আজ আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে দামি বস্তু সম্পর্কে আলোচনা করতে চলেছি। তবে এই জিনিসগুলি কিন্তু অসাধারন নয়, একদম সাধারণ। মানে আমি বলতে চাইছি, আমরা প্রতিদিন ব্যবহার করি অথচ এরই বড় ভাইয়ের দাম অনেক অনেক বেশি।
পৃথিবীর সবচেয়ে দামি বস্তুঃ-
পৃথিবীর সবচেয়ে দামি আমঃ-
সূর্যের ডিম নামে পরিচিত জাপানের মিয়াজাকি আম হল বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম। এর প্রতি কিলোর জন্য আপনাকে গুনতে হবে ২.৭০ লক্ষ টাঁকা (ভারতীয় মুদ্রায়)। এই আমগুলি এক-একটি প্রায় ৩৫০-৯০০ গ্রাম পর্যন্ত ওজন হতে পাড়ে। অন্যান্য আম গুলির তুলনায় এই আমটি শতকরা ১৫% বেশি মিষ্টি (ভালোমত যদি পেকে যায়)।
পৃথিবীর সবচেয়ে দামি মোবাইলঃ-
এমনিতে আমরা সবাই জানি i-Phone এর দাম অন্যান্য মোবাইলগুলির তুলনায় অনেকটাই বেশি। তাহলে পৃথিবীর সবচেয়ে দামি মোবাইল এর তকমা টা আইফোন হাতছাড়া করবে কেন? Falcon Supernova i-Phone 6 pink diamond হল বিশ্বের সবচেয়ে দামি মোবাইল। এর মূল্য প্রায় ৪৮.৫ মিলিয়ন ডলার। ২৪ ক্যারট গোল্ড কেস দিয়ে তৈরি এই আইফোনটির পেছনের প্রায় মাঝ বরাবর রয়েছে একটি বড় গোলাপি রঙের হীরে। আর এই জন্যই একে পিঙ্ক ডায়মন্ড ফোনও বলা হয়ে থাকে।
টয়লেট পেপারঃ-
আমরা সাধারণত যে টয়লেট পেপার গুলি ব্যবহার করি সেগুলির মূল্য মোটামুটি ১০০-২০০ টাঁকা। কিন্তু আপনি যদি একটু রঙ্গিন স্বভাবের মানুষ হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি রেনোভা কালার টয়লেট পেপার ব্যবহার করতে পাড়েন। যেহেতু আপনি রঙ্গিন মানুষ তাই টাকাও একটু রঙ্গিন ভাবেই গুনতে হবে, এই টয়লেট পেপারটির জন্য। এর তিনটি রোলের একটি প্যাকেট আপনি পাবেন যার মূল্য প্রায় ২০ ডলার।
পৃথিবীর সবচেয়ে দামি মাছঃ-
অন্যান্য মাছগুলির তুলনায় আকাশ ছোয়া দাম, প্লাটিনাম অ্যারোয়ানা নামের এই মাছটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে দামি মাছ বানিয়ে দিয়েছে। অত্যন্ত দুর্লভ এবং সুদর্শন এই মাছটির প্রতিটির মূল্য হল প্রায় ৪০০০০০ ডলার। এই মাছটির আকর্ষণের মূল কারণ হল এর অত্যন্ত সুন্দর দেহ। মূলত সংকরায়নের ফলেই এমন মাছের উদ্ভব হয়েছে বলেই মনে করা হয়।
হেডফোন তাও আবার হীরের!
এই সমস্যাটি মেয়েদের। কানে দামি ব্র্যান্ডের সোনার দুল পড়েছে, অথচ লোককে দেখাতে পাড়ছে না। কারণ হেডফোনটাও ছাড়া যাচ্ছে না। তাহলে আর দেড়ি কিসের আজই ৫০০০০ ডলার দিয়ে একটি হীরের আবরণে রাঙ্গানো সোনালি রঙের হেডফোন কিনে ফেলুন। উঁহু এই হেডফোনে কিন্তু তারের ঝামেলা নেই। কারণ ব্লুটুথ রয়েছে।
তবে আমি কিন্তু আমার এই ছেঁড়া হেডফোন নিয়েই খুশি।
সোনার সুইচঃ-
লক্ষ লক্ষ টাঁকা খরচ করে ঘড় বানানোর পড় আপনি অতি অবশ্যই আপনার ঘড়ের সুইচ বোর্ডে এই ২৫০ ডলারের সুইচ লাগাতেই পাড়েন। উঁহু এটা কিন্তু একটা সুইচই। এই সুইচ টির মাধ্যমে আপনি বিছানায় যাওয়ার পরেও wirelessly আপনার লাইট বন্ধ করতে পাড়বেন। কি মজাদার টাঁকা উড়ানোর উপায় তাই না বলেন!
