notun rohosso vuter golpo রহস্যময় একটি চেহারা, সেই রহস্যময় চেহারার ফাঁদে পরে গল্পের মূল চরিত্রের জীবনের তরী মোহনার মুখে…!!

notun rohosso vuter golpo:- “কে ছিল ওটা!”

দিন কে দিন কেমন যেন অস্বাভাবিক আর পাগলের মতো করতে থাকে রিমলি। কেমন যেন খিটখিটে মেজাজেরও হয়ে গেছে সে। সবার থেকে দূরে সরে থাকে, কি যে বিড়বিড় করে একা একা কেউই বুঝতে পারে না কিছু।

তবে রিমলির একটা কথা সঞ্চিতার খুব মনে পড়ে, ও কে, কে ছিল ওটা? শুধু সঞ্চিতা নয়, কেউই কখনো  বুঝতে পারেনি রিমলির “ও কে” র উত্তর। বরং প্রথম প্রথম কোনোরকমে চুপ করালেও পরে সকলে বিরক্ত হতো, তারপর রেগে যাওয়া থেকে রিমলির সমস্ত কথাকেই অবিশ্বাসের তালিকায় ফেলে এড়িয়ে যাওয়া শুরু করে। একটা সময় পর সবাই ধরেই নিলো যে রিমলি পাগল হয়ে গেছে। তাই সে সবসময়ই কাকে যেন দেখতে পায় কিন্তু বাকিরা কখনোই দেখতে পায় না। 

মনে পড়ে সঞ্চিতার, সেদিন বিকেলে সব বন্ধুরা মিলে রিমলির বাড়িতে আড্ডা দিচ্ছে, হঠাৎ করে রিমলি বলে ওঠে, কে কে ওখানে? 

সবাই আড্ডা থেকে মনঃসংযোগ হারিয়ে রিমলির কথায় নজর রেখে বলে, কে রে?কাকে কোথায় দেখছিস? 

notun rohosso vuter golpo
notun rohosso vuter golpo

ওই তো সামনে দাঁড়িয়ে দেখ, ওই তো, বলে তার নিজের  সামনে আঙুল দিয়ে নির্দেশ করে রিমলি।

সবাই হেসে ওঠে ওর কথায়। রজত বলে ওঠে, রিমলির মাথাটা এক্কেবারে গেছে, সস্তার নেশাটেশা শুরু করেছিস নাকি রিমলি! 

রিমলি কে দেখে মনে হলো ও যেন সত্যিই কাউকে দেখতে পাচ্ছে আর এতোটাই দেখতে পাচ্ছে যার ফলে রজতের কথাটা কানেই গেল না। সঞ্চিতার দিকে তাকিয়ে রিমলি বলে, দেখ সঞ্চিতা, তুই দেখতে পাচ্ছিস না, ওকে।  কি রে, তুই দেখতে পাচ্ছিস না, দেখ কীরকম স্পষ্ট একটা অবয়ব, আমি তো পুরো ভালো করে দেখতে পাচ্ছি, তবে পুরুষ না মহিলা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না, পুরো দেহটাই একটা কালো কাপড়ে জড়ানো, দেখ না ভালো করে। 

না, সত্যি বলতে রিমলির বর্ণনা করা অবয়ব কেউই দেখতে পায় না আর পায়ও নি। তবে রিমলি অক্লান্ত হয়ে বলে গেছে সবাইকে যে সত্যি সত্যি কাউকে দেখতে পায়, যে ওকে হাতছানি দেয় মাঝে মাঝে। 

মা বাবা চিন্তিত হয় এসব শুনে। তারা ডাক্তার দেখায়। না, রিমলির শারীরিক সমস্যা নেই তবে মানসিক সমস্যা আছে তাই সাইকিয়াট্রিস্ট দেখানো হলো। ওষুধ লিখে দেন ডাক্তার রিমলির জন্য আর চলে জোর কদমে কাউন্সিলিং। রিমলি এতে অত্যন্ত রেগে গিয়ে বলে, তোমরা সবাই আমার কথা বিশ্বাস না করে আমাকে মানসিক রোগী বানানোর চেষ্টা করছ! আমাকে পাগল ভাবছ, তোমরা কেন আমার কথা বুঝতে পারছ না?

