আজকের লেখাটির কেন্দ্রে রয়েছে দুইজন রহস্যময় মানুষ। এই দুইজন রহস্যময় মানুষ গল্প – এর মত হাজির হলেও মানা হয়ে থাকে এটি একটি সত্য ঘটনা। আসুন জেনে নিই এই বাংলা রহস্যময় গল্পটি।
রহস্যময় মানুষ গল্পঃ-‘সবুজ ভাই বোনের গল্প’
ঘটনাটি ঘটে ইংল্যান্ডের রাজা স্টিফেন এর সময়ে। দ্বাদশ শতাব্দীর দিকে সাফোকের উলপিট নামক একটি গ্রামের লোকজনের মধ্যে হঠাৎ করেই দারুণ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। তাদের এই চাঞ্চল্যের মূল কারণ হল, হঠাৎ করেই তাদের সামনে দুজন সবুজ রঙের শিশুর আবির্ভাব। এই ঘটনায় গ্রামবাসীদের পিলে চমকানোর মত অবস্থা হয়।
যখন এই আজব রকমের ঘটনাটি ঘটে তখন সবাই মাঠে ধান চাষ করতে ব্যস্ত। এমন সময় কর্মরত কৃষকদের চোখে পড়ল তাদের সামনের যে রাস্তাটি জঙ্গলের দিকে গেছে সেই রাস্তাটি দিয়ে হেঁটে জঙ্গল থেকে বাইরে বেরিয়ে আসছে দুটি ছোট্ট ছেলে-মেয়ে।
এত দিন পর্যন্ত গ্রামবাসীদের ধারণা ছিল সেই জঙ্গলটিতে হিংস্র প্রাণী ছাড়া আর অন্য কোনো প্রাণীর বসবাস নেই। আর এই জঙ্গলটি থেকে দুটি জলজ্যান্ত মানব শিশু বেড়িয়ে আসতে দেখে তারা সবাই উৎসাহী হয়ে পড়লেন যে জঙ্গলে তাদের সাথে কি ঘটেছে!
গ্রামবাসীরা শিশু দুটির কাছে যেতেই থমকে দাঁড়ালেন, আরে এদের গায়ের রং সবুজ কেন? তার উপর আবার এমন উদ্ভট রকমের পোশাক পরেছে। এই ঘটনা দেখে গ্রামবাসীরা অবাক হয়ে রইলেন। গ্রামবাসীরা তাদের কাছে পরিচয় জিজ্ঞাসা করলে, সেই ছেলে-মেয়ে দুটো এমন সব ভাষায় কথা বলতে লাগল যা গ্রামবাসীরা এর আগে কোনোদিনও শোনেননি।
এই শিশু দুটিকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামবাসীরা দ্রুত নিয়ে যায় গ্রামের জমিদার স্যার রিচাড ডি কেনের কাছে। সেখানেই বাচ্চা দুটোকে রাখার ব্যবস্থা করা হল। কিন্তু এখন সমস্যা এসে দাঁড়াল তাদের খাওয়ার নিয়ে। তাদের সামনে যা কিছুই দেওয়া হোক না কেন তারা কিছুই খায় না। পরবর্তীতে কাঁচা শিম আর মটরশুঁটি এনে দেওয়া হলে বাচ্চা দুটি বেশ আগ্রহ ভরেই তা খেতে লাগল। প্রতিদিনই তাদের দেখতে শয়ে শয়ে মানুষ জমিদারের বাড়িতে ভিড় করত।
তবে এখানে মজার ব্যাপার হল সাধারণ মানুষদের সাথে সাথে মিশতে মিশতে ও তাদের সাথে চলতে চলতে ধীরে ধীরে বাচ্চা দুটির দেহের সবুজ বর্ণ ধীরে ধীরে হারাতে থাকে, এবং তাদের শরীরে ক্রমশ সাধারণ মানুষদের মত বর্ণ আসতে থাকে।
