পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মানব গোষ্ঠীর মধ্যে বিভিন্ন আজব নিয়মের সন্ধান পাওয়া স্বাভাবিক। আজ ছাড়পত্রের পাতায় কয়েকটি অদ্ভুত বিয়ের নিয়ম জানব। এই বিয়ের আজব নিয়ম গুলি সবকটিই অবাক করার মত।

অদ্ভুত বিয়ের নিয়মঃ-

মূল লেখাটিতে যাওয়ার আগে কিছু কথা- লেখাটি শুধুমাত্র জ্ঞান আহরণের জন্য। এই লেখাটির উদ্দেশ্য কোনো জাতি বা ধর্ম বা গোষ্ঠীকে আঘাত করা নয়, বরং তাদের মধ্যে প্রচলিত প্রথা গুলিকে সবার সামনে শুধুমাত্র জানার জন্য তুলে ধরা। ‘জ্ঞান আহরণের মানসিকতা‘ দিয়ে লেখাটিকে বিচার করতে অনুরোধ করা হচ্ছে। ছাড়পত্র প্রত্যেক ধর্ম জাতি এবং গোষ্ঠীকে সম্মান করে।

বিয়ের আজব নিয়মঃ- ১

একসময় ভারতে জ্যোতির্বিদ্যার প্রভূত প্রচলন ছিল। আর এই জ্যোতির্বিদ্যার চর্চার অন্যতম কেন্দ্র বিন্দু ছিল গ্রহ এবং তাদের অবস্থান। যদি কোনো মেয়ের জন্ম মঙ্গল এবং শনি গ্রহের সপ্তম কক্ষে অবস্থান কালে হয়, তাহলে সেই মেয়েটি নাকি অভিশপ্ত! আর প্রচলিত মত অনুসারে সেই মেয়েটি বড় হয়ে যদি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়, সে খুবই তাড়াতাড়ি বিধবা হতে চলেছে। তার উপর নাকি শনি এবং বুধের দোষ লেগেছে।

আবার এর থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি উপায়ও বের করা হয়েছে। এর উপায় হিসেবে সেই মেয়েটি যখন বিবাহের উপযুক্ত হবে (অনেকের মতে ছোটবেলাতেই) তখন তাকে প্রথমে একটি সুস্থ গাছের সঙ্গে বিবাহ দিতে হবে, গাছের সঙ্গে বিবাহের কিছুদিন পর সেই গাছটিকে কেটে ফেলতে হবে। এতে নাকি সেই মেয়েটির দোষ কেটে যাবে। এরপর সে যে কোনো পুরুষকে বিবাহ করতে পারে, কারণ তখন সে দোষমুক্ত।

অদ্ভুত বিয়ের নিয়ম
অদ্ভুত বিয়ের নিয়ম

বিয়ের আজব নিয়মঃ- ২

ভারতে, বিশেষত হিন্দুদের মধ্যে পাত্রের জুতো লুকিয়ে রাখার রেওয়াজ রয়েছে। কণের বোন পাত্রের জুতো লুকিয়ে রেখে দেয়, এবং জুতো ফিরিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে একটি মোটা অঙ্কের টাকা চেয়ে বসে। পাত্র মশাই বাধ্য হয়ে কণের বোনের চাওয়া মিটিয়ে দিয়ে তবেই তার জুতো জোড়াকে ফিরে পান।

আমার সাথেও এরকম কিছু একটা ঘটবে আন্দাজ করতে পেরে আমি একজোড়া নতুন জুতো নিয়ে নিয়েছিলাম আর সেগুলি আমার এক নিকট আত্মীয়ের কাছে সুরক্ষিত অবস্থায় রেখে দিই। এরপর যখন বিবাহের অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ হল তখন কণের বোন সোজা কথায় বলতে গেলে আমার শ্যালিকা আমার জুতো জোড়া লুকিয়ে রেখে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা চেয়ে বসে।

আমি বিজ্ঞের মত সেই আত্মীয়কে আমার নতুন জুতো আনতে বলি। এরপর সেই নতুন জুতো পরিধান করি, এবং কণের বোনকে বলি- “আমার জুতো রেখে দিও, তোমার বাবার কাজে লাগবে।“ এটাই হল থাগ লাইফ।

