আজকের এই ভূতের গল্পটি একটু অন্য স্বাদের। (notun vuter golpo). গল্প লেখা আপনার প্যাশন হলে আমাদের সাথে যুক্ত হতে ভুলবেন না যেন। চলুন পড়ে নিই আজকের নতুন ভয়ানক ভূতের গল্পটি।
notun vuter golpo:-
বৈশাখ মাস, হঠাৎ করেই আকাশের মেজাজটা যেন বিগড়ে গেল। যদিও ঘড়িতে দুপুর দুইটা বাজে কিন্তু মনে হচ্ছে যেন সন্ধ্যা নেমে এল। কাল বৈশাখীর লীলা-খেলা শুরু হবে এখনই। আকাশে প্রবল বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। সব মিলিয়ে এক ভয়ানক পরিস্থিতির শুরু হতে চলেছে।
মাত্র কয়েকমাস আগেই বিয়ে হয়েছিল সুলেখার। স্বামী অফিসে যাবার পড়, এত বিশাল বড় একটা ভাঁড়া বাড়িতে সে একাই থাকে। এদিকে আবার আকাশের ভয়ানক পরিস্থিতি দেখে সুলেখা ভয়ে জানালার কাছে বসে স্বামীর আসার পথে উঁকি দিচ্ছে, কিন্তু দূর দুরান্তে শুধু হাওয়ায় উন্মত্ত হয়ে যাওয়া গাছপালার নাচন ছাড়া আর কোনো জনমানবের চিহ্নটুকুও দেখা যাচ্ছে না। তারই মাঝে হঠাৎ করে প্রবল শব্দে বিদ্যুৎ চমকানোর আওয়াজ সুলেখার মনে আরও বেশি ভয়ের উদ্রেক করছে।
এদিকে আবার কারেন্টও নেই, গোটা ঘড় ঘুটঘুটে অন্ধকার। টেবিলে জ্বালিয়ে রাখা মোমবাতিটা হাওয়ার প্রকোপে বাড়বার নিভে যাচ্ছে। এরকমই এক পরিবেশে ভয়ে কাত হয়ে বসে স্বামীর অপেক্ষা করছে নববিবাহিতা সুলেখা।
সুলেখার স্বামীর নাম অনিল। সে একটি বেসরকারি আইটি কোম্পানিতে চাকরি করে। প্রতিদিন রাত প্রায় নয়টার দিকে সে বাড়ি ফিরে, যদিও এখন সবে মাত্র দুইটা বাজে কিন্তু সুলেখা এতটাই ভয় পেয়ে গেছে যে সে এখন থেকেই তার অপেক্ষা করে বসে আছে। সুলেখা ভালো মতই জানে যে রাত নয়টার আগে অনিল বাড়ি ফিরবে না।
এদিকে ঝড়ের প্রকোপ হঠাৎ করেই বেড়ে গেল। প্রবল হাওয়া শুরু হয়ে গেল। জানালার পর্দাগুলি পাগলের মত উড়ছে। পর্দাগুলি ঠিক করে সুলেখা জানালা বন্ধ করে দেয় এবার ঘড় আরও অন্ধকার হয়ে যায়, কিছুই দেখা যাচ্ছে না। সুলখা হাতড়ে মোবাইলে হাঁতে নিয়ে অনিলকে ফোন করতে যায়, কিন্তু সে নিরাশ হয়ে যায় কারণ মোবাইলে ব্যাটারি নেই, সুইচ অফ হয়ে পড়ে আছে। সে সকালে তাড়াতাড়ি রান্না করার চাপে মোবাইল চার্জে দিতেই ভুলে গেছে।
পড়ুনঃ- হোটেলের ভূত
সুলেখা নিরুপায় হয়ে আতঙ্কিত হতে থাকে। হঠাৎই প্রচণ্ড হাওয়ায় টেবিলে থাকা কাঁচের ফুলদানীটা মেঝেতে পড়ে ভেঙ্গে যায়। সুলেখা নিজের অজান্তেই ভয়ে চিৎকার করে উঠে। সে কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে দেখল যে কাচগুলি মাটিতে পড়ে আছে। প্রচণ্ড ঝড়-হাওয়ার শব্দকে ভেদ করে সুলেখার কানে জানালায় টোকা দেওয়ার শব্দ ভেসে এল, সে জানালা খুলে দেখে কিছুই নেই। সে ভাবল হয়ত প্রচণ্ড হাওয়ার জন্য তার এরকম মনে হচ্ছে।
কিছুক্ষণ পড় সে দরজায় টোকা দেওয়ার শব্দ শুনল, সে প্রথমে হাওয়া ভাবলেও বেশ কয়েকবার অনবরত টোকা পড়েই যাচ্ছে। সুলেখা ভয় পেয়ে গেল। এত ঝড়-বৃষ্টিতে বাইরে কে হতে পাড়ে! এত তাড়াতাড়ি তো অনিল বাড়ি ফিরবে না। কিন্তু প্রবল টোকার শব্দে সে আর বসে থাকতে পাড়ল না। সে ভয়ে ভয়ে দরজার দিকে এগোতে থাকে, কাঁপা হাঁতে সে দরজা খুলে। দরজা খুলতেই সে বিস্মিত হয়ে যায়।
কারণ দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটা আর কেউ নয়, অনিল। সুলেখা তাকে দেখে আনন্দিত হয়ে যায়, কিন্তু তার সারা শরীরে কাঁদা দিয়ে ভর্তি। তার জামা কাপড় সব কর্দমাক্ত। সুলেখা কিছুতেই বুঝতে পাড়ছিলনা যে এরকম কিভাবে হল! অনিল ভিতরে গেলে সুলেখা ঘাবড়ে গিয়ে তাকে এরকম অবস্থার কারণ জিজ্ঞাসা করে।
