voyanok bhuter golpo. ভূতুড়ে গাছ আজ রবিবার। প্রতি সপ্তাহের মত ডিনার শেষে আজও দাদু আমাদের একটি গল্প শোনাতে চলেছেন। আমরা সবাই দাদুর চারপাশে বসে পড়েছি, সব কটা গল্পের পোকা। দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম রাত প্রায় ৯ টা। দাদু বলতে শুরু করলেন।

“আজ আমি তোদের একটি আত্মার গল্প শোনাব। কেউ যেন ভয়-টয় পাসনা আবার।” দাদু আমাকে বললেন- “এই যে অসীম বাবা জীবন তুমি রাতে একা বাথরুম করতে উঠতে পাড়বে তো, নাকি আমাকে বিরক্ত করবে?” আমি বললাম- ” কি যে বল দাদু, আমি কি এখনও ছোট আছি নাকি!” “তবে বেশ শুরু করছি তাহলে।”  

VOYANOK BHUTER GOLPO. ভূতুড়ে গাছঃ-

এই গল্পটি আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর আগের। সে সময় বর্তমান দিনের মত না ছিল এত গাড়ি আর না ছিল হাঁতে হাঁতে মোবাইল। আত্মীয়-স্বজনদের সাথে যা কথা হত সব চিঠিতেই হত। আর কয়েক ক্রোশ পথ মানুষ হেঁটেই চলে যেত।

সেই বছর পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার হুতুমপুর গ্রামে একটি ভয়ানক ঘটনা ঘটে যায়। এই ঘটনার পড় থেকেই গ্রামের সব মানুষ খুবই চিন্তায় পড়ে যায়।

সেই সময় গ্রামে পানীয় জলের খুবই সমস্যা ছিল। একদম পরিশুদ্ধ পানীয় জল পাওয়া যেত গ্রামের বাইরে তিন কিলোমিটার দূরে একটি সরকারী স্কুলের নলকূপে। তবে সবসময় সেই জল পাওয়া যেত না। যখন ছাত্ররা স্কুলে থাকত না বা স্কুল বন্ধ থাকত তখনই অন্য মানুষদের স্কুলে জল নেওয়ার অনুমতি ছিল।

গ্রামের শেষ সীমানা এবং স্কুলের প্রায় মাঝ বরাবর একটি বিশাল আম গাছ ছিল। এই আম গাছই ছিল গরমের সময় পথিকদের আস্তানা। স্কুলের ছেলেরা আমের সময় আম গাছে উঠে আম পাড়ত, আমের ডাল ভাঙ্গত।

VOYANOK BHUTER GOLPO
VOYANOK BHUTER GOLPO

হঠাৎই একদিন সকালে ঘুম ভেঙ্গে জল আনতে গিয়েই সবার চোখ কপালে উঠে যায়। গ্রামের সমস্ত দিঘির এবং পাতকুয়োর জল রাতারাতি শুঁকিয়ে গেছে। অনেক খরা হলেও গ্রামের দীঘির জল শুকোত না। কিন্তু রাতারাতি এমন ভূতুড়ে এবং রহস্যজনক ঘটনায় সবাই ভয় পেয়ে গেছে।

স্থানীয় প্রধানকে জানানো হলে তিনি জানান, কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি গ্রামে কয়েকটি চাঁপাকল বসিয়ে দিবেন। চাঁপাকল বসাতে বসাতে প্রায় দুই মাস চলে গেল। এত দিন গ্রামের মানুষ দীঘির আর পাতকুয়োর কর্দমাক্ত জল নুড়ি-পাথর দিয়ে ফিল্টার করে খেতে থাকে, আবার কেউ কেউ গরুর গাড়ি করে পাশের গ্রামে গিয়েও জল আনত। কিন্তু পরবর্তীতে কি ঘটতে চলেছে, সেই সম্পর্কে গ্রামের মানুষের বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না।

গরমের ছুটির পড় সবেমাত্র স্কুল খুলেছে। এমনই একদিন গ্রামের কিছু ছেলে স্কুলে যায় এবং বাড়ি ফেরার পথে কেউ আম গাছে উঠে পড়ে আবার কেউ বাড়ি ফিরে আসে। দেখতে দেখতে গোটা দিন কেটে যায়, কিন্তু যারা আম গাছে গিয়েছিল আম পাড়তে তাদের আর কোনো হদিশ পাওয়া গেল না।

এদিকে রাত প্রায় ২ টা, সেই বাচ্চারা যে স্কুলে গেল তারা আর ফিরে এল না। বাচ্চাদের মা-বাবা রা খুবই আতঙ্কিত হয়ে গেছেন। এই খবর টা ছড়িয়ে পড়তেই গ্রাম শুদ্ধ সবাই খোঁজাখুঁজি করতে শুরু করলাম। সবাই হাঁতে হ্যারিকেন নিয়ে সেই আম গাছটার কাছে গেলাম। আম গাছটাকে দেখে কেমন যেন মনমরা রোগীর মত মনে হচ্ছেে।

সবাই আম গাছটির আশেপাশে খোঁজাখুঁজি শুরু করে দিলাম। কিছুদূর এগোতেই কয়েকটি স্কুল ব্যাগ দেখা গেল। কিন্তু বাচ্চাদের পাওয়া গেল না। এমন সময় গ্রামের হাবলু পাগলা চেঁচিয়ে উঠল। সবাই দৌড়ে যেতেই সে আম গাছের ডালের উপর দেখতে বলল। সর্বনাশ।

