ভালোবাসার বড় গল্প। অপেক্ষা নিয়ে গল্প। valobasar boro golpo.

ভালোবাসার বড় গল্প:- ‘চির অপেক্ষা’

”উফ! তুমি তো আচ্ছা বেহায়া মেয়ে দেখছি! অন্য মেয়েদের দেখেছ কখনো, কোনো ছেলেদের পিছন পিছন ঘুরতে? তো তুমি কেন আমার পিছন পিছন ঘোরো?

যেখানে একটা মেয়েকে পটানোর জন্য সব ছেলেরা তাদের পেছনে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে পড়ে! রিজেকশন এর ভয়ে ভেঙে চুরমার হয়ে যায় চিন্তায়, সে জায়গায় তুমি কি টাইপের মেয়ে, যে নিজেই একটা ছেলের পেছনে ঘুরছে! তুমি তো দেখছি মেয়ে জাতির মধ্যে ব্যতিক্রমী! ”

সেদিন সুপ্রতিভ টিয়া কে অনেক কিছুই বলে দিয়েছিল রাগের মাথায়। 

বহুদিন ধরে মেয়েটিকে বুঝিয়েছে সুপ্রতিভ কিন্তু মেয়েটার কোনো কিছুতে হেল দোল নেই। সে রোজ অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে থাকে সুপ্রতিভের কলেজ ফেরত পথে। 

প্রথম দিন সুপ্রতিভ টিয়াকে খেয়াল করেনি সেভাবে। অবশ্য করবেই বা কেন? কত অজানা, অচেনা মানুষ কেই দেখে রোজ। আলাদা ভাবে টিয়াকে দেখার তো কোনো কারণ নেই। 

ভালোবাসার বড় গল্প
ভালোবাসার বড় গল্প

দ্বিতীয় দিনটাতেও তাই ।

তৃতীয় দিনে স্মৃতি রোমন্থন। আরে! এই মেয়েটা কে মনে হচ্ছে গত দুইদিন দেখলাম। 

চতুর্থ দিনে আরো বেশী। 

এরপর প্রতিদিন সুপ্রতিভ কলেজ ফেরত পথে রোজ দেখত তার চলার পথে একটা পার্ক টাইপের এলাকায় একটা গাছের নিচে একটা ছিপছিপে গড়নের শ্যাম বর্ণ মেয়ে রোজ দাঁড়িয়ে থাকে তার মুখোমুখি । 

শুধু দাঁড়িয়ে থাকা নয়, মনে হয় অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে সুপ্রতিভের দিকে। 

সুপ্রতিভ এসব মোটেও পাত্তা দেয় না একেবারেই। সে ডাক্তারি পড়ছে আর তাই খুব ভালোমতোই পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত। তার ফোকাস উজ্জ্বল কেরিয়ার গড়ার, উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ার। এসব ঠুনকো অনুভূতির কোনো দাম নেই ওর কাছে। এসব নিয়ে সুপ্রতিভ ভাবতেও চায় না। 

আর তাছাড়া তার জীবন সঙ্গিনীকেও তার মতোই হতে হবে। উচ্চশিক্ষিত, স্মার্ট,  অপরূপ সুন্দরী ইত্যাদি। 

এরপর প্রতিদিন মেয়েটার সাথে দেখা হচ্ছে দেখে সুপ্রতিভের কেমন জানি খুব বিরক্ত লাগে। মেয়েটি রোজ একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে আর ওকে দেখে, কিচ্ছু বলে না। চুপচাপ দেখে ওকে আর সুপ্রতিভ ওর দেখাকে উপেক্ষা করে রোজ চলে যায় বাড়ির পথে। 

কৌতুহল এর আগমন হয় এবার। সুপ্রতিভ প্রায় দুইমাস ধরে মেয়েটির একই রকম নীরব ও অনঢ় ধৈর্য্য দেখে ঠিক করে মেয়েটির সাথে কথা বলবে। মেয়েটি কি চায় শুনি? ওর চাহনি দেখলেই কেমন জানি সুপ্রতিভের মেজাজ টা গরম হয়ে যায়। 