পড়ুনঃ- একটি অভিশপ্ত পুতুলের আসল ঘটনা
তবে এই নতুন পরিবেশের সাথে বিশেষভাবে মানিয়ে নিতে পারেনি ছেলেটি। ধীরে ধীরে যতই সময় এগোতে থাকে ততই ছেলেটির মনে বিষণ্নতা গ্রাস করে। ছেলেটির এই মানসিক বিষণ্নতা থেকে ধীরে ধীরে জন্ম হয় বিভিন্ন অসুখ ও ব্যাধি। যার ফলে দ্রুত মৃত্যু মুখে পতিত হয় ছেলেটি।
অপরদিকে মেয়েটি এই নতুন জীবনের সাথে ধীরে ধীরে খাপ খাইয়ে নিতে শুরু করল। তাকে খ্রিষ্ট ধর্মে দীক্ষিত করা হল। সে ধীরে ধীরে গ্রামবাসীদের ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে মিলিয়ে যেতে লাগল। এই মেয়েটি সম্পর্কে একটি বইয়ে উল্লেখ করা আছে যে “rather loose and wanton in her conduct” অর্থাৎ পরিবেশের সাথে কোনোমতে খাপ খাইয়ে নিলেও মেয়েটির আচরণে অমনোযোগিতা ও উদাসীনতা বেশ ভালো ভাবেই লক্ষ্য করা যাচ্ছিল।
গ্রামে বসবাসরত একটি পরিবার মেয়েটির দায়িত্ব নেয় এবং তাকে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয়। ইংরেজি ভাষায় কথা বলতে শেখার পর তাকে তার অতীত নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। সে অবশ্য তার নিজের সম্পর্কে খুব সামান্যই বলতে পেরেছিল।
মেয়েটি গ্রামবাসীদের জানায়, তারা দুই ভাই-বোন মিলে তাদের হারিয়ে যাওয়া গরুটি খুঁজতে একটি ক্ষেত দিয়ে যাচ্ছিল। এমন সময় তারা পাশের গুহা থেকে এক অদ্ভুত ঘণ্টার শব্দ শুনতে পায় তারা। খুব জোরে জোরে ঘণ্টার শব্দ শোনার পর কৌতূহলী মন নিয়ে তারা শব্দের উৎসস্থল খুঁজতে থাকে। গুহার মধ্যে ঢুকে তারা দুইজনই হারিয়ে যায়। দীর্ঘক্ষণ ধরে ঘুরতে ঘুরতে তারা একসময় গুহার অপরপ্রান্ত থেকে আসা প্রখর সূর্যালোকে তাদের চোখ ধাঁধিয়ে যায়।
হতবুদ্ধি অবস্থায় বেশ কিছুক্ষণ গুহার মুখে পরে থাকে তারা। এরপর তাদের কানে কৃষকদের কাজ করার ও কথা বলার শব্দ এসে পৌঁছায়। তারা শব্দের উৎসস্থলের খোঁজে হাঁটতে শুরু করে ও এই গ্রামটিতে এসে পৌঁছায় তারা।
মেয়েটির মুখে এই ঘটনাটি শোনার পর গ্রামবাসীরা রীতিমতো স্তব্ধ হয়ে যায়। এও কই সম্ভব। এমন গ্রামও কি থাকা সম্ভব এই পৃথিবীতে যে গ্রামের মানুষদের শরীরের বর্ণ সবুজ !
