দুটি রিলেশনের গল্প নিয়ে আসা হয়েছে আজ। এই শর্ট ভালবাসার গল্প দুটিতে একটিতে রয়েছে প্রিয়জনের জন্য অপেক্ষা এবং অন্যটিতে দেখানো হয়েছে প্রত্যাখিত হয়ে আত্মহত্যা করার ভাবনা এবং শেষে নতুন জীবনের সূত্রপাত।

রিলেশনের গল্পঃ-

শর্ট ভালোবাসার গল্পঃ-

আজ মনটা বেশ হালকা লাগছে। জীবনের গোপন কথা গুলো বলে ফেললাম সৌমিলিকে। ও রিপ্লাই দিলো ” তোমার জীবনের গল্পটা তাহলে কিছুটা দেবদাসের মতো। যাইহোক শুভরাত্রি , সেভ জার্নি।”

টেকঅফের ঘোষণা হতেই সিট বেল্টটা বাঁধলাম ভালো করে। দেশে ফিরেছি সাত বছর পর। আমি শরৎচন্দ্রের দেবদাসের সাথে নিজের মিলে খোঁজার চেষ্টা করলাম না। কারণ দুইজনের দর্শন বোধহয় দুই রকম। আমি মনে করি পুরুষের মদ পান আর টাকা ইনকামের কোন লিমিট থাকা উচিত নয়। আর টাকা চাই জীবন সব সুখ উপভোগ করতে। আমার ভালোবাসা বা আবেগ বা কোন অনুভূতি নেই, থাকার কথাও নয়।

সেই ছোট্ট বেলায় থেকে ছুটকি আমার বাড়িতে আসত। রান্না বাটি খেলার সময় শুধু বর বৌ হতাম সেটা নয়। যখন ও বড় হয়ে গেলো তখন ও আমার মায়ের হাতে হাতে সব কাজ করে দিত। আমার ঘর গোছানোর কাজটা ও নিজের হাতেই করতো।  দুই জনে হয়তো কখনো কাউকে ভালোবাসার কথা মুখে বলি নি। কিন্তু ও আমার রোজকার একটা অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ছোট খাটো ওর করা খুনসুটি , আবদার, দুষ্টুমি নিয়ে আমাদের দিন গুলো বেশ কাটছিল।

রিলেশনের গল্প
রিলেশনের গল্প

আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। খুব বেশি মেধাবী না। তবে একটা চাকরি জোগাড় করতে পারব আত্মবিশ্বাস ছিল। চাকুরী পেলাম ও। কিন্তু সরকারে থাকা দলটি ভিতর থেকে চড়া দামে বিক্রি করে দিলো আমাদের পাওনা চাকুরী গুলো। আমি আমার মতো চাকুরী প্রার্থীদের সাথে যখন রাস্তায় বসে আন্দোলন করছি। তখন ও পাড়ার সেন্টুদা মানে কাউন্সিলরের ভাই ছুটকির সাথে আংটি বদল করে নিলো। সাথে ওর বৌদিকে হেল্থ সেন্টারে চাকুরী দিলো।

ছুটকি আমার সাথে বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে চেয়েছিল, বলেছিলো ব্যাঙ্গালোর কিংবা মুম্বাই গিয়ে দুই জনে মিলে চাকুরী করে ঠিক একটা সংসার গুছিয়ে নেবো। কিন্তু কাকিমার কথাটা মনে পরে গেল। মিষ্টি নিয়ে এসেছিল ওর বিয়ের কথা পাকা হতেই। চোখ ভর্তি জল বলেছিলো ” কাকু তো বিছানায় শুয়ে। দাদার পাশে থেকে কাজটা উদ্ধার করে দিস আমাদের । বৌদি চাকুরীটা পেয়েছে নয়তো সংসার আর চলছিলো না। ছুটকির মত নেই , ওকে একটু বোঝা , তোর কথা ঠিক মেনে নেবে ও।”

দাঁড়িয়ে থেকে ছুটুকির বিয়ে দেবো এমন মনের জোর আমার ছিলো না। বিয়ের আগের দিন শহর শুধু নয় দেশ ছাড়লাম। বাড়ির সাথেও যোগাযোগ রাখতাম না তেমন। সাত বছর কেটে গেলো। টুকিটাকি কথা হয়েছিল বাবা মায়ের সঙ্গে ।  কিন্তু আমার জন্মদিনের দিন বেশ অনেক্ষণ কথা বললো মা। বললো বাবা খুব অসুস্থ, আমার চিন্তায়। বিয়ে দিতে চায় আমার। চুলেও পাকা ধরছে একটু আধটু। তাই মন বলল চলো যাই ফেরা যাক।