ভূতুড়ে গাছ নতুন ভূতের গল্প
ভূতুড়ে গাছ নতুন ভূতের গল্প

আম গাছের নীচের ডালে তিনটি বাচ্চার রক্তাক্ত দেহ ঝুলছে। কেউ বলল খেলতে খেলতে হয়ত পড়ে গেছে আর এই ডালে এসে পড়েছে। অত উপর থেকে পড়ে যাওয়ার কারণে বাচ্চাদের আঘাতের ফলে মৃত্যু হয়েছে। এই বলে কেউ সেই গাছের কাছে গিয়ে গাছে উঠতে চেষ্টা করল।   

তখনই ভীরের মধ্য থেকে হাবলু পাগলা চেঁচিয়ে বলল- “খবরদার এই গাছে উঠা তো দূর, কেউ স্পর্শ করারও চেষ্টা করবে না। এই গাছ অভিশপ্ত।“ কিন্তু কেউই তার কথায় কান দিল না। পাগলের প্রলাপ বলে সবাই তাচ্ছিল্য করল। কয়েকজন গাছের উপড়ে উঠে বাচ্চাদের দেহ নিয়ে আসল।

কিন্তু রহস্যময় ভাবে সেই লোকগুলি সেই রাতেই বেপাত্তা হয়ে যায়। অনেক খোজাখুজির পড় সকালে আম গাছের নীচে তাদের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়। এই ঘটনার পড় সবাই আতঙ্কিত হয়ে যায়।

এদিকে পরের দিন স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে কয়েক জন ছেলে সেই আম গাছটির পাশ দিয়ে আসছিল। হঠাৎ তাদের মনে হল আম গাছটির উপর থেকে কোনো মহিলার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। সেই মহিলাটির কণ্ঠ বাচ্চাদের কাছে ডাকছে, আর আম নিয়ে যেতে বলছে। কিন্তু বাচ্চারা তাদের বন্ধুদের মৃত্যুর ব্যাপারে এতটাই ভয় পেয়ে গিয়েছিল যে, তারা দৌড়ে বাড়ির দিকে পালিয়ে যায়।

বাড়িতে এসেই তাদের সাথে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা তারা তাদের বাবা-মা কে বলে দেয়। এরপর গ্রামবাসীরা একত্রিত হয় এবং একটি মিটিং –এর আয়োজন করে।

মিটিং-এ বলা হয় যে, যত সব ভূতুড়ে এবং ভয়ানক কাণ্ড সেই বিরাট আম গাছের জন্যই হচ্ছে। তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে, পরেরদিনই আম গাছটিকে কেটে ফেলা হবে।

কথা মত, পরেরদিন সবাই সেই ভূতুড়ে বিরাট আম গাছটির নীচে একত্রিত হই। অনেকক্ষণ চেষ্টার পড় অবশেষে আমরা গাছটিকে কেটে ফেলি। কিন্তু গাছটি মাটিতে পড়ার সাথে সাথে একদম শুকনো গাছের মত হয়ে গেল। গাছটির সব সবুজ পাতা নিমেষেই শুঁকিয়ে বাদামী হয়ে গেল। সেখানে কয়েকজন মহিলাও উপস্থিত ছিলেন। এই ভূতুড়ে কাণ্ড দেখে কয়েকজন অজ্ঞান হয়ে গেলন।

গাছ শুঁকিয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই কেউ বলল এর শিকড়ও উপড়ে ফেলা হোক। এরপর আবার সবাই লেগে পড়লাম। কিন্তু একি, শিকড় খোঁড়ার সাথে সাথে এমন সাদা সাদা কাপড়ের টুকরো উঠে আসছে কেন। আমরা ভয় পেয়ে যাই। আমরা ভয়ে সেখান থেকে উঠে যেতে থাকি।

পড়ুনঃ-

ব্লাডি মেরির সত্য ঘটনা

হোটেলের ভূত

কিন্তু হাবলু পাগলা চেঁচিয়ে বলল-“যদি বাঁচতে চাও, মূল টিকেও উঠিয়ে দাও। নাহলে রক্ষে হবে নে।“ আমরা ভাবলাম এবার হাবলু পাগলার কথা মানা উচিত। সবাই আবার নেমে পড়লাম কাজে। অবশেষে গাছটির বিরাট শেকড়টিকে উৎখাত করেই ফেললাম। গাছটির শিকড় উঠানোর সাথে সাথে শেকড়ের জায়গায় আমাদের নজরে পড়ল বিরাট লম্বা লম্বা সাদা শাড়ি।

হাবলু পাগলার কথা মত কেউ কেউ ছুটে বাড়ি গিয়ে কেরোসিন আর দেশলাই নিয়ে এল। এবার সেই সাদা কাপড় আর গাছটিকে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হল। এরপর সেই ছাই একটি কলসে ভড়ে তিস্তা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হল।

গাছটির শেকড়ের জায়গায় সেই সাদা শাড়ির মত বস্তু গুলিই আমাদের গ্রামের সব জল শুষে নিত, যার ফলে আমাদের জল সংকটে পড়তে হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ এরকম ঘটনা গ্রামে কেন ঘটল তার কিনারা কেউই করতে পাড়েনি।

আচ্ছা তাহলে আজকের আসর এখানেই শেষ করছি। আগামী রবিবার আবার তোমাদের নিয়ে বসব।

আমি- “দাদু ও দাদু চলোনা একটু চলোনা। খুব জোড়ে পেয়েছে চলোনা।“

vuter golpo in bangla
vuter golpo in bangla IMAGE
<

দাদু- “হাঁ হাঁ হাঁ, তুই নাকি অনেক বড় হয়ে গেছিস?”        

voyanok bhuter golpo. ভূতুড়ে গাছ নতুন ভূতের গল্প

Spread the love

Leave a Reply