শিক্ষামূলক ঘটনা//সতর্কতা মূলক পোস্ট খবরের কাগজ পড়লে অনেক কিছুই বিস্ময়কর জিনিস আমরা পড়ে থাকি। তবে সেগুলো পড়ে কিছুক্ষন মনে রেখে তারপর আবার ভুলে যাই, ডুবে যাই প্রতিদিনের কাজের মধ্যে। সমাজের নানান বিশৃঙ্খলা দিন দিন যেভাবে বাড়ছে তাতে মেয়েদের সবসময় চোখ – কান খোলা রেখে চলা উচিত কারণ হেডফোন আর হাতের স্মার্টফোনের বাইরের দুনিয়া খুববেশি সুবিধার নয় ।

একটি শিক্ষামূলক ঘটনাঃ-

মিষ্টি প্রতিদিনের মতোই আজ সকাল সকাল উঠে খবরের কাগজ নিয়ে বসে গেছে । সবটা চোখ বুলিয়ে নিয়ে, দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলে উঠলো- ‘এই দেশের ভবিষ্যত অনিশ্চিত।’ তারপর তৈরি হয়ে, প্রত্যেক দিনের মতো কলেজ যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো । মিষ্টি নামটা ওর নাম আর কাজ, দুইদিক থেকেই তাৎপর্য বহন করে । সবাইকে সাহায্য করাটা ওর স্বভাব । কাউকে একটু অসুবিধায় পড়তে দেখলে নিজের শত অসুবিধা হলেও সে অপরকে সাহায্য করে ।

আজ কলেজ যাওয়ার পথে যখন দেখল রাস্তার মাঝে একটি বাচ্চা ডুকরে ডুকরে কাঁদছে তৎক্ষণাৎ টোটো থেকে নেমে বাচ্চাটির কাছে দৌড়ে গেলো । বাচ্চাটির কান্না দেখে ও বারবার জিজ্ঞাসা করলো ” কি রে কি হয়েছে তোর? ” ” তোর বাবা মা বা অন্য কেউ সাথে নেই?” বাচ্চাটি কোনো উত্তর না দিয়ে কাঁদতেই থাকল। মিষ্টির এদিকে কলেজের দেরি হচ্ছে কিন্তু এই বাচ্চাটিকেও সে একা ফেলে যেতে পারছে না। অথচ বাচ্চাটিও তার কোনো প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে না!

কাছের দোকান থেকে একটা চকলেট কিনে নিয়ে এসে বাচ্চাটিকে জিজ্ঞাসা করলো ” চকলেট খাবে?” বাচ্চাটি কান্না থামিয়ে চকলেট টি নিলো। কিন্তু এর পরেও বাচ্চাটি ওকে কিছু উত্তর দিচ্ছে না। প্রায় ২০ মিনিট হয়ে গেছে অথচ বাচ্চাটিকে নিশ্চুপ দেখে মিষ্টি ভাবলো বাচ্চাটি হয়তো বোবা। তাই ইশারা করে কথা বলার চেষ্টা করলো কিন্তু এতেও কোনো লাভ হলো না।

শিক্ষামূলক ঘটনা
শিক্ষামূলক ঘটনা

এর কিছুক্ষণ পর একেবারে মোড়ের মাথায় একটি সাদা রঙের গাড়ি এসে দাঁড়ালো। গাড়িটি বেশ অনেক্ষণ ধরে দাড়িয়ে আছে । কিন্তু ভেতর থেকে কেউ নামে নি সবটা লক্ষ্য করলো মিষ্টি । এর পর হটাৎ করেই বাচ্চাটি মিষ্টিকে একটি কাগজ দিয়ে বললো ” দিদি, আমি হারিয়ে গেছি , মা বাবা কে খুঁজে পাচ্ছিনা ” এটা আমার ঠিকানা আমায় একটু পৌঁছে দেবে । এতক্ষন চুপ করে থাকা বাচ্চাটাকে এত সুন্দর ভাবে কথা বলতে দেখে মিষ্টি অবাক হয়ে গেল , তাই জিজ্ঞাস করলো ” তুমি এতক্ষন কথা বলছিলে না কেন?”