চোখ খুলতে গিয়ে মুখ থেকে আচমকা বেড়িয়ে গেল ” ছুটুকি শুতে দে বাড়াবাড়ি করিস না।”
তার মধ্যেই জলে ঝাপটা পড়লো মুখের ওপর। চোখ খুলতেই সেই সাত বছর আগেকার দৃশ্য। তবে ছুটকির চোখে একটা চশমা।বিয়ের দিন ও পালিয়ে গেছিলো। হোস্টেলে থেকে সরকারি চাকরি জোগাড় করে, দুটো সংসারকে সামলেছে এতদিন। এবার ওকে ছুটি দিতে হবে আমাকে। ভালো লাগলো এটা ভেবেই, বুবাইরা দেবদাস হলেও ছুটকিরা পার্বতী হয়না আজকাল। তাই প্রেমের গল্প গুলো দীর্ঘশ্বাস ফেলেও এখন পার্বতীরা আগের মতো অসহায় নয়‌। তবে দেবদাসরা বোধহয় এখনো তাদের ভালোবাসা নিয়ে উদাসীন।

মানব মণ্ডল

উপরের অসাধারন গল্পটির ভাবনায়-
মানবের যে লেখা গুলি আপনার পছন্দ হতে পারে- 

মধ্যবিত্তের প্রেম- সাইকেল  

কষ্টের লাভ স্টোরি 

প্রেমে ব্যর্থ হয়ে নতুন জীবনঃ-

ডাইরী থেকে সাদা কাগজটা ছিঁড়ে কলম দিয়ে বেশ বড় বড় অক্ষরে সুন্দর করে “আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়” লিখে ফেললো অদ্রি। কাগজটা ভাজ করে টেবিলের উপরে রাখা গ্লাসের নিচে রেখে দিলো সে।

হ্যাঁ… প্রস্তুতি মোটামুটি শেষ, এবার নতুন ব্লেডটা খোলার পালা।

নতুন চকচকে ব্লেডটা দেখছে আর ভাবছে একটু পরই হাতের শিরা কাটবে সে এ ব্লেড দিয়ে। কি মনে করে ব্লেডটা টেবিলের উপর রেখে জানালা দিয়ে শেষবারের মত জোছনা দেখতে লাগলো অদ্রি। আনমনে ফিরে গেলো পুরোনো স্মৃতিতে।

অরণ্যের সাথে প্রথম দেখা হয়েছিলো ইউনিভার্সিটিতে। প্রথম প্রথম অরণ্যকে ভালো না লাগলেও অরণ্য ছিল খুব নাছোড়বান্দা ছেলে। সে তার পাগলামো দিয়ে ঠিকই অদ্রির মন জয় করে নিয়েছিলো। তারপর শুরু হলো এ জুটির সম্পর্ক। ইউনিভার্সিটিতে এ জুটির সুনামের কোনো কমতি ছিলো না।

এভাবে দুষ্টু মিষ্টি খুনসুটি আর একটু ঝগড়া নিয়েই চলছিলো তাদের দিনগুলো।

শর্ট ভালোবাসার গল্প
শর্ট ভালোবাসার গল্প

দেখতে দেখতে তিনটি বসন্ত একে অপরের হাত ধরে যে কিভাবে কাটিয়ে দিয়েছে তারা নিজেরাও জানতো না। কিন্তু অরণ্য হঠাৎ করেই কেমন জানি বদলে যেতে লাগলো। যে অরণ্য অদ্রির সাথে ফোনে কথা বলার জন্য অপেক্ষায় থাকতো, আজকাল তাকে কল দিলেই ওয়েটিংয়ে পায় অদ্রি।

প্রথম প্রথম বিষয়টা সিরিয়াসলি না নিলেও একসময় অদ্রি খুব কষ্ট পেতো অরণ্যের ব্যবহারে। অরণ্য বলতে গেলে যোগাযোগই বন্ধ করে দেয় অদ্রির সাথে। আর এ যোগাযোগের চির সমাপ্তি হয় আজকে বিকেলে….

-অরণ্য তুমি এমন হয়ে গেলে কেন?

-এমন হয়ে গেছি মানে? কি বলতে চাও স্পষ্ট করে বলো অদ্রি।

-তুমি আমাকে অবহেলা করছো। ফোন দিলে ওয়েটিংয়ে থাকে। তুমি তো আগে এমন ছিলে না অরণ্য!

-শুনো অদ্রি সবসময় মানুষকে যে একই রকম থাকতে হবে তা তো নয়। সময় মানুষকে বদলে দেয়। সো, এখানে অপরাধ কি?

-হ্যাঁ সত্যিই তো এখানে কোনো অপরাধই নেই!

-আমি আসলে তোমাকে আর সহ্য করতে পারছিনা অদ্রি। আই থিংক আমাদের রিলেশন কন্টিনিউ করা ঠিক না। সো….

-প্লিজ অরণ্য আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তুমি যেমন আছো তেমনই থাকো তারপরও প্লিজ ছেড়ে যেয়ো না প্লিজ….

-লিসেন অদ্রি, আমার পক্ষে রিলেশন কন্টিনিউ করা পসিবল না! কারণ আমি আর তোমাকে ভালোবাসি না। আই এম এক্সট্রেমলি স্যরি।

-মানে? কি বলছো এসব? মাথা ঠিক আছে তোমার?

