প্রথমে অবহেলা, তার পর ধীরে ধীরে সেই অবহেলা থেকে ভালোবাসার সূত্রপাত। আজ ছাড়পত্রে যে ভালোবাসার গল্পটি থাকছে, সেটিতে খুঁজে পাবেন কিভাবে একজন নচ্ছার ছেলেকে অবহেলা করার পড়েও, তার প্রেমে পড়ে যায়, ক্লাসের শান্ত, ভদ্র মেয়েটা। সুন্দর এই প্রেমের গল্পটির লেখিকা- সুস্মিতা গোস্বামী গল্প পছন্দ হলে লেখিকাকে ধন্যবাদ জানাতে ভুলবেন না যেন! কলেজ লাভ স্টোরি

অবহেলা থেকে ভালোবাসা। কলেজ লাভ স্টোরিঃ-

দেবাঞ্জন মেয়েটা কে প্রথম থেকেই দেখত লেখাপড়ায় খুব ভালো। শান্ত, ভদ্র, সুশীলা, তবে মেয়েটি দরিদ্র পরিবারের । 

কিন্তু যে দেখত সে ছিল ঠিক এইসব গুণের উল্টো। অর্থাৎ সে কোটিপতির পুত্র,  লেখাপড়া কাকে বলে জানেই না, কোনোরকমে টাকার জোরে উঠেছে ইকোনমিক্স অনার্স নিয়ে। অশান্ত, অভদ্র, দুঃশীল । 

যাই হোক, একই কলেজে পড়ে দু’জন। একই বিভাগে অর্থাৎ ইকোনমিক্স অনার্স । 

ইকোনমিক্স বিভাগে সবথেকে ভালো স্টুডেন্ট হলো গিয়ে পূর্বে আলোচিত মেয়েটি, নাম আল্পনা দাস। সব প্রফেসর এমনকি প্রিন্সিপাল পর্যন্ত আল্পনা কে এক ডাকে চেনেন মেধাবী ছাত্রী হিসেবে। আল্পনা বরাবরই খুব চুপচাপ থাকে, একা একা পড়ে নয়তো লেখে। খুব একটা কথা বলে না কারোর সাথে। আর তাই দেখে দেবাঞ্জন ওর বন্ধুদের উদ্দেশ্যে ব্যঙ্গ করে বলে, ঐ দেখ গ্রন্থকীট! সর্বক্ষণ বইয়ে মুখ গুঁজে থাকে। পড়া ছাড়া আর কোনো যোগ্যতাই নেই! 

হেসে ওঠে সকলে। অপমানিত বোধ করেও চুপ করে থাকে আল্পনা। কারণটা হলো, সারা কলেজ জানে ওর স্বভাব। ওর মতো খারাপ ছেলে আর দুটো নেই। তাই ওর সাথে মুখ লাগানো মূর্খের কাজ। তাই কিছু বলে না সে। 

দেবাঞ্জন প্রায় প্রতিদিনই আল্পনাকে নানাভাবে অপদস্থ করে সবার সামনে। কিন্তু আল্পনা এসবের মধ্যে নিজেকে জড়িয়ে তার পড়াশোনা, পরিবার ও কলেজ কে বিব্রত করতে চায় না। যাই হোক, এভাবে একজনের সবথেকে সুনাম আর আরেকজনের সবথেকে দুর্নামে দিন যায়। 

দেবাঞ্জন অত্যন্ত উচ্ছৃঙ্খল ও বখে যাওয়া ছেলে। সবসময় টাকা ওড়াচ্ছে। নেশা করছে। মেয়েসঙ্গ তার প্রচুর। কুসংসর্গতে পড়ে গেছে ছেলেটা পুরো। লেখাপড়া বা ভালো কিছুর সাথে তার কোনো যোগাযোগ নেই। প্রফেসর অভিযোগ করলে তার নেতা জাতীয় বাবা হুমকি দেয়। 

আল্পনা সবটাই দেখে আর ভাবে এই ছেলেটা এত খারাপ হলো কিভাবে? সবাই সবার সাথে কথা বলে। কিন্তু সবাই দেবাঞ্জনের কাছে দাস হয়ে থাকে। 

