আজকের ভালবাসার ছোট গল্প দুটি ভিন্ন ভিন্ন। একটি হল কষ্টের ভালবাসার গল্প আর অন্যটি হল ভালোবাসার জন্য ত্যাগের গল্প। আশা রাখছি গল্প দুটি তোমাদের পছন্দ হবে।

কষ্টের ভালবাসার গল্পঃ-

ভালবাসার ছোট গল্পঃ- “ভালোবেসে ত্যাগ”

বুকের বাঁপাশটা কয়েকদিন ধরেই যন্ত্রনা করছে। কেন জানি না, তবে আমি এসবের মধ্যেও খুব হাসছি। সত্যি কি হবে বলতে পারছিনা তবু যতক্ষন আছি হেসে যাই, এমন ধারনা যে আমাকে উল্টে পাল্টে দিয়ে চলেছে তা নিশ্চয় অদ্ভুত। ডাক্তার বললেন, “একে বাড়িতে নয়, হসপিটালে ভর্তি করান।” আর কিছু ওষুধ লিখে দিয়ে গেলেন কেনার জন্য। কিন্তু ওষুধ কি কাজ করবে!

কিছুটা বলা যাক, স্কুলে ক্লাস এইটের আমাদের রুমটা এতো অপরিষ্কার থাকতো, তার বর্ণনা সম্ভব না। আমি একদিন টিফিনে ক্লাসে বসেই লুচি আলুভাজা সাঁটাচ্ছিলাম, এমন সময়ে একটা মেয়ে আমার চুলের মুঠি ধরে মেরে, টিফিন নিয়ে দে ছুট। আমার মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল সেদিন। এরপর থেকে তাকে আর কিছুদিন দেখিনি। স্কুলের বার্ষিক অনুষ্ঠানে আমাকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয় সঙ্গীত সম্মেলনের। মানে এককথায় গান বাজনার। আমি ভালোও বাসতাম এসব।

সেদিন একটি রুম সাজানো হচ্ছিল অনুষ্ঠানের জন্য, রুমটা বেশ বড়। আমি আমার কিছু বন্ধুরা কাজগুলো দেখছিলাম, হঠাৎ চোখ পড়ল, ভাঙা দরজায় পাশে বসে আছে একটা মেয়ে, হ্যাঁ সেই মেয়ে যে আমার টিফিন নিয়ে পালিয়েছিল। খুব উল্টো পাল্টা কথা শুনিয়ে দিলাম ওকে, কিছু না বলে, ও নীরবে কাঁদতে লাগলো। এবার আমার খুব খারাপ লেগেছিল। বললাম, আচ্ছা কি হয়েছে, এতো কাঁদছো কেনো? কিছু মনে করো না তুমি সেদিন যা করেছিলে, তাই রাগ হওয়াই স্বাভাবিক।

কষ্টের ভালবাসার গল্প
কষ্টের ভালবাসার গল্প

সে জবাব দিল – “আমি সেদিন টিফিন আনিনি, আর খিদের সময় না খেলে আমার খুব পেট ব্যথা হয় তাই” আমি প্রশ্ন করলাম- তা আজকে কাঁদছো কেনো ?

সে বলল “আমার কোনো বন্ধু নেই, আর ক্লাসে আমাকে নিয়ে সবাই খুব হাসাহাসি, বিদ্রুপ করে, আজ মনটা খুব খারাপ, তাই এখানে এসে বসে আছি”

আমি বললাম- তোমার নাম কি ? সে বললো, “শ্রেয়া।”

সেদিন থেকে তার বন্ধু হয়েছিলাম, তার সুখে-দু:খের সাথী ছিলাম। একসাথে কলেজে ভর্তি হলাম। অনেক সখ্যতা, ভালোবাসা ছড়িয়ে পড়তো কলেজ ক্যাম্পাসে। ও আমাকে বন্ধুই ভাবতো, ভালোবাসতো বন্ধু হিসেবে। আমি ওকে বলতে পারিনি যে, স্কুলে দরজার পাশে রাগে নয়, অনুরাগে ভালোবেসেছিলাম যা নিভৃতে যতনে বেড়ে উঠেছিল আমার হৃদয় জুড়ে, তা ও জানতে পারেনি, হয়তো জানতে দিইনি।

এভাবেই কলেজ শেষ হয়ে যায় আমাদের। আমি চলে যাই এম.বি.এ করতে চণ্ডীগড়ে। কিন্তু ফোনে আমাদের ভালোই কথা হত। সেখান থেকেই কথাটি জানতে পারি- আমার মাসির ছেলে সুজয় ঘোষ, একটি বেসরকারি সেক্টরে বেশ মোটা অঙ্কের মাইনের চাকরি করে। ওর সাথেই বিয়ে ঠিক হয়েছে শ্রেয়ার। আসলে আমার মনের কথাটা তো মনেই থেকে গেছে , বলা হয়নি। এদিকে সুজয় অনেকবার ফোন করেছে আর টেক্সটও করছে কিন্তু নিজের ভালোবাসার মৃত্যু কিভাবে দেখব!