Jokes apart…

পৃথিবীর অদ্ভুত বিয়ে
পৃথিবীর অদ্ভুত বিয়ে

বিয়ের আজব নিয়মঃ- ৩

বিবাহের উৎসব সাধারণত আনন্দের উৎসব। কিন্তু চিনের তুজিয়া উপজাতিদের কাছে বিবাহের উৎসব মোটেও আনন্দের বা হাসিখুশি নয়। তাদের কাছে বিবাহ হল একটি অত্যন্ত দুঃখদায়ক বিষয়। তাদের নিয়ম অনুসারে বিবাহ প্রস্তুতি শুরু করতে হবে কান্নার মাধ্যমে। আসন্ন বিবাহের কথা মাথায় রেখে এক মাস আগে থেকেই তুজিয়া পরিবারের কণেকে প্রতিদিন অন্তত এক ঘণ্টা কাঁদতেই হবে। এতে নাকি তাদের পরিবার পরিজনদের ছেড়ে যাওয়ার দুঃখ লাঘব হয়।  

অদ্ভুত বিয়ের নিয়মঃ- ৪

রোমানিয়াতে প্রচলিত রয়েছে এক অদ্ভুত বিয়ের নিয়ম। সেখানে বিবাহের ঠিক কিছুক্ষণ আগে, পাত্রীকে কিডন্যাপ করে রাখা হয়। এটিই নাকি সেখানকার নিয়ম। পাত্রীর বন্ধু- বান্ধবী ও আত্মীয়রা এই কিডন্যাপ করে থাকে। আর পাত্রীর মুক্তিপণ হিসেবে ধার্য করা হয় বিপুল পরিমান টাকা। সেই টাকা যদি পাত্র পক্ষ দিতে পারে তবেই পাত্রীকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

পড়ুনঃ- 
পৃথিবীতে প্রাপ্ত কিছু দামী বস্তু

অবাক করে দেওয়ার মত কিছু তথ্য 

অদ্ভুত বিয়ের নিয়মঃ- ৫

স্কটল্যান্ডের বেশ কিছু জায়াগায় হবু পাত্র-পাত্রীকে একটি ফাঁকা মাঠে নিয়ে আসা হয়, এরপর সমস্ত বন্ধু-বান্ধবীরা মিলে কালো রঙের চিপচিপে আঠালো পদার্থ (স্থানীয় নাম টেরাক্যাল),  আটা ইত্যাদি সমগ্র শরীরে মাখিয়ে দেওয়া হয়। এরপর তাদের নিয়ে রাস্তায় একটি শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়, আর এই শোভাযাত্রার অগ্রভাগে থাকে নানা রকম জিনিস মাখিয়ে কালো ভুত করে দেওয়া হবু পাত্রপাত্রী।

প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, এর মাধ্যমে নাকি সেই হবু পাত্র-পাত্রীর মধ্যে থাকা অশুভ জিনিস বেড়িয়ে আসে এবং পরবর্তী জীবনে তারা সুখী হয়।

অদ্ভুত বিয়ের নিয়মঃ- ৬

কিউবাতে প্রচলিত রয়েছে একটি বড়ই আজব বিয়ের নিয়ম। সাধারণত বিবাহের দিন নববিবাহিত দম্পতি সহ বাকি সবাই এক সাথে ডান্সে অংশগ্রহণ করে। কিন্তু কিউবার কিছু স্থানে প্রচলিত নিয়ম অনুসারে নববিবাহিত কণের সঙ্গে যে কেউ ডান্স করতে পারবে। কিন্তু ডান্স করার জন্য আপনাকে দিতে হবে অর্থ। আর এই অর্থ দিতে হবে কণের ড্রেসের সাথে গেঁথে। আর এই অর্থ দিয়েই পরবর্তীতে সেই দম্পতি হানিমুনে যাবে। কত টাকা সেখান থেকে ইনকাম হল, সেটিই ঠিক করবে হানিমুনের জায়গা বাড়ি থেকে কতটা দূরে বা কাছে হবে।

পৃথিবীর অদ্ভুত বিয়েঃ- ৭

মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার টিডং উপজাতির মধ্যে প্রচলিত রয়েছে এক অদ্ভুত বিয়ের নিয়ম। সদ্য বিবাহিত যুগল, বিবাহের তিন দিন পর্যন্ত কোনো বাথরুম ব্যবহার করতে পারবেন না। তাদের এক জায়গায় বসিয়ে রাখা হয়। তারা যাতে বাথরুম করার জন্য চলে না যায়, তা নজর রাখতে একজন প্রহরী রেখে দেওয়া হয়। এই সময়ে তাদের শুধুমাত্র বাঁচার উপযোগী খুবই সামান্য খাবার এবং পানীয় সরবরাহ করা হয়।  

