life changing story bangla‘ সুন্দর পোশাক পরিধান করে থাকা ব্যক্তিকে দেখে মুগ্ধ হওয়াটা স্বাভাবিক, কিন্তু সেই so called ‘ভাল মানুষী’ -র আড়ালে থাকা বাস্তব চিত্রটা অনেক সময় আমাদের বোধগম্যতার অধীন হয় না। এরকমই একটি life changing story bangla নিয়েই আজকের এই লেখাটি।

life changing story bangla, মানবিকতার গল্পঃ-

রাইমা দূর থেকে বাস স্ট্যান্ডের দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারল যে সেখানে বসার সিট নেই, তবুও সে এগিয়ে গেল। 

না একেবারে সিট নেই তা নয় দুটো সিট মাঝখানে খালি। কিন্তু একটা ফাঁকা সিটের পাশে একটা অত্যন্ত বৃদ্ধ ও জঘন্য, নোংরা লোক, বসে বসে সম্ভবত খাবারের প্যাকেট হাতে নিয়ে ঝিমোচ্ছে। 

রাইমার গা ঘিন ঘিন করে ওঠে নোংরা লোকটাকে দেখে। সে ঐ ফাঁকা সিটটা ছেড়ে, অন্য ফাঁকা সিটটাতে বসে একটা সুন্দর, হ্যান্ডসাম ছেলের পাশে। 

বাসের অপেক্ষায় আছে সেখানে সব যাত্রীই, কিন্তু নোংরা ভিখিরি লোকটা এই বাস-স্টপে বসে বসে কি করছে বুঝতে পারে না রাইমা। যাই হোক লোকটা কে দেখে তার ভীষণ বাজে অনুভূতি হচ্ছে। ‘উফ! যতসব ভিখারীর দল! এত নোংরা তার উপর যে কি বলবো! ওর পাশে ঐ মেয়েটা বসে আছে কি করে?’  

life changing story bangla
life changing story bangla

হ্যাঁ ঐ নোংরা লোকটার পাশের সিটেই একটি মেয়ে বসেছিল আর লোকটার প্রতি মেয়েটার যেন খুব গভীর শ্রদ্ধা, সম্মান। 

বেশ অনেকটা সময় কেটে গেছে। বাসস্টপ থেকে অনেক যাত্রী উঠে গেছে বাসে, আবার নতুন যাত্রীরা অপেক্ষা করতে এসেছে। যাই হোক এভাবে করতে করতে মেয়েটা লোকটাকে বলে ওঠে, “আপনি অনেক ক্লান্ত, আপনি বরং এখন বাড়ি যান আমিই না হয় ওদের দিয়ে দেবো।”

-“না না তা কি করে হয়, ওরা আমার জন্য অপেক্ষা করে রোজ, আজ না হয় আমিই অপেক্ষা করলাম।”  

লোকটার কন্ঠস্বর শুনতে পায় রাইমা। আর লোকটার সাথে ওর পাশে বসা মেয়েটার কথোপকথনও ভালোই খেয়াল করে । 

পড়ুনঃ- দুটি নতুন মোটিভেশনাল গল্প

সমাজে বাইরে থেকে চাকচিক্যময় সমস্ত লোকজনের কেউই ওই নোংরা লোকটার পাশে, সিট ফাঁকা থাকলেও বসতে চায় না। কারণ যে লোকটাকে বাইরে থেকে দেখলেই গা ঘিন ঘিন করে ওঠে তার পাশে বসা কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের কাজ নয়। 

বাসের অপেক্ষায় আধঘন্টা ধরে বসে আছে রাইমা। বাস আসছে না কেন এখনো? অত্যন্ত অধৈর্য, বিরক্ত হয়ে ওঠে সে। পাশে বসে থাকা সেই ছেলেটাকে কাকে যেন ফোনে বলতে শোনে , “হ্যাঁ আমি রিলিফ ফান্ডে সমস্ত টাকাপয়সা দিয়ে এসেছি আর চ্যারিটেবল সোসাইটির জন্যও যা ব্যবস্থা করার কথা ছিল তা হয়ে গেছে। নিশ্চিন্তে থাকতে পারো।”  

