হারিয়ে যাওয়া প্রেম এর খোঁজে দিশেহারা বিবাগী এক পাগল প্রেমিকের ‘উপাখ্যান’ আজকের, হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসার গল্পটি। কিছু কিছু প্রেম সম্পূর্ণ হয়েও অসম্পূর্ণ থেকেই যায়, কিছু কিছু প্রেম পূর্ণ হতে হতেও ‘অপূর্ণ ভালোবাসা’-র তকমা পেয়ে বসে।।
হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসার গল্পঃ-
বৃষ্টি হয়ে ঝরবে যদি
ভিজবো তোমার চোখের জলে,
বাতাস হয়ে স্পর্শ করো
আলতো করে আমায় ঘিরে …
ধুর! কিসব যাতা ছন্দ বাঁধছি দেখুন না! আসলে কি জানেন আমার জীবন টাই যে ছন্দ বিহীন একটা কবিতার মতো । যার শুরুটা অলংকরণে বেশ ভালো শুনতে লাগলেও , শেষটা শুধু বিরহে ভরা । শুধুই বিরহ। হ্যাঁ আমি, এই আমিটা কেই কোথাও খুঁজে পাইনা। পারবেন খুঁজে দিতে আমার আমিটাকে? মানে আমার প্রাণপাখিটাকে!
দর্শন শাস্ত্রী আমার নাম । মুকুন্দপুর কলোনি তে এককালীন বাড়ি ছিল আমার তবে সেটা অতীতে , বিগত পাঁচ বছর হলো আমি সেখানে যাই না। ছাড়ুন সেসব কথা, আসল কথায় আসি-
ছোট থেকেই পড়াশোনাতে খুব একটা মনযোগ ছিল না , সারাদিন শুধু গিটার নিয়ে পড়ে থাকতাম । অবশ্য কোনটা উচিত , আর কোনটা অনুচিত, বলার মত বাড়িতে কেউ ছিলো না । মা সেই জন্মের সময়ই ইহলোক ত্যাগ করেছেন, তাই বাবা শুধু শখ মিটিয়েছেন চিরটাকাল । কখনোই হয়তো মন থেকে সন্তান হিসেবে মেনে নেন নি । তাই আমিও আমার গিটারটা কে নিজের সবটা দিয়ে ভালোবাসতাম আর ভালোবাসতাম গান গাইতে । তবে জানেন হঠাৎ করে একদিন সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেলো , আমি গান ছেড়ে পড়াশোনাতে মন দিলাম , আর এলোমেলো হওয়ার পেছনে একটাই কারণ ছিল , আমার জীবন দুমকো ঝড়ের মত আসা একটি মেয়ে । হ্যাঁ ঠিকই পড়েছেন একজন মেয়ে , যার নাম ছিল চিত্রা।
সবে মাত্র নবম শ্রেণী পেরিয়ে দশম শ্রেণীতে উঠেছি । প্রথম দিন ক্লাস করতে গিয়েই জানতে পারলাম একটি মেয়ে ক্লাসের মনিটর হয়েছে এবছর । মেয়েটি নাকি ভীষণ রাগী আর বদমেজাজী। স্যারদের থেকে নাকি মেয়েটিকেই অন্যান্য ছাত্রছাত্রীরা বেশি ভয় পায়। অল্পতেই নালিশ, বকা ঝকা করে । মেয়েটি সম্পর্কে এতকিছু জানার পরেও , আমার উদাসিন মনে কোনোরূপ পরিবর্তন হয়নি । এমনকি একঝলক দেখতেও মন যায়নি সেই বিদ্রোহিনীকে ।
