Spread the love

গোপাল ভাঁড়ের মজার গল্প। FUNNY STORY OF GOPAL BHAR:-

গোপাল ভাঁড় ছিলেন ভারী মজার মানুষ। তার গল্প পড়ে মজা পাবে না, এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। আজ থাকছে পাঁচটি গোপাল ভাঁড়ের মজার গল্প। এই গোপাল ভাঁড়ের হাসির কাহিনী গুলি পড়ে জানিও তোমার কোন গল্পটি ভালো লেগেছে।

গোপাল ভাঁড়ের মজার গল্প 1:-

একদিন মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র ঠিক করলেন তিনি গোপালকে ঠকাবেন। এর আগেও তিনি নিজেও বহুবার চেষ্টা করেছেন গোপালকে ঠকাতে কিন্তু পারেন নি। সেদিন মহারাজ গোপালকে ঠকাবার জন্য মনে মনে একটা বুদ্ধি এঁটে গোপালের অপেক্ষায় একা বসে রইলেন।

কিছুক্ষণের মধ্যেই গোপাল হেলতে দুলতে এসে হাজির হলো মহারাজের সামনে। দুজনে বসে নানা কথা আলোচনা হতে লাগল। কিছুক্ষণ পরে মহারাজ গোপালকে ঠকাবার উদ্দেশ্যে রহস্য করে বললেন— “গোপাল তোমার স্ত্রী নাকি পরমাসুন্দরী?”

গোপাল সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিল- “আগে আমারও সেই ধারণা ছিল মহারাজ। কিন্তু যেদিন আপনার স্ত্রীকে দেখলাম সেদিন আমার ভুল ভাঙ্গল।”

গোপাল ভাঁড়ের মজার গল্প 2:-

গোপালের স্ত্রীর কাছে থেকে একদিন ভুল করে কলশিটা পড়ে যায় এবং উঠোন জলময় ও পিচ্ছিল হয়ে যায়। সেদিন রাত্রিবেলা বাড়ির ভেতর ঢুকতে গিয়ে গোপাল পা পিছলে পড়ে যায়। পিছলে পড়ে গিয়ে গোপাল বিষম চটে গেল, স্ত্রীকে আর ছেলেপুলেদের বকতে লাগল— “এমন সংসারে কোন্ হারামি বাস করে।”

গোপালের স্ত্রীও কম নয় সে রান্নাঘর থেকে চেঁচিয়ে উঠল— “মিন্সে কি চোখের মাথা খেয়ে বসে আছে। দেখে চলতে পারে না। অন্ধ কোথাকার!”

গোপাল স্ত্রীর কথা সহজে হজম করার পাত্র নয়। সে বলল – “অন্ধ আমি আগেই ছিলাম, অন্ধ না হলে তোমার মতো গাবগাছের পেত্নীকে বিয়ে করে ঘরে আনি।”

উচিত জবাব পেয়ে গোপালের স্ত্রী চুপ করে রইল।

পড়ুনঃ- হুমায়ুন আহমেদ এর উক্তি

গোপাল ভাঁড়ের মজার গল্প 3:-

গোপালের কাছে এক বুড়ি এসে বলল- বাবা গোপাল, তোমার কি এখন সময় হবে?

– কেন দিদিমা ?

অনেকদিন হল ন্যাপ্লার কোন খবর পাচ্ছি না, ন্যাপ্লাকে একখানা চিঠি লিখে দাও বাবা।

ন্যাপ্লা কোথায় থাকে দিদিমা?

হরিপুরে থাকে, তা এখান থেকে প্রায় দশ-ক্রোশ দূর হবে।

গোপাল বলল— দিদিমা, আমি তো এখন চিঠি লিখতে পারব না, আমার যে পায়ে ভীষণ ব্যথা হয়েছে। দিদিমা হেসে বললেন— চিঠি লিখবে হাত দিয়ে, পায়ে ব্যথা হয়েছে তাতে কি হয়েছে? একটু কষ্ট করে লিখে দাও না বাবা।

গোপাল বলল – চিঠি লিখতে হলে পা ঠিক থাকতে হয়, নইলে চিঠি লেখার কোন মানে হয় না।

তার মানে? তুমি কি হাত পা মিলিয়ে চিঠি লেখ?

