বন্ধু শব্দটা শুধু একটি শব্দ নয়, এতে জড়িয়ে থাকে অনেক ইমোশন। কিন্তু বন্ধুত্বের পরিচয় যদি নেমে আসে ‘বিশ্বাস ঘাতক বন্ধু’ রূপে তাহলে কথার মোড়টা অন্য দিকে চলে যায়। এমনই একটি গল্প ছাড়পত্রের পাঠক আজ উপভোগ করতে চলেছেন। আবার এই গল্পে কিন্তু কিছু রহস্যের ছোঁয়াও রয়েছে। সব মিলেয়ে এই বাংলা বড় গল্প টি পাঠকের কাছে বেশ গ্রহণ যোগ্য হবে এটাই আশা রাখি।

বিশ্বাস ঘাতক বন্ধু গল্পঃ- ”অভিশপ্ত বন্ধুত্ব”

“একি! আমাকে ছেড়ে দাও অভি। আমাকে…. মেরো না।  এ আমার কি হচ্ছে! আমি শ্বাস নিতে পারছি না কেন? আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে! আমি পারছি না, আমাকে বাঁচাও! এ আমার কি হলো, হায় ঈশ্বর! আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে, আঃ…আ… আ… আমি দম নিতে…….!” 

অস্ফুটে আর্তনাদ করতে করতে শেষ কাতর সাহায্য প্রার্থনার কথাটা অসম্পূর্ণ রেখে গভীর ঘুমে ঢলে পড়ে অজয় ।…

______…_____

জনবহুল পরিবেশের মাঝে একটা বড়, সুসজ্জিত মেস। অনেক যুবক সেখানে কলেজ বা চাকরির সূত্রে বসবাস করে। বেশ হৈ হুল্লোড় করা জমজমাটি একটা পরিবেশ সেখানে। 

অজয়, মেসের একজন কলেজ ছাত্র। সে প্রথম প্রথম সবার থেকে আড়ালে থাকা হলেও পরবর্তীতে ভীষণ চেনা মুখ হয়ে ওঠে।

অভিশপ্ত বন্ধুত্ব
বিশ্বাস ঘাতক বন্ধু অভিশপ্ত বন্ধুত্ব

ঘটনাটা খুব অদ্ভুতই ছিল। ছেলেদের ঐ মেসটার পাশ দিয়ে রোজ একটা ছেলে যেত। কোথায় যেত, কার সাথে যেত কেউ কিছুই জানত না। যাই হোক, ছেলেটাকে প্রথম খেয়াল করে অজয়।

একলা দুপুরে শুনশান সময়ে, প্রায় জনশূন্য রাস্তা দিয়ে মেসটার পাশ দিয়ে যাচ্ছে একটা ছেলে, কাঁধে একটা ব্যাগ ।

অজয় ওর রুমের জানালা দিয়ে ওকে প্রথমবার দেখতেই কেমন যেন একটা সম্মোহিত হয়ে যায়। এর পেছনে কি কারণ তা জানে না অজয়, শুধু এটুকু জানে যে ঐ ছেলেটা কে না দেখলে অজয় ভাল থাকবে না। যেই ভাবা সেই কাজ। সে নিজের অজান্তেই প্রতিদিন ঠিক ঐ সময়তেই অপেক্ষা করে থাকত ঐ আগন্তুক ছেলেটা কে দেখার জন্য, যার কাঁধে একটা ব্যাগ ছাড়া আর কিছু নেই। 

বেশ কিছুদিন এভাবে দেখতে দেখতে অজয় ঠিক করে ছেলেটার সাথে সরাসরি কথা বলবে। ওকে বন্ধু করবে নিজের। 

কিন্তু অজয়ের এই গোটা ব্যাপার টা মেসে ছড়িয়ে যেতেই সে Gay হিসেবে পরিচিতি লাভ করে আর হাসির পাত্র হয় সকলের কাছে । অজয়ের তাতে খারাপ লাগে না কারণ সে ঐ ছেলেটার ধ্যানে এতটাই মত্ত, যে ঐ ছেলেটা ছাড়া আর কোন কিছু জানে না সে। 