উত্তেজিত রিমলি কে ঠান্ডা করেন ডাক্তার সেন।  

ডাক্তার সেন বলে্ন, তুমি কি দেখেছ রিমলি? 

-আমি একটা কালো কাপড়ে জড়ানো অবয়ব দেখতে পাই, তবে জানি না পুরুষ নাকি মহিলা। তবে এটুকু বুঝতে পারি যে সে আমাকে মাঝে মাঝে ডাকে হাত নেড়ে। আমি চলে যেতেই সবাই আমাকে আটকে দেয়। আমার ভালো লাগে না একদম। 

bangla rohossomoy golpo
bangla rohossomoy golpo

-আচ্ছা সেই অবয়ব কে তোমার ভয় লাগে না? 

একটু চুপ করে থেকে রিমলি বলে, হ্যাঁ আমার খুব ভয় করে ঐ অবয়বটা কে, কেন না ওকে আমি ছাড়া আর কেউ দেখতে পায় না। তাই আমি কাউকে বললেও আমার কথা কেউ বিশ্বাস করে না। কিন্তু বিশ্বাস করুন ডাক্তারবাবু আমি সত্যি দেখতে পাই, ওটা আমার মনের ভুল নয়। 

গভীর রাত। সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় রিমলির। সে ধড়মড় করে উঠে দেখে সেই অবয়বটা তার সারা ঘরে পায়চারি করছে। তবে আজ নতুন দৃশ্য, আজ ওই অবয়বের চোখ দুটো লাল আগুনের ভাটার মতো জ্বলজ্বল করছে। 

রিমলি আবার ভয় পেয়ে যায়। ওই অবয়বটা যেন ধীরে ধীরে তার দিকেই এগিয়ে আসছে। চিৎকার করে বলে ওঠে, মা!

মা আর বাবা চমকে উঠে পড়ে ঘুম থেকে আর বলে, কি হয়েছে তোর? 

-ও কে? ওটা কে ছিল? ভয়ার্ত কন্ঠে উত্তর দেয় রিমলি। 

-কোথায় মা, কেউই তো নেই, দেখ তুই, তোর বাবা আর আমি।

-না মা, ওই অবয়বটা…

মেয়েটাকে ফের তাড়া করেছে পাগলামি। চিন্তা আরো বেড়ে যায় মা আর বাবার। ডাক্তার দেখিয়েও তো লাভ হচ্ছে না কিছুই। হ্যালোশিনেশন হচ্ছে, নাকি অন্য কোনো গুরুতর অসুখ? 

অনেক চিকিৎসা করার পর অবশেষে সবাই ব্যাপারটা কে হ্যালোশিনেশন আর রিমলির মানসিক সমস্যা বলেই ধরে নেয়। আর তাই রিমলির সবসময় দেখভালের জন্য একজন মহিলা কে রাখে। 

পড়ুনঃ- মুক্তির চাবিকাঠি 

কিন্তু শান্তি নেই সেখানেও। রিমলি ক্রমাগত কাউকে দেখতে পাচ্ছে, কিন্তু কাউকে দেখাতে পারছে না। কেউ বুঝতে চাইছে না তার কথা। তার ভয়ের কারণটা বিজ্ঞান আর যুক্তির কাছে নিছক খেলনার পুতুলের মতো সকলের কাছে ধরতে গেলে।

তবে রিমলি এখন শুধু সেই কালো কাপড়ে মোড়ানো, লাল ভাটার চোখ থাকা সেই আগন্তুক কে শুধু দেখতেই পায় না, আগন্তুক এখন রিমলির সমস্ত রক্তটা একটু একটু শুষেও নেওয়া শুরু করেছে। 

আঁতকে ওঠে রিমলি। তার দেখাশোনা করা রমা বলে ওঠে, কি হয়েছে রিমলি তোমার, এমন কেন করছ? 

