চলুন আজ নেতাজী সুভাষ চন্দ্রের বাণী পড়া যাক। এই ব্লগে নেতাজীর বাণী এবং নেতাজীর অনুপ্রেরণা মূলক গল্প রয়েছে। নেতাজীর এই শিক্ষণীয় বাণী এবং প্রেরণা মূলক গল্প গুলি থেকে জীবনে নতুন চলার দিগন্ত ফুটে উঠবে এমনটাই আশা রাখি।

নেতাজী সুভাষ চন্দ্রের বাণী। নেতাজীর অনুপ্রেরণা মূলক গল্পঃ-

netaji subhash chandra bose motivational stories in bengaliঃ-

সুভাষ চন্দ্র বসুর শিক্ষণীয় গল্প০১ ঃ-

ছোটবেলা থেকেই নেতাজী অত্যন্ত বিচক্ষন প্রকৃতির ছিলেন। একটু বড় হতেই, তাকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হল। এখানেও সুভাষ বেশ দক্ষতা দেখাতে লাগল। কিন্তু সমস্যা দাঁড়াল বাংলা নিয়ে। বাংলা তে তার নাম্বার খুবই কম আসত। বাঙালি হলেও বাংলা ভাষাকে নিজের আয়ত্তে আনতে পারেননি তিনি।

এরকমই একদিন ক্লাসরুমে শিক্ষক, একটি প্রবন্ধ লিখতে দিলেন, কিন্তু এতে সুভাষ চিন্তিত হয়ে গেলেন। কারণ প্রবন্ধ লিখতে হবে বাংলা ভাষায়। আর এই বাংলা ভাষাতেই তো সে খুবই কাঁচা। এরপর শিক্ষক যখন সবার খাতা দেখলেন, তখন তিনি সুভাষের লেখার মধ্যে বাকিদের তুলনায় অনেক ভুল দেখতে পেলেন। এরপর শিক্ষক সুভাষকে বাংলা ভাষার গুরুত্ব বোঝালেন, এবং একটু বকা দিলেন। কারণ সে অন্য বিষয়ে যতটাই পারদর্শী বাংলাতে ঠিক ততটাই অপারদর্শী।

এরপর শিক্ষক মহাশয় ক্লাস রুম থেকে চলে যেতেই, সহপাঠীরা তাকে নিয়ে মজা করতে লাগল। কিন্তু একজন সহপাঠীর কথা তাকে খুবই আঘাত করল। কারণ সেই সহপাঠীটি বলেছিল- “তুমি তো নিজেকে বেশ দেশ ভক্ত মনে করো, কিন্তু তুমি তো নিজের জন্মভূমির ভাষাই বলতে পারোনা। তাহলে তুমি কিসের দেশভক্ত?”

এই কথাটি সুভাষের খুবই খারাপ লাগল। সে ঠিক করে নিল যে সে, বাংলা ভাষা ভালো মত শিখবেই শিখবে। এরপর শুরু হল সুভাষের বাংলা শিক্ষা। এতদিন তিনি শুধু পাশ করার জন্যই বাংলা পড়তেন, কিন্তু এবার সংকল্প করলেন বাংলা ভাষা আয়ত্ত করার সাথে সাথে সবার থেকে বেশি নাম্বারও নিয়ে আসবেন। শুরু করলেন বাংলা ব্যাকারণ থেকে। এরপর একে একে আয়ত্ত করলেন ব্যাকরণের সবকিছুই। এদিকে ফাইনাল পরীক্ষাও আগত প্রায়।

কিন্তু পরীক্ষার রুমেও সুভাষকে অপমানিত হতে হল, তার একজন সহপাঠী তাকে বলল- যদিও তুমি প্রতিবারই প্রথম হও, কিন্তু আমরা তোমাকে প্রথম মানব না, কারণ তোমার নিজের ভাষার উপরেই তোমার নিয়ন্ত্রণ নেই।