সেদিন দুপুর হতেই অজয় একদম রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে সেই ছেলেটার আসার জন্য। বেশ কিছুক্ষণ পর অজয় দেখে দূর থেকে ঐ ছেলেটা আসছে, ঠিক একই ভাবে ঐ ব্যাগ টাও আছে সঙ্গে। 

অজয় পুলকিত মনে তার সাথে কথা বলতে যাবে কিন্তু ছেলেটাই হেসে বলে ওঠে, “বন্ধু হবে আমার?”  

অজয় তো একসাথে অবাক আর আনন্দিত। সে আশা তো দূরের কথা, এমনটা হবে বলে কল্পনাও করেনি। 

এককথায় বলে ওঠে, “তুমি আমাকে তোমার বন্ধু করতে চাও! আমি নিশ্চয়ই তোমার বন্ধু হবো।”  

-“বেশ তবে আজ থেকে তুমি আর আমি বন্ধু কেমন।” 

-“হুম। তা তোমার নাম কি শুনি?” 


পড়ুনঃ- 
বিখ্যাত ব্যাক্তিদের সাথে ঘটে যাওয়া কিছু মজার ঘটনা 

জীবনে সফল, হওয়ার জন্য ১৪ টি টিপস

-“অভি। তোমার নাম তো অজয় তাই না?” 

-“তুমি আমার নাম জানলে কি করে!” চমকে গিয়ে বলে ওঠে অজয়। 

“হুম আমি সব জানি বন্ধু অজয়। আচ্ছা আজ আসি কেমন, একটু তাড়া আছে।”  

“এখনি চলে যাবে। চলো না আমাদের মেসে। জানো আমার না কোনো বন্ধু নেই, সারাদিন একাই পড়াশোনা নিয়ে থাকি, ভালো লাগে না জানো! চলো না আমার সাথে একটু গল্প করবে আমার রুমে।” 

“কেউ কিছু বলবে না তো?” 

-“না কেউ কিচ্ছু বলবে না অভি। তুমি চলো আমরা একসাথে যাই।” 

-“আচ্ছা চলো।” 

-“দুজনে একসাথে মেসে ঢুকতেই বাকি ছেলেরা হৈ হৈ করে ওঠে।” 

toxic friendship
বিশ্বাস ঘাতক বন্ধু toxic friendship

-“আরে অজয়, তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তুই একটা অচেনা ছেলেকে বিনা অনুমতিতে মেসে নিয়ে চলে এলি? মেসের সুপার জানতে পারলে তোর তো যা হবার হবেই সঙ্গে আমাদেরও কপালে অশেষ দুঃখ আছে। বের কর এই ছেলেটা কে।” 

-“না ও আমার বন্ধু। ওকে আমি নিজেই এনেছি, ও আসতে চায়নি । যদি কেউ কিছু বলে তো আমি যা বলার বলব।”

 -“বন্ধু তুমি আমাকে এখানে না আনতেই পারতে। তাহলে তোমাকে এত ঝামেলায় পড়তে হতো না।” দুঃখ প্রকাশ করে বলে অভি। 

-“তুমি এত চিন্তা কোরো না অভি। ওরা সবসময় আমার সাথে এমনটাই করে। আমি যাই করি না কেন সবেতেই ওদের সবসময় আপত্তি। এমন একটা ভাব করে যেন ওদের সম্পত্তি এই মেসটা। মেসের সুপার আমাকে ওদের থেকে ভালো মতো চেনেন। উনি জানেন আমি কেমন। আমি কোনো গুণ্ডা বদমাশকে নিয়ে আসিনি, ঠিক আছে!”  

রাজ নামের একটি ছেলে বলে ওঠে, “অজয়, তুই খুব বেড়েছিস দেখছি। থাকতিস তো ভেজা বেড়ালের মতো। হঠাৎ এত তেজ কোত্থেকে এলো তোর? একটা ‘গে’ কোথাকার! বন্ধু না বৌ বল! বিয়ে করবি তো ওকে বুঝতেই পারছি। সমকামী কোথাকার। লজ্জা করে না তোর বড় বড় কথা বলছিস আবার!” 

