কোন কল্পনার দুনিয়ার নয়, আজ দুটি বাস্তব শিক্ষনীয় গল্প থেকে বাস্তব জীবনের কিছু বার্তা থাকছে। গল্প সম্পর্কিত মতামত কমেন্টে জানাতে পারেন।।
বাস্তব শিক্ষনীয় গল্পঃ- ০১
বল্লভ পুর গ্রামে নিতাই তার বাবার সঙ্গে বাস করত। তাদের আর্থিক অবস্থা বেশ ভালো ছিল। তা আর হবে নাই বা কেন, নিতাই এর বাবা নিজের হাতে সব পরিচালনা করছেন যে। তিনি আবার খুব হিসেবি। এভাবেই কাটছিল দিন। নিতায়ের বিয়ে হল সন্তান সন্ততি হল। আবার ওদিকে ধীরে ধীরে নিতায়ের বাবা বার্ধক্য জনিত কারণে শয্যাশায়ী।
মৃত্যু পথ যাত্রী নিতায়ের বাবা নিতাই কে কাছে ডেকে বললেন- “দেখ বাবা নিতাই, তুইই মোর একমাত্র ভরসা রে বাবা। তুই তো জানিস বাপ আমি তোহাকে কত্ত ভালবাসি। এই বিশাল সম্পত্তি যে এখন তোহাকেই দেখিতে হবেক বাপ। শোন বাপ, জীবনে হিসেবি হবি তবে কার্পণ্যতা করবি না। ছায়ায় ছায়ায় বাজারে যাবি আর গোটা গোটা মাছ খাবি।“ এই বলে নিতায়ের বাবা স্বর্গ গামী হন।
ওদিকে নিতাই বাবার কথা রক্ষায় বদ্ধ পরিকর। তার বাবার বলে যাওয়া শেষ কথা গুলি সর্বদা তার কানে বাজত- ‘ছায়ায় ছায়ায় বাজারে যাবি আর গোটা গোটা মাছ খাবি।‘
কিন্তু ছায়ায় ছায়ায় বাজারে যেতে গেলে তো বাজার থেকে বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা জুড়ে লম্বা টিনের চালা দিতে হবে। কিন্তু তার কাছে তো এত্ত টাকা নেই যে সে এত লম্বা চালা দিবে। তাই সে বাপের সম্পত্তি কিছুটা বিক্রি করে তা দিয়ে তার বাড়ি থেকে বাজার পর্যন্ত একটি লম্বা টিনের চালা বানিয়ে নেয়।
মানুষ জন নিতায়ের কাণ্ড কারখানা দেখে অবাক।
বাবার একটি কথা নিতাই পুরন করেছে ভেবে সে খুব খুশি হয়। অন্যদিকে তার বাবার আরেকটা ইচ্ছে হল ছেলে যেন প্রতিদিন গোটা গোটা মাছ খায়। তাই সে বাবার কথামত বাজারে গিয়ে প্রতিদিন গোটা গোটা মাছ, রুই, কাতলা ইত্যাদি কিনে নিয়ে এসে খাওয়া শুরু করে। ওদিকে এভাবে প্রতিদিন তার আয়ের তুলনায় ব্যয় বারতে থাকে।
মাত্র তিন বছরের মাথায় বাবার সব সম্পত্তি শেষ করে নিতাই পথে বসেছে। ওদিকে সে তার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে- “বাবা কি এমন উপদেশ দিলে তুমি, তোমার কথা রাখতে গিয়ে আজ আমি পথে বসেছি। তুমি বললে ছায়ায় ছায়ায় বাজারে যাবে, গোটা গোটা মাছ খাবে আর তা করতে গিয়ে আমি আজ শেষ।“
সেদিন রাতেই নিতাইয়ের বাবা তাকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে বলল- “বাপ রে বয়সে বেড়েছিস বুদ্ধিতে বারিস নি। তোহাকে আমি বলেছিলাম, ছায়ায় ছায়ায় বাজারে যাবি, অর্থাৎ ছাতা মাথায় করে বাজারে যাবি যেন রোদে তুই কষ্ট না পাস। কিন্তু তা না করে তুই বাজার পর্যন্ত টিনের চালা তুলে দিলি বঠে!