স্ট্যাপল তাও আবার সোনার?
কাগজে পিন দিয়ে স্ট্যাপল করা ইস নরমাল, কিন্তু কাগজে গোল্ড প্লেটেড পিন! ও মা গো, একদম টুরু বড় লোকের পোলা। কেমন হয়, যদি আপনিও আপনার অফিসের কাগজে সাধারণ পিন দিয়ে স্ট্যাপল না করে গোল্ড প্লেটেড পিন দিয়ে স্ট্যাপল করেন। তবেই না আপনার কোম্পনির সম্মান টা বাড়বে। তবে এরজন্য বেশি নয় আপনাকে গুনতে হবে মাত্র ১৭৫ ডলার।
চামড়ার কিবোর্ডঃ-
প্লাস্টিক পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকর। তাই আজই প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করুন। আপনার কম্পিউটারে ব্যবহার করুন চামড়ার কি-বোর্ড। একদম আসল চামড়ার তৈরি এই কি-বোর্ডটির জন্য আপনাকে গুনতে হবে ৬০৩ ডলার।
পড়ুনঃ- মজার সাইকোলজি হ্যাক
হাওয়ায় ভাসমান চুম্বকীয় বিছানাঃ-
একবার কল্পনা করুন আপনার বিছানা হাওয়াতে ভাসছে, আর আপনি তাতে দিব্যি সে নাক ডাকিয়ে ঘুমিয়ে যাচ্ছেন। হ্যাঁ এরকমও বিছানা রয়েছে। চুম্বকের বিপরীত মেরুর বিকর্ষণ বলকে কাজে লাগিয়েই এই বিছানা গুলি তৈরি করা হয়। মাটি থেকে প্রায় ১.২-১.৫ ফুট উপড়ে এগুলি ভাসতে থাকে। আর সর্বোচ্চ প্রায় ২০০০ পাউন্ড পর্যন্ত ওজন ধরে রাখতে পাড়ে। এই গুলি যাতে অন্যত্র ছিটকে না যায় সেই জন্য শক্ত দড়ি জাতীয় জিনিস দিয়ে এগুলিকে বেঁধে রাখা হয়। এই বেড গুলির মূল্য প্রায় ১.৬ মিলিয়ন ডলারের মত।
কাঁচের স্বচ্ছ পিয়ানোঃ-
পৃথিবীটা সত্যি বিস্ময়কর। আর থেকেও বিস্ময়কর এই পৃথিবীতে বসবাসকারী মানুষগুলো। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে, বেজিং এ অলম্পিক খেলা শুরুর অনুষ্ঠানে এই পিয়ানোটি সর্বপ্রথম জনসম্মুখে আনা হয়েছিল। পিয়ানোটি স্বচ্ছ কাঁচের তৈরি। এর ভিতরের বিভিন্ন লেবেল গুলি আরামেই দেখা যায়। শুধুমাত্র দেখার জন্য নয় এটি আর কয়েকটা পিয়ানোর মত দিব্যি বাজানোও যেতে পাড়ে। এই পিয়ানোটির আনুমানিক মূল্য হল প্রায় ৩.২ মিলিয়ন ডলার।
কুমীরের চামড়ার ছাতাঃ-
এতদিন অনেক ছাতা ব্যবহার করেছি। কিন্তু কখনো কুমীরের চামড়ার ছাতা ব্যবহার করি নাই, অথবা কাউকে ব্যবহার করতেও দেখি নাই। মানুষের পাগলামি কি পর্যায়ে পৌঁছালে সে কুমীরের চামড়ার ছাতা বানাতে পাড়ে তা নিতান্তই ভাবার বিষয়। এই কুমীরের চামড়ার ছাতাটির দাম প্রায় ৫০০০০ ডলার।
১২.৪ মিলিয়ন ডলারের ব্রেসলেটঃ-
অষ্টম এডওয়ার্ড এবং অয়ালিস সিম্পসন এর প্রেম কাহিনী হয়ত আপনার অজানা নয়। তাদের ভালোবাসার প্রথম এই ব্রেসলেট টি হল পৃথিবীর সবথেকে দামী ব্রেসলেট। এই ব্রেসলেট টিতে হীরে বসানো রয়েছে। এই ব্রেসলেটটিকে নির্ভীকতা এবং সাহসের, প্রেমের অন্যতম প্রতীক মানা হয়ে থাকে।
১০০০০ ডলারের পালকঃ-
লুপ্ত Huia পাখির একেকটি পালকের দাম ১০০০ ডলার।
পুরানো গাড়ির দাম ৫২ মিলিয়ন ডলারঃ-