যাই হোক আজ মেয়েটি কে মুখোমুখি দেখতে পেলেই যা বলার বলবে। 

কলেজ শেষ হয়েছে। বাড়ি ফেরত পথে হাঁটা শুরু। হুম, আজকেও মেয়েটি একই ভাবে, একই জায়গাতে, সুপ্রতিভের দিকেই অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। তবে আজ ওর মুখে একটা সুন্দর, স্নিগ্ধ হাসি ফুটে উঠেছে। 

সুপ্রতিভ মেয়েদের সাথে কথা বলতে খুবই সংকোচ বোধ করে। কিন্তু এই মেয়েটার বেলায় করলে চলবে না। তাই মুখোমুখি দেখা হতেই সে দাঁড়িয়ে যায়। 

এতে মেয়েটা আরো হাসে। সুপ্রতিভ স্বাভাবিক স্বরে বলে, ‘আপনাকে আমি রোজ এখানে দেখতে পাই, আপনি এখানে একলা দাঁড়িয়ে কি করেন?’  

অপেক্ষা নিয়ে গল্প
অপেক্ষা নিয়ে গল্প

মেয়েটি নীরব হয়ে থাকে। 

‘আপনি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন না?’  

মেয়েটি কে দেখতে ততটা সুন্দর না হলেও তার ওই মায়াবী চোখ দুটো বারবার যেন সুপ্রতিভ কে কোথাও যেতে দিচ্ছে না। 

‘কি হলো, আপনি বললেন না তো, কি করেন আপনি এখানে একলা? আমার আপনাকে প্রশ্ন করা উচিত নয়, কিন্তু করছি এই কারণেই, কারণ আপনার সাথে আমার প্রায় দুইমাস দেখা হচ্ছে, একই জায়গায়, একইভাবে। তাই প্রশ্ন টা করতে বাধ্য হলাম।’  

মেয়েটি এতক্ষণ পর তার মুখ খোলে। মিষ্টি হেসে শান্ত ভাবে বলে, ‘কেন আপনার অসুবিধা আছে নাকি তাতে ?’

‘না একদমই না কিন্তু কেন জানলে ভালো হতো।’  

মেয়েটি বলে, ‘কোনো মেয়ে যখন রোজ একইভাবে কারোর জন্য অপেক্ষা করে তখন বুঝে নিতে হয় মেয়েটি কাউকে ভালোবাসে, বুঝেছেন। আমিও তেমন রোজ একজনের জন্য অপেক্ষা করি, সে কখন আসবে, তার সাথে আমার কখন দেখা হবে। তার সাথে ঐটুকু দেখা হওয়াতেই আমার অনেক শান্তি।’  

সেদিন সুপ্রতিভ আর কোনো কথা না বাড়িয়ে চলে গিয়েছিল আর ঠিক করেছিল সে ক’দিন অন্য রাস্তা দিয়ে যাবে বাড়ি। 

টানা একসপ্তাহ পর আবার পুরোনো রাস্তায় এলে দেখে সেই মেয়েটি আবার দাঁড়িয়ে। তবে আজ তার মায়াবী চোখে জল টলমল করছে। 

সুপ্রতিভ সামনে আসতেই মেয়েটি চোখের জল মুছে বলে, ‘কোথায় ছিলেন এতদিন?’  

‘আমি অন্য রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেছি। 

‘কার জন্য? আমার জন্য?’  

এই কথাটাই সত্যি কিন্তু তবুও সুপ্রতিভ বলে, ‘নিজেকে এত গুরুত্ব দিচ্ছেন কেন বুঝলাম না। আপনি কে যে আপনার জন্য আমি রাস্তা বদলাবো?’  