সবাই হেসে ওঠে রাজের কথা শুনে। বুলি কাটে অজয় কে নিয়ে সবাই। অজয় অপমানিত হয়ে চুপ করে থাকে তবে অভি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় সবার দিকে। আর বলে, “তোমাদের আমি কাউকে চিনি না ঠিকই তবে আমার বন্ধুর সূত্রে যেহেতু এখানে আসা তাই সেই আমার বন্ধুকেই তোমরা অপমান করছ বলে বলতে বাধ্য হচ্ছি, তোমরা কিন্তু এটা ঠিক করছ না।” 

-“আরে হাট! কোত্থেকে জ্ঞানভান্ডারী এলেন একেবারে! বন্ধু! যত্তসব নাটক একেবারে! সার্কাস হচ্ছে এখানে সার্কাস!”  

আবার হেসে উঠল সবাই। 

অজয় অভির হাতে মৃদু চাপ দিয়ে বলে, “আমাকে ক্ষমা করে দিও বন্ধু। আমি ভাবতে পারিনি ওরা তোমার সাথে এমনটা করবে।” 

-“আমি কিছু মনে করিনি বন্ধু অজয়। তবে ওরা এটা মোটেই ঠিক করল না তোমার সাথে।” 


পড়ুনঃ- 
কি ও কেন? কিছু অজানা তথ্য 

অনুপ্রেরণামূলক উক্তি 

এই বলে চলে যায় অভি ধূমকেতুর মতো। অজয় ফিরে আসে ওর রুমে বিষাদ মনে। 

রাত্রিবেলা রাজের ঘুম ভেঙে যায় হঠাৎ করে আর পায়ের কাছে একটা চিরকুট জাতীয় কাগজ পড়ে থাকতে দেখে। কাগজটা খুলে দেখতেই চমকে ওঠে। সেখানে লেখা, ‘Raj, your time is over!’  কে লিখেছে এটা আর কেন ই বা লিখেছে আর তার ঘরে এলো কি করে আর নামটাও বা তারই কেন? পাত্তা না দিয়ে ডাস্টবিনে মুড়িয়ে ফেলে একটা বিস্কুট খায়। 

কিন্তু খাওয়ার পরেই তার অসম্ভব শ্বাস কষ্ট শুরু হয়ে যায়। অসম্ভব কষ্ট হচ্ছে, দম আটকে আসছে। কিছু বুঝতে পারছে না, চিৎকার করতে গিয়ে গলার স্বর বেরোয় না। ঘরের বাইরে আসতে গিয়ে দেখে দরজা বাইরে থেকে লক করা। প্রায় কিছুক্ষণ পাখির ছটফট করতে করতে বেঘোরে প্রাণ হারায় রাজ। 

পরদিন অনেক বেলা অবধি রাজের সাড়া নেই বলে সবাই রাজের রুমে আসে। দরজা ভেজানো তাই দরজা ঠেলে ঢুকতেই চিৎকার করে ওঠে সবাই। 

-“রাজ! কি হয়েছে তোর! ওঠ!” স্যার এদিকে আসুন প্লিজ। 

সবাই ছুটে আসে। অজয়ও আসে চিৎকার শুনে। “রাজ মারা গেছে শ্বাসরোধ হয়ে। কিন্তু হঠাৎ করে কি এমন হলো যে এইরকম করে… !”

বিশ্বাস ঘাতক বন্ধু
বিশ্বাস ঘাতক বন্ধু
<

পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে সাধারণ ভাবে দম বন্ধ হয়ে মৃত্যু বলা হয়। কিন্তু সবার মনেই কেমন একটা ‘কু’ ডাকছে। সাফাইকর্মী এসে রাজের ঘর পরিষ্কার করে চলে যায়। ডাস্টবিনে একটা বিস্কুটের প্যাকেট ছাড়া আর কিছুই নেই। 

অজয় মেসের বাইরে বাগানে দাঁড়িয়ে ভাবছে। কিছুতেই বুঝতে পারছে না যেই ছেলেটা তাকে এতদিন ধরে এমনকি গতকালই অপমান করল আর সেই কিনা আজ আর পৃথিবীতে নেই? 