সাধারণ গাড়ি হোক বা অন্য যে কোনো জিনিস, পুরানো হলে তার দাম কমে যাওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে তৈরি হওয়া এই ফেরারি জি-টি-ও গাড়িটির বেলায় টা হয়নি। বয়স বাড়ার সাথে সাথে বেড়েছে এর দাম। এই গাড়িটির মালিক পল পাপ্পালারদ্যো ৫২ মিলিয়ন ডলার দিয়ে এক ব্যক্তিকে বিক্রি করে দেন।
হাতির দামে বেড়ালঃ-
ক্যালিফোর্নিয়াতে ১৯৮৭ সালে একটি বেড়াল বিক্রি করা হয়েছিল, যার মূল্য ছিল ২৪০০০ ডলার।
স্যাফরনঃ-
আপনি যদি রান্না করতে ভালোবাসেন, তাহলে আপনি নিশ্চয়ই, স্যাফরন নামক মশলা টিকে চিনে থাকবেন। রান্না এক অনবদ্য সুভাষ ও স্বাদ এনে দেয় এই মশলা। পৃথিবীর এক অন্যতম ব্যয়বহুল এই মশলাটির প্রতি গ্রামের মূল্য হল ১১ ডলার। এই মশলাটির এরকম ব্যয়বহুল হওয়ার মূল কারণ হল, এটি বানাতে অনেক সময় লেগে যায়। এই মশলাটি ব্যবহার করলে আপনাকে আর কষ্ট করে অন্য কোনো মশলা দিতে হবে না। বর্তমানে কেবল মাত্র ধনীরাই নয় অনেক মধ্যবিত্ত ও অন্য শ্রেণীর মানুষেরাও এই মশলা ব্যবহার করছেন।
পড়ুনঃ- প্রচলিত কিছু অন্ধবিশ্বাস ও তার আসল সত্যতা
ধানের দাম ১০৯ ডলার প্রতি কেজিঃ-
Toyo rice নামে এই ধানটি আসলে ছয়টি ধানের প্রজাতির সংকরায়নে গঠিত ধান। এই ধানটিকে পৃথিবীর সবথেকে বেস্ট ধান মানা হয়ে থাকে।
জলের বোতলের দাম ৬০০০০ ডলারঃ-
২৪ ক্যারট সোনা দিয়ে তৈরি একটি জলের বোতল, প্ল্যানেট ফাউন্ডেশনের একটি শো তে ৬০০০০ ডলার দিয়ে নিলামে বিক্রি হয়েছিল। উল্লেখ্য যে এই পুরো টাকাটিই বিশ্ব-উস্মায়ন খাতে খরচের জন্য দান করে দেওয়া হয়েছিল।
সিল্কের শাড়ির দাম ১০০০০০ ডলারঃ-
ভারতের চেন্নাই সিল্কস, বিখ্যাত শিল্পী রাজা রবি বর্মার আঁকা ১১ টি ছবি দিয়ে হাতের কাজ করা এই শাড়িটি তৈরি করে, যার মূল্য হল ১০০০০০ ডলার। একটি শাড়ি তৈরি করতেই প্রায় একবছর সময় লেগে যায়। এই শাড়িগুলির বেশিরভাগই রপ্তানী হয় বিদেশে।
হাতির আঁকা ছবির দাম ৩৯০০০ ডলারঃ-
২০০৫ সালে থাইল্যান্ডের কিছু প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হাতি একটি ছবি এঁকেছিল। এই ছবিটির মূল্য হল ৩৯০০০ ডলার। এই ছবিটির নাম হল- “ Cold Wind, Swirling Mist, Charming Lanna I”.
সবচেয়ে দামি টেলিভিশনঃ-
Stuart Hughes Prestige HD Supreme Rose Edition-এর এই টেলিভিশনটির মূল্য ২.২৬ মিলিয়ন ডলার। ৫৫ ইঞ্চি এই টেলিভিশনটির বাইরের কভার ১৮ ক্যারট সোনা দিয়ে বাঁধানো। অনেক দামী দামী পাথর এখানে বসানো রয়েছে। তার সাথে সাথে কুমীরের চামড়ার মোড়কও দেখতে পাবেন এই টেলিভিশনটিতে।
আমাদের টেলিগ্রামে আড্ডা দেওয়ার গ্রুপ :- https://t.me/charpatraOfficial
এই ছিল সবচেয়ে ব্যয়বহুল জিনিস তথা পৃথিবীর সবচেয়ে দামি বস্তু। প্রতিদিনের আপডেটের জন্য আমাদের ফেসবুক পেজ অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হতে পাড়েন।
world’s most expensive things অজানা তথ্য পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল জিনিস পৃথিবীর সবচেয়ে দামি বস্তু
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।