এতটা শোনার পর রাইমা মনে মনে ভাবে, তার মানে ছেলেটা সমাজসেবক। ওয়াও! দারুণ ব্যাপার তো। মানুষের সেবা করা তো মানুষেরই ধর্ম। বাঃ ছেলেটা কে তো তার কাজের জন্য সাধুবাদ জানানো উচিত। রাইমা তাই নিজেই কিছুক্ষণ পর বলে ওঠে, “আপনি কি সোশাল ওয়ার্কার?” 

জীবনে বদলে দেওয়ার মত একটি শিক্ষণীয় গল্প
জীবনে বদলে দেওয়ার মত একটি শিক্ষণীয় গল্প

ছেলেটা হেসে বলে, “হ্যাঁ।”

-“তা কি কি করেন আপনি?”  

“দুঃস্থ মানুষ আর শিশুদের পাশে দাঁড়াই, যতটা সম্ভব ওদের সাহায্য করার চেষ্টা করি…।” ইত্যাদি আরো অনেক অমৃতবাণী বলতে শুরু করে ছেলেটি আর রাইমা মুগ্ধ হয়ে শোনে। 

এরপর হঠাৎ করে কয়েকটা গরীব বাচ্চা ছেলে মেয়ে হুড়মুড় করে ছুটে আসে বাস স্ট্যান্ডে আর দুই একজন বাচ্চা রাইমার সাথে কথোপকথনরত ছেলেটার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে কিছু খাবারের আশায়। 

নোংরা হাত, মা, ধূলিমলিন গা তাদের। অসম্ভব খারাপ দেখতে আর অত্যন্ত গা ঘিনঘিনে। ছেলেটা ঘেন্নায় উঠে পড়ে। নিজের সুন্দর শার্ট ওই ভিখারী বাচ্চাদের দাপটে নষ্ট হলো দেখে। সে খুব রেগে গিয়ে বলে, “কোত্থেকে আসিস তোরা, দূর হ এখান থেকে!” 

রাইমা অবাক হয়ে দেখে বাচ্চাগুলো এবার পূর্বে দেখা সেই গা ঘিনঘিনে লোকটার কাছে যায় আর লোকটা তাদের সস্নেহে বুকে জড়িয়ে ধরে। আর তার হাতে থাকা একটা প্যাকেট যেটা রাইমা খাবারের প্যাকেট ভেবেছিল, হ্যাঁ ওটা সত্যি সত্যিই খাবারের প্যাকেট ছিল আর সে সেই প্যাকেট থেকে নির্দিষ্ট ভাগে ভাগে রাখা খাবার দিয়ে দেয় প্রতিটা বাচ্চা কে। আর হেসে বলে, “যা বাছারা তোরা আজ যা , আমি আবার কাল আসব কেমন!”   

পড়ুনঃ- সুন্দর শিক্ষণীয় গল্প 

“আচ্ছা দাদু।” বাচ্চারা তাদের নিষ্পাপ ভালবাসায় মুড়িয়ে দেয় বৃদ্ধ , নোংরা লোকটিকে। 

বাচ্চাগুলো অনেক আনন্দ পেতে পেতে চলে যাওয়ার আগে বলে, “সাবধানে যেও দাদু আর কাল আবার এসো কিন্তু।”  

“হ্যাঁ বাছারা আসব আমি।”  

বাচ্চাগুলো খুশি মনে চলে যায় আর রাইমার চোখ খুলে দিয়ে যায়। হ্যাঁ চোখ তো খোলাই ছিল তাই তো গোটা ঘটনাটা দেখতে পেল। কিন্তু চোখের উপর একটা ভেজাল ছানি ছিল তাই ভুলটা কে ঠিক আর ঠিকটাকে ভুল হিসেবে দেখত। রাইমা যখন হা করে দেখছে তখন লোকটার পাশে যেই মেয়েটা বসেছিল সে এগিয়ে এসে বলে, কি, অবাক হচ্ছেন দেখে! 

