ভীষণ কষ্টের প্রেমের গল্প। আজকের প্রেমের গল্পটি একটু অন্য স্বাদের। প্রেম কিভাবে একজন মানুষকে মৃত্যু পর্যন্ত চালিত করতে পাড়ে এবং শেষে জীবনে কিভাবে ঘুরে দাঁড়ানো যায় তার গল্পই থাকছে আজ। তবে বলি রাখি, এটি কোনো গল্প নয়, এটি একটি সত্য ঘটনা।

শরীর নাকি প্রেম? ভীষণ কষ্টের প্রেমের গল্পঃ-

কলেজের গেটের সামনে বসে বাদাম খাচ্ছিল সুলেখা (কল্পিত নাম)। তারই ঠিক বিপরীত পাশে বসে গল্প করছে তার বান্ধবী অপর্ণা আর তার গুণধর বয়ফ্রেন্ড। সুলেখার এইসব জিনিসের প্রতি তেমন মনযোগ নেই, আর সে মনযোগ দিতেও চায়না। সবই তো দুইদিনের মায়াখেলা তারপর ক্ষুধা মিটে গেলেই যে যার রাস্তায় চলে যাবে। সবাই যদি লায়লা-মজনু হতে পাড়ত তাহলে তো কোনো কথাই ছিল না। এই সব কথা ভাবতে ভাবতে সে তার মত বাদাম খাচ্ছিল।

কোথা থেকে এক ছেলে এসে, তাকে সরাসরি বলে ফেলল- “I love you, আমি তোমাকে অনেক দিন থেকে ফলো করছি, কিন্তু কখনো সুযোগ পাইনি বলার, আজ ফাঁকা পেলাম তাই বলে ফেললাম। প্লিজ একসেপ্ট করো।“

“বাঃ সাহস আছে আপনার, মানতে হবে, তা মহাশয়, আজ বিকেলে কলেজ শেষের পড় কলেজ মাঠে আমার জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে পাড়বেন কি? তবে হ্যাঁ একাই থাকবেন।“

ভীষণ কষ্টের প্রেমের গল্প
ভীষণ কষ্টের প্রেমের গল্প শারীরিক প্রেমের গল্প

“কলেজ শেষের পড় কেন, তুমি চাইলে আমি তোমার জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করতে পাড়ি।“

“আচ্ছা সে না হয় দেখাই যাবে।“

কলেজ শেষের পড়, সুলেখা দেখে যে, ছেলেটি মাঠে তার জন্য অপেক্ষা করছে। এবার সুলেখা শুরু করল তার গোয়েন্দা স্বভাবের প্রশ্ন।

“প্রেম তো করবে, তো তার আগে আমার তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করার আছে, সময় থাকলে বল”

“কি যে বল, সময়! আমি তোমার জন্য, পুরো ২৪ ঘণ্টাই দিয়ে দিতে পাড়ি।“  

“থাক ২৪ ঘণ্টা দরকার নেই, আপাতত কয়েক মিনিট হলেই চলবে”

“তোমার কাছে আমার প্রথম প্রশ্ন- কত দিনের জন্য এই প্রেম?”

“সারাজীবনের জন্য”

“আশেপাশের এত মানুষ থাকতে আমাকে পছন্দ হল কেন?”

“কেন জানিনা, কিন্তু তোমাকে প্রথম যেদিন দেখেছি সেদিন থেকেই তোমার প্রতি কেমন যেন আলাদাই ভালো লাগা শুরু হয়ে গেছে।“

“তোমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?”

“সে ব্যাপারে কিছু ভাবিনি।“

“এর আগে কত জনের সাথে ব্রেক-আপ হয়েছে?”

“সত্যি বলতে এটাই আমার প্রথম প্রেম।“

“আমাকে কেন ভালোলাগে?”

“বুঝলাম না ঠিক মত”

“ঠিক আছে, তুমি এখন বাড়ি যেতে পারো। বাই” 

শারীরিক প্রেমের গল্প
শারীরিক প্রেমের গল্প saririk prem

এই হল সুলেখা, কোনো ছেলে তার কাছে প্রেমের প্রস্তাব নিয়ে আসলে, সে তাকে এমন জেরা করতে শুরু করে দিবে, যে ছেলেটাই বেমালুম জব্দ হয়ে যাবে। সুলেখার মোট কথা হল, এখন প্রেম তো আর মনের হয়না, প্রেম হয় সুন্দরতার সাথে, প্রেম হয় শরীরের সাথে শরীরের। চাহিদা শেষে যে যার পথে চলো গে, একে অপরকে দোষারোপ, গালাগালি, একে অপরের নামে বাজে কথা ছড়িয়ে বেড়ানো এই তো বর্তমান দিনের প্রেম।