অনিল জানায়, “আজ আমার তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে গিয়েছিল। অফিসের বাইরে গাড়ির জন্য অপেক্ষায় ছিলাম কিন্তু কিছুতেই একটিও গাড়ি পাচ্ছিলাম না। তাই আমি ঠিক করি আজ হেঁটেই বাড়ি ফিরব। কিন্তু রাস্তায় হঠাৎ করেই প্রচণ্ড বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। আমি একটি মাটির রাস্তা দিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে চাইছিলাম। কিন্তু মাটির রাস্তাটিতে পা রাখা মাত্রই আমি পিছলে কাঁদার উপর পড়ে যায়, আর আমার এরকম অবস্থা হয়ে যায়।
আচ্ছা আমি প্রথমে স্নান করে আসি।”এই বলে অনিল বাথরুমের দিকে চলে যায়।
কিন্তু কেন যেন সুলেখার মন কিছুতেই শান্তি পাচ্ছিল না। তার কেমন যেন অনুভব হচ্ছে। আর তার মন খুব চঞ্চল হয়ে উঠছে। তার যেন অনুভব হচ্ছে সে একা আছে, মন মাঝে মাঝে আতঙ্কিত হয়ে উঠছে।
এদিকে বৃষ্টি থেমে গেছে। কিছুক্ষণ পড় কারেন্টও চলে এল। সুলেখা তার মোবাইল চার্জে দিয়ে দেয়। মোবাইলের সুইচ অন করে সে দেখে, অনিলের ২০ টি মিসড কল। তার মন খুবই চঞ্চল হয়ে উঠছে। কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না।
চার্জে দেওয়ার কয়েক মিনিট পড়েই সুলেখার ফোন বেজে উঠল। সে ফোন রিসিভ করতেই ওপার থেকে এক কণ্ঠস্বর ভেসে এল এবং বলল- “আমি অনিলের অফিস থেকে বলছি। আপনি কি অনিলের স্ত্রী।“
সুলেখা- “হ্যাঁ, বলুন”
“আমরা দুঃখের সহিত জানাচ্ছি যে, অনিল আর এই পৃথিবীতে নেই, সে অ্যাকসিডেন্টে মারা গেছে।“ কথাটা শুনেই সুলেখার পায়ের তলার মাটি যেন খসে পড়ল। একি বলছে লোকটা, অনিল তো এইমাত্র বাথরুমে স্নান করতে গেল। সুলেখা ফোন রেখে দৌড়ে বাথরুমের কাছে যায় এবং অনিলকে ডাকতে থাকে, কিন্তু ভিতর থেকে কোনো সাড়া আসল না, সে এবার ভয়ে ঘামতে শুরু করে দিয়েছে।
সে জোরে বাথরুমের দরজায় ঠেলা দেয়, কারণ সে ভেবেছিল দরজা ভিতর থেকে বন্ধ আছে, কিন্তু দরজা বন্ধ ছিল ন। এমন হ্যাঁচকা ঠেলাতে সুলেখা বাথরুমের ভিতরে গিয়ে ছিটকে পড়ে যায়। তার মাথা বাথটবে লেগে যায়, আর মাথা দিয়ে রক্ত পড়তে থাকে। সুলেখা কাঁদতে শুরু হয়। এই কান্না ভয় মিশ্রিত কান্না। সে কিছুতেই বুঝতে পাড়ছিল না যে, তার সাথে কি হচ্ছে। বাথরুমে অনিলের কোনো চিহ্নই নেই, এমনকি নেই কোনো জলের চিহ্ন।
সে উঠে দাঁড়ায় এবং দ্রুত অনিলের অফিসে চলে যায়, সে দেখে অফিসের সবাই অনিলের দেহকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। সুলেখাকে দেখা মাত্রই সবাই পথ ছেড়ে দিল, সুলেখা দেখে যে, ঠিক যেভাবে সে অনিলকে একটু আগে বাড়িতে ফিরতে দেখেছে ঠিক একই রকম ভাবে সে মৃত অবস্থায় পড়ে আছে। তার সারা শরীরে কাঁদা লেগে আছে। সুলেখা অনিলের নিথর দেহের উপর পড়ে কাঁদতে থাকে।
সুলেখা বুঝে যায় যে, একটু আগে অনিলের আত্মার সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল।
বর্তমানে সুলেখা বিধবা অবস্থাতেই তার শ্বশুর বাড়িতে আছে, এখনও তার মনে অনিলের আত্মার সাথে দেখা হওয়ার ঘটনাটি ভেসে উঠে। একসময় ভুত-প্রেত-আত্মায় বিশ্বাস না করা বিজ্ঞানের ছাত্রী সুলেখারও মনে বিশ্বাস জন্মায় যে, সত্যি পৃথিবীতে আত্মা নামে কিছু আছে। তা না হলে সে তার প্রিয়জনের শেষ দেখা দেখতে পাড়ত না।
পড়ুনঃ- অ্যানাবেলা অভিশপ্ত পুতুল
আমাদের লেখা পাঠানোর জন্য সরাসরি WhatsApp করুন- +91 6296 096 634 এই নম্বরে। অথবা নীচের লিঙ্কে ক্লিক করেও লেখা পাঠাতে পাড়েন।
নতুন ভয়ানক ভূতের গল্প ভূতের গল্প pdf notun vuter golpo bengali ghost story.
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।