-হ্যাঁ… কারণ ভেবে দেখলাম তোমার সাথে আমার যায় না। তাছাড়া কোথায় আমাদের ফ্যামিলি আর কোথায়…..

– থামো অরণ্য… রিলেশন করার আগে মাথায় আসেনি এসব তোমার?

-দেখো আমি মানছি আমার ভুল ছিল বাট আমি সিরিয়াসলি আর এই পেইন নিতে পারতেছিনা।

-প্লিজ এমন করো না প্লিজ….আমি বাঁচবো না তোমায় ছাড়া অরণ্য প্লিজ!!

সেদিন অনেক অনুরোধের পরও অরণ্য ফিরে আসেনি। খুব কেঁদেছিলো অদ্রি কিন্তু লাভ হয়নি!

বাড়িতে আসার পর সোজা নিজের রুমে গেলো অদ্রি। মা অবশ্য কিছুক্ষণ ডাকলেন তাতেও সে পাত্তা দেয়নি।

সিদ্ধান্ত ফাইনাল, আজই পৃথিবীর মায়া ছাড়বে। পৃথিবীতে যে ভালোবাসার মত আর কেউ নেই। হঠাৎ মায়ের ডাকে কল্পনার জগৎ থেকে বের হলো অদ্রি। কি মনে করে ভাবলো শেষবারের মত মা-বাবার সাথে দেখা করা উচিত তার। সেই ভেবে দরজা খুলতেই মা বললো,

-দেখ তো মা ড্রেসটা তোর পছন্দ হয়েছে কিনা?

-হুম খুব হয়েছে মা।

-সেদিন মার্কেটে দেখছিলি ড্রেসটা বারবার।তখন আমার হাতেও টাকা ছিলো না তাই কিছু জমানো টাকা আর তোর বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে বাজার করতে গিয়ে কিনে আনলাম।

-তুমিও না মা কি যে করো!

-নিজের কাছে খুব খারাপ লাগে রে মা। আজ সামর্থ্য তেমন নেই বলে কিছুই কিনে দিতে পারিনা।

এমন সময় অদ্রির বাবা বাসায় আসলেন। হাতে মনে হচ্ছে মাছের ব্যাগ হবে।

ব্যাগটা অদ্রির মায়ের হাতে দিয়ে বললেন,

-মেয়েটা সেদিন বলেছিলো চিংড়ী মাছ খাবে। তাই ভাবলাম আজ বেতন পেয়েছি ক’টা চিংড়ী নিয়ে যাই মেয়ের জন্য। মজা করে রান্না করো তো অদ্রির মা যেমনটা অদ্রি পছন্দ করে।

অদ্রি এসব দেখছে আর চোখের পানি ফেলছে। কিছু না বলেই নিজের ঘরে এসে বালিশ চেপে খুব কান্না করলো। ঠিক এমন সময় ছোট ভাইটা এসে জিজ্ঞেস করলো,

– দিদি কি হয়েছে তোর? শরীর খারাপ?

-না রে ভাই এমনি। কিছু হয়নি আমার।

-কি হয়েছে বলনা রে দিদি! ও বুঝেছি আমি তোর ব্যাগ থেকে টাকা নিয়েছিলাম সেজন্য? আচ্ছা আমি কাল টিফিন না খেয়ে টাকাগুলো তোকে দিয়ে দিবো বুঝলি দিদি। প্লিজ আর কাঁদিস না বিশ্বাস কর আর এমন করবো না।

প্রেমে ব্যর্থ হয়ে নতুন জীবন
প্রেমে ব্যর্থ হয়ে নতুন জীবন
<

অদ্রি আর সহ্য করতে পারলো না! হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। কান্নার শব্দ শুনে বাবা-মা ছুটে এলেন অদ্রির রুমে। অদ্রি শক্ত করে তার মাকে জড়িয়ে ধরলো।

ভাবতে লাগলো, “ভালোবাসা তো আমার ঘরেই আছে, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। আর আমি কিনা মরতে যাচ্ছিলাম এক প্রতারকের জন্য?

আমি মরলে তো ওর কোনো ক্ষতি হতো না। বরং আমার বাবা-মা কষ্ট পেতো। আমি না থাকলে তারা কাকে এভাবে ভালোবাসতো।

গ্লাসের নিচ থেকে কাগজটা ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে জানালা দিয়ে ফেলে দিলো।

জোছনার আলোয় অন্ধকার ঘরটা আলোকিত হয়ে গেলো, অদ্ভুত সুন্দর লাগছে সবকিছু।

জীবন অনেক সুন্দর মনে হচ্ছে অদ্রির। কাগজের টুকরোর সাথে পুরোনো সবকিছু টুকরো টুকরো হয়ে গেলো, শুরু হলো অদ্রির জীবনের নতুন অধ্যায়।

গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে
পড়ুনঃ- 
দৈহিক প্রেমের গল্প 

ট্রেনে প্রেমের গল্প 
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

রিলেশনের গল্প। শর্ট ভালোবাসার গল্প। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে নতুন জীবন

Spread the love

Leave a Reply