আজকের আধুনিক ছোট গল্প টিতে, বর্তমান সমাজের সুপ্ত বাস্তবতা এবং সেই অপ্রকাশিত সুপ্ত বাস্তবতার আড়ালে চলতে থাকা অচলাবস্থাকে পাশ কাঁটিয়ে ন্যায় বিচারের ক্ষমতা, তুলে ধরেছেন লেখিকা।।

আধুনিক ছোট গল্প- ‘ন্যায় বিচারের গল্প’

শিক্ষিত হয়েও অরুনীতা বেকারত্বের শিকার। বহুবার সরকারি চাকরির পরীক্ষা দিলেও সবেতেই টাকার লেনদেনের জন্য চাকরি পাওয়া হয়ে উঠেনি। সময় আর বয়স কারুর জন্যই থেমে থাকে না । অরুনিতার বয়স বাড়ার সাথে সাথেই পরিবার আত্মীয় স্বজন সবাই জোর করতে শুরু করলো আর কাজ নয় এবার বিয়ে করে সংসার করার চেষ্টায় যেন ও জীবনপাত করে । কিন্তু অরুনীতা এসব কথায় কান না দিয়ে হুগলির এক বেসরকারি স্কুলে শিক্ষিকা হিসেবে যোগ দেয়। প্রথম প্রথম সব ঠিকঠাক থাকলেও মাস দুয়েক পরেই ও বুঝতে পারে এ জায়গা ঠিক সুবিধার না ।

নিত্যান্ত সাধারণ গ্রাম থেকে উঠে আসা একটা সাদামাটা মেয়ে। শহরের এই দূষিত পরিবেশে যেন সে হাপিয়ে ওঠে। ও বুঝতে পারে শহরের মানুষেরা গ্রামের মানুষের মতো না। জটিলতার প্যাচ দিয়ে ঘেরা এই মানুষগুলোকে বুঝে ওঠা সত্যি খুব কঠিন । হিংসা আর অহংকারে মোড়া এই মানুষ গুলোর কাছে সাদামাটা একটা গ্রামের মেয়ের যে কোনো কদর নেই, তা অরুনীতা সহজেই বুঝতে পারে। তাই সবাইকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে, কিন্তু ওর বাকি কলিকরা ওকে এড়িয়ে যায়না বরঞ্চ তারা যেন আরো পেয়ে বসে ।

আধুনিক ছোট গল্প
আধুনিক ছোট গল্প

সবকিছুতেই ‘গাঁইয়া মেয়ে’ ও আবার কি শহরের আদব কায়দা জানবে! কথাটা শুনতে শুনতে ওর নিজের প্রতি বিরক্তি বাড়তে থাকে। তবুও সংসার জীবনের বেড়াজাল থেকে মুক্তির পথ একটাই জেনে কোনরকমে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে সবার সাথে।

তবে স্কুলে পড়ানোর প্রথম দিন থেকেই সে একটা জিনিষ বারবার লক্ষ্য করেছে, কিন্তু সাহস করে কাউকে কিছু বলে উঠতে পারেনি। ওর ক্লাস চলাকালীন একাদশ আর দ্বাদশ শ্রেণীর বেশকিছু ছাত্রছাত্রীরা ক্লাসে বসে স্মোকিং করে আবার সাদা প্যাকেট এর ভেতর কি যেন একটা চকের গুড়োর মত জিনিস নাকে নিয়ে ঘোরের মধ্যে মেতে ওঠে। শিক্ষিকা হিসেবে শহরের ছেলেমেয়েরা তাকে বিন্দুমাত্র সম্মান দেয়না। বরঞ্চ নগন্য চোখেই দেখে।


পড়ুনঃ- অনুপ্রেরণার বাণী- চাণক্য উক্তি 

মহৎ ব্যক্তির মহৎ উক্তি 

কিছু দরকারি প্রাথমিক চিকিৎসা- যেগুলি আপনার জেনে রাখা উচিত 

অরুনীতা বারবার তাদের বোঝাবার চেষ্টা করেছে কিন্তু কোনো সুফল হয়নি। প্রিন্সিপাল স্যারকে সবটা জানাবার আগেই যেন কোনো না কোনো কলীক তাকে বাধা দিয়ে দমিয়ে দিয়েছে । এভাবে মাস তিনেক সহ্য করার পর সে সিদ্ধান্ত নেয় সবটা সে প্রিন্সিপালকে জানাবে।

সাহস যুগিয়ে প্রিন্সিপালের রুমে ঢোকার আগেই তার অ্যাসিস্ট্যান্ট এর কাছে জানতে পারে স্যার কিছুদিনের ছুটিতে আছেন । এখন স্কুল আসবেন না ।

নিরাশ মনে অরুনীতা ক্লাসে ঢোকার পরেই ছাত্রছাত্রী দের উচ্ছৃঙ্খলা দেখে ক্লাস থেকে বেরিয়ে যেতে গেলে, দেখতে পায় বেশকিছু পুলিশ ও পুরুষ মহিলা এই রুমের দিকেই ধেয়ে আসছে। অরুনীতা ভয়ে স্তব্ধ হয়ে যায় ।

