ভালোবাসার বিচ্ছেদের গল্প কেউ একজন বলেছিল ‘যে ভালোবাসায় বিচ্ছেদ নেই, সেই ভালোবাসার গভীরতাও নেইবিচ্ছেদ তারপর আবার একে অপরের অনুপস্থিতিকে অনুভব করা, এই তো ভালোবাসা…।‘ দূরে সরে গিয়েও প্রেমিক/ প্রেমিকার প্রতি হৃদয়ের টান অনুভূত হওয়া ভালোবাসা গুলিই হয়ত সার্থক ভালোবাসা।

ভালোবাসার বিচ্ছেদের গল্পঃ-

অনি আর সুমি দুজন দুজনের বিপরীত দিকে মুখ ফিরিয়ে আস্তে আস্তে চলে যাচ্ছে। হ্যাঁ তাদের বিচ্ছেদ হয়ে গেল আজ। কিন্তু এটা কি সত্যিই বিচ্ছেদ! দুজনের মনই বলছে, ও একটিবার যদি বলে, “কোথায় যাচ্ছো আমাকে ছেড়ে, যেও না দাঁড়াও” তো আর যাওয়া নয়, বরাবরের জন্য থেকে যাওয়া শুধু…। 

কিন্তু কেউই কারোর দিকে ফিরল না “ও বলবে” এই ভেবে, এই অভিমান রেখে। শেষপর্যন্ত কারোরই বলা হলো না, “তুমি যেও না দাঁড়াও!”

সম্পর্ক টা খুব অদ্ভুত ভাবেই যেমন শুরু হয়েছিল, শেষটাও খুব অদ্ভুত ভাবেই হলো। পুরোনো সমস্ত স্মৃতি গুলো চোখের সামনে ভেসে ওঠে। 

ভালোবাসার বিচ্ছেদের গল্প
ভালোবাসার বিচ্ছেদের গল্প

সেই যে প্রথম দেখা হওয়া, সেই যে অনির প্রথম বলা কথা, “তোমার কথা কেন জানিনা সবসময় মনে পড়ে। বইয়ের পাতায় তোমাকেই দেখছি।” 

সুমি রাগত স্বরে বলেছিল সেদিন, “এইসব একদম না, সামনে পরীক্ষা, মন দিয়ে পড়াশোনা করো।”

অনি শুধু হাসিটাই ফেরত দিয়েছিল সুমির উত্তরে।  

প্রেম করার থেকেও, প্রেমে পড়ার অনুভূতিটা বেশি সুন্দর হয়। কাউকে বলতে না পেরেও দিনের পর দিন ভালোবেসে যাওয়া একটা আলাদাই অনুভূতি!  

সম্পর্কটা শুরু হওয়া নিয়ে সুমির খুব আপত্তি ছিল। সে বারবার বলেছিল যে বন্ধু হয়ে থাকতে। অনি বন্ধু হিসেবে নিজেকে স্বীকার করতে চাইলেও ধীরে ধীরে ভালোবেসেই ফেলে সুমি কে। 

সুমির যে বুঝতে খুব অসুবিধা হয়েছিল তা নয়, আর সম্পর্ক নিয়ে আপত্তি ছিল বলেই অনির কিছু আচরণ, তার জন্য অপেক্ষা করা ইত্যাদি কে খুব একটা বেশি পাত্তা দিত না সুমি । 

কিন্তু সুমিও যখন নাছোড়বান্দা ও ধৈর্য্যশীল অনির না বলা ভালোবাসার কাছে হার স্বীকার করে তখন সে অনির উদ্দেশ্যে উত্তর হিসেবে খুব সাহস করে একটা গান গায়, “আরে hi, কিছু কথা ছিল মাথায়! “

পড়ুনঃ- অপরিপূর্ণ ফেসবুকের প্রেম 

অনি তখন হেসে সুমির নাক মলে দিয়ে বলে, তোমার আমাকে পছন্দ অথচ আমাকে…!

