GOPAL BHARER GOLPO নিয়ে যে নতুন একটি পর্ব আমরা শুরু করেছিলাম আজ তার চতুর্থ পর্ব। আজ থাকছে গোপাল ভাঁড়ের নতুন দুটি গল্প। এই গোপাল ভাঁড়ের গল্প সিরিজটির মজা উপভোগ করতে আমাদের সঙ্গে থাকুন।
GOPAL BHARER GOLPO. গোপাল ভাঁড়ের নতুন গল্পঃ-
গোপাল ভাঁড়ের গল্প-01
রাজার কয়েকদিন থেকেই মনটা ভালো নেই কারণ, রাজবাড়ি থেকে বিরাট এক হীরকখণ্ড চুরি হয়েছিল। মহারাজ গোপালকে একান্তে ডেকে নিয়ে বললেন- গোপাল তুমি যদি চোর ধরে দিতে পার, তবে তোমাকে আমি মোটা টাকা পুরস্কার দেব। রাজার কথা শুনে গোপাল বলল- চোর যদি রাজবাড়িতেই থাকে তাহলে আমি অনায়াসে ধরে দিতে পারব।
রাজা বললেন—রাজবাড়িতে ঢুকে বাইরের চোর চুরি করার সাহস পাবে না, এ ভেতরের চোরেরই অপকর্ম। দাসদাসী বা কর্মচারীরা যে কেউ করেছে।
গোপাল রাজাকে বলল- তবে চোর ঠিকই ধরা যাবে। গোপাল রাজবাড়ির দাসদাসী ও কর্মচারী সকলকে ডেকে বলল রাজবাড়ি থেকে কিছুদিন আগে একটা হীরা চুরি গেছে। যা গেছে, তা আর কখনই ফিরে আসবে না। ‘গতস্য শোচনা নাস্তি।’ যা চলে গেছে তার জন্য শোক করে লাভ নেই। হীরাটা কেমন ছিল রাজার মনে নেই। তোমরা যারা রাজবাড়িতে কাজ করছ- তারা অনেকেই সেই হীরেটি দেখে থাকবে। রাজা ইচ্ছানুযায়ী আমি তোমাদের সকলকেই কিছু কিছু মোম দিচ্ছি। এই মোম দিয়ে যে ঐ ধরনের একটি হীরা তৈরী করে দিতে পারবে— জহুরী তাকে এক হাজার টাকা পুরস্কার দেবেন।
গোপাল পরদিন গিয়ে কে কেমন হীরা তৈরী করেছে দেখতে চাইল। কেউ করেছে চ্যাপ্টা, কেউ বা গোল, কেউ বা হীরা জীবনে দেখেনি বলে একদম তৈরি করতেই পারেনি। শুধু দু’জন লোক অনেকটা হীরার মতই তৈরি করেছে। একজনের নাম দামু, আর একজনের নাম সাধু।
গোপাল সেই দুটি মোমের তৈরী হীরা নিয়ে রাজাকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল – মহারাজ দেখুন তো, এই দুটির মধ্যে কোন্টি চুরি যাওয়া হীরার অনুরূপ হয়েছে? মহারাজ সাধুর তৈরি মোমের হীরাটি হাতে নিয়ে বললেন— এটা অনেকটা হয়েছে।

গোপাল বলল— তবে ঐ সাধু ব্যাটাকে পাকড়াও করুন, ঐ ব্যাটাই আসল হীরা চুরি করেছে।
মহারাজ বললেন— তুমি কি করে বুঝলে? সাধু কিন্তু বহুদিনের পুরনো চাকর— বহুদিন থেকেই সে রাজবাড়িতে কাজ করছে। গোপাল বলল – মহারাজ, ব্যাটা নিশ্চয়ই ঘুঘু। ওকেই ফাঁদে ফেলুন, দেখবেন সব বেরিয়ে যাবে।
মহারাজ সাধুকে নানাভাবে ভয় দেখাতেই সে স্বীকার করল যে সেই হীরাটি চুরি করেছে। গোপাল চোর ধরে দেওয়ার ফলে, মহারাজের কাছ থেকে মোটা টাকা পুরস্কার পেল।
গোপাল ভাঁড়ের গল্প-02
গোপাল যখন মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে এলো- তখনও তার অবস্থা তত ভালো হয়নি। গোপালের বাড়িতে তিন-চারখানা খড়ের ছাউনিওয়ালা ঘর, উঠোন মাটির। ঘরে বর্ষায় জল পড়ে, উঠোন পিচ্ছিল হয়। গোপাল সচরাচর খড়ম পায়ে দিয়েই চলাফেরা করত।
ঘরে জল পড়ে পিচ্ছিল হওয়ায়, খড়ম পায়ে চলতে গিয়ে গোপাল ভাঁড় ঘরের মধ্যেই পা পিছলে পড়ে গেল। পড়ে গিয়ে সে বলল- উরে বাবা- বড্ড লেগেছে!
গোপালের স্ত্রী তাই দেখে হেসে বলল-লাগবেই তো! তোমার মুরোদ কতদূর জানা আছে। তুমি না রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সভাসদ্, তোমার হেন দূরবস্থা কেন? পাকাকোঠা তুলতে পারলে না কেন? ঐ মুখখানাই সার— রাজা কৃষ্ণচন্দ্র আসলে তোমাকে পাত্তা দেন না।
স্ত্রীর কথা শুনে গোপাল ভাঁড় চটে গিয়ে বলল- মেয়েছেলের ঠাট্টা আমার একদম সহ্য হয় না। আগামীকালই পাকা দোতলা বাড়ি তোলার ব্যবস্থা করছি।