দেখতে দেখতে ফাইনাল পরীক্ষাও শেষ হয়ে গেল। রেজাল্টের দিনও চলে এল। দেখা গেল যে, সুভাষ শুধু ক্লাসের মধ্যেই নয়, বরং বাংলা ভাষাতেও ক্লাসের মধ্যে সবথেকে বেশি নাম্বার পেয়েছে।

সুতরাং- কোনো কিছু মন থেকে সংকল্প করে নিলে, যে কাজটি আপনার অসাধ্যের বাইরে সেটিও সাধ্যের মধ্যে নিয়ে আসা যায়।

নেতাজী সুভাষ চন্দ্রের বাণী। নেতাজীর অনুপ্রেরণা মূলক গল্প
নেতাজী সুভাষ চন্দ্রের বাণী। নেতাজীর অনুপ্রেরণা মূলক গল্প

পড়ুনঃ- কিভাবে সুখী হওয়া যায় 

সুভাষ চন্দ্র বসুর শিক্ষণীয় গল্প০২ ঃ-

সুভাষ চন্দ্র বসুকে তার বাবা, ICS এর প্রস্তুতির জন্য ইংল্যান্ডে পাঠিয়ে দেন। প্রস্তুতি শেষে ICS পরীক্ষায় বসে তিনি চতুর্থ স্থান লাভ করলেন। নিযুক্ত হলেন ics পদে। কিন্তু তৎকালীন ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ইংরেজদের কীর্তিকলাপ তাকে প্রভূত পরিমাণে ব্যাথিত করে।

তিনি ICS পদ ত্যাগ করলেন। ছেলের এরূপ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি, পিতা জানকী নাথ বসু। কিছু দিন পড়ই তিনি শয্যাগ্রস্থ হলেন। এদিকে সুভাষের বড় ভাই শরৎচন্দ্র দেশপ্রেমী সুভাষকে চিঠি লিখলেন- “বাবা তোমার এরূপ সিদ্ধান্তে অত্যন্ত ব্যাথিত হয়েছেন। তিনি এখন রোগগ্রস্ত। উৎসাহের বশে এসে তুমি এমন কাজ করে ফেলেছ। এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার আগে, একবার হলেও তোমার বাবার সঙ্গে কথা বলার দরকার ছিল।“

এতদিনে দেশ সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করার কথা সুভাষ ঘোষণা করে দিয়েছেন। যখন তার দাদার চিঠি তার হাঁতে এসে পৌছাল, তখন তিনি খুবই দুঃখ পেলেন, এবং তার দাদাকে প্রত্যুত্তরে লিখলেন- “নিজের দেশের মানুষের কথা না ভেবে ইংল্যান্ডের রাজার সেবায় নিজের জীবন উৎসর্গ করার কথা আমি ভাবতে পাড়িনা। আমি আমার স্বদেশ সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করতে চাই। আর দেশবাসীর সেবা করার জন্য আমি সমস্ত কিছুই ত্যাগ করতে রাজী আছি। এতে আমার মা-বাবা আমার উপর রাগী হলেও, আমি সেটাও মেনে নিতে প্রস্তুত।“

এরপর চিঠি দাদার হাঁতে আসতেই তিনি লিখলেন- “বাবা এখন রাতে ঘুমাতে পাড়েন না, শুধু তোমার চিন্তায়। কারণ তুমি দেশে ফিরলেই সরকার তোমাকে গ্রেফতার করে ফেলবে। সরকার তোমাকে তোমার মত কাজ করে যেতে দিবে না। সরকার এখানে তোমাকে কিছুতেই শান্তিতে থাকতে দিবে না।“

এরপর নেতাজী আবার চিন্তায় পড়ে যান। নেতাজীর একজন কাছের বন্ধু হলেন দিলিপ। নেতাজী চিঠিটি দিলিপকে দেখালেন। চিঠিটি দেখার পড় দিলিপ বলল- “বন্ধু তুমি যদি চাও, তাহলে কিন্তু তোমার ত্যাগ পত্রটি বাতিল করে দিতে পাড়। আর এতে সরকারের রোষও তোমার উপর থেকে কমে যাবে। “

netaji subhash chandra bose quotes in bengali. netaji subhash chandra bose motivational stories in bengali
netaji subhash chandra bose quotes in bengali. netaji subhash chandra bose motivational IMAGE stories in bengali

এই কথাটি শোনা মাত্রই নেতাজী রেগে গেলেন। তিনি বললেন- “তুমি এই কথাটা ভাবলেও কি ভাবে যে, আমি ত্যাগ পত্র ফিরিয়ে নিব?”