যাক গে সুলেখা সবসময় সব ছেলের বেলায়ই হালকা মাথায় সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তার মতে, প্রেম করা যায়, তবে ছেলে যেন হয় একদম পারফেক্ট। তার অনেক বান্ধবীর জীবনে প্রেমের আনাগোনা দেখতে দেখতে সে অভ্যস্থ হয়ে গেছে।

সেদিন শপিং মলের সিঁড়ি দিয়ে নামতেই, যেন তার মনের মত কোনো ছেলেকে দেখল সে, ছেলেটার কথা বলার ধরণ, ব্যবহার সবকিছুই একদম পারফেক্ট, ঠিক এরকম ছেলেই তার পছন্দের। এবার তার মনে হল সে বুঝি সত্যি প্রেমে পড়ে যাচ্ছে।

এরপরেও ছেলেটাকে বার কয়েক দেখেছে সে, ছেলেটা তাদেরই কলেজের পাশের বাড়িতে ভাঁড়া থাকে। একদিন সে ছেলেটাকে আসতে দেখে যেচে গিয়ে কথা বলল। এরপর ধীরে ধীরে তাদের বন্ধুত্বের সূত্রপাত।

ছেলেটা পড়ে সুলেখারই কলেজে, সুলেখার থেকে এক বছরের সিনিয়র। পড়াশোনা নিয়ে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের পথ ধরেই তাদের বন্ধুত্ব মজবুত হয়। সুলেখা বিশ্বাস করে ফেলে, হাজার হলেও এই ছেলেটি তাকে ছেড়ে যাবার পাত্র নয়। কিছুদিনের মধ্যেই বন্ধুত্বের সম্পর্ক প্রেমের সম্পর্কে পরিণত হয়।

এভাবেই কাটতে থাকে তাদের দিন। ধীরে ধীরে তাদের সম্পর্ক গভীর হয়। অবশেষে একদিন সুলেখার যে ভয়টি ছিল সেটিই হয়ে গেল। প্রেমের সম্পর্ক দৈহিক সম্পর্কে পরিণত হয়ে গেল। একরকম জোর করেই ছেলেটা সুলেখার সম্মান কেড়ে নিয়েছে। এভাবে বেশ কয়েক বার অনিচ্ছা সত্যেও তাকে দৈহিক সম্পর্কে লিপ্ত হতে হয়। নাহলে সবার সামনে তাদের ভিডিও শেয়ার করারও হুমকি দেয় ছেলেটি।

শারীরিক প্রেমের গল্প
শারীরিক প্রেমের গল্প image
<

এদিকে কয়েক মাস পর সুলেখা তার শরীরে কিছু অস্বাভাবিক পরিবর্তন লক্ষ্য করে। সে ওষুধের দোকান থেকে pregnancy kit নিয়ে আসে এবং জানতে পাড়ে ফলাফল পজিটিভ। ঠিক এই ভয়টাই পেয়েছিল সে। সে কি করবে কিছুই বুঝতে পাড়ছিল না। অবশেষে সেই ছেলেটির সাথে সে দেখা করে। সেই ছেলেটি তাকে জানায়- “কিছুদিনের মধ্যেই আমি এই রাজ্য ছেড়ে অন্য রাজ্যে চলে যাচ্ছি, এই মুহূর্তে আমি আর কোন ঝামেলায় জড়াতে চাই না, তোমার পক্ষে ভালো হবে তুমি abortion করে ফেল।“

এই বলে ছেলেটি সেখান থেকে চলে যায়। মানুষের খিদা মেটে গেলে, সে আর রাঁধুনির কদর করে না, এটাই বাস্তব। বাড়িতে ফিরে, দরজা বন্ধ করে অঝোরে কাঁদতে থাকে সুলেখা। মায়ের একটি ডাকও সে শোনেনি।

এদিকে রাতের বেলা মা-বাবা ঘুমিয়ে পড়লে সে চুপিচুপি গো-ডাউনে যায় এবং একটি দড়ি নিয়ে তার রুমে আসে। হাঁতে দড়ি নিয়ে সিলিং ফ্যানে টানায়। তার পড়ার টুলটা ফ্যানের নীচে রাখে। সারাদিন কেঁদে তার চোখ মুখ এক পাগলের মতে হয়ে গেছে। কোমর পর্যন্ত কালো চুল গুলি পাগলির মতো হাওয়ায় দুলছে। সহজে প্রেমের সম্পর্কে আসবে না ভেবে রাখা মেয়েটাও আজ প্রেমের জন্যই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে। 

শেষবারের মত হাঁতে ডাইরিটা নিয়ে কিছু একটা লিখতে যায় সে, কিন্তু তার হাত থেমে যায়। এরপরেই লোড-শেডিং ঘড়ময় অন্ধকার।

পড়ুনঃ- হার্ট টাচিং লাভ স্টোরি

কি ভেবেছিলেন, সুলেখা আত্মহত্যা করবে? যে মেয়ে নিজের সঙ্গী নির্বাচনে এত কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে, তার করা ভুলের জন্য আগত নবজাতক কে সে পৃথিবীর মুখ না দেখার আগেই পৃথিবী ছাড়া করাবে, তা কি  কখনো হয়?

