দাগ টেনে কিশোর প্রেমের সাক্ষী রাখে। এর বছর দুয়েক কাটার পরে সঞ্জীবন কলকাতায় হোম ম্যানেজমেন্ট পড়তে চলে এলো, কিন্তু খুব মনে পড়তো বন্দনাকে। আর ফোন করারও তেমন সুযোগ হয়ে উঠতো না তার। ভালোবাসা হয়তো দুরত্বে বৃদ্ধি পায়, তা বেশ টের পেয়েছিল সঞ্জীবন। বন্ধুত্ব থেকেই প্রকৃত ভালবাসার মর্ম বেশ বুঝতে পারে সে। কলকাতায় অনেক বন্ধু হল সঞ্জীবনের। কিন্তু বন্দনার মতো সে কাউকে ভাবতেই পারে না।

ওদিকে বন্দনা ডিগ্রি কোর্সের দ্বিতীয় বর্ষে পড়তে পড়তে ইতি টানে। দিনে-রাতে, নিদ্রা-জাগরনে সে সঞ্জীবনকে খুঁজে যেত মনের মধ্যে। কিন্তু সময় ও পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তন হয়ে যায় মানুষের। কিছুদিন পর বন্দনার একটি বিয়ের প্রস্তাব আসে, ওই গ্রামের নেতা জগজিৎবাবুর ছেলে, প্রকাশের সঙ্গে। প্রকাশ ছেত্রি ১০ বছর পর দেশে ফিরছে, আবার হয়তো সে বিদেশে চলে যেতে পারে, তাই জগজিৎবাবু তার ছেলের বিয়েটা বন্দনার সাথে দিতে চাইছেন।

পড়ুনঃ- সুপ্ত প্রেমের বেদনাময় কাহিনী।। কষ্টের প্রেমের গল্প।। হার্ট টাচিং লাভ স্টোরি TOP NEW NO 1 HEART TOUCHING LOVE STORY

স্বাভাবিকভাবেই বন্দনা এই বিয়ের প্রস্তাব অস্বীকার করে। বন্দনা অনেকবার সঞ্জীবনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে কিন্তু কিছুতেই কথা বলা যায় না তার সাথে। এছাড়া বন্দনার বাড়ি থেকে বন্দনাকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে তার মা-বাবা। অবশেষে সে বিয়ে করতে বাধ্য হয়। এদিকে সঞ্জীবন চার বছর ধরে হোম ম্যানেজমেন্ট পরার পর কলকাতার সল্টলেকে একটি বড়ো প্রাইভেট কোম্পানীতে মোটা অঙ্কের চাকরী পায়। চাকরী পাওয়ার দুদিন পরেই সে বন্দনার বাড়িতে ফোন করে কিন্তু তার বাবা বলে, বন্দনার বিয়ে হয়ে গেছে আর সে এখানে থাকে না। কথাটা শোনার পর সঞ্জীবন বিশ্বাস করতেই পারল না, তাই বারবার ফোন করলেও বন্দনার বাবা একই কথা বলে ফোন কেটে দেয়।

যে স্বপ্ন নিয়ে সঞ্জীবন জীবনকে শুরু করবে ভাবলো তা এখন তার কাছে চিতার ছাই এর থেকেও নির্মম। এভাবে অনেক বছর কেটে যায়। বন্দনা এখন দুটি কন্যার মা, ওর বড়ো মেয়ের নাম তানিশা। মেয়েটি পড়াশোনায় খুব ভালো বলে বন্দনার ইচ্ছা কলকাতার কোনো বড়ো স্কুলে সে পড়ুক। তাই সে ঠিক করল কলকাতায় যাবে। দিন সাতেকের মধ্যে সে কলকাতায় এসে তানিশাকে একটা ভালো স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিল, আর এখানে একটা দামি ফ্ল্যাটও ভাড়া নিয়ে নিল সে।

কিন্তু কথায় বলে অতীত পিছু ছাড়েনা। বন্দনা সময়ের নিমেষে সঞ্জীবনকে ভুলে গেলেও সঞ্জীবন তা পারেনি। একটা বড়ো কোম্পানীতে সে এখন ম্যানেজিং ডিরেক্টর। তার অফিসের পার্সোনাল রুমে সে সোনার ফ্রেমে বড়ো করে বন্দনার ছবি রেখেছে। অফিসের অনেক কর্মচারী এই ছবির ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে সঞ্জীবন বলে “এই ছবি আমার ভালোবাসা আমার বন্দনা”। তবে ভাগ্যের পরিহাসে বন্দনার সঙ্গে একদিন সঞ্জীবনের দেখাও হয়ে যায় শহরের ব্যস্ত একটি মোড়ে। পরস্পরের দৃষ্টি বিনিময়ের সময় সঞ্জীবনের চোখের কোণটা অজান্তেই ভিজে আসে। নিজেকে একটু সামলে নিয়ে সঞ্জীবন বললো ” ভালো আছো বন্দনা ?” উত্তরে বন্দনা বলল” হ্যাঁ ভালোই আছি” সঞ্জীবন বন্দনার অভিমানের সুরটা বুঝতে পারলো।

ভালোবাসার বিচ্ছেদ গল্প
ভালোবাসার বিচ্ছেদ গল্প
<

কথা শেষ হতে না হতেই বন্দনা বেরিয়ে গেলো সঞ্জীবনের পাশ দিয়ে। সঞ্জীবন মনে মনে খুব কষ্ট পেল। এতবছর ধরে মনের কোঠায় যাকে যত্ন করে রেখেছিল সে তাকে ভুলে গেছে।

পরের দিন টি.ভি অন করতেই বন্দনা দেখল, খবরে দেখাচ্ছে, কলকাতার বন্দনা গ্রুপ অফ ইন্ড্রাসট্রির এম.ডি সঞ্জীবন তামাং আর পৃথিবীতে নেই, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। আর তার পাশে একটি কাগজ পাওয়া গেছে, যাতে লেখা আছে
“পাহাড়ি পাখির বন্দনাতে
ঝরনা আজি স্তব্ধ,
হৃদয়ের সেই দাগ মুছে সে,
মৃত্যু তাহাতে মুগ্ধ।।
– ইতি তোমার সঞ্জীবন।

সৌগত প্রামাণিক

গল্পের পূর্ণতা যার কালিতে-
পড়ুন- কয়েকটি সেরা শিক্ষণীয় গল্প 
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

“নিউ ভালোবাসার গল্প। নতুন ভালোবাসার গল্প।ভালোবাসার বিচ্ছেদ গল্প”

Spread the love

Leave a Reply