-“কি ভাবছ বন্ধু?” হঠাৎ করে অভি যেন বলে ওঠে কথাটা। 

থতমত খেয়ে অজয় বলে,  “আরে বন্ধু তুমি!”  

“হ্যাঁ। তোমাকে মনে পড়ল তাই চলে এলাম তোমার কাছে ।”

“কিন্তু তুমি জানলে কি করে আমি এখানে আছি আর তাছাড়া এই বাগানটাই বা তুমি চিনলে কি করে?” অভি হাসে আর বলে, “আমি সব জানি অজয়। তা তুমি এখানে একা কি ভাবছ?”  

-“রাজের কথা।”

-“কেন রাজের কি হয়েছে?” 

-“ও আর জীবিত নেই জানো! বড় অদ্ভুত লাগছে এটা জানার পর থেকে।” 

-“কেন তোমার খুব খারাপ লাগছে রাজের জন্য?” 

-“হ্যাঁ অভি। যতোই যা করুক, একসাথে মেসে এতদিন ছিলাম তাই একটু খারাপ তো লাগবেই।”  

-“বুঝলাম। কিন্তু রাজ তোমাকে তো কম অপমান করেনি বলো।” 

-“হ্যাঁ তা ঠিক তবুও এতদিন একসাথে ছিলাম তো তাই একটু খারাপ লাগছে জানো।” 

প্রসঙ্গ বদলে অজয় বলে, “তা তুমি হঠাৎ করে এখানে এলে কি করে ?”

“কেন এসেছি বলে তোমার খারাপ লাগছে নাকি?” হেসে বলে অভি। 


পড়ুনঃ- 
নতুন বাংলা মোটিভেশনাল গল্প 

মহৎ ব্যক্তিদের অমৃত কথা 

অজয় ওর হাত ধরে বলে, “আরে এসব কি বলছো তুমি! তুমি আসলে আমার খারাপ লাগে বুঝি! না আমি বলছি তুমি তো এই বাগান চেনো না আর আমিও এখানে আছি তাও জানো না তাই বললাম আর কি। তুমি কিছু মনে কোরো না অভি। যদি কিছু ভুল বলে থাকি তাহলে ক্ষমা করে দিও।”

-“আমি সব চিনি এই মেসের। ফিসফিস করে বলে অভি।” 

অজয় বলে, “কিছু বললে অভি?” 

-“না তো।” 

-“আচ্ছা চলো যাওয়া যাক।” 

মেসে ঢুকতেই রবি বলে ওঠে, “কীরে তুই তো রাজের মৃত্যু তে খুব খুশি হয়েছিস তাই না অজয়?”

-“এসব কি বলছিস! আমি খুশি হবো এতে?” 

-“হ্যাঁ।” 

রবি অজয় কে নানা কথায় উত্যক্ত করে। অজয় এগিয়ে যেতে যাবে হঠাৎ স্লিপ কেটে পড়ে যায়। সবাই হো হো প্রতিশোধের উল্লাসে হাসতে থাকে। ওখানে তেল ফেলা ছিল ইডিয়ট যাতে তুই পড়ে যাস! ব্যথা পায় অজয়। সে বলে, “তোরা আমার সাথে সবসময় কেন এমনটা করিস?এইসময়তেও তোদের মজা করার মানসিকতা আছে?”  

-“হ্যাঁ আছে। তোকে আমাদের সহ্য হয় না বুঝেছিস! একটা ‘গে’ কোথাকার !”  

এরপর অভির দিকে তাকিয়ে বলে, “তুমি আবার এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি দেখছ বাছাধন, যাও এখান থেকে।”   

-“তুমি কিন্তু অজয়ের সাথে এটা ঠিক করলে না রবি!” 