হ্যাঁ হ্যাঁ আমি তোমাকে ভালবাসি পাগলী। চলো , শুরু করি আমরা দুজনে একসাথে আমাদের দুজনের সফর। 

দুজনেই কলেজ পড়ুয়া। পড়াশোনাতে অসম্ভব ভালো অনি ও সুমি দুজনেই । তার মতে, রিলেশনশিপ এ থেকেও কেরিয়ার করা যায়।

সুমি বলে, কীভাবে, প্রেমে পড়লে তখন তো বইয়ের পড়ার থেকে তার কথা গুলো ভালো মনে পড়ে। 

অনি হো হো করে হেসে বলেছিল, আরে পাগলী, supportive partner মানে কি জানো, যে তোমাকে সত্যিকার  ভালোবাসবে সে সবসময় তোমার স্বপ্ন পূরণে তোমার পাশে থাকবে, তোমাকে সাহায্য করবে। 

-যারা বলে প্রেম করলে বা ভালোবাসলে কেরিয়ার হয় না তারা ভুল বলে, অবশ্য সবার ক্ষেত্রে যে এই কথাটা ঠিক তাও নয়। কাদের ক্ষেত্রে ঠিক নয় বলোতো , দেখো তোমার ভালোবাসার মানুষ যদি তোমার স্বপ্ন পূরণের লড়াই এর সময় পাশেই না থাকে, উৎসাহ ই না দেয় তাহলে আর কীসের ভালোবাসা হলো! 

-আচ্ছা তাই নাকি! 

-হুম সুমি, একদম ই তাই। আর আমি তোমার মধ্যে সেটা দেখেছি তাই কোনোদিন মনেও আনবে না যে তোমার কারণে আমার পড়াশোনা নষ্ট হয়। তোমার স্বপ্নপূরণেও আমি থাকবো তোমার পাশে। 

সুমি হাসে অনির কাঁধে মাথা রেখে। দুজনেই দুজনের মনের মতো কাউকে পেয়েছে। সুমি রিলেশনশিপ এ আসতে যতটা কঠিন ছিল আস্তে আস্তে সেই অনেক নরম হয়ে যায়, অনির চেয়েও। 

ভালোবাসার বড় গল্প
ভালোবাসার বড় গল্প

পড়াশোনার বিষয় নিয়ে একে অপরের থেকে শেখা, জানা সব হয়। জ্ঞানী দের মতো তর্ক হয় দুজনের। আবার বাচ্চাদের মতো ঝগড়া। নেশা করা যাবে না, খারাপ কিছু দেখা চলবে না, খারাপ কথা বলা যাবে না , উল্টো পাল্টা কাজ করা যাবে না ও সর্বোপরি কোনো মেয়েদের সাথে বেশি কথা বলা যাবে না দরকার ছাড়া – সুমির দেওয়া এমন কয়েকটা নিষেধাজ্ঞা ছিল অনির উপর।

অনি দুই হাত মেলে বলেছিল, না ম্যাডাম আমি কোয়েড স্কুলে পড়লেও মেয়েদের থেকে বহু দূরে দূরে থাকতাম। কেন জানি না মেয়েদের বড় ভয় পেতাম। 

হি হি হি করে ওঠে সুমি।  

-আর নেশা করা, খারাপ কিছু দেখা, বলা, শোনা বা করা দেখেও আমি বহু যোজন দূরে। আপনি দেখতেই পাবেন ম্যাডাম !

-তা মেয়েদের ভয় পাওয়া ছেলের আমাকে পছন্দ হলো কি ভাবে? সুমি গোয়েন্দার মতো বলে ।

-সাদাজাদু করেছ মনে হয়! 

-সাদাজাদু! সাদাজাদু আবার কি? 

