অপ্রকাশিত ভালোবাসা কি ভাবে ধীরে ধীরে পূর্ণতার দিকে গড়াল, আজকের ফিরে পাওয়া ভালোবাসার গল্প টিতে সেই চিত্রই অঙ্কিত হয়েছে।

ফিরে পাওয়া ভালোবাসার গল্পঃ- ‘মনের মানুষ’

ব্যস্ততায় মোড়া এই শহরে কত মানুষ আসে আর যায়। কেই বা কার খোঁজ রাখে আদৌ মনে কি থাকে তাদের পরিচয়!
” কল্পনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আয় চুমকি। তুই যাকে খুঁজছিস সে হয়তো আর কোনোদিনও ফিরবে না। বাস্তব কে মেনে নিতে শেখ।” এভাবে অনেক কথা বলে মিনু চুমকিকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু চুমকি কিছুতেই ভোলেনি তার লিখনকে অর্থাৎ তার প্রথম ভালো লাগাকে, বরঞ্চ জোঁকের মত আরো আকড়ে ধরে বসেছে লিখনের স্মৃতি গুলোকে।

চুমকি যখন একাদশ শ্রেণীতে তখন লিখন পড়তো দ্বাদশ শ্রেণীতে । নতুন স্কুল বলে চুমকি খুব একটা স্কুল আসতো না আর যদিও বা আসতো তাও নিজের দিদি মিনুর সাথে । মজার বিষয় এটাই, লিখন ছিল মিনুর সহপাঠী । তবে লাজুক শান্ত স্বভাবের ছেলে লিখন কক্ষনো ভুল করেও কোনো মেয়ের পাল্লায় পড়তে রাজি নয় ভেবেই হয়তো গুটি কয়েক নিজ স্বভাবের ছেলের সাথেই মিশতো। সীমিত বন্ধুমহল হলেও লিখন কিন্তু ছাত্র হিসেবে ছিল স্কুলের সেরা । এদিকে চুমকিও খুব শান্ত শিষ্ট দৃঢ় প্রতিজ্ঞ প্রকৃতির মেয়ে।

এবার একই প্রকৃতির দুই মানুষ যখন পরস্পরকে চায় তখন কে আগে বলবে আর কে শুধু শুনবে সেটাই হয়ে ওঠে বিস্ময়ের বিষয়।
স্কুলের অ্যাওয়ার্ড সেরেমনী এর দিন যখন স্টুডেন্ট অফ দি ইয়ার এর অ্যাওয়ার্ডটা হেড স্যার লিখন এর হাতে তুলে দিলেন সেই প্রথম দেখাতেই চুমকি কিছুটা হলেও তির বিদ্ধ হল। ওর গুণের তীরে । আর সেই অনুষ্ঠানেই চুমকির উদ্বোধনী সঙ্গীতের সুরে লিখনের মনেও তৈরি হলো নতুন অনুভূতি।

ফিরে পাওয়া ভালোবাসার গল্প
ফিরে পাওয়া ভালোবাসার গল্প

এরপর থেকে একে অপরের দিকে ফিরে তাকানো , একসাথে তাকালেই চোখ ফিরিয়ে নিজেকে আড়াল করা , বন্ধুদের কাছ থেকে একে অপরের নিয়ে খবর নেওয়া। সবটা মিলিয়ে নতুন অভিজ্ঞতার সাক্ষী উভয়েই তাই একতরফা চাওয়া পাওয়ার শিকার কাউকেই হতে হয়নি ।

এভাবেই তিনটা মাস কেটে গেলো কিন্তু সাহস করে উভয়েই কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি । দূর থেকে চাতক পাখির আকাশের দিকে জলের আশায় চেয়ে থাকার মতো চুমকিও লিখনের আসায় অপেক্ষারত হয়ে রইলো কিন্তু টেস্ট এক্সাম শেষ হওয়ার পর লিখন স্কুল আসা বন্ধ করে দিলো। চুমকি বন্ধুদের কাছে জানতে পারল, লিখন সামনে উচ্চ মাধ্যমিক বলে আর বাড়ি থেকে বেরোয় না সারাদিন বই মুখী হয়েই থাকে । কথাটা জানার পর চুমকির মন হঠাৎ করে ভীষণ উতলা হয়ে উঠলো , মিনুকে জিজ্ঞাসা করলো “দি লিখনের কি একবারও আমায় দেখতে মন চায় না ? তার মানে আমার চাওয়াটা কি এক তরফা ?”

