কথায় আছে প্রেম নাকি বয়স দেখে হয়না। ঠিক তেমনটাই হয়েছে আমার এই বন্ধুর সাথে। সে তার সিনিয়রের সাথে প্রেমের গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করেছে। স্কুলে তার চেয়ে বয়সে বড় এক দিদির প্রেমে সে পড়ে যায়, কিন্তু ভয়ে কোনদিনও তাকে জানাতে পারেনি। চলুন এই না বলা প্রেমের গল্পটি পড়ে নেওয়া যাক।

সিনিয়র আপু যখন ক্রাশ। সিনিয়রের সাথে প্রেমের গল্প।

তাকে আমি প্রথম দেখি আমাদের স্কুলের একটি অনুষ্ঠানে। তখন থেকেই তার প্রতি ঝোঁক। তবে আমার শুধু একার নয় আমার বন্ধুদেরও তার প্রতি অনেক আগ্রহ। মেয়েটা আমাদের থেকে দুই বছরের বড়। শুনেছি পড়াশোনায় বেশ ভালো। তবে গানের প্রতি ঝোঁকটা অনেক বেশি। কেন জানিনা এরপর থেকেই সেই মেয়েটির প্রতি আগ্রহটা অনেকটা বেড়ে গেল। যদিও মেয়ে বলাটা ঠিক হবে না, কারণ আমার থেকে দুই বছরের বড়। তবে সে যাই হোক পরের ঘটনা বলি।

আমি কিছুতেই কোয়ান্টাম থিওরি বুঝতে পারছিলাম না। আর এদিকে আমাদের প্রজেক্ট করতে দিয়েছে এই থিয়োরির উপর। আমার আবার অভ্যেস কোনো কিছু না বুঝে সেটিকে নিয়ে প্রজেক্ট বানাতে পাড়ব না। আমার আবার টিচারদের সঙ্গে কথা বলায় এলারজিও রয়েছে। বাধ্য হয়েই লাইব্রেরীতে খোঁজ শুরু করলাম। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই নেই। এত্ত এত্ত বই কিন্তু কাজের বই শুধু মাত্র কয়েকটা। খুব ভালো ভাবেই পড়লাম বই গুলি কিন্তু সব মাথার উপর দিয়ে বাউন্স হয়ে গেল। নিরাশ হয়ে বই এর উপর মাথা রেখে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি কিছুই মনে নেই।

এরপর কার ডাকে যেন ঘুম ভাঙল। মাথা তুলে সামনে দেখতেই আমার হার্টবিট বেড়ে গেল। কারণ সামনে কিছু বই নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমার ক্রাশ, সেই অনুষ্ঠানের মেয়েটা মানে দিদিটি। সাথে আরেকজন বান্ধবী। আমাকে দেখেই আমার ক্রাশ দিদির বক্তব্য- “লাইব্রেরীতে কে ঘুমোয়?” আমি লজ্জার সুরে বললাম- আসলে আমার মাথায় কিছুতেই কোয়ান্টাম থিওরি ঢুকছে না। এত্ত এত্ত বই ঘাঁটলাম কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হল না দিদি।“ যদিও আমি দিদি বলতে নারাজ, একরকম বাধ্য হয়েই দিদি শব্দটি উচ্চারণ করা।

সিনিয়র আপু যখন ক্রাশ। সিনিয়রের সাথে প্রেমের গল্প।
সিনিয়র আপু যখন ক্রাশ। সিনিয়রের সাথে প্রেমের গল্প।

“ও এই ব্যাপার, তুমি কোথায় থাক?” আমি আমার বাড়ির ঠিকানা বললাম। এরপর সে বলল- “আমি তো তোমাদের বাড়ির পাশের ফ্ল্যাটেই থাকি। আগামীকাল তো রবিবার, দুপুরে আমার বাড়ি চলে এসো, বুঝিয়ে দেব।“

এই সুযোগ হাতছাড়া করে কে? ক্রাশ যখন ডেকেছে, না গিয়ে কি থাকা যায়? তবে আমার দজ্জাল বন্ধুদের আমি কিছুই জানাই নি, কারণ তারাও আমার পিছনে লেগে থাকত। তা বলতে গেলে আমিও আবার কম দজ্জাল কি! আমার থেকে সিনিয়র মেয়ের সাথে প্রেম করতে চাইছি!