গোপাল হেসে বলল – তা অনেকটা সে রকমই। আমার হাতের লেখা এরকমই যে আমি ছাড়া সে চিঠি আর অন্য কেউ পড়তে পারে না, বুঝতেও পারে না। আমাকেই গিয়ে আবার সে চিঠি পড়ে দিয়ে আসতে হয়। এখন আমার পায়ে বড্ড ব্যথা—দু’চার দিনের মধ্যে দশ ক্রোশ পথ হৈটে যেতে পারব বলে মনে হয় না, তাই বলছিলাম আপনি অন্য কাউকে দিয়ে চিঠিখানা লিখিয়ে নিন।

গোপালের কথা শুনে বুড়ি বলল— তুমি অবাক করলে বাবা, এমন কথা বাপের জন্মেও শুনিনি।

গোপাল বলল— দিদিমা কিছু মনে করবেন না, নেহাৎ পায়ে ব্যথা নইলে আপনার চিঠি অবশ্যই লিখে দিতাম।

গোপাল ভাঁড়ের কাহিনী GOPAL BHARER GOLPO
গোপাল ভাঁড়ের কাহিনী GOPAL BHARER GOLPO IMAGE

গোপাল ভাঁড়ের মজার গল্প 4:-

পাড়া-প্রতিবেশী সকলের বাড়িতেই জামাই আসে। কিন্তু গোপাল জামাই আনার নামটি পর্যন্ত করে না। গোপালের জামাইটিও সুচতুর, শ্বশুরবাড়ি এসে শুধু বাগাবার তালে থাকে। তবুতো জামাই বলে কথা। শ্বশুরের যদি অবস্থা ভালো হয়, কিছুতো বাগাতে চাইবেই। মেয়ের বিয়ে দেওয়ার সময় গোপালের অবস্থা তেমন ভালো ছিল না। রাজার কৃপায় এখন তার অবস্থা ভালোই। গোপালের বউ সেদিন গোপালকে বলল তুমি কি ভেবেছ বলো তো?

<

—কেন কি হয়েছে?

পাশের বাড়িতে গতকাল জামাই এসেছে। কত ধুমধাম। আর এক বছর হয়ে গেল, তুমি যে জামাই আনার নামটি পর্যন্ত করো না।

স্ত্রীর কথা শুনে গোপাল বলল— জামাই আনা কি চাট্টিখানি কথা? কত খরচ বল তো?

গোপালের কথা শুনে তার স্ত্রী বলল – তোমার মতন হাড়কেপ্পন ভূ-ভারতে মিলবে না। রাজবাড়ি থেকে আনা টাকা আর মোহরে শ্যাওলা পড়ে যাচ্ছে— ঐ টাকা, মোহর কি কাজে লাগবে? দুটো নয় চারটে নয় আমাদের একটা মাত্র জামাই। আমি সাফ কথা বলে দিচ্ছি, আগামীকালের মধ্যে জামাই না আনলে- আমি চিরদিনের জন্য বাপের বাড়ি চলে যাব। গোপাল বুঝতে পারল, এবার জামাই না এনে উপায় নেই। না আনলে গিন্নী সত্যসত্যই বাপের বাড়ি চলে যাবে।

পরদিন সকালেই গোপাল জামাইকে বাড়ি নিয়ে এল। জামাই শ্বশুরবাড়িতে চোব্যচোষ্য খেয়ে নড়তেই চায় না। একেই কুড়ের বাদশা তার ওপর শাশুড়ির আদর যত্ন – বসে বসে এমন ভালো খেতে পারলে কে আর যেতে চায়। এভাবে প্রায় একমাস কেটে গেল। জামাই বলল কেষ্টনগরে এসে আমার স্বাস্থ্য ভালো হচ্ছে। আমি এখানে আরও কিছুদিন থাকতে চাই।

জামাইয়ের কথা শুনে গোপালের বউ অর্থাৎ শাশুড়ী ঠাকরুণ বললেন তা থাকো বাবা, তোমার যতদিন ইচ্ছে। রাজার কৃপায় তোমার শ্বশুরের তো কোনো অভাব নেই। তোমার মায়ের কাছে লোক পাঠিয়ে মেয়েটাকেও আনিয়ে নিচ্ছি। শাশুড়ী ও জামাইয়ের কথোপকথন শুনে গোপাল ভীষণ ঘাবড়ে গেল। জামাই বাবাজী দেখছি— ভাণ্ডার শূন্য না করে ছাড়বে না।