-“ওই বেশি হুমকি দিবি না বলে দিলাম। বেরো এখান থেকে।” 

-“তোরা আমার সাথে করছিস কর, অভিকে প্লিজ এভাবে বলিস না।” কাতরাতে কাতরাতে বলে অজয়। 

অভি বলে, “তুমি ঠিক করলে না রবি। ঠিক করছ না এটা। আমি আসি অজয়। আর তুমি যেরকম ব্যথা পেয়েছ তাতে মনে হয় কয়েকদিন লাগবে ঠিক হতে। সুপার কে জানাবে এদের বাঁদরামোর কথা। আমি আসি। তুমি খুব তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে চিন্তা কোরো না।” 

চলে যায় অভি। অজয় মনে ঘৃণা নিয়ে ওর ঘরে ফিরে যায়। তখন কটা বাজে দেখেনি রবি। কিন্তু ঘুম ভেঙে যায় কীসের শব্দে। উঠে দেখে পায়ের কাছে একটা চিরকুট পড়ে আছে। অপ্রয়োজনীয় কাগজ ভেবে ফেলে দিতে গেলেও ফেলল না রবি, খুলে দেখল কি লেখা আছে। 

লেখা পড়তেই চমকে ওঠে। সেখানে লেখা,  ‘Ravi, your time is over!’  

কাগজটা ঠিক পড়েছে কিনা সেজন্য চোখ কচলে মুখে হাত রেখে হাই তুলে আড়মোড়া ভাঙতেই আচমকা শ্বাস কষ্ট শুরু করে তার। এ কি হচ্ছে! গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোচ্ছে না কেন? দম বন্ধ হয়ে আসছে। রবিও অসহায় মানুষের মতো বেশ কিছুক্ষণ ছটফট করতে করতে মারা যায়। 

পড়ুনঃ- রহস্যময় গোয়েন্দা গল্প- দুই বোনের উধাও রহস্য 

ফের হত্যা। সবাই চিন্তায় পরে যায়। পরে অজয় নিজেও। এসব কি হচ্ছে? পরপর দুটো মৃত্যুই শ্বাসরোধ হয়ে, কিন্তু আকস্মিক এত শ্বাসরোধের আগমন কীসের সংকেত বুঝতে পারে না কেউই। 

এইভাবে কদিন যায়। অজয় পড়ছিল তখন। হঠাৎ দেখে পাশে অভি দাঁড়িয়ে। আঁতকে  ওঠে অজয়। বলে, “এ কি তুমি এখানে কি করে এলে?”  

-“কেন আসতে পারি না বুঝি তোমার কাছে?” 

“সে আসতে পারো কিন্তু তুমি এভাবে সবার সামনে দিয়ে সরাসরি আমার পড়ার ঘরে এসে আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছো এটা কি করে সম্ভব!” 

-“ভয় পেয়েছ বুঝি?” 

-“তা একটু পেয়েছি বলতে পারো।”

-“ভয় পেও না আমায়। আমি না তোমার বন্ধু। রবির কথা অত ভেবো না। ওর কপালে অতদুর আয়ু ছিল তাই ও চলে গেছে। তুমি ওকে নিয়ে এত ভেবো না।” 

-“আচ্ছা একটা সত্যি কথা বলোতো, আমার কেন জানি না মনে হচ্ছে যে এই দুজনের মৃত্যুর ব্যাপার নিয়ে তুমি কিছু জানো। সত্যিই কি জানো তুমি?”  

-“জানি তো।” 

-“কি বলছ কি!” চমকে ওঠে অজয়। 

-“হেমলক বিষ চেনো অজয় , যেই বিষ দিয়ে গ্রীক দার্শনিক সক্রেটিস কে হত্যা করা হয়েছিল।” 

-“হ্যাঁ জানি কিন্তু হেমলক বিষের প্রসঙ্গ কোথা থেকে এলো?” 

-“ওরাও যে হেমলক বিষেই মারা গেছে শ্বাসরোধ হয়ে।ঐ বিষে আক্রান্ত প্রাণীর যে তীব্র শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় আর তারপর শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হয়ে সোজা ওপরে!” 