আর একদিন ইংলিশ ক্লাস শেষে আল্পনা অফ পিরিয়ড বলে বেরোতে যাবে তখনই দেবাঞ্জন ও তার বন্ধুরা তাকে ল্যাং মেরে ফেলে দেয় আর সেটা দেখে সবাই হাসাহাসি করতে থাকে। 

আজ আল্পনা প্রচন্ড রেগে যায়। এতদিন সব মুখ বুজে সহ্য করেছে। কিন্তু আর নয়। যে দেবাঞ্জনের গায়ে সবাই হাত তুলতে ভয় পায় নিজের প্রাণের মায়ায়, সেই দেবাঞ্জনের গালেই আল্পনা সকলের সামনে ঠাস করে চড় কষায়। 

অবহেলা থেকে ভালোবাসা
অবহেলা থেকে ভালোবাসা কলেজ লাভ স্টোরি

ঘটনাটা এত দ্রুত ঘটে গেল যে সকলেরই এই ঘটনাটাকে বুঝতে সময় লাগল। তারপর সব যখন স্বাভাবিক তখন দেবাঞ্জন রাগে কড়কড় করে বলে, কি! এত বড় সাহস তোমার, তুমি আমার গায়ে হাত তুললে! তুমি জানো আমি কে, কার ছেলে!! 

সবাই দেবাঞ্জনের সাথে কথা বললেও তার মধ্যে ভয়, অনুনয়, বিনয় ছিল। তাই দেবাঞ্জনের কিছু বন্ধুবান্ধব বাদ দিয়ে প্রায় সকলেই খুশি কারণ কেউ একজন তো সাহস করে দেবাঞ্জনের মতো একটা অসভ্য ছেলের গালে থাপ্পড় মেরেছে! তারা তো পারেনি কেউ কখনোই। তাই সকলে আল্পনা কে মনে মনে শুভেচ্ছা ও জয়ধ্বনি দেয়। 

আল্পনা রাগে টকটকে  লাল হয়ে বলে, হ্যাঁ হ্যাঁ জানি তুমি কে, কার ছেলে!  তুমি তোমার  বাবা মায়ের অনাবিল টাকায় তৈরি হওয়া একটা অত্যন্ত অসভ্য, অহংকারী, অবাধ্য, নীচ, বর্বরোচিত মনোভাবের ছেলে। যে কাউকে কখনো সম্মান করে না। যে উচ্ছৃঙ্খল, যে একটা অমানুষ মনস্ক ছেলে। আর তুমি কার ছেলে বললে তাই না? শোনো, বাঁচলে নিজের পরিচয় নিজে তৈরি করো। অন্যের পরিচয় আঁকড়ে বেঁচো না। আজ তোমার টাকা, বৈভব আছে, তাই সব বন্ধুরা তোমার সাথে ঘুরছে, তোমার সাথে আছে,  তোমার সব অন্যায় মুখ বুজে সহ্য করছে। কিন্তু মনে রেখো, যেদিন তোমার কিচ্ছু থাকবে না সেদিন তোমার পাশেও কেউ থাকবে না।

তাই বাবার টাকায় এইরকম মেকি গুন্ডাগিরি না করে নিজের পরিচয় নিজে স্থাপন করো। অবশ্য তোমার আর নিজের পরিচয়ের দরকার কি; তুমি তো এমনিতেই তোমার লাম্পট্য স্বভাবের জন্য সকলের কাছে চেনা। একটা অসভ্য ছেলে তুমি। একটা খারাপ, জঘন্য অমানুষ তুমি! এতদিন সবাই তো বটেই এমনকি আমিও চুপ করেছিলাম অশান্তি, ঝামেলা এড়িয়ে যেতে। কিন্তু না, তুমি সেই ধাতেও পড়ো না। এই যে আজ আমি বললাম, এবার তো তোমার বড়লোক সৈন্যবাহিনী নিয়ে এসে আমাকে আর আমার দরিদ্র পরিবারটাকে ক্ষত বিক্ষত করবে, তাই না! 