‘তা ঠিক। তবে আমার খুব চিন্তা হচ্ছিল আপনাকে নিয়ে।’  

পড়ুনঃ- রিলেশনের গল্প 

এরপর থেকে সুপ্রতিভ রোজ ওই পথ ধরেই যায়। মেয়েটার অপেক্ষা করা দেখে সুপ্রতিভর অপছন্দ লাগে তাও সে ঐ পথ ধরেই যাবে। 

দুজনের মধ্যে কথা একটু একটু করে বাড়তে থাকে। আর এভাবেই সুপ্রতিভ জানতে ও বুঝতে পারে মেয়েটির নাম ছিল টিয়া যে , সুপ্রতিভ কে প্রচন্ড ভালোবাসে। 

একদিন সুপ্রতিভ বলে, ‘শোনো টিয়া, তুমি যা ভাবছ তা কখনোই আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি তোমাকে পছন্দ করি না বুঝতে পেরেছ। আর সত্যি বলতে আমার এসব করার সময় নেই। তোমার কি সারাদিন কোনো পড়াশোনা বা কাজ থাকে না যে ঠাঁয় এভাবে একলা দাঁড়িয়ে থাকো রোজ! তোমার জায়গায় অন্য কোনো মেয়ে তো দূরে থাক, কোনো ছেলেরাই করত না। আর তুমি সে জায়গায় মেয়ে হয়ে…!’  

টিয়ার কোনো প্রতিবাদ নেই শুধু একটা নিঃশব্দ হাসি ।

‘তুমি হাসছ কেন, হাসির কি পেলে? শোনো তোমার জন্য কিন্তু আমার ফালতু ফালতু অনেক সময় নষ্ট হয়। প্লিজ আমাকে দেখা ছাড়ো এবার।’  

‘আমি তো কখনো বলিনি যে আমার জন্য সময় নষ্ট করতে হবে। আমি শুধু দেখব আমার মতো, এতে তো আপত্তি থাকার কথা নয়।’  

‘তুমি কি বাংলা কথা বোঝো না! শোনো টিয়া আমি তোমাকে বারবার বলছি তুমি আমার কাছে কোনোরকম কোনো আশা কোরো না। আমার তোমাকে কোনোমতেই পছন্দ নয় আর হবেও না… ব্যস্।’  

সুপ্রতিভ চলে যায় আর টিয়া ওর চলার পথে চেয়ে থাকে। 

পড়ুনঃ- না পাওয়া ভালোবাসা- স্কুল লাইফের ক্রাশ 

এরপর আরো দিন গড়ায়। সুপ্রতিভ মাস্টার্স করাকালীন একজন অতিসুন্দরী ও উচ্চশিক্ষিত এবং সর্বোপরি মাস্টার্স পাঠরতা মেয়ের প্রেমে পড়ে। মেয়েটির নাম পূজা। সুপ্রতিভ ভাবে এখন তার প্রেম করা চলবে কারণ সে প্রায় স্বনির্ভর হতে চলেছে। 

যেই ভাবা সেই কাজ। সুপ্রতিভ ও পূজার একে অপরকে ভালো লাগা থেকে ভালোবাসা শুরু হলো। কিন্তু টিয়া? সে এখনো একই জায়গায় একই ভাবে কেবলমাত্র একজনের জন্যই অপেক্ষা করে তার তৃষিত নয়ন নিয়ে। 

সুপ্রতিভ পূজার প্রেমে এতটাই অন্ধ হয়ে গেছিল যে তার কাছে পূজার সামনে টিয়া যে মানুষের পর্যায় তেই পড়ে না এমন একটা ধারণা তৈরি হলো। 

একদিন সুপ্রতিভ আর পূজা একসাথে গঙ্গার ধারে বসে আছে। হঠাৎ পূজা বলে ওঠে,  ‘আচ্ছা সুপ্রতিভ, তুমি এত কি ভাবো বলোতো?’  

valobasar boro golpo
valobasar boro golpo
<

‘কই কিছু না তো।’  

‘উঁহু, আমি কিন্তু বেশ কয়েকবার খেয়াল করেছি। তুমি বলোতো তোমার কি হয়েছে?’  

