আজকের গল্পটা একটু অন্য স্বাদের। আজ এক গরীব ছেলের প্রেমের গল্প আমরা শেয়ার করতে চলেছি। সেই ছেলেটীর গল্প হল অপ্রকাশিত প্রেমের গল্প। ধনীদের কাছে গরীবের ভালোবাসা যে অসহায় তাইই ফুটে উঠেছে এই গল্পটিতে।
BANGLA LOVE STORY গরীবের প্রেমের গল্পঃ-
দুর্গা পুজোর আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি। এদিকে অজিতের হাঁতে পুজোর জামা কেনার টাঁকা টুকুও নেই। বিগত তিন বছর ধরে সে, পুজোতে জামাই কেনে নি, কারণ একটাই, হাঁতে টাঁকা নেই। অজিত থাকে কলকাতার হাওড়ায়। তার বাড়ি জলপাইগুড়ির একটি গ্রামে। কাজের খোঁজে আজ থেকে পাঁচ বছর আগে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করার পড়েই সে কলকাতায় পাড়ি দেয়।
ইচ্ছে ছিল, এম এ-র পর পিএইচডি করার কিন্তু, সমস্যা একটাই টাঁকা নেই। বাড়ি থেকে বলে দিয়েছে আর পাড়বে না, তাই পড়াশোনা ছেড়ে রাগের মাথায় বাড়ি ছেড়ে, কাজের খোঁজে কলকাতায় চলে আসে সে। কলকাতায় সে যে কাজটি করে, তাতে সে মাস গেলে সব খরচা করার পর হাঁতে মাত্র ৫০০ টাঁকা থাকে, সেই টাঁকা দিয়ে সে নিজের শক পূর্ণ করবে, নাকি বাড়ি পাঠাবে। তার হাঁতে জমানো যা টাঁকা ছিল, তা দিয়ে বাবা-মা-বোনের জন্য পুজোর জামাকাপড় কিনে পাঠিয়ে দিয়েছে সে। এভাবেই তার জামা কেনা হয়না এবারও।
প্রতি বাড়ের মত এবারও সে, শপিং মলের বাইরে ঝোলানো জামা গুলি দাঁড়িয়ে দেখে আর মাথা নিচু করে হাঁটতে থাকে। সে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ভাবতে থাকে, তার বাবার যদি অনেক টাঁকা থাকত, সেও আজ তার স্বপ্ন পূরণে সক্ষম হত। এই সব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে কিছুদূর এগোনোর পর তার মনে হল, কিছু একটা ঠাণ্ডা জিনিস তার পীঠের উপর পড়ল। সে ঘুরে দেখে একটি মেয়ে দোকান থেকে জল রাস্তায় দেওয়ার সময় ভুলবশত তার উপর জলটি ফেলে দিয়েছে।
মেয়েটি দৌড়ে এসে অজিত কে বলল-
“আসলে আমি অতটা লক্ষ্য করিনি, বুঝলে তো! এক কাজ করো আমাদের মলে এসো তোমার জামা আয়রন করে দিচ্ছি।“
“না না ঠিক আছে, আমি রোদে শুঁকিয়ে নিব”
একরকম জোর করেই মেয়েটা অজিতের হাত ধরে মলের ভিতর নিয়ে গেল। একটি বড় শপিং মল। মেয়েটা হয়ত এখানে কাজ করে। শপিং মলে ঢোকার ভাগ্য তার কোনোদিনও হয়নি। তার জীবনে এই প্রথম সে শপিংমলে ঢুকছে। মেয়েটা তার হাঁতে একটি জামা দিয়ে তাকে ড্রেসিং রুমে জামা বদলে আসতে বলল। সে ড্রেস বদলে মেয়েটিকে ভিজে জামাটা দিয়ে দিল। মেয়েটা বসতে বলে, জামাটা নিয়ে আয়রন করতে চলে গেল।
কিছুক্ষণ পর মেয়েটা ফিরে এল, এরপর অজিত তার পড়নে থাকা নতুন জামাটা মেয়েটাকে দিতে গেলে, মেয়েটা অজিতকে বলে থাক খুলতে হবে না, জামাটা নিয়ে আজ বিকেলে গড়ের মাঠে দেখা করো।
অজিত যথারীতি গড়ের মাঠে যায়, সে দেখে মেয়েটা হাঁতে কয়েকটি ব্যাগ নিয়ে বসে আছে। সে মেয়েটার কাছে যেতেই মেয়েটা তার হাঁতে ব্যাগ গুলি দিয়ে বলে-
“এতে কয়েক জোড়া জামা, প্যান্ট আর জুতো আছে, নিয়ে নাও, এবার পুজোতে এগুলি পড়েই ঘুরবে”
অজিত কিছুই বুঝতে পাড়ছিল না, সে মেয়েটাকে বলে- “আমার কাছে এগুলি কেনার মত টাঁকা নেই”
“টাঁকা দিতে কে বলেছে, নাও ধর”
“আমি কিছুই বুঝছি না, এই সব মানে কি?”