অজয়ের চোখ বিস্ফারিত। -“এসব কি বলছে অভি! তুমি কি বলতে চাইছ পরিষ্কার করে বলো, তুমি কে! তুমি যদি ওদের খুনে অভিযুক্ত থাকো তাহলে আমি তোমাকে জেল খাটাবো। আমি সবাইকে জানিয়ে দেবো যে তুমি ওদের দুজনকে মেরেছ!” 


পড়ুনঃ- 
রহস্যে ঘেরা তক্ষকের ডাক 

উলপিটের রহস্যময় দুই সবুজ ভাই-বোন 

-“আমি! হা হা হা হা হা হা হা! আমি যে অভি তোমার বন্ধু। ভয় পাচ্ছো নিজের বন্ধুকে অজয় , এ যে বড়োই অশোভনীয় !” 

-“তুমি কে বলো অভি? তুমি ওদের খুন করেছ তাই না? আমি এখনি জানাবো সবাইকৈ। একটা অজানা আতঙ্ক গ্ৰাস করেছে যেন গোটা মেস কে।”  

-“দাঁড়াও এত ব্যস্ত হয়ো না। আমি, আমি তো অভিজিৎ চৌধুরী। এই মেসেই থাকা একজন কলেজ স্টুডেন্ট। আমি এখানেই থাকতাম একলা, নিজের মতো করে।”

-“থাকতাম মানে? এখন তুমি কোথায় থাকো?” 

-“এখন আমি এই মেসের চারিদিকে ঘুরে বেড়াই আলো আঁধারি পথে! আর আমি যখন এখানে ছিলাম তখন আমার জীবনে তোমার মতো একটা ছেলে আসে বন্ধু হতে। আমি আনন্দে ডগমগ হয়ে যাই একাকীত্ব জীবনে একটা বন্ধু পাওয়ার আশায়। কিন্তু সেই বন্ধুই যে আমাকে…!” 

-“কি…..?”  

-“আমি নিজের খেয়ালে থাকা একটা একাকী ছেলে ছিলাম। পড়াশোনা করতাম, ভালো ছাত্র ছিলাম আমি । কিন্তু আমার জীবনে সেই বন্ধু আসার পর আমার জীবন টা হঠাৎ করেই বদলে গেল। আমরা একে অপরের এতোটাই প্রিয় ছিলাম যে বলার মত নয়।  আমি ওকে এতোটাই পাগলের মতো ভালোবাসতাম যে একদিন ভুলবশত একটা অন্যায় কাজ করে ফেললাম আর সেই অন্যায় টা হলো খুন। আর খুনটা করি তাকে যে আমার প্রিয় বন্ধু কে প্রতিনিয়ত অপমান করেছে। 

আমার প্রিয় বন্ধু যখন আমার এই গোপন অন্যায়ের কথা জানতে পারে তখন ও আমাকে ঘৃণা করে দূরে সরিয়ে দেয়। আমি অনেক কষ্ট পেয়ে বলেছিলাম আমি সেটা ওর অপমানের বদলা নিতে করেছি তবে জানো অজয় খুন করতে আমি সত্যিই চাইনি সেদিন। চেয়েছিলাম আধমরা করতে কিন্তু ভুলবশত খুন হয়ে গেল। আমার প্রিয় বন্ধু বলে সেদিন যে, সে নাকি সবাইকে জানিয়ে দেবে আমি খুনি, মেসের একটি ছেলে কে খুন করেছি। 