মিনু শান্তনাতে চুমকিকে ভোলাবার চেষ্টা করলেও , চুমকি মনে মনে স্থির করলো উচ্চ মাধ্যমিক শেষ হওয়ার পরেই ও সোজা লিখনের হোস্টেলে যাবে , আর গিয়ে সরাসরি কথা বলবে। এই টানাপোড়নে মাঝে ও ফেঁসে থাকতে পারবে না।

উচ্চ মাধ্যমিক শেষের পরেই মিনুকে সাথে নিয়ে বয়েস হোস্টেলে হাজির হলো চুমকি। কোনরকমে লুকিয়ে লুকিয়ে লিখনের রুমের সামনে উপস্থিত হয়ে কড়া নাড়তেই , বেরিয়ে এলো লিখনের একটি বন্ধু ।

পড়ুনঃ- 
প্রিয়জন হারানোর বেদনা 

হার্ট টাচিং লাভ স্টোরি 

সে মিনুকে দেখে যথারীতি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে চেঁচিয়ে উঠতেই গার্ড, হোস্টেলের স্যার সমেত বাকি ছেলেরা দৌড়ে বেরিয়ে এলো।
দুটি মেয়ে বয়েস হোস্টেলে কি করছে ? কি করে ঢুকলো ? এই সব প্রশ্ন নিয়ে যখন জেরা শুরু হয়েছে তখন চুমকির চোখ চারিদিকে খুঁজে বেড়াচ্ছে তার লিখনকে। কিন্তু না লিখন কোথাও নেই !

চুমকি সব প্রশ্ন উপেক্ষা করে জোর গলায় বলে উঠল- “লিখন কোথায় ? আমি ওর সাথে দেখা করতে এসেছি ।”
লিখনের বন্ধু জবাব দিল- “সে তো কাল পরীক্ষা শেষের পরেই বিকেলের ট্রেনে বাড়ি ফিরে গেছে ।”
চুমকি জবাবটা শুনে হতবাক হয়ে আবারও জিজ্ঞাসা করলো ” আমায় নিয়ে কিছু বলেছে তোমাকে?”
“তোমায় নিয়ে মানে! তোমার নাম কি ? তোমাকে তো এই প্রথমবার আমি দেখছি । আর লিখন কখনো কোনো মেয়ের সাথে মিশতো না । তোমার নিয়ে কিছু বলার প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে ?”

চুমকি এটুকু বুঝতে সক্ষম হয়, লিখন কে চাওয়াটা হয়তো ওর এক তরফাই ছিল । কিন্তু লিখন ও তো ওর এক তরফা চাওয়াটা কে প্রশ্রয় দিয়েছিল । তাই তো লিখনও ওর দিকে মৃদু হাসি মুখে তাকিয়ে থাকতো। ওর নিয়ে বন্ধুদের কাছে খোঁজ ও নিত। তাহলে আজ কেন লিখনের বন্ধু ওকে চিনতে অস্বীকার করছে ?

ফিরে পাওয়ার গল্প
ফিরে পাওয়ার গল্প

সবার সামনে কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে যায় চুমকি এরপর বাড়িতে গার্জেন কল থেকে শুরু করে অনেক ঘটনাই ঘটে যায় চুমকিদের বয়েস হোস্টেলে যাওয়ার বিষয়টা নিয়ে। কিন্তু চুমকির কিছুতেই যেন কিছু আসে যায় না। সে রেজাল্ট এর দিনের জন্য অপেক্ষা করে। কারণ ও জানে সেদিন লিখন নিশ্চই আসবে।