যখন শ্রেয়ার কপালে সুজয়ের সিঁদুর উঠবে, পারবো না তা সহ্য করতে। বাবাকে বলেছিলাম, হামসাফার এক্সপ্রেসের টিকিট কনফার্ম করতে। বিয়ের দিন সকাল ৫:৩০ এ ট্রেনে উঠলাম। সুজয় খুব খিস্তি করলো হোয়াটস অ্যাপে। ট্রেনের সিটে বসেই গ্যালারির কিছু ছবি দেখলাম, আমার সাথে শ্রেয়ার ফুচকা আর পাপড়িচাট খাওয়ার ফটো, তবে মোবাইল স্ক্রিনটা বারবার মুছতে হচ্ছে। ওর ছবিগুলো ডিলিট করতে আমার হাত কেঁপে ওঠছে, তাহলে মনের ক্যানভাসের ঝড় কে আটকাবে?

ভালবাসার ছোট গল্প
ভালবাসার ছোট গল্প

ট্রেন ছেড়ে দিচ্ছে, তার হুইসেলের সাথে, আর তা ছুটলো গন্তব্যের দিকে কতো স্বপ্ন বয়ে নিয়ে আর কতো স্বপ্নের লাশ কাঁধে নিয়ে।।

সৌগত প্রামাণিক

গল্পটির ভাবনায়-
সৌগত- এর কিছু লেখা- 
দুঃখের প্রেমের গল্প 

অলীক প্রেমের গল্প 
পড়ুনঃ- নতুন প্রেমের গল্প- প্রেমের শেষ পরিণতি 

সিনিয়র আপু যখন ক্রাশ 

এক তরফা প্রেমের গল্প 

গভীর প্রেমের গল্পঃ- প্রিয়জনের হাত

তারা কলকাতা থেকে এসেছে। তারা যে সিটে বসেছিল আমি ঠিক তাদেরই পাশাপাশি সিটে বসে। তাদের সামনের সিটে এক জন বয়স্ক ভদ্রমহিলা বসে তাদের অনেকক্ষণ যাবত খেয়াল করছেন।

আমিও তাদের সবকিছু ফলো করছি। ছেলেটা একমুহূর্তের জন্যও মেয়েটির হাত ছাড়ছে না। ভদ্রমহিলাটি হঠাৎ তাদের জিজ্ঞেস করল “এমনে যে মাইনসের সামনে হাত দইরা বইয়া আছ বাবা, মাইসে তো অনেককিছু কানাকানি করতাছে। তুমি কি হেরে বেশি ভালোবাসো? কইত্তে আইছো তোমরা? কই যাইবা? বাড়ি কই? নাম কি তমাগর?”

ছেলেটি বললো দিদি আমার নাম অলক আর ওর নাম হল সুমি। আমরা কলকাতা থেকে এসেছি। আমি তাকে অনেক ভালোবাসি। দুই বছর হল আমাদের সম্পর্ক। ওর বড় ভাই আমাদের সম্পর্কের কথা জেনে গেছে তাকে দুইদিন ঘরে আটকে রেখে খুব মেরেছে। তার মা আমাকে পছন্দ করত তাই আজকে আমরা সুযোগ বুঝে পালিয়ে এসেছি। আসার সময় তার মা আমার হাতে তার মেয়েকে তুলে দিয়ে বললেন “আমার মেয়ের হাত কখনো ছেড়ো না বাবু, ওর বাবা নেই তুমি সুমিকে কখন কষ্ট দিও না। দিদি ভালোবাসা কি আমি বুঝি না, আমি শুধু ওরে বুঝি, যা হবে পরে দেখা যাবে। যা ভাবার ভাবুক লোকে এই হাত আমরণ আগলে রাখবো।”

ভদ্রমহিলা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো, “আমিও তোমার দাদার লগে ভাইগ্গা আইছিলাম। এই যে হাত ধরলো এক লগে বুড়ো বুড়ি হইলাম। কতো সুখ দুঃখ এক লগে কাটাইলাম বাবা! তোমার দাদা বড় বালা মানুষ আছিলো, পাঁচবছর আগে মইরা গেছে। তারে আমি আমার ঘরের জানালার পাশে দাফন দিছি, যতোদিন বাঁইচ্চা থাকমু তার দাফনটা দেইখা কাটাই দিমু। “

ভালোবাসার জন্য ত্যাগ
ভালোবাসার জন্য ত্যাগ
<

এমন অনেক ছোট বড় ভালোবাসার গল্প আছে আমাদের আশেপাশে। চামড়া ঝুলে যায়, চশমার পাওয়ার বেড়ে যায় তবুও ভালোবাসা কমে না! রাগ, অভিমান, সুখ, দুঃখ নিয়ে তারা একসাথে কাটিয়ে দেয় বেশ কয়েকটি যুগ। তাদের এই ভালবাসায় নেই কোন সুপ্ত বাসনা। তারা শুধু বোঝে একে অপরের বেদনা। আসলে যখন দুইজন ব্যক্তি গভীর সম্পর্কে চলে আসে তখন তারা একই সুতোতে বাঁধা পরে যায়। আর এই সুতোর একদিক টানলে অপরদিকেও আপনাআপনি তান লাগে। ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল ভালোবাসা ও ভালোবাসার মানুষগুলো।

গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে। 
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
আপনি কি এই গল্প গুলি পড়েছেন!- 
মধ্যবিত্তের প্রেম 

কলেজে সিনিয়রের সাথে প্রেম 
আমাদের সাথে যুক্ত হতে পারেন-
ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

কষ্টের ভালবাসার গল্প। ভালবাসার ছোট গল্প। ভালোবাসার জন্য ত্যাগ। গভীর প্রেমের গল্প

Spread the love

Leave a Reply