রাইমার সম্বিত ফেরে মেয়েটার কথায়। 

মেয়েটা বলে, “খুব ঘৃণা লাগছিল লোকটাকে দেখে তাই বসলেন না তার পাশের সিটে। বসলেন ঐ ছেলেটার পাশে, যাকে এতক্ষণ ধরে মানব সেবক ভাবার পরে দেখলেন যে মানব সেবক তো নয়ই বরং সুশিক্ষায় একজন মানুষই হয়ে উঠতে পারেননি তার পাশে, কি ঠিক বললাম তো!”

মেয়েটার গলায় অবজ্ঞার আভাস পায় রাইমা। কোনোরকমে বলে , “না ঠিক তা নয়, আমি এমনিই এখানে…”  

মানবিকতার গল্প
মানবিকতার গল্প
<

রাইমার কথা শেষ করতে না দিয়ে মেয়েটা বলে ওঠে, “যদি ‘চকচক করলেই সোনা হয় না’ আর ‘Don’t judge a book by it’s cover’ এই-দুটো কথা ঠিক ঠাক ভাবে গ্ৰহণ করতে পারেন তাহলেই বুঝবেন আপনার ভাবা মানব সেবক আর আমার পাশে বসা ওই বৃদ্ধ লোকটার মধ্যে পার্থক্য কোথায়। যারা সত্যিকার মানুষ হয় না, তারা কখনো মুখে বলে বলে বেড়ায় না যে সে মানুষ। সে তার অন্তরের শক্তি দিয়ে বাইরের সবকিছুকে আলোকিত করার চেষ্টা করে আর তাতেই খুঁজে পায় অনাবিল আনন্দ। 

কিন্তু যারা ভেতরে ফাঁপা, তারাই বলে বেড়ায়, ‘আমি এই, আমি সেই, আমি এই করি, আমি সেই করি!’   

বাইরে থেকে তাদের সেই ভদ্র, সুন্দর সাজপোষাক দেখেই যেমন বোঝা যায় না যে মনের ভেতরটা তাদের কীরকম তাহলে একইভাবে যাদের বাইরে থেকে অভাবী, ভিখারীর মতো দেখতে লাগে তাদের কি করে সবদিক থেকে বিচার করে ফেলা যায়, বুঝতে পারি না থেকে থেকে!

আসলে কি জানেন, এখন এমন হয়ে গেছে দিনকাল যে বাইরে স্যুট-বুট পরা লোকজন মানে সে যদি ‘ভাষণ’ দেওয়া চোরও হয় তাহলেও সাধু আর যারা গরীব বেশভূষার মানুষ তারা সবসময়ই অবজ্ঞার তালিকায়।”  

পড়ুনঃ- বাবাকে নিয়ে অসাধারণ একটি শিক্ষণীয় গল্প 

রাইমা নিজের ভুল বুঝতে পারে। আর চুপ করে থেকে কিছুক্ষণ পরে বলে, আপনি ঠিকই বলেছেন। আজ অনেক গুলো ঘটনা দেখার পর সত্যি সত্যি মনে হচ্ছে সত্যিই আমি নিজেও মানুষ হতে পারিনি। রাইমা এগিয়ে যায় বৃদ্ধ লোকটার কাছে আর তার কাছে হাতজোড় করে বলে, “আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমি প্রত্যক্ষ ভাবে আপনাকে অপমান না করলেও পরোক্ষভাবে করেছি। সত্যিই আজকের এই রংচং এর দুনিয়ায়  মানবিকতার উপর রঙের পলেস্তারা পড়ে গেছে সবার। কিন্তু তার মধ্যেও কিছু মানুষ এখনো এমন আছেন যারা রঙের প্রভাবে নিজের মন, মানবিকতার উপর পলেস্তারা পড়তে দেয়নি বরং নিজের মানবিকতা দিয়ে বাকিদের মনের পলেস্তারা গুলো ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করে চলেছে। ক্ষমা করুন আমায়।”  