তাই শুনে গোপালের স্ত্রী হেসে বলল- একতলা কোঠাবাড়ি করার মুরোদ নেই মিন্সের— একেবারে দোতলা কোঠাবাড়ি, বেশী বড়াই করো না, তোমার বড়াই শুনে, চড়াই পাখীটাও হাসছে।
গোপাল কিছুক্ষণ গুম হয়ে বসে থাকল তারপর রাগ করেই রাজবাড়ি চলে গেল। রাজসভায় উপস্থিত হয়ে রাজা ও সভাসদকে বলল আগামীকাল আমার জন্মদিন। আমার বাড়িতে আপনারা একটু পায়ের ধুলো দেবেন।
বাড়িতে এসে গোপাল ঘরামি লাগিয়ে একতলা সমান কতকগুলো বাঁশ পুঁতে বাঁশের ওপরে ছোট ঘর বানাল। ঐ ঘরে যেতে হলে বাঁশের গাঁট বা মই বেয়ে ওঠা ছাড়া কোন উপায় নেই।
পরদিন সকালে উঠে ছেলেকে বলল- তুই নিচে দাঁড়িয়ে থাকবি, রাজবাড়ি থেকে কেউ এলে তুই বলবি— বাবা ওপরে আছেন— আপনারা দয়া করে ওপরে উঠে যান।
গোপাল কিছুক্ষণ পর মই বেয়ে উপরে উঠে গিয়ে, মইটাকে ওপরে তুলে নিল। এখন ওপরে উঠতে হলে বাঁশের গাঁট বেয়ে ওঠা ছাড়া আর উপায় রইল না।
কিছুক্ষণ পরে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র পারিষদবর্নিগয়ে গোপালের বাড়িতে উপস্থিত হলেন। গোপালের ছেলে বলল- বাবা ওপরেই আছেন। আপনারা দয়া করে ওপরে উঠে যান। তিনি সকাল থেকেই আপনাদের অপেক্ষায় রয়েছেন।
রাজা দেখলেন—একমাত্র বাঁশের গাঁট বেয়ে ওপরে ওঠা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। গোপালও বাঁশের মাচার উপর দাঁড়িয়ে বলল—মহারাজ আসুন, আসুন ওপরে উঠে আসুন, পণ্ডিতমশায় আসুন, আপনারা সকলেই দয়া করে ওপরে উঠে আসুন।
রাজা বললেন— গোপাল তুমি যে টঙে বসে আছ– ওখানে আমরা যাব কি করে?




গোপাল মুখ কাঁচুমাচু করে বলল— মহারাজ গরীবেরও দোতলা বাড়ি করার সাধ হয়। ছোঁড়া কাঁথায় শুয়ে শুয়ে কেউ লাখ টাকার স্বপ্ন দেখে আমি গরীব মানুষ, দোতলা বাড়ি করার টাকা কোথায় পাব, তাই এই ব্যবস্থা।
গরীবের এই ত্রুটির জন্য আর অপমান করবেন না হুজুর। একটু কষ্ট করেই ওপরে চলে আসুন।
রাজা কৃষ্ণচন্দ্র গোপালের অভিসন্ধি টের পেয়ে বললেন- গোপাল, আর লজ্জা দিও না, ঐ টঙে যাবার ক্ষমতা আমাদের কারোর নেই। তুমি দয়া করে নিচে নেমে এসো। আগামীকালই তোমার পাকা বাড়ির ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
গোপাল অতি কষ্টে মই ধরে নিচে নেমে এল। রাজা ও পারিষদবর্গকে পরম সমাদরে ভুরিভোজনে আপ্যায়িত করল। পরদিন সকালেই রাজবাড়ি থেকে— ইঁট, কাঠ আর মিস্ত্রী এসে উপস্থিত হল।
গোপাল তার স্ত্রীকে বলল— মিন্সের মুরোদ দেখলে তো এবার?
আমাদের সঙ্গে ফেসবুকে যুক্ত হন- গল্প আর গল্প
“GOPAL BHARER GOLPO. NEW GOPAL BHARER NOTUN GOLPO. গোপাল ভাঁড়ের গল্প। গোপাল ভাঁড়ের নতুন গল্প।”




কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।