শাশুড়ীর আদর যত্নে এক মাসের মধ্যেই জামাই বেশ নাদুস-নুদুস্ হয়ে উঠেছে। তাই গোপাল এক ঢিলে দুই পাখী মারার ফন্দি আঁটল। একদিন গোপাল জামাইকে একান্তে ডেকে বলল- ঐ যে লেবু গাছটা দেখছ, বাবাজী। গাছটা আমার অত্যন্ত সখের গাছ। রাজবাড়ি থেকে এনে নিজের হাতে পুঁতেছি। গাছটায় প্রচুর লেবু ফলে। কিন্তু পাড়ায় যা চোরের উৎপাত — গাছের লেবু রক্ষা করা মুস্কিল। বিশেষতঃ সন্ধের পর থেকে চুরি শুরু হয়। তুমি একটু নজর রাখতে পারবে বাবাজী? নিশ্চয়ই পারব। চোরকে ধরে আপনার সামনে হাজির করব।

সেদিন গোপাল সন্ধেবেলা বাড়ি ফিরে এসে জামাইকে বলল—গাছটার দিকে নজর রাখছ তো বাবাজী?

জামাই বলল- চোর ধরবার জন্যই তো আমি আলো নিভিয়ে বসে আছি। চোর এলে আমার হাত থেকে কোনমতে নিস্তার পাবে না।

অমাবস্যার রাত। সন্ধ্যার পরেই ঘোর অন্ধকার। গোপাল বাড়ির ভেতরে গিয়ে স্ত্রীকে বলল— পেটটা ভালো নেই গিন্নী। লেবু গাছ থেকে চট্ করে একটা লেবু পেড়ে নিয়ে এসো তো।

শাশুড়ী অন্ধকারেই লেবু পেড়ে আনতে গেল, চেনা গাছ চেনা পথ— আলো নেওয়ার প্রয়োজনই বা কি। এদিকে জামাইও চোর ধরার অপেক্ষায় ওৎ পেতে বসেছিল।

জামাই শাশুড়ীকে জাপ্টে ধরেই ‘চোর চোর’ বলে চেঁচিয়ে উঠল। চিৎকার শুনে গোপাল চট করে আলো নিয়ে ছুটে গিয়ে দেখে জামাই শাশুড়ীকে জাপ্টে ধরে রয়েছে।

গোপাল স্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলল— আমি সব বুঝেছি। তাইতো বলি, জামাই আনার এত ধূম কেন? ছিঃ ছিঃ ছিঃ। শাশুড়ী ও জামাই উভয়েই ভীষণ লজ্জায় পড়ল। পরদিন ভোরে কাক ডাকার আগেই জামাই সবার অলক্ষ্যে শ্বশুরবাড়ি ত্যাগ করল। গোপালের স্ত্রীর মুখ থেকেও কোনও শব্দ বেরুল না।

পড়ুনঃ- নেতাজী সুভাষ চন্দ্রের বাণী।

গোপাল ভাঁড়ের মজার গল্প 5:-

গোপালের দূর সম্পর্কীয়া এক ভগ্নী ছিল। সে সবেমাত্র একটি ছেলে নিয়ে বিধবা হয়েছিল। ধান ভেনে, পরের বাড়ীর কাজকর্ম করে ছেলেটিকে ছ’সাত বছরের করলে। তারপর পাড়ার কোন দয়ালু লোককে ধরে ছেলেটিকে পাঠশালে দিল।

ছেলেটি পাঠশালে যায়, পড়াশুনা করে। এমনভাবে কিছুদিন কেটে গেল। একদিন ছেলেটি এসে মাকে বলল— মা আমি যে কেলাসে পড়ছিলুম, তার ওপর কেলাসে উঠেছি, আমার অনেকগুলো বইপত্র আর কাগজ চাই।বিধবার একমাত্র অবলম্বন, সে ক্লাসে উঠেছে, কোথা থেকে যে বই কাগজ পাবে, বিধবা ভেবে কূল কিনারা পাচ্ছে না। হঠাৎ তার মনে হল কৃষ্ণনগরে আমার দাদা গোপালের নাকি অবস্থা খুব ফিরেছে। যাই হোক, আমি ত’ তার বোন বটে। আমি যদি খোকাকে