পরেরদিন সকালে বাবা-মায়ের কাছে আগাগোড়া সব ঘটনা সে খুলে বলে।

আপনার কি মনে হয় তার বাবা-মা মেয়েকে ত্যাগ করবে?

না, সুলেখার ক্ষেত্রে সেটি হয়নি। সে তার বাবা-মায়ের বিশেষত মায়ের অনেক সাহায্য পেয়েছে। যখন সময় চলে আসে তখন প্রতি সপ্তাহে চেকআপ থেকে শুরু করে সবসময় সে তার মাকে পাশে পেয়েছে।

আর হ্যাঁ কি ভাবছেন সমাজ মেনে নিবে কিনা, অথবা সমাজ কি বলবে?

উঁহু সমাজ যতই খারাপ চোখে দেখুক সন্তানের ভুলকে মাপ করে দেওয়াই তো মা-বাবার কর্তব্য। সমাজের কথা ভেবে সন্তান কে দূরে সরিয়ে দিয়ে সমাজের চোখে মহান হয়ে তারা কি সুখে থাকতে পাড়ে? সমাজ থাকুক সমাজের জায়গায়, দেখুক না সমাজ নীচ চোখে, হতে পাড়ে সে সমাজের চোখে এক অশুদ্ধ মেয়ে, কিন্তু যে সমাজ তাকে নিরাপত্তা দিতে পাড়ে না, যে সমাজের মূল কাণ্ডারি পুরুষের স্পর্শে এসেই তার এই অবস্থা, সেই সমাজের আর গুরুত্ব কি?   

কয়েক মাস পড় সুলেখার কোল আলো করে পৃথিবীতে এল এক ফুটফুটে কন্যা সন্তান। এরপর সুলেখা তার সাথে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা ভুলে গিয়ে আবার পড়াশোনার মূল স্রোতে ফেরার পরিকল্পনা করে। বর্তমানে সে এক সরকারী মেডিক্যাল কলেজে নার্সের চাকরি করে। আর তার মতনই ফাঁদে পড়ে যারা ভুগছে তাদের জন্য কিছু করতে চাইছে সে। এরকম অনেক মেয়েই তার কাছে এসেছে যাদের সাথে সুলেখার মতনই ঘটনা ঘটে গেছে।

পড়ুনঃ- ইউনিভার্সিটি প্রেমের গল্প।

দুঃখে ভরা প্রেম কাহিনী

শেষে তারাও abortion এর রাস্তা বেঁছে নিয়েছে। সুলেখা তাদের অনেক বুঝিয়েছে। কিন্তু সবার মানসিকতা এবং পরিবার তো আর সুলেখার পরিবারের মত নয়, যে সব কিছু মেনে নিবে। তাই অনেকেই পরবর্তীতে আত্মহত্যা করেছে বা abortion করেছে। সাময়িক সুখের তাগিদে আগন্তুক কে আর পৃথিবীর মুখ দেখতে দিল না তারা।

আগন্তুক তো আর একাই আসে নি। তারাই তাকে নিয়ে এসেছে, কিন্তু তাদের করে যাওয়া ভুলের মাশুল গুনতে হচ্ছে আগন্তুকদের।

সুলেখাকে অনেকে আবার বেশ্যাও বলে ফেলেছে। কিন্তু তারা কি এটা বুঝেছে যে, পুরুষের স্পর্শ না পেলে নারী কখনো বেশ্যা হয়না।

সুলেখা ঠিক করে, সে আর কোনো দিনও বিবাহ করবে না, অনেক বিবাহের প্রস্তাব এলেও সে তাদের দিকে মুচকি হেঁসে মনে মনে বলে ভোগী পুরুষের স্পর্শ না পেলে কোনো মেয়েই নষ্ট হয়না।

SARIRIK PREM ভীষণ কষ্টের প্রেমের গল্প
SARIRIK PREM ভীষণ কষ্টের প্রেমের গল্প

আমাদের গল্প পাঠানোর জন্য WhatsApp-এ যোগাযোগ করুনঃ- +91 6296 096 634 এই নাম্বারে। অথবা নীচের লিঙ্কে ক্লিক করেও আপনার লেখা আমাদের পাঠাতে পাড়েন।

এখানে প্রকাশিত সমস্ত লেখার কপিরাইট অ্যাডমিন দ্বারা সংরক্ষিত। অনুমতি ব্যাতিত কোনো রূপ পরিবর্তন করে বা কপি করে এই লেখা অন্যত্র প্রকাশিত করলে কপিরাইট আইনের অধীনে তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ভীষণ কষ্টের প্রেমের গল্প। শরীর নাকি প্রেম? 1 sad love story of a brave girl. SARIRIK PREM শারীরিক প্রেমের গল্প

Spread the love

Leave a Reply