কৌতূহলী কিছু গ্রামবাসী মেয়েটির নির্দেশনা মত সেই পথ দিয়ে গেলে তারা নদী ছাড়া আর কিছুই খুঁজে পায় নি।
মেয়েটি পরিণত বয়সে নটফোক রাজ্যের এক যুবককে বিবাহ করেন। যিনি ছিলেন রাজা দ্বিতীয় হেনরির মুখপাত্র।
অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা আমাদের সামনে আসলেই তার শাখা প্রশাখা ছড়ানোই আমাদের কাজ । ঠিক এই ভাবেই এই ঘটনাটির সত্যতা নিয়ে অনেক মুখরোচক মতামত প্রচলিত রয়েছে।
পড়ুনঃ- ভুতের বশে তনু
অনেকেরই মতে বাচ্চা দুটো ছিল নরফোকের এক জমিদারের অভিভাবকত্বে। তাদের সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে শিশু দুটির শরীরে আর্সেনিক প্রয়োগ করে আরল। বিষের প্রভাবে শিশু দুটির শরীর সবুজ হয়ে যায় ও কথাবার্তায় আসে অদ্ভুত রকমের অসংলগ্নতা। পরবর্তীতে সেখান থেকে পালিয়ে উল্টোপিঠে চলে আসে শিশু দুটি।
আবার কারও মতে বাচ্চা দুটি অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতায় ভুগছিল। তৎকালীন সময়ে এই অসুখটিকে বলা হত “green sickness” এই রোগের সাথে তখনকার সময়ের লোকেরা খুব একটা পরিচিত ছিল না। আর যার ফলে একেবারেই ভিন্ন রঙের দুটি শিশুকে দেখে গ্রামের লোকেরা হইচই ফেলে দেয়। এমনকি শিশু দুটিকে অন্য গ্রহের প্রাণী বলতেও ছাড়েনি অনেকেই।
রূপকথার গল্পকে হার মানিয়ে দেওয়ার মত বাস্তব এই ঘটনাটি নিয়ে ঐতিহাসিকেরা বিভিন্ন সময়ে বেশ গুরুত্বসহকারে নানান ধরনের ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
ঐতিহাসিক পল হ্যারিসের মতে, ইংল্যান্ডের রাজা দ্বিতীয় হেনরি ও তাঁর বিরোধী শক্তি রবার্ট ডি বিউমন্টের মধ্যে ১১৭৩ সালের দিকে একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে প্রাণ হারান অসংখ্য ফ্লেমিশ বা বেলজিয়ামের অধিবাসী।
যুদ্ধের স্থানটি ছিল সেন্ট অ্যাডমুন্ডসের উত্তরে। সেই যুদ্ধের সময় কোনো এক ফ্লেমিশ পরিবার হয়ত ওই গ্রামটি থেকে পালিয়ে এসে উলপিট গ্রামের একটি নেকেড়ে বাঘের গুহায় এসে আশ্রয় গ্রহণ করে। দিনের পরদিন অন্ধকার ও খাদ্যাভাবে থাকায় মা-বাবা প্রাণ হারালেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় শিশু দুটি।
ফ্লেমিশ জামা-কাপড়ের সাথে পরিচিত না থাকায় উলপিট বাসীদের কাছে তা উদ্ভট মনে হয়েছিল। আর বেলজিয়ামের সাথে কোনো যোগাযোগ না থাকায় তারা যে ফ্লেমিশ ভাষা বুঝবে তারও কোনো মানে নেই। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে না খেয়ে থাকার জন্য বাচ্চা দুটির শরীরে ক্লোরোসিস তৈরি হয়েছিল, আর এর ফলে তাদের শরীরের বর্ণ সবুজ হয়ে যায়।
পরবর্তীতে সুষম খাদ্য গ্রহণের ফলে ধীরে ধীরে তাদের শরীরে ক্লোরোসিস নিঃসরণের মাত্রা কমে যায় ও তাদের দেহ ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে থাকে। বৈজ্ঞানিক মতে স্বীকৃত এই কারণগুলি শিশু দুটিকে ঘিরে তৈরি হওয়া কল্প জাল ধীরে-ধীরে ভেদ করে। আর বাস্তব জগতেরই এই দুই শিশু বাসিন্দা, অনাহারে,ভয়ে ও আতঙ্কে নিজের শিশু মনে তৈরি করে নেয় কল্প জাল। যেখানে তাদের জগতের সবার গায়ের বর্ণ সবুজ।
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
নিচে দেওয়া wp গ্রুপ টি শুধু মাত্র অ্যাক্টিভ মেম্বারদের জন্য। যাদের মনে হবে ব্যস্ত জীবনের অল্প সময় ও এখানে ব্যয় করতে পারবেন আড্ডা আলোচনার মধ্যে তাদের জন্য।
বি.দ্র. - ইউটিউবার দাদা দিদিরা যারা কনটেন্ট খুঁজতে গ্রুপ এ আসেন তারা এখানে অহেতুক ভিড় জমিয়ে নিজেদের ক্ষতি ডেকে আনবেন না।
WHATSAPP GROUP LINK- ছাড়পত্রিয়ানস (CHARPATRIANS) 👈🏻 ক্লিক করুন
পড়ুনঃ- ভালোবাসার গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন "শেকল বাঁধা ভূতের গল্প"
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে-
ফেসবুক Group - গল্প Junction
ফেসবুক- ছাড়পত্র
টেলিগ্রাম- charpatraOfficial
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।