‘না না কিচ্ছু হয়নি বিশ্বাস করো।’  

‘পূজা খুব মেজাজ দেখিয়ে বলে, শোনো অত জিজ্ঞাসা করতে পারব না বুঝেছ। বলার হলে বলবে না হলে দরকার নেই।’  

‘আরে রাগ করছ কেন পূজা!’ 

‘চুপ করে থাকো, আমি আজ উঠলাম।’ 

‘আরে শোনো শোনো…’  

পূজা শোনে না সুপ্রতিভের ডাক। সে উঠে চলে যায়। সুপ্রতিভ আর কি করবে, কাল রাগারাগি মেটাবে ভেবে সে বাড়ির পথ ধরে। কিন্তু আবারও সেই মায়াবিনী দাঁড়িয়ে। দেখলেই অসহ্য লাগে সুপ্রতিভের। সে আজ এমনিতেই খুব বিরক্ত ছিল পূজার ঐরকম চলে যাওয়াতে আর তার উপর টিয়া কে দেখে মাথাটা আরো গরম হয়ে গেল। 

পড়ুনঃ- প্রিয় মানুষকে হারানোর বেদনা 

সে আজ এগিয়ে গিয়ে বলে ওঠে, ‘তোমার কি কোনো লজ্জা নেই! উফ! তুমি তো আচ্ছা বেহায়া মেয়ে দেখছি! অন্য মেয়েদের দেখেছ কখনো, কোনো ছেলেদের পিছন পিছন ঘুরতে? তো তুমি কেন আমার পিছন পিছন ঘোরো? যেখানে একটা মেয়েকে পটানোর জন্য সব ছেলেরা তাদের পেছনে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে পড়ে! রিজেকশন এর ভয়ে ভেঙে চুরমার হয়ে যায় চিন্তায়, সে জায়গায় তুমি কি টাইপের মেয়ে, যে নিজেই একটা ছেলের পেছনে ঘুরছে! তুমি তো দেখছি মেয়ে জাতির মধ্যে ব্যতিক্রমী! 

অবশ্য তোমার পিছনে কোনো ছেলে ঘুরবেই বা কেন! নিজের মুখটা আয়নায় দেখেছ কখনো! আমি তো দূরের কথা কোনো ছেলের সাথে জীবন জড়ানোর যোগ্যতা নেই তোমার বুঝতে পেরেছ।’  

এরপর সে পূজার ছবিটা দেখিয়ে বলে, ‘দেখো, একে বলে মেয়ে; সুন্দরী, শিক্ষিতা, ভদ্র, সভ্য, নম্র।’  

‘আর তুমি! না দেখতে ভালো, না কোনো উচ্চ শিক্ষা আছে, না কিছু! যাও যাও আর মেলা সময় নষ্ট কোরো না নিজের। আমি তো তোমাকে প্রথম থেকেই বলেছি আমি তোমাকে পছন্দ করি না। তবু তুমি কেন বারবার দাঁড়িয়ে থাকো এখানে? আজ তোমার জন্য আমার আর পূজার মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হলো। তোমাকে যেন আমি পরের দিন না দেখি বলে দিলাম।’    

সুপ্রতিভ চলে যায় আর টিয়ার নীরব চোখ দুটো দিয়ে অঝোর ধারায় শ্রাবণ ঝরে পড়ে। আর মনে মনে বলে, তোমার জন্য আমার চির অপেক্ষা থাকবে কিন্তু তুমি কোনোদিন জানবে না সেটা !

পূজার সাথে সুপ্রতিভর খুব সুন্দর ভাবে সম্পর্ক এগোতে থাকে। দুজনেই পরিবারের মতে বিদেশ যাবে উচ্চশিক্ষার জন্য। কথামতো সমস্ত পরিকল্পনা সম্পূর্ণ। এবার রওনা দেওয়া বাকি। 

বিকেলে সুপ্রতিভ যায় সেই পার্কে। তবে আজ তার সাথে পূজা আছে। সুপ্রতিভ ও পূজা পার্কে এসে বসে একটা জায়গায়। কিন্তু সুপ্রতিভ একটা অদ্ভুত ও অবিশ্বাস্য ব্যাপার লক্ষ্য করে যে আজ টিয়া নেই।। 

ওর মনটা অস্থির হতে না চাইলেও কেমন যেন অস্থির হয়ে ওঠে। কোথায় গেল টিয়া? ওর তো আজ খুশি হওয়ার কথা কিন্তু খুশি হতে পারছে না কেন টিয়ার অনুপস্থিতি দেখে? 