এতটা বলে কাঁদতে কাঁদতে চলে যায় আল্পনা সেখান থেকে। 

“এই দেবাঞ্জন, মেয়েটার কি সাহস দেখলি! ওর অবস্থা আমরা খারাপ করে দেবো। এমন করব যে ও আর সমাজে মুখ দেখাতে পারবে না”- বলে অমিত।

“হ্যাঁ দেবাঞ্জন, অমিত ঠিকই বলেছে। আমিও তাই বলছি তোকে।” অমিতের কথার পিছন টান দেয় ইন্দ্র। 

দেবাঞ্জন চুপ করে ছিল। সবাই ভাবছিল হয়ত দেবাঞ্জন এতক্ষণ চুপ করে আছে, নিশ্চ্য়ই আল্পনা কে খুন করে দেবে বলে। কিন্তু না , দেবাঞ্জন সেখান থেকে উঠে চলে যায়। সবাই তো অবাক। এ কি হলো?

সেদিন সারাটা ক্লাস চুপচাপ দেবাঞ্জনকে দেখে সবাই রীতিমত ঘাবড়ে গেল। এ কি হলো দেবাঞ্জনের? কেউ কিছু বুঝতে পারছে না। 

যাই হোক, পরদিন দেবাঞ্জন গেঞ্জি ছেড়ে শার্ট পরে ভদ্র ছেলের মতো আসে। সকলে তো আরো অবাক। অবাক আল্পনা নিজেও। তবুও বিশেষ আমল দেয় না অসভ্য ছেলেটাকে। 

দেবাঞ্জন প্রথম পিরিয়ডে মন্ত্র মুগ্ধের মতো লেকচার শোনে। সবাই আরো অবাক। এবার অবাক প্রফেসর নিজেও। তবে তার ভাল লাগল এইটা দেখে যে, এতদিনে মনে হয় ছেলেটা পড়াশোনায় মন দিয়েছে । যাক ভালোই হয়েছে। এই দেবাঞ্জন কে কেউ চিনতেই পারছে না। গতকাল আল্পনা কে ফেলে দেওয়ার আগে অবধিও চেনা ছিল কিন্তু তারপর থেকে ওর কি হলো! 

অবহেলা ভালোবাসা কলেজ লাভ স্টোরি
অবহেলা ভালোবাসা কলেজ লাভ স্টোরি

যে ছেলে ক্লাস করা তো দুরের কথা, প্রেজেন্ট পর্যন্ত থাকত না, সে আজ ধরে ধরে প্রত্যেকটা ক্লাস মন দিয়ে করে ও নোটস লেখে। আর মনে মনে ভাবে,  সত্যিই তো, পড়াশোনা কত সুন্দর! কত সুন্দর একটা সাধনা!  বন্ধুরা অবাক থেকে ভয় পাওয়া শুরু করে দিয়েছে। এ কি হলো দেবাঞ্জনের, কিছুই তো বোঝা যাচ্ছে না। 

বন্ধুরা মাঝখানে বলে ক্লাস বাঙ্ক করার কথা। দেবাঞ্জন খুব রেগে উত্তর দেয়, আমাকে আর তোরা এসবের মধ্যে টানবি না। আর যদি একান্তই আমার মতামত শুনিস তাহলে পড় বসে এখানে। 

আল্পনাও বুঝতে পারছে না এটা কি করে সম্ভব? ছেলেটা কি তার উপর অন্য রকম ভাবে প্রতিশোধ নিতে চাইছে? না না আর এসব ভাববে না ঠিক করে আল্পনা। কিন্তু ভাবতেও তো ইচ্ছা করছে। হঠাৎ করে এতদিন ধরে দেখা একটা লম্পট ছেলে এত ভদ্র, এত ভালো কি করে হলো? 