বিজ্ঞের মত বাচ্চাটির উত্তর ” আমি অচেনা অজানা কারুর সাথে কথা বলি না” । মিষ্টি বললো তাহলে এখন আমার সাথে কথা বলছো কেন ? বাচ্চাটি বললো কারণ তুমি আমায় চকলেট দেওয়ার পর আমার বিশ্বাস হলো তোমাকে । মিষ্টি তো বারেবারে এই বাচ্চার ব্যবহারে অবাক হচ্ছে কারণ এই টুকু বাচ্চা এত বাগিয়ে কথা কি করে বলে! এরপর বাচ্চাটি মিষ্টির উড়না ধরে টানতে শুরু করলো ও দিদি ও দিদি বাড়ি পৌঁছে দাও না আমায় । আমার মায়ের জন্য খুব মন খারাপ করছে।

মিষ্টি বাচ্চাটিকে এভাবে কাঁদতে দেখে ওর সাহায্য না করে পারলো না ।
একটি টোটো থামিয়ে বাচ্চাটিকে নিয়ে উঠে পড়লো। বাচ্চাটির সম্বন্ধে মিষ্টি কিছু জানতে চাইলে বাচ্চাটি রোখা গলায় বারবার একটাই জবাব দিলো ” তুমি শুধু আমাকে ওই কাগজের ঠিকানায় পৌঁছে দাও” । মিষ্টি ফোনটা বের করে বাচ্চাটার ছবি তুলতে গেলে বাচ্চাটা ফোনটা ধরে ছুড়ে দিলো । এবার তো মিষ্টির রাগে, মাথা খারাপ হওয়ার অবস্থা, তবুও টোটো থামিয়ে ফোন টা কুড়িয়ে আনতে গেলো । হটাৎ করে লক্ষ্য করলো সেই সাদা গাড়িটি যেন তাদের টোটো টি কে অনুসরণ করছে।

সতর্কতা মূলক পোস্ট
সতর্কতা মূলক পোস্ট

ফোন টার ডিসপ্লে ভেঙে গেছে কোনো কাজ করছে না দেখে মিষ্টি বেশ চিন্তায় পড়লো। এই ফাঁকা রাস্তায় ও কোনোদিনও আসেনি আর আজ এই অদ্ভুত বাচ্চাটার সাথে আসছে তো ঠিকই, কিন্তু একটা গাড়ি যে তাদের অনুসরণ করছে। সব বিষয় গুলো মিলিয়ে যেন একটা রহস্য!

মিষ্টি ওই ঠিকানাতে পৌঁছানোর আগে ওই টোটো চালক কে বললো “কাকু আপনি আমার জন্য অপেক্ষা করবেন , এই বাচ্চাটিকে ওর বাড়িতে দিয়ে এসেই আমি আপনার সাথেই যাব।” টোটো চালক সম্মত হলো।

মিষ্টি বাচ্চাটিকে তার বাড়ি কোথায় জিজ্ঞাসা করলে বাচ্চাটি তাকে তার সাথে আস্তে আস্তে বনের রাস্তার মধ্যে নিয়ে যেতে শুরু করলো। মিষ্টির এতক্ষন সন্দেহ হলেও এবার ও নিশ্চিত যে, ওকে প্ল্যান করেই এখানে নিয়ে আসা হয়েছে। সামনে একটা জীর্ণ বাড়ির দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বাচ্চাটি বললো দিদি এটা আমার বাড়ি । তোমাকে আমার সাথে যেতেই হবে । আমার মা বাবা আছে ওখানে। মিষ্টি বাচ্চাটি হাত ছাড়িয়ে দৌড়ে যেতে গেলে চারিদিকে জঙ্গলের মাঝে কোনো রাস্তা ঠিক করতে পারলো না । এর মধ্যে হটাৎ করে শুকনো পাতায় উপর দিয়ে যেমন কেউ হাঁটছে তেমন আওয়াজ উঠলো । মিষ্টি পেছন ফিরে তাকাতেই দেখলো কেউ নেই । ওর ভয়ে গলা শুকিয়ে এলো ভাবলো আজ হয়তো আর বাঁচার কোনো রাস্তা নেই।

পড়ুনঃ- বাস্তব জীবনের শিক্ষণীয় গল্প- বাজ হয়ে উঠার লড়াইটা! 