ওর কি তবে শরীর অসুস্থ নাকি অন্য কিছু? 

‘এই সুপ্রতিভ, আবার কি ভাবছ শুনি?’  

‘না না পূজা তুমি প্লিজ এত বিচলিত হয়ো না। আমি কিছু ভাবছি না। ওকে ফাইন তুমি বলো কি খাবার খাবে?’  

পূজা মুখ বেঁকিয়ে বলে, ‘তোমাকে বললাম বড় রেস্টুরেন্টে নিয়ে যেতে আর তুমি আনলে এই পার্কে ! হাওয়াই মিঠাই খাওয়াতে এনেছ আমায় এখানে!’   

‘না না পূজা এমন করে বোলো না। আমি তোমাকে এখানে এনেছিলাম…’  

পড়ুনঃ- ছোট ছোট প্রেমের গল্প 

‘কোনো কথা শুনতে চাই না তোমার। তুমি রেস্টুরেন্টে চলো। ওখানেই যা কথা হবার হবে। এইসব পাতি পার্ক আমার পছন্দ না। এক এক মুহূর্ত অপেক্ষা করতে পারছি না তুমি চলো। একটা ক্যাব বুক করো তাড়াতাড়ি।’  

সুপ্রতিভর মেজাজ টা আবার চটে যায়। এই পূজা মেয়েটা দিনদিন এত বিচ্ছিরি টাইপের হয়ে যাচ্ছে কেন বোঝা যাচ্ছে না। কথায় কথায় রূঢ় ভাব প্রকাশ, কোনোকিছুর জন্য একটু ওয়েট করতে পারে না। সবসময় এইরকম অদ্ভুত একটা অধৈর্যপনা, জেদ। 

‘না আজ কোনো রেস্টুরেন্টে নয়, এখানেই বসবে, আমি এখানেই যা খাবার কেনার কিনে আনব।’ 

পূজা উঠে যায় আর বলে, ‘শোনো সুপ্রতিভ, তুমি থাকো তোমার টিয়া কে নিয়ে পার্কে। ওর জন্যই তো এখানে এসেছ আর ওর জন্য ই যেতে পারছ না। তো থাকো তুমি এখানে। আমি চললাম।’  

‘পূজা তুমি এভাবে বারবার চলে যেতে পারো না।’ 

notun ভালোবাসার বড় গল্প
notun ভালোবাসার বড় গল্প

‘পারি কারণ আমার কাছে এইসব ইমোশনের চেয়ে এনজয়েবল লাইফ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বুঝেছ।’  

‘বাহ চমৎকার! তা হঠাৎ করে এমন পরিবর্তন কি করে হলো?’  

পূজা চলে যায় আবারো‌। সুপ্রতিভ আর ডাকে না পূজা কে। পূজা কোনোদিন তার ছিল না আর সবথেকে বড় কথা কোনোদিন পূজা তার হয়ই নি। কিন্তু টিয়া কোথায় গেল? ওর জন্য কেন আজ এতটা অস্থির লাগছে? 