-ওই দেখো, কেমন হাসছে আমার দিকে তাকিয়ে। তোমরা কেন কেউ দেখতে পারছ না! ও কে! ও আমাকে মেরে ফেলবে! 

-না রিমলি তুমি ভুল দেখছ  কেউ কোথাও নেই, শুধু তুমি আর আমিই আছি। 

রিমলির গলা শুকিয়ে যায়। ঐ ভয়ঙ্কর মূর্তি টা কে সে ছাড়া কেউ দেখতে পায় না। তাই তার কথা কেউ বিশ্বাস করছে না। অসহায় বোধ হয় তার। কি করে বোঝাবে সে! 

সঞ্চিতা খুব গভীর ভাবে ভাবে রিমলির কথা গুলো আর ঠিক করে রিমলির বাড়িতে প্যারানর্মাল এক্সপার্ট কে আনবে। 

সে সেই কথা জানায় রিমলির মা, বাবাকে। 

রিমলির মা, বাবা বলে ওঠে, কি বলছ কি সঞ্চিতা, এটা ভৌতিক ব্যাপার? 

-হ্যাঁ কাকিমা। এত চিকিৎসার পরেও মেয়েটা সুস্থ হচ্ছে না। ওর চোখ মুখ গুলো দেখুন, একদম শুকিয়ে যাচ্ছে ওর শরীর টা। রক্তশূণ্য হয়ে যাচ্ছে ও। একা একা বকছে, খিটখিটে মেজাজের হয়ে যাচ্ছে কেউ ওর কথা বিশ্বাস করে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে। আমিও প্রথমে এটা মানসিক সমস্যাই ভেবেছিলাম কিন্তু না কাকিমা, আমাদের হয়ত অনেক দেরি হয়ে গেছে তাই যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে। আমি একজন কে চিনি , তিনি এইসব সম্পর্কে অনেক গবেষণা করেছেন। ওনাকে আমি আসতে বলেছি এখানে, চিন্তা করবেন না, হয়ত এবার রিমলি আগের মতো হয়ে যাবে। 

আবার সেই রাত। কিছুতেই ঘুম আসছে না রিমলির। বুকের উপর যেন কি একটা বসে আছে মনে হচ্ছে। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। 

হঠাৎ পায়ে কিসের একটা ছোঁয়া পায়। ধড়মড় করে উঠে দেখতেই সে দেখে একটা সাদা হয়ে যাওয়া পচা, গলা হাত তার পায়ের উপর দিয়ে বেয়ে উঠছে একটু একটু করে। 

ভয়ে চিৎকার করে জ্ঞান হারায় রিমলি। 

না না আর নয়। সকালটা হলেই সব প্রশ্নের উত্তর চাই। কি হচ্ছে এসব রিমলির সাথে? 

সকাল হতেই সঞ্চিতা প্যারানর্মাল এক্সপার্ট মিসেস ডলি সিনহা কে নিয়ে আসে। ডলি রিমলির বাড়িতে পা রাখতেই একটা ধাক্কা অনুভব করেন। 

সঞ্চিতা ও রিমলির মা, বাবা বলে, কি হলো আপনার? আপনি অমন করে সরে গেলেন কেন? 

-বাড়িতে কিছু সমস্যা আছে। 

-মানে? 

-হুম। একটা অভিশাপের ছোঁয়া পেলাম। বাড়িতে অতৃপ্ত আত্মার অস্তিত্ব পেয়েছি তাই প্রবেশপথেই বাধা দিল আমায়। 

চোখ কপালে ওঠে সবার। সঞ্চিতা ওদের কাঁধে হাত রেখে বিচলিত হতে বারণ করে। 

এরপর রিমলির মা, বাবা, সঞ্চিতা আর ডলি একসাথে বাড়িতে ঢোকে। ডলি নির্দেশ দেয় রিমলি কে নিয়ে আসার জন্য। 