বিশ্বাস ঘাতক বন্ধু গল্প
বিশ্বাস ঘাতক বন্ধু গল্প অভিশপ্ত বন্ধুত্ব

আমি সেদিন অনেক বার বলেছিলাম, ‘আমি খুন করতে চাইনি, জখম করতে চেয়েছিলাম তাও তোর প্রতি অপমানের জ্বালা মেটাতে।’ কিন্তু না, সে আমার কথা শুনবে না, সে বলবেই সবাইকে। বন্ধুত্বে সে বিশ্বাসঘাতকতা করবেই। তাই যখন আমার কাকুতি মিনতি শুনল না ও, তখন আমি আমার বন্ধুর শত্রুকে যেভাবে জখম করতে গিয়ে খুন করে ফেলেছি ঠিক একই ভাবে ওকেও মেরে দিলাম কেবলমাত্র সে আমার বিশ্বাসঘাতকতা করতে চাইছে বলে । 

হেমলক বিষ ছিল আমার কাছে তার ই কিছুটা ওকে জোর করে খাইয়ে দিলাম আর ওর ছটফটানি দেখে আমার যেমন দুঃখ হচ্ছিল তেমন আনন্দও হচ্ছিল। বিশ্বাসঘাতকদের কোনো স্থান নেই আমার কাছে। সে যেই হোক না কেন! 

তবে হ্যাঁ ও যখন শ্বাস কষ্টে ছটফট করতে করতে বলছিল এটা তুই ঠিক করলি না অভি। আমি তখন বলেছিলাম জানি আমি ঠিক করিনি তাই আমিও আর বাঁচবো না, তোর সাথেই মরব। তারপর আমার হেমলক বিষেই আমি…

তোমাকে উত্যক্ত করা বন্ধুদের ঘরে একটা চিরকুট রেখে আসতাম আমি। যেখানে একটা বাক্য লেখা থাকত। তবে লেখা থাকত হেমলকে ডুবানো পেন দিয়ে তাই কাগজটা পড়ার পর কোনোরকমে মুখে সেই হাত গেলেই শেষ হয়ে যেত। 

আমিও চেয়েছিলাম তুমি যখন আমাকে বন্ধু করেছ আমার গতজীবনের মতো তখন আমিও তোমাকে বাঁচাবো। কিন্তু না, তুমিও বেইমান, বিশ্বাসঘাতক। 

আর তুমি আমাকে জেল খাটাবে বলছিলে তাই না? আরে আমি তো অতীত, এটা যে আমার মৃত সত্ত্বা। আমি তো এখন অতৃপ্ত আত্মা।” 

তবে তোমাকেও মরতে হবে অজয়। কারণ তুমি সবটা জেনে গেছো আর তুমিও আমাকে বলেছ সবাইকে জানিয়ে দেবে। তাই তোমাকেও মরতে হবে। এই বলে অদৃশ্য হয়ে যায় অভি আর অজয়ের চরম শ্বাস কষ্ট শুরু হয় আর তীব্র আর্তনাদ…।  

-“একি! আমাকে ছেড়ে দাও অভি। আমাকে মেরো না। এ আমার কি হচ্ছে! আমি শ্বাস নিতে পারছি না কেন? আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে! আমি পারছি না, আমাকে বাঁচাও! এ আমার কি হলো, হায় ঈশ্বর! আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে, আঃ! আ আ আমি দম নিতে…!”

যেই আর্তনাদ অভি ছাড়া আর কেউ শুনতে পায়নি…!


সুস্মিতা গোস্বামী

গল্পের রহস্যময় ভাবনায়-

© all copyright is reserved by admin. Re-publishing of this story, such as- YouTube video, blog etc. is prohibited. Legal action will be taken by charpatra.com

আপনার লেখা গল্প আমাদের ইমেল করতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে। click here. 
সুস্মিতার লেখা জনপ্রিয় কিছু গল্প- 
মানবতা- জীবন বদলে দেওয়ার মত একটি শিক্ষণীয় ঘটনা 

জীবনে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রেরণা-মূলক একটি গল্প

দুটি শিক্ষণীয় বাংলা ছোট গল্প 
এক ক্লিকেই আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 
ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial লিংক কাজ না করলে টেলিগ্রামে সার্চ করুন- charpatraofficial 

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

বিশ্বাস ঘাতক বন্ধু গল্প। অভিশপ্ত বন্ধুত্ব. 1 new bengali selfish friend story. toxic friendship

Spread the love

Leave a Reply