“যখন তোমার জামাটা আমাকে আয়রন করার জন্য দিলে তখনই আমি তোমার জামার অবস্থা দেখে বুঝে গিয়েছিলাম তোমার অবস্থা ভালো না, তোমাকে অনেক বার আমি আমাদের শপিং মলের সামনের বড় শপিং মলটার সামনে দাঁড়িয়ে ভিতরের ঝোলানো জামা গুলি দেখতে দেখেছি। প্রথম থেকেই ভেবেছিলাম তোমাকে সাহায্য করব, কিন্তু কিভাবে সাহায্য করব বুঝতে পারিনি, তাই ইচ্ছাকৃত ভাবেই তোমার উপর আজ সকালে জল ছুঁড়ে দিয়েছিলাম।“
“অচেনা অজানা একজনের জন্য এতগুলি টাঁকা খরচ করলে কেন?”
“আমি টাঁকা খরচ করিনি, শপিংমলটা আমার বাবার, আমি সেখানে দেখাশোনার কাজ করি, কারণ বাবা থাকে না। সে কথা ছারো, এবার তোমার সম্পর্কে কিছু জানতে চাইছে আমার মন”
এবার অজিত শুরু করল তার করুন কাহিনী, কিভাবে সে তার স্বপ্নকে বিসর্জন দিয়ে কাজের খোঁজে কলকাতায় পাড়ি জমিয়েছে, ভেবেছিল কলকাতায় কাজ করে টাঁকা জমিয়ে তার স্বপ্ন পূর্ণ করবে সে, কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূর্ণ হল কই? বাড়িতে রয়েছে, বাবা-মা-বোন। তাদের কাছে পাঁচ বছর থেকে কোনো যোগাযোগ নেই। শুধু পুজোর সময় কাপড় পাঠায়। কি জানি তারা কেমন আছে? সে বাড়ি ফিরে যেতে চায়, কিন্তু যে জেদ নিয়ে সে বাড়ি ছেড়ে এসেছিল, সে জেদ সে পূর্ণ করতে না পারা পর্যন্ত বাড়ি ফিরবে না”
এই সব কথা বলতে বলতে অজিতের চোখে জল চলে এসেছে, একজন পুরুষ অনেক কঠিন হৃদয়ের হয়ে থাকে, অনেক কষ্টকেও তারা হাঁসি মুখে মেনে নিতে পাড়ে, যখন একটি ছেলে কাঁদবে তার মানে সে সত্যি সত্যি ভিতরে খুব ভেঙ্গে গেছে।
এরপর মেয়েটা বলে-
“এক কাজ করো, আমাদের শপিং মলে কিছু লোক দরকার, কম্পিউটার জানো কি?” অজিত মাথা নাড়ল।
“আমরা কয়েকজন accountant নিয়োগ করছি, তুমি কাল প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট নিয়ে আমাদের মলে চলে এসো।“
পরেরদিন অজিত শপিং মলে যায়, সে সেখানে মেয়েটার সহায়তায় accountant এর কাজও পেয়ে যায়। এখানে সে যা বেতন পায় তা দিয়ে তার আরামে চলে যায়, সাথে সাথে এখন একটু একটু করে টাঁকা সঞ্চয় করাও শুরু করে দিয়েছে সে।