দেবাঞ্জন সন্ধ্যায় বার এ যেত। আজ গেল না। আজ সে সোজা বাড়ি গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে লেখাপড়া করবে। 

বাবাও অবাক ছেলেকে দেখে। নিজের ছেলেকে নিজেই চিনতে পারছে না। এতদিন ধরে যেই ছেলেকে কেউ বই ছোঁয়াতে পারেনি সে কিনা নিজে থেকে বই নিয়ে পড়ছে। সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত টানা পড়ল। লিখল। ভুল হলো অনেক আবার ঠিকও হলো। বারবার করে লিখল। অনেক অঙ্ক কষল। অনেক পড়াশোনা করল টানা। 

না না আর সহ্য করা যাচ্ছে না এসব। সে বার এ যাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। নেশা করার কথা শুনলেই মাথায় আগুন জ্বলে ওঠে। টাকা পয়সা সবকিছু ঠিক ঠাক করে খরচ করে ও গরীব মানুষ কে পারলে দান করে দেয়। মেয়েদের সংসর্গ ঘৃণা করে সে। 

সে ঠিক করে টিউশন পড়াবে। কিন্তু প্রথম দুইমাস তার স্বভাবের জন্য কোনো অভিভাবক তাদের ছেলেমেয়েদের দেবাঞ্জনের টিউশনে পড়াতে মুখ বেঁকায়। কিন্তু না, এই দেবাঞ্জন, সেই দেবাঞ্জন নেই। এ যে সম্পূর্ণ ভিন্ন দেবাঞ্জন। 

পাঁচমাস কেটে গেছে ইতিমধ্যে। দেবাঞ্জনের বন্ধুরা দেবাঞ্জনের আমুল ও আকস্মিক পরিবর্তনে ভীষণ রাগান্বিত ও তিতিবিরক্ত। অনেক বার আগের জীবনে ফেরানোর চেষ্টা করেছে, কিন্তু দেবাঞ্জন এখন পুরো অন্য একটা মানুষ হয়ে গেছে। 

আল্পনাও ব্যাপার টা খেয়াল করেছে। তার মনে মনে ভালো লাগলেও বাইরে থেকে দেখাতো যেন কিছুই হয়নি। একদিন টিফিন টাইমে আল্পনা চুপ করে বাইরে চলে যায় আর তাই দেখে দেবাঞ্জনও যায়। দেখে আল্পনা না খেয়ে ছাদের পাঁচিলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

দেবাঞ্জন পেছন থেকে আস্তে করে বলে, “তুমি কি টিফিন আনোনি?” 

চমকে ওঠে পেছন ফিরে দেখে আল্পনা। সে থতমত খেয়ে বলে, “না।” 

-” চলো তাহলে আমরা দুজন একসাথে খাই আজ।” 

আল্পনা দেখে দেবাঞ্জনও কত সুন্দর ভাবে কথা বলতে পারে। 

তবুও আল্পনা একটু রাগ দেখিয়ে বলে, “কোনো দরকার নেই।” 

-“এখনো আমার উপর রেগে আছো?” বেশ নরম স্বরে বলে দেবাঞ্জন। 

-“রাগব না! তুমি কি আমাকে কম অপমান করেছ। আমি গরীব বলে আমাকে মানুষ বলে মনেই করতে না। সবার সামনে আমাকে বারবার অপমান করেছ, অসম্মান করেছ। আমাকে গ্রন্থকীট বলেছ, আমাকে বুলি করেছ তুমি ও তোমার বন্ধুরা, আমাকে…”

আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল সে কিন্তু দেবাঞ্জন তার মুখে খাবার ভরে দিয়ে হেসে বলে, “আচ্ছা অনেক হয়েছে। আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি। আর তোমার সাথে আর এমনটা কখনো করব না। প্রমিস করছি তোমাকে। এখন খাও তো চুপ করে।”  

আল্পনা কথা বলতে বলতে হঠাৎ করে মুখে খাবার আসায় একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেছিল। তাই কাশতে শুরু করল। দেবাঞ্জন অজান্তে করা নিজের ভুল বুঝতে পারল। ঐরকম সময়ে খাবার দেওয়া উচিত হয়নি ওর মুখে। সে সঙ্গে সঙ্গে জল খাওয়ায় আল্পনা কে  আর অপরাধ সূরে বলে, “তোমার কিছু হয়নি তো?  সরি আল্পনা, আমি ঠিক বুঝতে পারিনি, ভুল হয়ে গেছে।” 

পড়ুনঃ- দুটি সেরা প্রেমের গল্প 

আল্পনা দেবাঞ্জনের দেওয়া জল খেয়ে ধাতস্থ হয়ে বলে, “আরে না না তেমন কিছু হয়নি আমার। তুমি আর এসব ভেবো না।”  

-” আচ্ছা তুমি খাও এখান থেকে। খাবে তো আমার টিফিন? না খেলে কিন্তু…” 

– “না খেলে কি?” 