বাড়িটা আগে দেখেছিলাম ঠিকই কিন্তু ভিতরে এই প্রথম এলাম। কলিং বেল বাজাতেই দিদি এসে দরজা খুলে দিল। তাকে দেখে আমি ভিতরে ঢুকতে পর্যন্ত ভুলে গেছি। কারণ তার এলোমেলো চুল, সাথে নাকের উপর সেই হালকা লেন্সের ক্যাট আই চশমা, একেবারে পারফেক্ট কম্বিনেশন। আমাকে বসতে বলে দিদি ভিতরে গেল। কিছুক্ষণ পড় আবার অন্য রূপে আমার সামনে আবির্ভূত হল আমার ক্রাশ দিদি।

এবার একেবারে একজন রাজকুমারীর মত লাগছে। দিদির দিকে তাকিয়ে আছি তো আছিই। আমার ঘোর কাটল তখনই যখন আমার হাত থেকে খাতাটা মেঝেতে পড়ে গেল। দিদি আমার পাশে বসেই আমাকে কোয়ান্টাম থিওরি বোঝাতে শুরু করল। এত কাছাকাছি কোনো মেয়ের সাথে বসার সৌভাগ্য বাসের সীট ছাড়া আর অন্য কোথাও আমার হয়নি। আবার যদি ক্রাশ এসে পাশে বসে, তাহলে তো কোনো কথাই নেই।

আজ দিদি নিশ্চয়ই Dove দিয়ে চুল শ্যাম্পু করেছে। অন্তত আমার তাই মনে হচ্ছে। উঁহু উঁহু ধ্যান অন্যত্র দিলে চলবে না। যে কাজে এসেছি সেই কাজটিই করতে হবে। কিন্তু কি আর করা যাবে, বার বার আমার ধ্যান দিদির মুখের দিকেই যাচ্ছে।

বাঃ বেশ ভালো ভাবেই দিদি কোয়ান্টাম থিওরি বোঝালেন। দজ্জাল হলেও পড়াশোনায় আমি মন্দ নয়। কোয়ান্টাম থিওরি একদম মাথায় গেঁথে গেছে। এরপর বিদেয় নেওয়ার পালা, যদিও আমার যেতে মন চাইছে ন। কিন্তু প্রজেক্ট করব বলে তাড়াতাড়ি চলে এসেছি।

পড়ুনঃ-

প্রথম প্রেমের গল্প

শরীর নাকি প্রেম?

ব্যাস এভাবেই প্রথম পরিচয় শুরু হল। আমার বন্ধুরা কিছুতেই ভাবতে পাড়েনি যে আমি এতদূর এগিয়ে গেছি। এখন দিদির সাথে স্কুলে প্রতিদিন কথা হয়। এবার আরেকটা কাজ বাকি সেটা হল মোবাইল নাম্বার জোগাড় করতে হবে। তবে সেই সুযোগটাও চলে এল। আমাদের স্কুল থেকে ট্যুরের আয়োজন করেছে। আমি আমার ক্যামেরা নিয়ে গিয়েছিলাম। তাই আমার কদরটাও একটু বেশি সবার কাছে।

দিদি আমার কাছে এসে বলল- “আমাকে ফটো তুলে দিবেনা?” আমি এক কথাতেই রাজী হয়ে যাই। এরপর অনেক ফটো তুলে দিয়েছিলাম। এবার সেই ফটো গুলি দিদির কাছে পৌঁছাবে কি ভাবে। দিদি নিজেই আমার মোবাইল নাম্বার নিয়ে নিয়েছিল। এরপর ফটো গুলি দিদিকে দিয়ে দিই। ব্যাস মোবাইল নাম্বার জোগাড় করা হয়ে গেল।

আমার বন্ধুরা যেন আমাকে শত্রুর মত দেখতে লাগল। কারণ আমি আমাদের ক্রাশের মোবাইল নাম্বার পর্যন্ত জোগাড় করে ফেলেছি। এরপর শুরু হয় আসল জার্নি।

আমি দিদিকে বেশ কয়েকটি ফটো ইডিট করে দিই। কয়েকদিন পড় দেখি দিদি সেই ফটো গুলিই ডিপি দিয়েছে। বাঃ বেশ ভালই এগিয়ে যাচ্ছি। এই কয়েক মাসেই দিদির অনেকটা কাছাকাছি চলে এসেছি। তবে আমার ভালো লাগার কথা কিন্তু এখনও জানাইনি। কারণ ক্রাশ হলেও বয়সে দুই বছরের বড়।

সিনিয়রের সাথে প্রেমের গল্প সুন্দর প্রেমের কাহিনী
সিনিয়রের সাথে প্রেমের গল্প সুন্দর প্রেমের কাহিনী