দিনকয়েক পর ক্লাস টেস্ট এর সময় লাস্ট বেঞ্চ এ বসে বসে , বেশ সুন্দর দিবানিদ্রা দিচ্ছিলাম । হঠাৎ করে কে যেন খুব জোরে কানটা মলে , চেঁচিয়ে বলে উঠলো “এক্সাম এর সময় ঘুমাচ্ছিস , লজ্জা করেনা !” দাড়া তোর ব্যবস্থা করছি । দূমকো ঝড়ের মতো এসে এই প্রথম বার এরকম করে কেউ আমাকে শাসন করলো ভেবে , নিরুত্তরে রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম । এরপর বাবাকে ডেকে আমার নামে নালিশ করে অনেক অশান্তি করেছিল মেয়েটা । তার নাকি একটাই দাবি ” দর্শন কে পড়াশোনায় মন দিতে হবে , নইলে তাকে আমি ক্লাস থেকে সাসপেন্ড করার ব্যবস্থা করবো ।”
পড়ুনঃ- শরীর নাকি প্রেম! নতুন বাংলা লাভ স্টোরি- গরীবের প্রেম
বাবা বাড়ি ফিরে সেই প্রথম বার আমায় ভীষণ অপমান করেছিলেন । তাই আগা গোড়া চাপে পড়ে পড়াশোনা তে মন দিলাম । তারপর থেকে ওই মেয়েটি মানে চিত্রা , সে নিজে থেকেই এসে আমায় পড়া বুঝিয়ে দিত। একসাথে টিফিন খেতে নিয়ে যেতো , এমনকি যেখানে ও টিউশন পড়তো সেখানে ভর্তিও করিয়েছিল আমাকে।
আমার মত সঙ্গীহীন অন্ধকার মানুষের জীবনে , সেই মেয়েটা প্রদীপ তুলে ধরেছিল। শাসন ভালোবাসা দিয়ে, ঠিক ওর মনের মত গড়ে তুলেছিল আমাকে । বেশ ভালো চলছিল আমাদের সম্পর্কটা। দেখতে দেখতে পাঁচটা বছর যে কিভাবে একসাথে কাটিয়ে দিয়েছিলাম তাও টের পাইনি। ভালোবাসার মায়াজালে আবদ্ধ করে রেখেছিল আমায় , আমিও ওকে ছাড়া যেন অন্ধকানাই হয়ে গিয়েছিলাম । একটা মুহূর্তও ওকে ছাড়া কল্পনা করা ছিল , আমার কাছে মৃত্যুর সমান ।
আমাদের বাড়িতেও আমাদের সম্পর্কটা জানাজানি হয়ে গেলে , চিত্রার বাবা ওর বিয়ে ঠিক করে দেন । যদিও অত্যন্ত সাধারণ পরিবারের মেয়ে ছিল চিত্রা, তাও ওর পরিবারের কাছে নতি স্বীকার করতে হয়েছিল ওকে। আমিও পাগলের মত যেদিক সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম, আমার ওই গিটার টা কে নিয়ে। রাস্তায় রাস্তায় গান গাইতে গাইতে কে যেন সোশ্যাল মিডিয়া তে ভিডিও করে ছেড়েছিল । তাই সেই ফাঁকে পাগল প্রেমী বলে একটু ফেমাস ও হয়েছিলাম ।
সেই ভিডিও চিত্রার কাছে কোনো প্রকারে পৌঁছালে, সে বিয়ের দিন রাত্রিতে মণ্ডপে অপেক্ষমান বর কে রেখে আমার কাছে ছুট্টে আসে। আমি ওর বাড়ির বাইরেই ছিলাম , নিজের চোখে ওর সিঁদুর দান দেখবো বলে। তবে ভাবিনি শেষ মুহূর্তে আমার প্রাণ পাখি , পুনরায় আমার কাছে ফিরবে!