-কালোজাদু মানুষের ক্ষতি করে ওটা ঘৃণার প্রতীক, মৃত্যুর প্রতীক। আর আমার অভিধানে এর বিপরীত জাদু হলো সাদাজাদু, যেটা মানুষের ভালো করে, যেটা ভালোবাসার প্রতীক। 

পড়ুনঃ- আমার সফল প্রেমের গল্প 

-বাপরে এত আমার মাথায় আসে না গো। 

-তুমি পিচ্চি মেয়ে, পিচ্চিদের মাথায় অত কিছু আসতে নেই।  

-আচ্ছা আমি পিচ্চি, বুঝলাম! গাল ফুলিয়ে বলে সুমি। 

-তো পিচ্চি না তো কি তুমি! কতবার আকার ইঙ্গিতে বোঝাচ্ছি, পাগলী আমি তোমাকে ভালবাসি, তুমি সেই ঘুরে ফিরে বন্ধু হতে বলছ। তা তুমি পিচ্চি না তো আমি পিচ্চি? কম নাজেহাল করেছ আমায় তুমি, উফ, বাপরে কি মেয়ে ছিলে তুমি!  

সুমি হি হি করে হেসে ওঠে আবার।

অনি পেছন ফিরে তাকালো একবার ছলছল চোখ নিয়ে, চোখ দুটো উল্টো দিকে চলন্ত সুমি কে বলছে, সুমি কোথায় যাচ্ছো তুমি, যেও না আমাকে ছেড়ে। আমি তোমাকে অনেক  ভালবাসি , তুমি আমাকে দাঁড়াতে না বলে চলে যাচ্ছো কেন? 

bengali sad love story
bengali sad love story বড় গল্প
<

সুমির অন্তর হাহাকার করে ওঠে। সে যে একটু আগেই দেখল অনি আর পেছন ফিরে তাকাচ্ছে না। চলে যাচ্ছে ধীরে ধীরে উল্টো মুখে। মনে মনে একটা নীরবতার চিৎকার, যেও না অনি আমাকে ছেড়ে, আমরা যে একসাথে পথ চলব কথা দিয়েছিলাম, কেন চলে যাচ্ছো আমাকে ছেড়ে?

-এইটা ভুল করেছ তুমি পাগল! আবার করো। মিষ্টি একটা শাসন ছুঁড়ে দেয় সুমি অনির দিকে। মনটা কোথায় থাকে তোমার, এত ভুল করলে হবে? সোজা গ্ৰামার গুলো ভুল করছ! ভেরি ব্যাড। 

-কি আর করি বলো শয়তান, তুমি তো আমার মনটাকে নিজের কাছে আটকে রেখে দিয়েছ, আমি কি করব! অনি শান্ত ভাবে বলে।

-তোমাকে মারব আমি এবার বলে দিলাম! 

-মারবে তাও আবার পিচ্চি মেয়ে!

-অনি ভাল হচ্ছে না কিন্তু! 

-সুমি হচ্ছে পাগলী, মাথা খারাপ, ইডিয়ট, পেত্নী, শাঁকচুন্নী! 

-অনি!

সুমির মনটা ঠিক সেভাবে কাঁদতে কাঁদতে ডেকে ওঠে ‘অনি!’ বলে। তবে সেদিনের অনি ডাকে ছিল জ্বালাতন থেকে মুক্তি পেতে আর আজকের ডাকটা আবার সেই পুরোনো জ্বালাতনটাতে ফিরে যেতে। বিচ্ছেদে এত কষ্ট হয়, এত যন্ত্রণা হয় তাহলে মানুষ ভালোবাসে কেন? কারণ ভালোবাসাতেও তো প্রচুর কষ্ট! মানুষ যেচে যেচে কেন এই কষ্টকে নিজের সঙ্গী করে। আচ্ছা একটা মজার কথা তো বারবার হাসায় না, তাহলে একটা কষ্ট বারবার কাঁদায় কেন? 