পড়ুনঃ- জীবন বদলে দেওয়ার মত একটি শিক্ষণীয় গল্প
তোহারে আমি কয়েছিলাম গোটা গোটা মাছ খেতে, মানে নদী থেকে ছোট ছোট পোনা মাছ এনে খেতে। আর তুই বাপ প্রতিদিন বাজার থেকে গোটা গোটা রুই কাতলা নিয়ে এসে খাওয়া শুরু করলি! এরকম করলে এই বিশাল সম্পত্তি আর কতদিন! সাধারণ একটি কথা তুমি বুঝতে পারনি আর এই সম্পত্তির দায়িত্ব আর গুরুত্ব বোঝার ক্ষমতা কি তোহার আছে! এই ছিল তোহার ঘটে, তাই সেটাই হয়েছে।।
সম্পত্তি হোক বা প্রেম, আপনি যদি সঠিক দূরদর্শিতা না দেখান, কিছু কথা না বোঝেও বুঝে নেওয়ার ভান করেন, তাহলে পরবর্তীতে আপনার জীবনে সমস্যা আসবেই আসবে।
পড়ুনঃ- দারুণ শিক্ষণীয় গল্প
গল্প থেকে শিক্ষাঃ- ০২
অনিকেত ছেলেটা দারুণ রকমের দুরন্ত। সে শুধু দুরন্ত নয়, তার নানান কার্যকলাপে পুরো পাড়া কে মাথায় করে রাখত সে। সেই এতটাই মারকুটে যে কেউই তার সাথে মুখ লাগাতে যায় না। তার সাথে লাগা আর খাল কেটে কুমির নিয়ে আসা একই ব্যাপার। সকালে ঘুম থেকে উঠেই তার প্রথম কাজ হল, যে সমস্ত প্রতিবেশি রা তখনও ঘুম থেকে উঠেনি তাদের বাড়ির ভিতরে চকোলেট বোম ফাটিয়ে দেওয়া, টিনের ছাদে পাথর ঢিল মারা ইত্যাদি ইত্যাদি।
তার বাবা থাকে সুদুর মুম্বাইয়ে, তাই অনিকেত ও ছাড়া গরুর মত ঘুরে বেড়াচ্ছে, আর যার ধান পাচ্ছে ছড়িয়ে দিচ্ছে। তার মা তার সঙ্গে পেরে উঠে না।
এইভাবে সকাল সকাল প্রতিবেশি দের বিরক্ত করার পর তার কাজ হল, মেয়েরা যেই পথ ধরে স্কুলে যায় সেই পথে আড়ি পেতে বসে থাকা। মেয়ে দেখলেই নানান বাজে ঈশারা আর নানান অসভ্য কথার শ্রী ছড়িয়ে দিত সে।
আর এইভাবেই তার সকাল শুরু হত আর সারাদিন এই সব অসভ্যতামি করে রাত দশটা এগারো টা নাগাদ বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মেরে বাড়িতে পা ফেলত এই ‘মহান’ ছেলেটি।
একদিন অনিকেত বিকেলে সাইকেল নিয়ে কোথায় যেন যাচ্ছিল, সে রাস্তার মাঝ দিয়ে সাইকেল চালাচ্ছিল। এদিকে যারা তাকে চেনে তারা অনিকেতের সঙ্গে না লেগে সাইড দিয়ে চলে যেতে থাকে।
একজন ব্যক্তি বাইক নিয়ে আসছিলেন, তা দেখে অনিকেত কখনো ডান সাইডে কখনো বাম সাইডে সাইকেল চালাতে থাকে আর সেই আরোহীকে বারংবার এগিয়ে যেতে বাঁধা দিচ্ছিল। সেই বাইক আরোহীর হর্ন কোন কাজে আসছিল না। একসময় হর্নের শব্দে বিরক্ত হয়ে অনিকেত সাইড দিয়ে দেয় এবং সেই আরোহীর উদ্দেশ্যে খুবই বাজে এক শব্দ বলে।
আরোহী টি সেই শব্দ শুনে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে থেমে যায়। অনিকেত তো এটাই চেয়েছিল, সে যেন আরোহীর সাথে একটু চিল করতে পারে। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে, আরোহী টি তার কাছে এসে ব্যাগ থেকে একটি দামী ক্যাটবেরি বের করে অনিকেত কে দিয়ে বলল- “ বাবু, এই সব কথা বলতে আছে! তুমি দেখতে এত্ত সুন্দর কিন্তু তোমার মুখ নিঃসৃত কথা গুলি এরকম কটু হলে কিভাবে তোমার মুখের শ্রী বজায় থাকে বল তো। এরকম কথা বলতে হয় না বাবু, এরকম কথা তোমার মুখে মানায় না।“