লোকটি হেসে বলে, “তুমি আমার নাতনির বয়সী, ওরকম করে বোলো না দিদিভাই। আমি কিছু মনে করিনি। আসলে ঐ বাচ্চাগুলো রোজ আসে এখানে পথচারী যাত্রীদের থেকে কিছু খাবারের আশায়। আমি যেদিন দেখলাম তখন থেকে ভাবলাম আমি যদি খাই তাহলে তার কিছুটা না হয় ওদের জন্য থাক। সারারাত জেগে কারখানা পরিষ্কার, ঝাড়া মোছা কাজ করে যেকটা টাকা পাই তাই দিয়ে ওদের খাবার কিনে এনে এখানে বসে থাকি, ক্লান্ত হয়ে থাকি তো, তাই মাঝে মাঝে ঘুম পায় আর কিছুতেই থাকি আর তারপর ওরা এলে ওদের দিয়ে দিই। ওরা আমাকে বড় ভালোবাসে জানো দিদিভাই। ওদের মুখের হাসি দেখে আমি আমার সব পরিশ্রম ভুলে যাই। নিজেও খাই ওদেরও দিই । বড় শান্তি পাই আমি!”  

শিক্ষণীয় গল্প
শিক্ষণীয় গল্প

রাইমার পলেস্তারা গুলো যে খসে পড়ছে তার প্রমাণ তার চোখের জল। সে ঐ ছেলেটার সামনে যায় আর বলে, “আমি আপনাকে মানব-সেবক বলে প্রথমে ভেবেছিলাম আপনার বেশভূষা, আচার, আচরণ ও সর্বোপরি ফোনে কথা গুলো শুনে। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি ওসব কিছুই নয়। মানবতাকে মানবতাই চেনাতে শেখায়। ওসব বেশভূষা বা ইত্যাদি জিনিস তো আপনাকে বাইরে থেকে দেখাবে অনেক কিছু কিন্তু ভেতর থেকে তো আপনি নিজেও জানেন আপনি কি! আজ আমি জীবনের অনেক বড় শিক্ষা পেয়েছি। মানুষকে ‘মানুষ’ বলে সম্মান করা উচিত। বাইরের চাকচিক্য বা মলিনতা দেখে তাকে বিচার করে সম্মান, তোষামোদ বা অসম্মান, অবজ্ঞা করা উচিত নয়।

উনি নোংরা বলে আমি ওনার পাশে না বসে আপনার পাশে বসলাম। কিন্তু সবশেষে দেখলাম বাইরে থেকে যাকে নোংরা লাগছে তার মনটা আসলে আকাশের মতো উদার আর আপনি, যাকে বাইরে থেকে লোকে আকাশকুসুম কত কি ভেবে নেবে তার মনটা কতটা সংকীর্ণ! আমি নিজেও মানুষ ছিলাম না তাই মানুষ চিনতে ভুল করেছি কিন্তু এই মুহূর্তে আমি ‘মানুষ’ তাই আপনাকেও সাজেস্ট করব বড় বড় কথা না বলে, বড় কাজ করে বড় মানুষ হওয়ার চেষ্টা করুন। ‘মানবিক মানুষ’। স্বামী বিবেকানন্দ তো বলেই গেছেন, “বড়লোক হয়ো না, বড়োমানুষ হও!”   

সুস্মিতা গোস্বামী

গল্পের ধনাত্মক ভাবনায়-
© copyright লেখিকার পক্ষে, ছাড়পত্রের অ্যাডমিন কর্তৃক সংরক্ষিত। গল্পের অন্যত্র প্রকাশ দণ্ডনীয়। ছাড়পত্র উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য হবে।
সুস্মিতার আরও কিছু গল্প- 

বাস্তবিক গল্প- আত্মহত্যা 

ভূত সমাজের প্রেম 

জীবনে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প 
এক ক্লিকেই ছাড়পত্রের সমস্ত আপডেটের জন্য- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
Spread the love

Leave a Reply