রেজাল্ট এর দিন সকাল থেকে চুমকি স্কুলের সামনে বট গাছটার চত্বরে অপেক্ষা করে , সকাল গড়িয়ে বিকেল হয় , কেউ হাসিমুখে আবার কেউ বিষণ্ণ মুখে বাড়ি ফেরে কিন্তু চুমকির অপেক্ষারত দুটি চোখ লিখন এর খোঁজে স্থির থাকে । স্কুল গেটে তালা পড়ার আগেই গার্ড এর নির্দেশে ওকে বাড়ি ফিরতেই হয়।

পড়ুনঃ-
 মজাদার প্রেমের গল্প- 'সারপ্রাইজ' 

অবহেলা থেকে ভালোবাসার গল্প 

পরের দিন ওর দিদি মিনুর কাছে জানতে পারে লিখন রেজাল্ট নিতে আসেনি তার বাবা এসেছিল। সে স্কুলের প্রথম হয়নি। তার রেজাল্ট নাকি ভালো হয়নি। যে ছেলেটা টেস্ট এর পর , দিন – রাত এক করে পড়েছে, তার রেজাল্ট খারাপ হয়েছে শুনে চুমকির সন্দেহ হয় । সত্যিই কি লিখন চুমকিকে ভুলে গেছে ? নাকি তার রেজাল্ট খারাপ হওয়ার পেছনে একমাত্র কারণ চুমকি ? এসব প্রশ্ন নিয়েই চুমকির জীবনে পাঁচটা বছর অতিক্রম করেছে …।

বর্তমানে চুমকি একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত । তার দিদি মিনুর ও একবছর হলো বিয়ে হয়েছে। কিন্তু চুমকির জীবনে কেউ আসেনি । সে তো এখনও একজনের জন্য অপেক্ষারত লিখনের কাছে না পাওয়া উত্তর টাই হয়তো চুমকির জীবনের সবচেয়ে বড়ো উদেশ্য।

হঠাৎ করে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ছেলেটা কি, আবারও দেখা হলে আগের মত ফিরে চাইবে ? আবারও কি চুমকির চোখে চোখ পড়তেই মুচকি হাসি দিয়ে মুখ সরিয়ে নেবে ? – এসব ভেবেই নিজের মনকে সান্তনা দিয়ে , নিজেকে লিখনের জন্য সামলে রেখেছে এতদিন ।

হারানো ভালোবাসা ফিরে পাওয়ার গল্প
হারানো ভালোবাসা ফিরে পাওয়ার গল্প
<

তবে বয়েস বাড়ার অজুহাতে , বাড়ির বড়দের জোরাজুরিতে শেষ মেষ বিয়ের জন্য রাজি হতেই হয়েছে ওকে, তবে সেটা অনিচ্ছায়। মিনুও তাকে কল্পনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এসে বাস্তবকে মেনে নিয়ে , জীবনে এগিয়ে যেতে বলেছে । ক্লান্ত মনকে মানিয়ে সেও অনিচ্ছার সাথে রাজি হয়েছে বিয়েতে ।

পাত্রপক্ষ দেখতে এলে , বেশ পরিপাটি করে সাজিয়ে চুমকিকে তাদের সামনে উপস্থাপন করা হয় , চুমকি প্রথম ঝলকে পাত্র কে দেখে থমকে ওঠে…।
চুমকির কল্পনা হয়তো বাস্তবের রূপ পায়।
মনের মানুষকে সে পুনরায় ফিরে পায়।।

আলোরানি মিশ্র

গল্পটির ‘চিত্রকলায়’ –
গল্প পাঠাতে পারেন সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে, অথবা মেইল এর মাধ্যমে - charpatrablog@gmail.com -এই ঠিকানায়।। 
আলোরানির অন্যান্য কিছু লেখা- 

হারানো ভালোবাসা ফিরে পাওয়ার গল্প 

একটি অন্যরকম প্রেমের গল্প 

জুনিয়রের সাথে প্রেম 
আমাদের পাবেন যেখানে- 
ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
Spread the love

Leave a Reply