একটু পরে দৌড়তে দৌড়তে একটা রাস্তা দেখতে পেলো তবে সেটা আদৌ মূল রাস্তার দিকে যাচ্ছে কিনা ও জানে না! তবুও ওই পথেই গেলো। গিয়ে দেখলো সামনে ওই সাদা গাড়িটি দাড়িয়ে আছে। ওই গাড়িকে দেখে তো মিষ্টির অজ্ঞান হবার মত অবস্থা । কিন্তু পেছন থেকে কে যেন ওর কাঁধে হাত রেখে বলল ” এত দূর রাস্তা অচেনা অজানা কারুর সাথে কেউ আসে নাকি! আজ এখানে তোমার সাথে অনেক কিছুই হতে পারতো?” মিষ্টি ভয়ে আতঙ্কে পেছন ফিরতেই দেখলো একটি অচেনা মুখ । কাঁপা গলায় জিজ্ঞাসা করলো ” আপনি কে?”

লোকটি উত্তরে বললো আমি যেই হই কিন্তু তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী এইটুকু বলতে পারি। তারপর মিষ্টিকে গাড়িতে উঠতে বললো কিন্তু মিষ্টি বললো আমি কেন একজন অচেনা অজানা কাউকে বিশ্বাস করবো ? আপনার কথায় কেন আমি গাড়িতে উঠব? লোকটি অদ্ভুত ভাবে হেসে বললো ঠিক আছে উঠ না তাহলে, হা হা হা । পারবে আজ বাঁচতে ? কে বাঁচাবে আজ তোমায় ? মিষ্টি ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো দয়া করে আমায় ছেড়ে দিন , আমি কারুর কোনোদিন কিছু ক্ষতি করিনি। তারপর গাড়ি থেকে একটি মেয়ে বেরিয়ে এসে জলের বোতল টা এগিয়ে দিয়ে বললো নাও এটা, আর একদম ভয় পাবে না। আমরা পুলিশ, তোমাকে রাস্তা থেকে অনুসরণ করছি তোমার ভালোর জন্য ।

পড়ুনঃ- ভাই-বোনের ভালোবাসা-- আমার দিদি 

মিষ্টি মেয়েটির ভরসায় গাড়িতে উঠে গেলো আর গাড়ির জানালা বন্ধ থাকায় দেখতেও পেলো না টোটো কাকু তার জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু টোটো কাকু গাড়িটিকে অনেক আগে থেকেই লক্ষ্য করেছে তাই মেয়েটিকে এখনো ফিরতে না দেখে তার সন্দেহ হলো । টোটো কাকু কাকে যেন কল করে খুব দ্রুত গতিতে টোতো টাকে চালিয়ে নিয়ে গেল।

সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে সামনের রোডের কাছে ওই সাদা গাড়িটিকে পুলিশ আটক করলো। গাড়িটির ভেতরে তল্লাশি করলে একটি মেয়েকে অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া গেলো আর সাথে পাওয়া গেলো ওই ২ জন পুরুষ ও মহিলাকে। টোটো কাকু তখন সেখানে এসে পৌঁছলেন আর এসে পুলিশ কে বিস্তারে সবটা বললেন । পুলিশ তাদের অ্যারেস্ট করলো । আর মিষ্টির জ্ঞান ফিরলে টোটো কাকু কে দেখে সে জিজ্ঞাসা করলো ” আমি কোথায় আছি ?”