যতোই অস্থির লাগুক আজ টিয়া কে সে দেখতে পেল না। টিয়ার জন্য এমন হওয়ার কারণ খুঁজে পায় না সুপ্রতিভ। 

সে বাড়ি ফিরে আসে। কিছু খেতে ভালো লাগছে না তার। বাড়ির সবাই তার ও পূজার ব্যাপারে জানতে চাইলে সুপ্রতিভ বাধা দিয়ে বলে, ‘প্লিজ ওর নাম আর কোরো না।’  

সবাই তো ভীষণ অবাক। এ কি বলছে ছেলে? মনে হয় রাগারাগি হয়েছে, পরে ঠিক হয়ে যাবে। 

‘আচ্ছা ঠিক আছে তুই খাবি না যখন তাহলে শুয়ে পড়।’  

সুপ্রতিভ বিছানায় গেলেও তার ঘুম আসে না । যেই টিয়া কে এতদিন ধরে দেখে তার অসহ্য লাগত, মাথা গরম হয়ে যেত ওর চাহনি দেখলে, ওকে কত অকথা কুকথাও বলেছে যার জন্য, সেই টিয়াকে আজ দেখতে পেল না বলে এত অস্থির কেন লাগছে তার! 

মনটা উথাল পাতাল করছে খুব। কাল যে করেই হোক টিয়ার সাথে দেখা করতেই হবে। কিন্তু কেন করতে হবে? এর উত্তর জানা নেই সুপ্রতিভের। 

পরদিন আর কোথাও নয়, সরাসরি পার্কে আগেভাগে চলে গেল। আর শুরু হলো অপেক্ষার প্রহর গোনা। 

পড়ুনঃ- স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প- সন্দেহ 

দিন গড়িয়ে বিকেল আসে কিন্তু টিয়া আসে না। মনটা আরো হাহাকার করে ওঠে। হায় ঈশ্বর, তার তো আর দুদিন পর ফ্লাইট আছে । সময় খুব কম। টিয়ার সাথে এর মধ্যে কি আর দেখা হবে না? কোথায় গেল ও? 

সুপ্রতিভর পার্কে কিছু জনকে টিয়ার বিররণ দিয়ে জিজ্ঞাসা করে । কিন্তু কেউই ঠিক মতো বলতে পারে না। 

সুপ্রতিভর মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এসব কি হচ্ছে। যেই টিয়ার উপস্থিতি তার কাছে এত অসহ্য লাগত সেই টিয়ার অনুপস্থিতিতে তো মন আরো দশগুণ অসহ্য হয়ে উঠেছে। নাহ, পূজার সাথে টিয়ার সত্যিই কোনো তুলনা হয় না। কারণ পূজা মানুষের খোলশ পরা অমানুষ আর টিয়ার বাইরে হোক বা ভেতরে  না আছে কোনো খোলশ না আছে কিছু। একটা খাঁটি মানুষ সে।  

নাহ টিয়াকে আর খুঁজে না পেয়েই চলে যেতে হয়েছিল বিদেশে পড়তে। 

পাঁচটা বছর কেটে গেছে। একজন সফল ডাক্তার হয়ে সুপ্রতিভ আজ আবার ফিরে এসেছে সেই একই পার্ক টা তে। পূজা তার জীবনে আকস্মিক আগমন হওয়া দূর্ঘটনার মতো। কিন্তু টিয়া কি তাহলে! ভেবে পায়নি সুপ্রতিভ।

পাঁচ বছরে চারিদিক অনেক বদলে গেছে। আজ সুপ্রতিভ টিয়ার কাছে তার কুকৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাইবে। সে টিয়া কে কি ই বা বলেনি ! মুখে যা এসেছে সব বলেছে। মেয়েটা চুপচাপ মুখ বুজে সহ্য করেছে সব। মেয়েটার মতো করে আজকের দিনে সত্যিই কি কেউ ভালোবাসার জন্য অপেক্ষা করে? এসব ভাবতে চায় না। সে জার্মানি থেকে কলকাতার ফ্লাইটে এসে সবার প্রথম কাউকে না জানিয়ে পার্কেই আসে আবার।

কিন্তু টিয়া আজকেও নেই। এবার সুপ্রতিভর দুই চোখ জলে ভরে উঠল। সে কি তাহলে অনেক বড় ভুল করে ফেলল! সে সুন্দরী রূপের কাছে সুন্দর মনকে অপমান করেছে। সে খোলশ পরা অমানুষ এর কাছে পলেস্তারা হীন খাঁটি মানুষের মনে আঘাত করেছে।  সে যে বারবার অমানুষের সামনে মানুষকে হারিয়ে দিয়েছে! 