পড়ুনঃ- রাজকুমার ও রাজকুমারীর প্রেম 

জীবনে যাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা হয় সে নাকি ছেড়ে চলে যায় তাহলে দুঃখ কে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা উচিত, কারণ সেও নিশ্চয়ই একদিন চলে যাবে।  

অনি যেতে যেতে বলে, যেতে যেতে এইটা নিজের মনকে জিজ্ঞাসা করে নাও সুমি, তুমি আমাকে ভালোবাসো কিনা? রোজ রাতে অশ্রুবারি ঝরবে সবার আড়ালে, চোখের জলে শুধু তুমি থাকবে। তুমি ছিলে আমার মনে আর তুমিই থাকবে সুমি। নিজের মনকে প্রশ্ন করে জেনে নিও, তোমার চোখে এই প্রতারক আজকেও তোমার কাছে একইরকম ভালোবাসার মানুষ কিনা! 

সুমি বহুদূরে চলে গেছে হাঁটতে হাঁটতে। তার মন কাঁদছে, চোখ থেকে জল পড়তে না পড়তেই আবার ভরে উঠছে চোখ দুটো। ওদের এই সম্পর্ক টা ধরে রাখতে গিয়ে কম অশান্তি তো হয়নি। প্রচুর ভুল বোঝাবুঝি,  একে অপরের থেকে দূরে চলে গিয়ে আবারো ফিরে আসা। পরিবারের কাছে খারাপ হওয়া , একলা কাঁদা আরো কত কি…।

সবাইকে খুশি রাখার লড়াইতে হারিয়ে গিয়েছিল নিজের খুশি। 

ভালোবাসার মানুষের জন্য খুশি থাকতে গিয়ে আস্তে আস্তে কেমন মনে হতে লাগলো আসলে খুশি থাকা নয়, নিজের মনের মৃত্যু কে ডেকে আনতেই মানুষ ভালোবাসে। অথচ বলা হয় ভালোবাসা মানে ভালো থাকা, ভালো রাখা। তাই যদি হয় তাহলে ছেড়ে চলে যাওয়া কেন!

চোখের সামনে ভেসে উঠছে পুরোনো স্মৃতি গুলো, পুরোনো কথা গুলো। সেই হাসিগুলো, সেই চোখে চোখ রাখার মূহুর্ত গুলো। 

শরীরের স্পর্শ ছিল না, ছিল মন দিয়ে মন কে ছোঁয়া। ছিল একে অপরকে হারিয়ে ফেলার ভয়। ছিল লুকিয়ে ফোনে কথা বলার বুক ধড়ফড়ানি এই বুঝি কেউ এসে গেল এই ভেবে। ছিল ‘রাখছি’ না বলে হঠাৎ করেই ফোন কেটে দিয়ে দশ পনেরো বার সরি লেখা আর বলা ‘মা এসে গেছিল’। 

সম্পর্ক টা ভাঙতে শুরু করে সেদিন, যেদিন সুমির পরিবার তাকে জানিয়ে দেয় যে সুমির সাথে অন্য কারোর বিয়ে হবে। তারা কেউই অনির মতো ছেলে কে নিজের মেয়ের যোগ্য মনে করে না। 

পড়ুনঃ- গরীবের প্রেম 

আর উল্টো দিকে অনির মাও ঠিক একই সময়ে অনিকে বলে দেয় অনির পছন্দ করা মেয়েকে তারা কখনোই মেনে নেবে না। আর যদি জেদবশত সে সুমিকে নিজের বউ করে নেয় তো ফল ভালো হবে না। 

সুমি অবশ্য এসবের কিছুই জানত না তবে জানত অনি। তাই সে অনেক চেষ্টা করে সবটুকু কে ঠিক করে ধরে রাখার, কিন্তু ধরা পড়ে যায় সুমির কাছে। সুমি জানতে পারে যে তার কারণে অনিকে অনেক অশান্তির মুখে পড়তে হচ্ছে রোজ দিন। সবদিক সামলে, পড়াশোনা সামলে, সুমির খেয়াল রাখা ধীরে ধীরে কমে যায়। 