ন্যায় বিচারের গল্প
ন্যায় বিচারের গল্প

পুলিশ তল্লাশি চালালে বেশকিছু মাদকদ্রব্য উদ্ধার করে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের ব্যাগ থেকে । পুলিশ স্কুল কর্তৃপক্ষ্যকে দায়ী করলে তারা সব দায় চাপিয়ে দেয় অরুনীতার ওপর । প্রমাণ হিসেবে সিসিটিভি ফুটেজ দেখিয়ে পুলিশের কাছে প্রমাণ করে একমাত্র অরুনীতার ক্লাসেই বাচ্চারা এরম করে । আর তার ক্লাসের পরেই অনেক বাচ্চা ক্লাসে থাকে না তারা স্কুল বাঙ্ক করে। পুরো আকাশটা যেন অরুনীতার মাথার ওপর ভেঙে পড়ে। সবার সামনে দিয়ে অরুনীতাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়।
নিরপরাধী অরুনীতার “আমি নির্দোষ” শব্দটা যেন থেমে থেমে সবার কানে ভেসে আসে ।

এরপর দীর্ঘ চার বছর ধরে এই কেসটা চলতে থাকে। তারিখের পর তারিখ পড়ে আর নিত্য তামাশা চলতেই থাকে । তবে অরুনীতার শেষ ভরসা ওই স্কুলের বৃদ্ধ গার্ড, যিনি হয়ত সব সত্যিটা জানেন ভেবে অরুনীতা তার উকিলের কাছে ওই গার্ডের নাম নেয়। প্রথমে সেই গার্ড সাক্ষী দিতে মানা করলেও বিচারের শেষ দিন নিজের জীবন ঝুঁকি নিয়ে কোর্টে গিয়ে সব সত্যি বলে –
” এই স্কুলে আমি পঁচিশ বছর ধরে কাজ করছি । দূর থেকে জাঁকজমকপূর্ণ দেখতে এই স্কুলের ভেতর টা আসলে একেবারে খোকলা। স্কুলের প্রিন্সিপাল স্যার সমেত বেশিরভাগ শিক্ষক শিক্ষিকা এই ছাত্রছাত্রীদের নিজ দায়িত্বে নেশাগ্রস্ত করে তোলে। তারাই পাচার করে এই মাদকদ্রব্য ।


পড়ুনঃ- 
মানব শরীরে ঘটে যাওয়া অদ্ভুত কিছু ঘটনা। 

মায়ের ভালোবাসা একটি শিক্ষণীয় গল্প 

সত্য ভূতুড়ে ঘটনা অবলম্বনে 

তাই অনেক স্টুডেন্ট এখানে ভর্তি হওয়ার পর আর অন্য স্কুলে ভর্তি হতে চায়না। এরম ভাবে অনেক বছর ধরেই এই স্কুলে দুর্নীতি মূলক কাজ কর্ম চলে তবে সেটা সবার চোখের আড়ালে। এই মাদকদ্রব্য কাণ্ডের সাথে শুধু মাত্র প্রিন্সিপাল নয় শহরের অনেক নামিদামি ব্যক্তির নাম জড়িয়ে আছে । তারাই নিয়ন্ত্রণ করে সবটা। তবে বেশ কিছুদিন ধরে পুলিশের নজর এই স্কুল এ পড়লে তারা মাছের টোপের মত গ্রামের সাদামাটা মেয়ে অরুনীতাকে চাকরির টোপ দিয়ে , তাদের পরিকল্পনা মাফিক তাকে ব্যবহার করে ফাঁসিয়ে নিজেদের বাঁচিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে । তবে আমি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই নিষ্পাপ মেয়েটাকে বাঁচাতে আজ ছুট্টে এসেছি । দয়া করে ওর ন্যায় বিচার করুন।”

এরপর বিচারক তার রায়ে জানান অরুণীতা নিরপরাধ । আর সাথে সাথে CBI এর হাতে বাকি তদন্তের দায়িত্ব তুলে দিয়ে স্কুল টিকে বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেন ।

bengali modern short story
bengali modern short story
<

অরুনীতা দীর্ঘ চার বছর পর আবার খোলা মুক্ত আকাশের নিচে প্রাণ খুলে প্রশ্বাস নেয়। পুনরায় ফিরে যায় আবার নিজের গ্রামে তবে বিয়ে করে সংসার নয়, গ্রামের বাচ্চাদের পুঁথিগত শিক্ষার সাথে সাথে নৈতিক শিক্ষা প্রদানের জন্য ছোট্ট মতো একটা স্কুল খোলে। আবার নতুন করে শিক্ষার মধ্যে দিয়ে সুন্দর করে তোলে নিজের জীবনকে ।

সত্যের পথ কঠিন হলেও সুন্দর । আর ন্যায় অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্য বোঝার ক্ষমতা হলো সেই সুন্দরের প্রতীক । তাই ন্যায় এর ওপর বিশ্বাস করেই অরুনীতার সত্যের শেষমেশ জয় সম্ভবপর হয়।।

আলোরানি মিশ্র

সত্যান্বেষীর ভাবনায়-
© reserved by charpatra.com
আলোরানির লেখা আরও কিছু গল্প- 

হাসির কল্প কাহিনী- কুমিকম্প 

একটি সতর্কতামূলক গল্প 

একটি অন্যরকম প্রেমের গল্প 
আপনার লেখা গল্প আমাদের পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ, অথবা সরাসরি WhatsApp এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে
আমাদের সমস্ত আপডেটের জন্য- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

আধুনিক ছোট গল্প। ন্যায় বিচারের গল্প। nay bicharer golpo. 1 new bengali modern short story

Spread the love

Leave a Reply