সুপ্রতিভ, টিয়া যেখানে দাঁড়িয়ে থাকত সেই গাছটার নিচে দাঁড়ায় আর কাঁদতে থাকে। হুম এতদিন হাহাকার আর যন্ত্রণা ছিল কিন্তু অশ্রু নয় কিন্তু আজ সবকিছু তার বুকে জমে আছে যার প্রতিফলন অশ্রু। 

সে বলে, ‘তুমি কোথায় আছো টিয়া, তুমি ফিরে এসো আমার কাছে। প্লিজ টিয়া ফিরে এসো। আমি ভুল করেছি অনেক ভুল করেছি, ক্ষমার অযোগ্য ভুল করা ব্যক্তি আমি, মানুষ হতে পারিনি বলেই একজন মানুষ কে ও একটা সত্যিকারের খাঁটি ভালোবাসা কে অবজ্ঞা করেছি, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছি, অপমান করেছি অসম্মান করেছি। কিন্তু তুমি কিচ্ছু বলোনি প্রত্যুত্তরে। টিয়া, আজ তুমি ফিরে এসো, তোমার মতো উঁচু মনের মানুষের পায়ে আমার মতো নীচদের মাথা নোয়ানোর খুব দরকার। তোমার অমন খাঁটি ও অকৃত্রিম ভালোবাসার সামনে আমার ভালোবাসি বলাটা আজ কেন বহুদিন আগেই মূল্যহীন হয়ে ছিল। কিন্তু তবুও বলব আমি তোমাকে ভালবাসি টিয়া। প্রচন্ড ভালোবাসি। তোমার কাছে আমি আজ ক্ষমা চাইতে এসেছি, তুমি প্লিজ এসো।’

মনে জেদ চাপে তার। যে করেই হোক সে টিয়াকে খুঁজে বের করবেই। টিয়া যদি তাকে ভালবেসে এতবছর ধরে নীরব অপেক্ষায় থাকতে পারে তাহলে সে… 

সে তো কিছুই করতে পারেনি মেয়েটার জন্য। শুধু অপমান, কষ্ট আর অবহেলা করে গেছে দিনের পর দিন। কাঁদিয়েছে মেয়েটাকে শুধু। 

যেই ভাবা সেই কাজ। সে সেখানে হন্যে হয়ে দিনরাত এক করে খোঁজ শুরু করে টিয়া কোথায় থাকে, টিয়ার বিররণ দিয়ে। কিন্তু টিয়া কারোর দৃষ্টি আকর্ষণ করে যে সুপ্রতিভের জন্য অপেক্ষা করত না। সুপ্রতিভের জন্য অপেক্ষা টা শুধু মাত্র সুপ্রতিভের জন্য ই ছিল। তাই সে কারোর কাছে খোঁজ না পেয়ে অনেকবার ব্যর্থ হয়। তবুও চেষ্টা চালিয়ে যায় সে। পরিবারের সবাই পূজার সাথে তার সম্পর্ক ভাঙার পর বিশেষ ভাবে না এগোলেও এবার সুপ্রতিভের বিয়ের জন্য এগোয়। কিন্তু একি, সুপ্রতিভ হঠাৎ ডাক্তারি ছেড়ে মনে হচ্ছে আরো কোনো একটি বাড়তি কাজে ব্যস্ত। কেউই কিছু বুঝে উঠতে পারে না ছেলের মতিগতি।

অনেক দিন ধরে, অনেক চেষ্টার পরে টিয়ার বাড়ির খোঁজ পায় সুপ্রতিভ। বাইক নিয়ে ছুটে চলে যায় টিয়ার বাড়ির দিকে। 

বাড়ি ঢুকে দেখে টিয়া অসুস্থ, প্রায় মৃত্যুশয্যায় শায়িত। 

টিয়ার মা আর বাবা সুপ্রতিভ কে দেখে বলে, ‘কে তুমি? কি চাও এখানে?’ 