-“খুব মারব তোমাকে! দুষ্টু হেসে বলে দেবাঞ্জন।”  

আল্পনা এখনো এই দেবাঞ্জনটাকে মেনে নিতে পারছে না। তার বারবারই মনে হচ্ছে ঐ অপমানের বদলা টা দেবাঞ্জন অন্য ভাবে, অন্য কৌশলে নিচ্ছে। তাই ওর থেকে যতটা সম্ভব দূরে সরে থাকে আল্পনা। কিন্তু দেবাঞ্জন সত্যিই যে পাল্টে গেছে তা আল্পনা কিছুতেই মানতে চায় না। আল্পনা দূরে সরে থাকলেও, দেবাঞ্জন তার কাছাকাছি আসতে চায়। 

একদিন দেবাঞ্জনের বন্ধুরা মিলে ঠিক করল, আল্পনার মুখ অ্যাসিডে পুড়িয়ে দেবে। আর সেইটা রাতে করতে হবে যখন আল্পনা কলেজ থেকে টিউশনে ছেলেমেয়েদের পড়িয়ে ফিরবে তখন। কিন্তু দেবাঞ্জন, আমাদের লিডার! সে তো আগাপাস্তলা পাল্টে গেছে। না না ওকে কিছুতেই জানানো যাবে না। 

বন্ধুদের দল থেকে বেরিয়ে আসলেও বন্ধুদের গতিবিধি সব জানে দেবাঞ্জন। তার কেমন যেন মনে হলো, তার সব বন্ধুরা মিলে যেন কারোর খুব বড় ক্ষতি করার পরিকল্পনা করছে। কার ক্ষতি করতে চাইছে ওরা আর কেনই বা চাইছে? 

গোপনে গোপনে সে অনেক সতর্ক থাকে। তার আশঙ্কা আল্পনা। ঠিক তাই হলো। একদিন জানতেও পেরে গেল তার পূর্বের বন্ধুরা প্রতিশোধের নেশায় কার ক্ষতি করতে চলেছে। 

আজ আল্পনার টিউশন পড়িয়ে ফিরতে আটটা বেজে গেছে। নির্জন রাস্তায় খুব কম লোকই আছে। হঠাৎ সামনে দেবাঞ্জনের সাথে দেখা। 

-” একি, তুমি এখানে?” 

-“আল্পনা তুমি আমার সাথে চলো।” 

-“কেন? আমি রোজ একা যাই। তোমার সাথে আমি কেন যাবো?” 

-“তর্ক কোরো না আল্পনা, তুমি আমার সাথে যাবে ব্যস্। জোর গলায় বলে দেবাঞ্জন।” 

-” তুমি কে যে তোমার কথা আমায় শুনতে হবে? আর তুমি আমার উপর জোর করো কোনো অধিকারে?” 

-” কারণ আমি তোমাকে…” মুখ ফসকে বলে দিতে গিয়েও থেমে যায় দেবাঞ্জন। 

-” কি হলো থামলে কেন, বলো। তুমি আমাকে কি?”

-” বাজে কথা না বলে তুমি আমার সাথে চলো” বলে তার হাত শক্ত করে ধরে টেনে নিয়ে হাঁটা শুরু করল। 

-” আরে কি করছ টা কি, হাত ছাড়ো আমার! কি হচ্ছে এসব! ছাড়ো বলছি আমার হাত। আমি কিন্তু এবার চিৎকার করব বলে দিলাম।” 

-” তোমার যা ইচ্ছা করো। আমি তোমার হাত এখন ছাড়ব না।” 