পড়ুনঃ- অভিশপ্ত পেইন্টিং 

রিমলি আসে আর রিমলিকে দেখেই ডলি চমকে ওঠে। রিমলি কে দেখেও সাক্ষাৎ অতৃপ্ত আত্মা ছাড়া কিছুই লাগছে না। উশকো খুশকো চুল। চোখ দুটো কোটরে ঢুকে গেছে। রোগা হয়ে শিরা উপশিরা স্পষ্ট। 

একটা ক্রিস্টাল বল রিমলির সামনে রেখে ডলি বলে, রিমলি তুমি কবে থেকে ওই আগন্তুক কে দেখতে পাচ্ছো? 

-একদিন সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছিলাম সেদিন থেকে। খুব ভয় লাগে তাকে? 

হ্যাঁ। এদিক ওদিক তাকিয়ে থমথমে গলায় দ্রুত বলে রিমলি। 

-আবার চলে আসবে এখনি। আমাকে মেরে ফেলবে একটু একটু করে! 

আমি এসে গেছি না, তোমাকে কেউ মারতে পারবে না রিমলি। আচ্ছা তুমি এই ক্রিস্টাল বল টা ভালো করে দেখো তো , তোমার কি কিছু মনে পড়ছে কবে থেকে এমনটা শুরু হয়েছে তোমার সাথে, ঠিক করে বলো মনে করে।

-যেদিন সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছিলাম। 

-কোন ঘরে, কোথায় আড্ডা দিচ্ছিলে? 

-রিমলি দেখায় কোন জায়গায় আড্ডা দিয়েছিল সেদিন সব বন্ধুরা মিলে। 

তুমি ওই আগন্তুক কে কোথায় দেখতে পেয়েছিলে প্রথম? 

নতুন ভুতের গল্প horror
নতুন ভুতের গল্প horror
<

বলতে বলতেই ভয়ে কঁকিয়ে ওঠে আর বলে, ওই, ওই আবার এসেছে। আমি দেখতে পাচ্ছি। ও আমাকে মেরে ফেলবে!

ডলি সচেতন হয়ে যায় রিমলিকে সঙ্গে নিয়ে। বুঝতে পারে ঘরে তারা ছাড়াও আরো একটা কিছুর অস্তিত্ব আছে। কিন্তু সেটা রিমলি ছাড়া আর কেউই দেখতে পায় না। 

অনেক যাগ যজ্ঞ করার পরে ডলি বলে, এখন বাড়ি অভিশাপ মুক্ত। নিশ্চিন্তে থাকতে পারো সবাই। 

সবাই একটা অনাবিল আনন্দের সাগরে ভেসে যায় আর বহুবছরের চাপা স্বস্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। 

তখন রাত তিনটে বাজে। ফিসফিস করে কে যেন ডাকছে ‘রিমলি, রিমলি!’  

সে ঘুম থেকে উঠে পড়ে আর কী একটা অজানা টানে ধীরে ধীরে বিছানা ছেড়ে নেমে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়। 

ঘুমন্ত রাজ্যে সবার অগোচরে রিমলি অন্ধকার রাস্তায় একা যাচ্ছে এক অজানা ঠিকানায় আর তার সাথে চলছে একটা ছায়ামূর্তি , যাকে রিমলি চেনে না শুধু চোখে দেখেছে আর ভয়ে পেয়ে কঁকিয়ে উঠে বলেছে, “কে ছিল ওটা?”

সুস্মিতা গোস্বামী

রহস্যের প্রতিচ্ছবি রচনায়-
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
সুস্মিতার লেখা আরও কিছু গল্প- 
রহস্যময় ভুতের গল্প- যূথিকা টেইলার্স

অভিশপ্ত বন্ধুত্ব 

স্কুল লাইফের প্রেমের গল্প- দেখা আর হল কই 
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

notun rohosso vuter golpo. bangla rohossomoy golpo. 1 awesome horror story bangla. নতুন ভুতের গল্প।

Spread the love

Leave a Reply