‘টিয়ার কি হয়েছে?’  

টিয়ার মা চোখ মুছে বলে, ‘আমার মেয়ে মরতে বসেছে। আমি চাই ও মরেই যাক কারণ আমি জানি না বেঁচে থাকাকালীন ও কি কষ্ট পেয়েছে যার জন্য ওর বেঁচে থাকাটাও অনেক কষ্টের। ওর এত কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকা আমি আর সহ্য করতে পারছি না মা হয়ে!’  

‘কিচ্ছু হবে না টিয়ার। আমি এসে গেছি যখন আমি কিচ্ছু হতে দেবো না ওর।’  

এরপর সুপ্রতিভ টিয়াকে তুলে হসপিটালে নিয়ে যায় আর নিজের হাতে ওর চিকিৎসা করে ওকে সুস্থ করে তোলে। 

পড়ুনঃ- মধ্যবিত্তের প্রেম 

চোখ মেলে টিয়া দেখে স্বপ্নের মতো সবকিছু। তার সামনে এ কে দাঁড়িয়ে! সুপ্রতিভ! 

‘টিয়া, এখন কেমন আছো তুমি? কেমন লাগছে এখন?’  

টিয়া কিছুই বিশ্বাস করতে পারে না। এসব স্বপ্ন নাকি সত্যি। 

সুপ্রতিভর টিয়ার হাত ধরে এবার আর অশ্রুসজল কন্ঠে বলে, ‘আমাকে ক্ষমা করে দাও টিয়া। আমি পাপী, পাপ করেছি, অন্যায় করেছি তোমার মতো একজন উঁচু মনের মানুষের সাথে। ডাক্তারি পড়তাম কিন্তু ডাক্তার হওয়ার আগে যে একজন ভালো মানুষ হওয়া উচিত আমি অন্ধের মতো অবুঝপনা করেছি। তোমার মতো মানুষ কে হেঁয় করে আমি ঐ পূজাকে…..! আমি তোমাকে যা না তা বলেছি আমি জানি। আমি ক্ষমার অযোগ্য। আমি আজ বুঝেছি, দেখতে সুন্দর হলেই তার মন সুন্দর নাও হতে পারে। বাহ্যিক চাকচিক্য তো ক্ষণিকের মোহ মাত্র। 

আমার তোমাকে ভালোবাসি বলার স্পর্ধা নেই তবুও বলছি, আমি তোমাকে ভালবাসি টিয়া, তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যেও না কোথাও। আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও। আমি তোমার সাথে যা করেছি এতে আমার অনেক বড় শাস্তি হওয়া উচিত, তুমি আমাকে যা ইচ্ছা শাস্তি দাও, কিন্তু আমাকে ছেড়ে চলে যেও না টিয়া।’  

টিয়া ছোট্ট হাসি দিয়ে বলে, ‘তোমাকে ছেড়ে চলে যাবো বলে কি তোমার জন্য চিরদিন অপেক্ষা করতাম! তোমার তরে আমার যে চির অপেক্ষা। আর অপেক্ষার আরেক নামই যে ভালোবাসা!’  

টিয়াকে বুকে জড়িয়ে ধরে সুপ্রতিভ। একটা আলাদাই শান্তি আছে অপেক্ষার। যদি সেটা চির অপেক্ষা হয়! 

সুস্মিতা গোস্বামী

গল্পের ভাবনায়-
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে। 
সুস্মিতার কিছু লেখা যেগুলি- পাঠকের পছন্দ হয়েছে- 
করুণ প্রেমের গল্প- ভালোবাসার খুনি 

নতুন ভালোবাসার গল্প- পুনর্মিলন

অবহেলা থেকে ভালোবাসা- কলজে জীবনের লাভ স্টোরি 
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে। 
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

ভালোবাসার বড় গল্প। অপেক্ষা নিয়ে গল্প। valobasar boro golpo

Spread the love

Leave a Reply