আল্পনার ভয় পায় তার সন্দেহ ঠিক ছিল এই ভেবে। দেবাঞ্জন তার মানে ঠিকই ওর উপর সেই অপমানের প্রতিশোধ নেবে আর সেটা আজই। হায় ঈশ্বর! এ আমার কি ক্ষতি করলে তুমি! সে বলে মনে মনে । অনেক চেষ্টা করেও হাত ছাড়াতে পারে না। বাধ্য হয়ে হাতে জোরে কামড়ে দেয় সে, তবুও দেবাঞ্জনের হাত অনঢ়। 

-” প্লিজ আমার কোনো ক্ষতি কোরো না দেবাঞ্জন। আমার মা আর আমার বোন আমার অপেক্ষায় বসে আছে আমার পথ চেয়ে। প্লিজ আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি আমার করা অপমানের জন্য। প্লিজ আমাকে ছেড়ে দাও। কাঁদতে কাঁদতে নিরুপায় হয়ে বলে আল্পনা।” 

হঠাৎ দেবাঞ্জনের সামনে অমিত, ইন্দ্র আর দুজন বন্ধু হাজির। প্রত্যেকের হাতে অ্যাসিডের বোতল। 

তারা আল্পনা কে একা দেখবে ভেবেছিল কিন্তু এ কি, ওর সাথে যে দেবাঞ্জনও আছে। 

-” দেবাঞ্জন, তুই সরে যা।” 

-“না সরব না আমি। দেখি তোরা ওর কি করে ক্ষতি করতে পারিস।” 

আল্পনা কিছুই বুঝতে পারছে না। এসব কি হচ্ছে মুহূর্তের মধ্যে। 

দেবাঞ্জন আর তার চার বন্ধুর মধ্যে কথা কাটাকাটি হওয়ার পর মারপিট লেগে গেল। তুমুল লড়াই। আল্পনা এসব দেখে কিছুতেই স্থির থাকতে পারল না। সে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেবাঞ্জনের উপর আর চিৎকার করে বলে, “তোমাদের যা ক্ষতি করার আমার করো, কিন্তু ওকে নয়।” 

কিন্তু না, দেবাঞ্জন আল্পনাকে সরিয়ে একাই প্রচন্ড মার মারল চারজনকে। পুলিশে আগে থেকেই খবর দিয়ে রেখেছিল। পুলিশ আসে যথাসময়ে আর চারজন গ্রেপ্তার হয় পূর্বে অন্য মেয়েদের উপর করা ও বর্তমানে অ্যাসিড আক্রমণের চেষ্টা এই অপরাধের জন্য। 

আল্পনা দেবাঞ্জনের ফার্স্ট এইড করার জন্য স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যেতে চাইলে দেবাঞ্জন বলে, “আমার কোনো ওষুধ লাগবে না আল্পনা।” 

আল্পনার চোখে জল। সে ধরা গলায় বলে, “না তবুও তুমি যাবে কারণ তোমার অনেক লেগেছে। রক্তপাতও হচ্ছে অনেক। তুমি চলো।”  

-” না গো সত্যি বলছি আমার কিচ্ছু হয়নি।” 

-“না না না তুমি যাবে ব্যস্।” 

-“তুমি কে যে তোমার কথা আমায় শুনতে হবে? আর তুমি আমার উপর জোর করো কোনো অধিকারে? পুরো একই কথাটা দেবাঞ্জন বলে।”  

-” কারণ আমি তোমাকে…”

-” কি? বলো?”

– “জানি না।”  

এরপর দেবাঞ্জন আল্পনাকে বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে, “আমি তোমাকে ভালবাসি আল্পনা। অনেক ভালোবাসি। যেদিন তুমি আমাকে অপমান করেছিলে সেদিন থেকেই এই বদ ওসুরটা বদলে মানুষ হয়ে গেল। তোমার আগে আমাকে কেউ কখনো এভাবে বলা তো দুরে থাক, সামান্য বকা বা শাসন পর্যন্ত করেনি। আমার সব অন্যায় শুধু সবাই মুখ বুজে সহ্য করে গেছে। সবাই নাকি আমার ভালো চায়। তাই আমাকে শুধু  টাকায় মুড়িয়ে দিয়েছে আমার পরিবার। কিন্তু টাকাতে সব থাকলেও ভালোবাসা নেই। আমার জন্য কোনো মানুষ ছিল না, শুধু অর্থ, বৈভব, সম্পত্তি ছিল। তাই আমি উচ্ছন্নে গেছিলাম।”