প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, এতে নবদম্পতি তাদের পরবর্তী জীবনে চলার পথে নানান বাঁধাকে সহজে মোকাবিলা করার শক্তি পাবে, এবং তাদের মেল বন্ধন মজবুত হবে।

weird marriage rituals bengali
weird marriage rituals bengali
<

পৃথিবীর অদ্ভুত বিয়েঃ- ৮

ভেনেজুয়েলাতে প্রচলিত একটি বিবাহের নিয়ম অনুসারে নব দম্পতি হঠাৎ করেই কাউকে না জানিয়েই বিবাহের অনুষ্ঠান থেকে পালিয়ে যান। তারা যদি সবার চোখ এড়িয়ে পালিয়ে যেতে পারেন, তাহলে সেটিকে চরম পাওয়া মনে করা হয় এবং এটি তাদের কাছে আশীর্বাদ স্বরূপ।

পৃথিবীর অদ্ভুত বিয়েঃ- ৯

এবার বিয়ের যে অদ্ভুত নিয়মটি বলতে যাচ্ছি, সেটি বিয়ের নিয়ম নাকি বিয়ে ভাঙ্গার নিয়ম কিছুতেই আমার মাথায় ঢুকছে না। কথা বলছি সুইডেনে প্রচলিত এক অদ্ভুত নিয়মের। এই নিয়ম অনুসারে বিবাহের দিন পাত্র সাহেব গায়েব হয়ে যান। আর বিবাহে উপস্থিত অবিবাহিত পুরুষেরা সবাই একে একে পাত্রের হবু বউকে কিস করেন।

ঠিক একই ভাবে,  কণে পক্ষ থেকে আসা সমস্ত অবিবাহিত এবং যুবতী মেয়েরা, হবু পাত্রকে একে একে কিস করতে থাকে।


পড়ুনঃ-
 বিজ্ঞানের মজার কিছু আবিষ্কার 

আজব ও অদ্ভুত কিছু নেশা 

পৃথিবীর অদ্ভুত বিয়েঃ- ১০

সিঙ্গাপুরের কিছু কিছু স্থানে প্রচলিত রয়েছে এক আজব বিয়ের প্রথা। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হতে না হতেই, নববিবাহিতা বধূর সামনেই তার স্বামীকে মোটা গাছের ডাল, অথবা কোনো হাতল যুক্ত পাত্র দিয়ে প্রহার করতে থাকে পাত্রের বন্ধুরা।

যদিও এটি আসলে মজার জন্যই করা হয়। কিন্তু বর্তমানে এটি একপ্রকার রীতি রেওয়াজে পরিনত হয়েছে। পাত্রের সব বন্ধুরা মিলে পাত্রকে ধরে মাটির উপর ফেলে দেয়, এরপর পাত্রের পা থেকে জুতো খুলে নিয়ে পায়ের তলায় শুরু হয় প্রহার। পাত্র যতই চিৎকার করতে থাকে, ততই প্রহারের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকে।

পৃথিবীর অদ্ভুত বিয়েঃ- ১১

কেনিয়াতে বসবাসরত মাসাই জনজাতির মধ্যে একটি খুবই নিন্দনীয় প্রথা প্রচলিত রয়েছে। তাদের বিবাহের অনুষ্ঠান শেষ হয়, কণের উপর থুথু ছেটানোর মাধ্যমে।

বিয়ের আজব নিয়ম
বিয়ের আজব নিয়ম

কণের বাবা, তার কন্যার কাছে যায় এবং মেয়ের মাথা এবং বুকে থুথু ছিটিয়ে দেয়। এর মাধ্যমে, নাকি প্রমাণিত হয় যে, মেয়ের জীবনের সাথে তার বাবার সমস্ত বন্ধন সেদিন থেকে শেষ এবং বাবা প্রাণ ভড়ে মেয়েকে আশীর্বাদ করছেন। এবং নতুন জীবনের সূত্রপাত সেদিন থেকেই। এরপর কণে পাত্রের হাত ধরে সোজাসুজি শ্বশুর বাড়ির দিকে পা বাড়ায়।

এখানে বলে রাখি কেনিয়াতে থুথু দেওয়াকে ততটাই প্রাধান্য দেওয়া হয় যতটা আমাদের দেশে আশীর্বাদ প্রদানকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। সেখানে কোনো বয়স্ক ব্যাক্তি যদি কারও উপর থুথু ছিটিয়ে দেয়, তাহলে যার উপর থুথু ছিটিয়ে দেওয়া হল তাকে ভাগ্যবান মানা হয়ে থাকে।  

©লেখাটির কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। 

পড়ুনঃ- 

ইতিহাসের কিছু অজানা তথ্য 

পৃথিবী ও সূর্যের সঙ্গে যুক্ত অজানা তথ্য 

প্রচলিত কুসংস্কার ও তার আসল সত্য 
সমস্ত আপডেটের জন্যঃ- 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

Spread the love

Leave a Reply