অনি ব্যর্থ হচ্ছে দেখে নিজেকে সুমির চোখে ঘৃণ্য করে তোলার কথা ভাবে যাতে সুমি তার থেকে অনেক দূরে চলে যায়। কিন্তু অনি পারছিল না এমনটা করতে। সেও যে সুমিকে ছেড়ে চলে যাবে বলে হাত ধরেনি। অনেক অনেক চেষ্টা করে সে। অনেক বোঝায়, অনেক ধৈর্য্য ধরে থাকে। কিন্তু শেষপর্যন্ত সুমি নিজেই বলে, “আমার জন্য তোমাকে অনেক কষ্ট পেতে হয়েছে আর নয় অনি, আমরা একে অপরের চেয়ে অনেক দূরে চলে যাবো।”

-“না সুমি, তা হয় না। আমি তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারব না। আমি তোমাকে ভালোবেসেছি তোমাকে ছেড়ে চলে যাবো বলে নয়। সারাজীবন তোমার পাশে থাকব, তোমার সাথে থাকব। আমি তোমার ও আমার দুই পরিবারকেই বোঝাবো। হয়ত আমি এখন বেকার, পড়াশোনা করছি তাই এমনটা হচ্ছে সবাই। কিন্তু আমি তো competitive exam এ বসছি, দেখবে ঠিক কিছু একটা হবে। এমনিতেই আমার স্কোর…”  

-“না অনি, আমি সব জেনে গেছি। আমি চাই তুমি ভালো থাকো। আমার কারণে তুমি অনেক কষ্ট পাচ্ছো। আমি জানি তুমি আড়ালে কাঁদো কিন্তু তাও বলবে তুমি ঠিক আছো। আমি তোমাকে চিনি অনি। আমি জানি তুমি তোমার সব স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে। তুমি ভালো ছেলে ও সর্বোপরি একজন ভালো মানুষ। তোমার জন্য সবার ভালো হোক আর সেইটা সফল করতে তোমাকে ভালো থাকতে হবে।”  

-“তোমাকে ছাড়া আমি ভালো থাকবো না সুমি।”

সুমির চোখে জল। অনির কষ্ট দেখে সে নিজের কষ্টটা আর বলে না অনি কে। হ্যাঁ সে আগে এই ব্যাপারে কিছু জানত না আর তাই আজ সে এমন অনেক কিছুই জানে যাতে তাতে সম্পর্ক আর পরিণতি পাওয়া হয়ত সম্ভব নয়।  

-“কাঁদছ কেন সুমি, সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি তো তোমার পাশে আছি আর তুমিও আমার পাশে আছো। আমরা কেউ কাউকে ছেড়ে চলে যাবো না।”  

-“সত্যি বলছ অনি!” এবার কেঁদেই ফেলে সুমি। 

অনি ওর হাত ধরে বলে, “হ্যাঁ সুমি।”  

পড়ুনঃ- ইউনিভার্সিটি লাভ স্টোরি 

এরপর অনেক লড়াই। পরপর পরীক্ষা। দুজনের কথা বলা, দেখা করা কম হয়ে যায়। অনি অক্লান্ত পরিশ্রম ও চেষ্টা করে। সুমিও তাই। 

কিন্তু না হলো না। শেষ হয়ে গেল সবটা। চিরতরে দূরে চলে যেতে হবে কাছে থাকার কথা দিয়ে। হ্যাঁ এটাকেই হয়ত বলে ভালোবাসা। 

অনি শেষদিন এসে একটা কাগজ দেয় সুমির হাতে, যাতে লেখা ছিল, “বিচ্ছেদ মানেই শুধু প্রতারণা নয়। ভালো রাখার বিপরীত পন্থাও হয়। সম্পর্কের সার্থকতা পাওয়াতে নয়, আত্মত্যাগ এর তরেও প্রেম সার্থক হয়! ” 