শনিবার ছিল, স্কুল তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে গিয়েছিল। বাড়ি ফিরে কিছুক্ষণ পড় সাইকেলটা নিয়ে রাস্তায় বেড়িয়েছি। পেছন থেকে কে যেন ডাকল, আওয়াজটা অনেকটা চেনা। পিছন ফিরে দেখি, আমার ক্রাশ দিদি। আমাকে জিজ্ঞাসা করল আমি কোথায় যাচ্ছি। আমি এমনিই বলে ফেললাম পার্কে যাব একটু সময় কাঁটাতে। দিদিও আমার সঙ্গে যেতে চাইল। আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে। সেই আনন্দ অনেকটাই চুপসে গেল, যখন দিদি আমার সাইকেলে উঠল, কারণ আমি কোনোদিন দুইজনকে নিয়ে সাইকেল চালাইনি।

পার্কে পৌঁছে দিদির সঙ্গে বেশ গল্প জমে গেল। দিদির অতীতের অনেক ঘটনাই শুনলাম। আমার সম্পর্কে তেমন কিছু বললাম না। পকেট থেকে মোবাইলটা বেড় করে দিদির সঙ্গে একটা সেলফি নিয়ে নিলাম। কারণ আমার বন্ধুদের তো কাল আবার জ্বালাতে হবে!

এরপর প্রায়ই দিদির সাথে পার্কে গেছি। তবে তাকে কখনো আমার ভালোলাগার কথা বলার সাহস পাইনি। কারণ এরপর যদি আমার সঙ্গে কথা বলাই বন্ধ করে দেয়! এরপর চলে এল পরীক্ষার চাপ। আমিও একটু ব্যস্ত হয়ে গেলাম। দিদির সঙ্গে আর তেমন কথা হয়না। কারণ তারও সামনে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা।

কয়েকমাস পড় আমাদের পরীক্ষা শেষ। আবার আবার সেই আগের মতই কথা বলা শুরু করলাম। একদিন দিদি আবার সেই পার্কে যাওয়ার কথা বলে। আমরা বেড়িয়ে পড়ি। আমি ঠিক করি, আমার মনের সুপ্ত কথা আজ প্রকাশ করব। কিন্তু দিদির মুখের কথা শুনে আমার সাইকেলের গতি কমে গেল। যেন আর শক্তিই পাচ্ছিনা, এমন অবস্থা। দিদি বলল- “আজ আমি তোমাকে আমার প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করাব।“ প্রেমিক! আমি অবাক হয়ে যাই। পার্কে গিয়ে এক ছেলের সঙ্গে দিদি আমাকে পরিচয় করিয়ে দিল।

এরপর জানতে পাড়ি, ছোট বেলা থেকেই সেই ছেলেটির সাথে নাকি দিদি বাগদত্তা। তাদের পরিবার ছোট বেলাতেই ঠিক করে নিয়েছে, যে বড় হয়ে তাদের বিবাহ দিয়ে দেবে। কিছুক্ষণ পড় যখন বাড়ি ফেরার সময় হল তখন আমার মনে আর আগের মত উৎসাহ নেই। কারণ আমার ক্রাশ আমার সামনে দিয়েই অন্য কারও হাত ধরে চলে যাবে, এটা কি মানা যায়?

না বলা প্রেমের গল্প। সুন্দর প্রেমের গল্প।
না বলা প্রেমের গল্প। সুন্দর প্রেমের গল্প। image
<

আসার সময় দিদি রাস্তাতে অনেক কথাই বলছিল। কিন্তু সেদিকে আমার বিন্দুমাত্র ধ্যান নেই। আমার অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, কোথা থেকে কি হয়ে গেল কিছুই মাথায় ঢুকছিল না। এরপরই দিদির প্রতি সময় দেওয়ার থেকে পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ দেওয়াটাই আমি উত্তম মনে করি। সবকিছু বয়সের দোষ ভেবে নিয়ে পড়াশোনায় মনযোগী হই। তবে কথা বলা যে, একদম বন্ধ করে দিয়েছিলাম তা নয়। কথা হত ঠিকই তবে একদম লিমিটেড।

পড়ে দিদি বুঝতেও পেড়েছিল, কিন্তু আমাকে কিছু জানায়নি। যার উপর আমি একসময় ক্রাশ খেয়েছিলাম, আজ ছয় বছর পড়, তারই কাছে ভাইফোঁটা নেওয়ার জন্য যাচ্ছি। কারণ এই বছরেই দিদির বিবাহ হয়ে গেছে তার সেই ছোটবেলার সঙ্গীর সাথে।  

সিনিয়রের সাথে প্রেমের গল্প। সিনিয়র আপু যখন ক্রাশ। না বলা প্রেমের গল্প।সুন্দর প্রেমের গল্প

Spread the love

Leave a Reply