এদিকে ধীরে ধীরে সে মেয়েটার প্রতি অনেক আগ্রহী হয়ে উঠে। ধীরে ধীরে সে মেয়েটার প্রেমে পড়ে যায়। কিন্তু সেই মেয়েটা কোথায় আর অজিত কোথায়, তাদের মধ্যে সম্পর্কে জড়ানো অসম্ভব। এই সব ভাবতে ভাবতেই সে আবার তার কাজে মনযোগ দেয়।
এভাবেই কেটে যায় একটা বছর। যতই দিন যায়, ততই অজিত মেয়েটার প্রতি দুর্বল হতে থাকে। একদিন অজিত সাহস করে মেয়েটাকে বলল-
“শোনো তোমার প্রতি আমি কেমন যেন, দুর্বল হয়ে যাচ্ছি”
“তাই বুঝি” –মেয়েটা হেসেছিল। কিন্তু পরিষ্কার ভাবে কিছু বলেনি।
অজিতও আর মেয়েটাকে এই ব্যাপারে কিছু বলেনি, কারণ মেয়েটা যদি তার বাবাকে বলে দেয়, তাহলে সে মাঠে মারা যাবে।
একদিন মেয়েটা অজিতের ডেস্কে আসে, একটি বিয়ের কার্ড দিয়ে বলল, “নিমন্ত্রণ রইল, আসবেই কিন্তু” অজিত বিয়ের কার্ডটি খুলে দেখে, তার জীবনদাত্রী রাজকন্যার বিয়ে, সেদিন সে মেয়েটাকে শুধু “অবশ্যই” বলে কোনো মতে চোখের জল সামলে নেয়।
পড়ুনঃ- মধ্যবিত্তের প্রেম
সত্যি তো আমি কোথায় এক ভবঘুরে, মাস গেলে ইনকাম মাত্র কয়েক হাজার টাঁকা, আর ওদের মাস গেলেই এত্ত ইনকাম হয় যে, হিসেব রাখার জন্যও লোক রাখতে হয়। একজন গরীব হয়ে একজন ধনী লোকের মেয়েকে ভালোবাসার তার কোনো অধিকার নেই, ধনী দের জন্য ধনী রা রয়েছে। আসলে আমার মত গরীবদের এটিই দোষ, যখনই কেউ কিছু সাহায্য করে, একটু যত্ন নেয়, তখনই তার প্রেমে পড়ে যাই, তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে থাকি, অথচ বুঝি না, যে তাদের সাথে আমাদের মানায় না।
আমরা গরীব, গরীবদের দলেই আমাদের মানাবে। দামী রেস্টুরেন্টে আমরা খেতে পারিনা, রাস্তার ধারে, দশ টাকার তরকা-লুচি খেয়েই আমাদের সুখী থাকতে হয়, নিজের পছন্দের জামাটাও কিনতে পাড়ি না, নিজের স্বপ্নগুলি অধরা থেকে যায় আমাদের, এমতাবস্থায় ধনীদের সাথে সম্পর্কে জড়ানোর কথা ভাবা, নিছক ঘুমের ঘোরে দেখা এক দুঃস্বপ্ন মাত্র।
WhatsApp -এ আমাদের গল্প পাঠাও- +91 6296 096 634. এছাড়াও এই পেজের একটু নীচে লেখা পাঠানোর একটি লিঙ্ক আছে সেখানে ক্লিক করেও লেখা পাঠাতে পারো।
গরীবের প্রেমের গল্প। ধনী গরীবের প্রেম। bangla love story. bangla premer golpo. goriber prem.
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।