না অনি বা সুমি কেউই পারল না তাদের সম্পর্ক কে বাঁচিয়ে রাখতে। একটা সত্যিকারের ভালোবাসা শেষ হয়ে গেল। যেখানে স্বার্থ ছিল একটাই, শুধু ভালো রাখার মাধ্যমে ভাল থাকা। 

চোখটা ঝাপসা হয়ে উঠেছে। সুমির হাতে অনির দেওয়া শেষ চিরকুট টা। হঠাৎ করে সামনে একটা গাড়ি চলে আসে আর ধাক্কা মেরে চলে যায় হু হু করে। 

মাথায় চোট পেয়ে অনি! বলে চেঁচিয়ে ওঠে পড়ে যায় সুমি হাতে ওই চিরকুট টা নিয়েই। 

নতুন বিচ্ছেদের গল্প
বিচ্ছেদের গল্প

সকলে ছুটে আসে আর দ্রুত হসপিটালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে।

কিন্তু হসপিটালে পাঠানোর আগেই সুমি ইহলোক ত্যাগ করে। 

 —

৩৫ টা বছর হয়ে গেছে। অনি আজও ভাবে সুমি ভাল আছে ওই আকাশের মাঝে। আজকে সব থাকলেও সুমি যেমন এই পৃথিবীতে নেই তেমন তার পৃথিবীতেও নেই। আকাশের দিকে রোজ তাকিয়ে সবচেয়ে উজ্জ্বল তারাটাকে বলে, “সুমি, তুমি কোথায় আছো? তুমি একা একা চলে যেতে পারো না। কি ভাবো নিজেকে তুমি, আমি তোমাকে ভুলে গেছি! পেত্নী একটা, শয়তান মেয়ে। আমাকে ছেড়ে, আমার সাথে  বিচ্ছেদ করে কোথায় যাবে তুমি শুনি! আমি তোমাকে ভালবাসি সুমি।”

“আমার আজ সব কাজ শেষ। আমার মনে বা জীবনে তুমি ছাড়া আর কেউ নেই সুমি। কাউকে আসতে দিইনি, দেবোওনা। তুমি আমাকে নিয়ে চলো সুমি তুমি যেখানে আছো। তোমার তো একা থাকার কথা নয়। তুমি যার কারণে নীরবে বিচ্ছেদ মেনে নিয়েছিল সেই কারণ তো আমার সফলতা, সবকিছু গুছিয়ে দেওয়া, একজন বেকার ছেলের দায়িত্বশীল হওয়ার জন্য । সুমি সবকিছু হয়েছে কিন্তু তুমি চলে যাবে এমনটা তো কথা ছিল না বলো। তুমি যেই কারণে চলে গেলে সেই কারণকে আমি এতবছর না মরে বেঁচে থেকে পূরণ করেছি। এতগুলো বছর আমি একা থাকতে থাকতে বড় ক্লান্ত। 

আমার সাথে আরো একজনের পথ চলার কথা ছিল কিন্তু তা হয়নি বলে তুমি এভাবে এই এত বড় পৃথিবীতেও আমাকে একা রেখে যেতে পারো না!

কোথায় আছো সুমি। আমি তোমার কাছে যেতে চাই, শুধু… তোমার… কাছে।”

আস্তে আস্তে বুকে কেমন যন্ত্রণা অনুভব করতে করতে বন্ধ হয়ে যায় অনির হৃৎস্পন্দন। তার নিথর দেহ টা পড়ে যাওয়ার আগে একটাই নাম বলেছিল -” সুমি! ” 

সুস্মিতা গোস্বামী

গল্পের ভাবনায়-
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।

গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে। 
পড়ুনঃ- 
মেয়েদের জীবন নিয়ে গল্প- 'স্পর্শ'

অবহেলা থেকে ভালোবাসা 
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

ভালোবাসার বিচ্ছেদের গল্প। বড় গল্প। 1 new bengali sad love story.

Spread the love

Leave a Reply