পড়ুনঃ- ভাই- বোনের ভালবাসা
এরপর আরোহীটি সেখান থেকে চলে যায়, অন্যদিকে অনিকেত সেই আরোহীর কথার একটিও উত্তর দিতে পারল না। আরোহীটির কথা গুলি অনিকেতের গায়ে যেন একটা শিহরণ বইয়ে দিয়ে গেল।
কিন্তু অনিকেত সহজে শোধরাবার নয়। সেদিনই স্কুল ছুটির সময় মেয়েরা বাড়ি ফিরছিল। এবারেও সে মেয়েদের দেখে নানান ইঙ্গিত আর নানান কটূক্তি করতে থাকে। মেয়েদের ভীরের মধ্যে থেকে একজন মেয়ে সাইকেল রেখে অনিকেতের দিকে চলে এল। অনিকেত কিছু বলার আগেই মেয়েটা বলতে শুরু করল-
“তোমার মা, মানে আমার মা। তোমার বোন মানে আমারও বোন। এই যে তুমি আমাদের নিয়ে এরকম বাজে বাজে কথা বলছ, আজ বাড়ি গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে এই কথা গুলিই আবার বলবে নিজের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখবে তো কেমন লাগে তোমাকে। বিশ্বাস কর, তুমি যদি মানুষ হও তোমার খারাপ লাগবে। এই যে তুমি এভাবে মেয়েদের নিয়ে বাজে কথা বলছ, তোমার মাও তো একজন মেয়ে তোমার মাকে নিয়ে কেউ যখন কটূক্তি করবে হজম করতে পারবে তো? যদি পশু হও তাহলে অবশ্য হজম করতে পারবে। কিন্তু আমি জানি তুমি পশু না। নিজেকে শোধরাও। নবরূপে নিজেকে সবার সামনে তুলে ধর। মানুষ তোমাকে দেখলেই তোমার প্রতি একটা খারাপ ছবি তার মনে গঠিত হয়ে যায়। কিন্তু একবার ভাব তো এর বিপরীত টা হলে কেমন হয়?”
এই বলে মেয়েটা সেখান থেকে চলে যায়। তার মনে হতে থাকে, সত্যি কি তাহলে সে খুব বাজে! মানুষ তাকে ভয় পায় এটা কি তবে তার ভুল ভাবনা! সে বুঝে যায়, মানুষ তাকে ভয় করে না, মানুষ তাকে কু নজরে দেখে।
আশ্চর্য জনক ভাবে এই দুইটি ঘটনা অনিকেতের জীবনে নতুন আরেকটি অধ্যায় যোগ করেছিল। আর এই নতুন অধ্যায় থেকেই আরেকটি নতুন অনিকেতের জন্ম।
মানুষ ‘মানুষ’ বলে গন্য হবে সেদিনই যেদিন রাস্তায় একা চলতে থাকা মেয়েটা আপনাকে দেখে সাহস খুঁজে পাবে। প্রতিবেশীরা আপনাকে দেখে গর্ব করবে।
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
পড়ুনঃ- শিক্ষণীয় ছোট ছোট ঘটনা সেরা দুটি প্রেরণা মূলক গল্প
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে-
ফেসবুক Group - গল্প Junction
ফেসবুক- ছাড়পত্র
টেলিগ্রাম- charpatraOfficial
WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
বাস্তব শিক্ষনীয় গল্প। গল্প থেকে শিক্ষা। 2 new bengali real life motivational story
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।