বাংলা গল্প
বাংলা গল্প
<

পাশের একজন পুলিশ বললেন তুমি এখন পুলিশ স্টেশন এ আছো। আর আজ যার জন্য বেঁচে আছো তাকে ধন্যবাদ জানাও। মিষ্টি টোটো কাকুকে জিজ্ঞাসা করলো ” কি হয়েছিল কাকু” । কাকু পরের পর সব বললেন কিভাবে তিনি প্রথম থেকেই গাড়িটিকে অনুসরণ করতে দেখেছিলেন। এরপর গাড়িটি জঙ্গলের ভিতরে ঢুকে আবার বেরিয়ে গেলো দেখে তার সন্দেহ হল আর তারপর পুলিশ কে কল করে সবটা জানিয়ে তিনি কিভাবে মেয়েটির জীবন বাঁচাবার জন্য এগিয়ে এসেছেন । মিষ্টির ধন্যবাদ জানানোর ভাষা আর খুঁজে না পেয়ে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে বললো “কাকু তোমার মত মানুষ যদি সবাই হতো তাহলে হয়তো দেশের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হতো না ।”

পুলিস মিষ্টিকে বললেন, “এটা এখন একটা নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করছে কিডন্যাপার রা। কোনো বাচ্চাকে যদি কাঁদতে দেখো রাস্তার মাঝে তাহলে সোজা তাকে পুলিশ স্টেশন নিয়ে আসবে। নইলে বাচ্চাদের মাধ্যম বানিয়ে ওরা অপহরণ করছে মেয়েদের আর শেষে গণধর্ষণ করে বিক্রি করছে তাদের।” কথা গুলো শুনে সকালের খবরের কাগজের পড়া সেই ৩ নং পৃষ্ঠার শেষের খবরটা কথা ওর মনে পড়ল। আজ সকালে যে ঘটনাটা পড়ে ও দেশের ভবিষ্যত অনিশ্চিত বলেছিল ঠিক সেই ঘটনাটাই তার সাথে আজ ঘটে গেছে।

পড়ুনঃ- আকবর ও বীরবলের হাসির শিক্ষণীয় গল্প 

বেশিরভাগ সময় অদরকারি খবর গুলোকে উপেক্ষা করতে গিয়ে আমরা অনেক দরকারি খবরকে পাত্তা দি না। আর আজকের গল্পটা কাল্পনিক হলেও এই গণধর্ষণ আর অপহরণ এর পন্থা টা কিন্তু সত্যি। তাই বারেবারে পুলিশ এই নিয়ে সতর্কতা মূলক প্রচার করে টেমপ্লেট বিলি করার মধ্যে দিয়ে মেয়েদের সচেতন করতে চাইছে ।

শেষে একটি কথাই বলব, দয়া করে অচেনা অজানা কারুর ওপর চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করবেন না। আর সাহায্য কাউকে করতে হলেও আইনকে পাশে রেখে করুন একা ‘নায়ক’ সেজে নয়। নইলে গল্পের মিষ্টি আমি-আপনি যে কেউ হতে পারে আগামী দিনে।

আলোরানি মিশ্র

সতর্কতার বার্তা পরিবেশনে –
আপনার লেখা গল্প WhatsApp -এ পাঠানোর জন্য ক্লিক করুণ নীচের নীল লেখাটিতে- এখানে ক্লিক করুন।
আপনার লেখা ই-মেল এর মাধ্যমে পাঁঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ
আলোরানির লেখা কিছু জনপ্রিয় গল্প- 

ভূতের গল্প- অদ্ভুতুড়ে সেই রাত! 

মা-কে নিয়ে হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া গল্প

সেরা বন্ধুত্বের গল্প- রুনিমা 
এক ক্লিকেই ছাড়পত্রের সমস্ত আপডেট পাওয়ার জন্য- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

একটি শিক্ষামূলক ঘটনা। সতর্কতা মূলক পোস্ট। বাংলা গল্প। 1 new bengali life- learning incident story

Spread the love

Leave a Reply