সঙ্গে করে নিয়ে যাই, তা হলে দাদাকে ধরে বইগুলো কিনে আনতে পারব।

বিধবা এই কথা ভেবে তার পরদিন খোকাকে সঙ্গে করে কৃষ্ণনগরে গোপালের বাড়ীতে উপস্থিত হল। গোপাল তখন বাড়ীতে ছিল না। গোপালের স্ত্রী তার পরিচয় পেয়ে যত্ন করে তার পরিচর্যা করতে লাগল। সন্ধ্যার পূর্বে যথাসময়ে গোপাল বাড়ীতে এল। সে তার দূর সম্পর্কীয়া ভগ্নীকে দেখে চিনতে পারলে এবং তারা এসেছে দেখে গোপাল খুবই আনন্দিত হল।

এরপর গোপাল হাত মুখ ধুয়ে জলযোগ সেরে এক ছিলিম তামাক সেজে খেতে খেতে রোয়াকে বসল। ভগ্নীকে ডেকে তার কিভাবে সংসার চলছে— ইত্যাদি প্রসঙ্গ নিয়ে ভাই-ভগিনীতে গল্পগুজব করতে লাগল। এমন সময় খোকা পাতাড়ি পুরানো বইপত্র বগলে নিয়ে মা ও মামার কাছে বসলো। গোপাল খোকার নাম ও পড়াশুনার কথা জিজ্ঞাসা করতে লাগল।

কিছুক্ষণ পরে খোকার মা গোপালকে বললো- দাদা! আমার খোকা কেলাসে উঠেছে। আমার তো অবস্থার কথা সব জান। সেইজন্য ক’খানা নতুন বই কিনতে হবে, তাই তোমার কাছে এসেছি। দেখ ত দাদা। খোকা আমার কেমন লেখাপড়া করছে? আমি মেয়ে-মানুষ, ওসব তো কিছু বুঝি না, আর দেখবার শোনবার লোকই বা আমার কোথা?

গোপাল তার ভাগনেকে কোলের কাছে টেনে নিয়ে জিজ্ঞাসা করল বল ত বাবা ! কি বই পড়? খোকা। কেন? এই–এই বোধোদয় আর ধারাপাত।

গোপাল। বেশ খোকা। আচ্ছা বল দেখি বাবা, এক কেজি মানে কত গ্রাম?

খোকা— ১০০ গ্রাম।

গোপাল-বাষট্টি কড়া— ৩৬৫ দিনে একবছর হলে, ২ বছরে কত দিন?

খোকা- এ তো সাধারণ মামা ৭ দিন। কারণ সপ্তাহে সাতটা দিনই থাকে।

গোপাল- এক ঘণ্টায় ৬০ মিনিট হলে দেড় ঘণ্টায় কত মিনিট?

খোকা- ৬০ সেকেন্ড।

গোপাল ভাঁড়ের কাহিনী GOPAL BHARER GOLPO
গোপাল ভাঁড়ের কাহিনী GOPAL BHARER GOLPO
<

গোপাল তার ভাগনেকে যা জিজ্ঞেস করে— গোপাল মুখ থেকে বলতে না বলতেই ভাগ্‌নে তার উত্তর দিতে লাগল। কিছুই আর বাধলো না। খোকার মা বসে বসে ছেলের বাহাদুরি দেখে মনে মনে ভগবানকে ডাকতে লাগলেন—ভগবান, আমার বাছাকে বাঁচিয়ে রাখ। আর আমি তোমার কাছ কিছুই চাই না। শেষে বললে— দেখলে, দাদা, আমার সাত রাজার ধন মাণিক— এ ছেলে সমাজে মাথা উঠিয়ে দাঁড়াবে।

গোপাল বললে – হ্যাঁ, তোমার ছেলে যেমন বিদ্যান হয়েছে— আমার হাত বলেই বেঁচে গেল, অপর লোকের হাত হলে কি হ’ত বলতে পারি না।

“গোপাল ভাঁড়ের মজার গল্প। গোপাল ভাঁড়ের হাসির গল্প। গোপাল ভাঁড়ের কাহিনী। GOPAL BHARER HASIR GOLPO. GOPAL BHARER GOLPO”


Spread the love

1 thought on “গোপাল ভাঁড়ের মজার গল্প। গোপাল ভাঁড়ের হাসির কাহিনী। NEW FUNNY STORY OF GOPAL BHAR. GOPAL BHARER 5 HASIR GOLPO”

  1. এই গোপাল ভারের গল্পটা মাজার ছিল । বিসেস করে গোপাল ভারের ভাগ্নেটা অনেক সুন্দর কতো গুল্প প্রশ্নর উত্তর ফটা ফট দিল।

Leave a Reply

অনুগ্রহ করে অ্যাড ব্লকার টি ডিসেবল করে আসুন।