কি অপরূপ লাগছিল ওকে , আমি তো ওই কনে সাজেই, ওকে আমার পাশে দেখতে চেয়েছিলাম। হাতটা শক্ত করে ধরে বললো ” ভ্যাবলা কান্তর মত না তাকিয়ে থেকে , এবার নিয়ে চল , নইলে দুজনের কপালেই রাম – ধোলাই আছে ।” সামনেই রেল স্টেশনে সদ্য চলন্ত একটা ট্রেনে কোনরকমে উঠে পড়লাম দুজনে । কামড়াতে অনেকেই ছিল বসার জায়গা পাইনি তাই দাড়িয়ে ছিলাম । চিত্রা কে এরূপ অবস্থায় দেখে , অনেকেই আমাদের সম্পর্কে পরোক্ষ্ ভাবে বিদ্রুপ করছিলো , তার উত্তরে কড়া জবাব ও দিয়েছিল চিত্রা। জামার কলার টা ধরে কামরাটার দরজার সামনে এসে বার কয়েক ঝাকিয়ে , কয়েকটা কথা শুনিয়ে , শেষে নিজেই হাপিয়ে উঠে বললো ” কারুর মুখের ওপর কথা বলতে শিখলি না , আমি না থাকলে তোর যে কি হবে ! “
পড়ুনঃ- এক তরফা প্রেমের গল্প- রাজকুমার ও রাজকুমারীর প্রেম
আলতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে ‘পাগল’ বলে, কামড়ার ভেতরে যেতে গেলে, হ্যাঁচকা টানে বুকে জড়িয়ে ধরলাম ওকে । কেন জানিনা চোখের জল থামছিল না আমার , বারবার মনে হচ্ছিল ওকে পেয়েও হয়তো আমি ধরে রাখতে পারবো না ।
“কি করছিস টা কি ? লোকে কি বলবে ? ছাড় ছাড়” বলে কামরার ভেতরে চলে গেলো।
কিছুক্ষন পর বসার জায়গা পেলাম । তাই নিশ্চিন্তে চিত্রার কাঁধে মাথা দিয়ে , এরপর কোথায় যাবো , কি করবো , কোথায় থাকবো , বিয়েটা কোন মন্দিরে করবো সে নিয়ে কথা বলছিলাম আর বারেবারে লজ্জা পেয়ে আলতো হাতের ছোঁয়ায় মার খেয়ে ” তোর জীবনে লজ্জা হবে না ” শুনতে শুনতে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম ।
হঠাৎ করে একটা চিৎকারে ঘুম ভাঙলো । পাশে তাকিয়ে দেখলাম চিত্রা নেই। দৌড়ে গেলাম কামরার দরজার সামনে , কে যেন বলে উঠলো , “মেয়েটাকে দেখলাম, এখানে দাড়িয়ে কার সাথে যেন কথা বলছিল, কথা নয় ঠিক , মনে হলো যেন তর্ক করছিলো। তারপর হঠাৎ করে সব চুপচাপ হয়ে গেলো । আর মেয়েটাকে দেখতে পাইনি।
কথাগুলো শুনে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না । আমার চিত্রা আর আমার সাথে নেই , এটা বিশ্বাস করা ছিল আমার পক্ষে অসম্ভব বিষয় । তাই আমিও ঝাঁপিয়ে পড়তে চেয়েছিলাম ট্রেন থেকে কিন্তু বাকিরা জোর করে ধরে রেখেছিল।
২০১৮ এর ২০ ফেব্রুয়ারি এর দিন , ঘটে যাওয়া সেই ঘটনা , আমার কাছে ছিল পুনরায় অন্ধকার জীবনে ফিরে যাওয়ার দিন। সেদিন থেকে পাগল প্রেমী হয়েই স্টেশনে স্টেশনে গান গেয়ে বেড়াই। আর খুঁজে বেড়াই আমার চিত্রা কে । হয়তো ওই রূপে না হলেও অন্য রূপে অন্য চরিত্রে সে আবার ফিরবে আমার কাছে, সেই আশাতেই অপেক্ষমান আমি ।
চিত্রাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে ” কে ” সেদিন আমার এত বড় ক্ষতি করেছিল তা আমার জানা নেই। তবে চিত্রার হদিস আর আমি পাইনি। প্রতিবছর ওই তারিখে ওই স্টেশন দিয়ে ট্রেনে যাত্রা করি আমি, আর গীটার হাতে বারেবারে গেয়ে যাই –
” ফিরে আয় , একটি বার ফিরে আয়
তোর পাগল প্রেমী আজও তোর অপেক্ষায়
সবটুকু দিয়ে পড়ে আছে সে ,
স্বপ্নে ঘেরা স্মৃতির দোর গোড়ায়।।”
গল্পের ভাবনায়-
লেখা পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmai.com -এই মেইল ঠিকানায়, অথবা সরাসরি WhatsApp এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
আলোরানির যে লেখা গুলি পড়তে পারেন- ফিরে পাওয়া ভালোবাসার গল্প- মনের মানুষ আধুনিক ছোট গল্প- ন্যায় মধ্যবিত্ত ছেলেদের জীবনের গল্প- পুরুষ
সমস্ত আপডেটের জন্য-
ফেসবুক Group - গল্প Junction
ফেসবুক- ছাড়পত্র
টেলিগ্রাম- charpatraOfficial
WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসার গল্প। অপূর্ণ ভালোবাসা। হারিয়ে যাওয়া প্রেম।
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।