“আমি তোমাকে অনেক অনেক অপমান, অসম্মান করেছি আল্পনা, আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও প্লিজ।  তারপর তুমি যখন বললে , আমার টাকা পয়সা যখন কিচ্ছু থাকবে না, তখন সত্যিই আমার সাথে কেউ থাকবে না কিন্তু থাকবে ভালোবাসা, থাকবে একটা মানুষ, সেটা হচ্ছো তুমি। আমি নিজের পরিচয় তৈরি করেছি এতদিনে। ছোট থেকে মা কে পাইনি তাই আমার এমন হাল। কিন্তু তুমি আমার চোখ খুলে দিয়েছ। আই লাভ ইউ আল্পনা, আই লাভ ইউ!” 

অবহেলা থেকে ভালোবাসা obohela valobasar golpo
অবহেলা থেকে ভালোবাসা obohela valobasar golpo
<

আল্পনাও আবেগে বুক ভাসায় দেবাঞ্জনের। কাঁদছে সেও। আরো শক্ত বন্ধন। আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সে দেবাঞ্জনকে। তার মনে কষ্ট হচ্ছে এই ভেবে যে সে দেবাঞ্জনের খারাপ দিকটাই দেখল শুধু। ওরও যে একটা মন আছে তা কখনোই বুঝতেই চায়নি। উল্টে তাকে বারবার সন্দেহ করেছে, তার ভালো হয়ে যাওয়াটা কে সে নাটক ভেবেছে! আজকেও অনেক খারাপ কথা বলে ফেলল তার ক্ষতি করবে এই ভেবে। অথচ দেবাঞ্জন তার ক্ষতি থেকে তাকে বাঁচাতে এসব কিছু করল। 

“আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি দেবাঞ্জন, আমাকেও তুমি ক্ষমা করে দাও। তুমি সত্যিই একজন ভালো মানুষ। আমি তোমাকে ভুল বুঝেছি। আমি…”  আর বলতে পারে না আল্পনা, সে অনেক কাঁদে। 

তারপর দেবাঞ্জনের হাতে যেখানে কামড়ে দিয়েছিল সেইখানে একটা চুম্বন করে বলে, “খুব ব্যথা দিয়েছি তোমাকে। আর কোনো ব্যথা দেবো না, শুধু ভালোবাসব তোমাকে। কোনো ক্ষতি হতে দেবো না তোমার।”  

দেবাঞ্জন আল্পনার কপালে কিস করে হেসে বলে, “দূর পাগলী, তোকে বাঁচানোর দায়িত্ব তো আমার, তুই শুধু আমাকে খারাপ ভেবে ছেড়ে চলে যাস না। আমি তোকে ছাড়া বাঁচবো না রে!”  

আরো একবার দুজনে একে অপরের শক্ত বাহুডোরে আসে। 

সবার ভালবাসা বেঁচে থাকুক। 

গল্পের লেখিকাঃ- সুস্মিতা গোস্বামী

অবহেলা থেকে ভালোবাসা। অবহেলা ভালোবাসা
More from the author:- স্কুল লাইফের প্রেমের গল্প- দেখা আর হল কই! 

“অবহেলা থেকে ভালোবাসা। অবহেলা ভালোবাসা। কলেজ লাভ স্টোরি। obohela valobasar golpo”

You may like:- অসমাপ্ত কষ্টের প্রেমের গল্প

অবহেলা থেকে ভালোবাসা। অবহেলা ভালোবাসা। কলেজ লাভ স্টোরি। obohela valobasar golpo

আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবেঃ- 
ফেসবুক-ছাড়পত্র 

টেলিগ্রাম-ছাড়পত্র 

WhatsApp-group-ছাড়পত্র(২)

অবহেলা থেকে ভালোবাসা। অবহেলা ভালোবাসা। কলেজ লাভ স্টোরি। obohela valobasar golpo

Spread the love

Leave a Reply