দিলিপ-“ আমি তো শুধু বললাম যে, তোমার বাবা এখন অসুস্থ।“

নেতাজী- হ্যাঁ আমি জানি যে, আমার বাবা আমার চিন্তায় অসুস্থ হয়ে গেছেন। আর এর জন্য আমিও অত্যন্ত দুঃখিত। কিন্তু আমরা যদি আমাদের পরিবারের খুশির উপর ভিত্তি করে নিজের আদর্শকে পরিচালিত করি, তাহলে কি সেটা ঠিক হবে?”

এরপর নিজের অজান্তেই দিলিপের মুখ থেকে বেড়িয়ে এল- “ধন্য তুমি, ধন্য সুভাষ। আর ধন্য সেই পিতা-মাতা যে পিতা-মাতা এমন বীর সন্তানের জন্ম দিয়েছে যে দেশের স্বার্থে নিজের সর্বস্ব ত্যাগ করতেও প্রস্তুত।“

পড়ুনঃ- আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের বক্তব্য 

নেতাজী সুভাষ চন্দ্রের বাণীঃ-

০১. সমস্যার মুখোমুখি হলেই আমরা সমস্যার বিপরীতে পালানোর চেষ্টা করি, কিন্তু নেতাজী এই সম্পর্কে বলেছেন- “যদি জীবনে সংঘর্ষই না থাকে, জীবনে যদি কোনো ভয়ের মুখোমুখি হতে না হয়, তাহলে জীবনের অর্ধেক আনন্দটাই সমাপ্ত হয়ে যায়“।

০২. আমাদের সামনে খারাপ কিছু হয়ে চলেছে, অথচ আমরা প্রতিবাদ করিনা। হয়ত প্রতিবাদ করার সাহস পাই না, নতুবা ‘এতে আমার কি’ ভেবে চলে যাই। এক্ষেত্রে নেতাজী বলেছেন- “সর্বদা মনে রাখবে, অন্যায় সহ্য করা, এবং ভুলকে মেনে নেওয়া পৃথিবীর সবথেকে বড় অপরাধ।”

০৩. কথায় আছে ‘তেলা মাথায় তেল দেওয়াটা মনুষ্য জাতির স্বভাব।‘ এই তেলামাথায় তেল দেওয়াদের জন্য নেতাজী সুভাষ চন্দ্রের বাণী- “আমি জীবনে কখনো কাউকে খোসামদ করি নি, কারণ অপরকে ভালো লাগে, এমন কথা আমি বলতে পাড়ি না।”

০৪. নিজের স্বার্থ নয়, তার চেয়ে দেশের ও দশের স্বার্থটাই যে মূল, তা পরিষ্কার করে দেয় নেতাজীর এই বাণীটি- “আমি জানি না যে, স্বাধীনতার এই লড়াইয়ে অবশেষে কে কে বেঁচে থাকবে, কিন্তু আমি এটা জানি যে, অবশেষে আমরা বিজয়ী হবই হব।”

০৫. “ব্যর্থতার কাহিনী শুনে সময় খরচ করা আমি একদম পছন্দ করি না।”

০৬. জীবনসংগ্রামে হাঁর মেনে নেওয়া যোদ্ধাদের জন্য নেতাজীর বাণী- “সংঘর্ষই আমাকে মানুষ বানিয়েছে। কারণ সংঘর্ষের মাধ্যমেই আমার মধ্যে আত্মবিশ্বাসের উৎপত্তি হয়েছে, যেটি আগে ছিল না।“

০৭. “আমার মধ্যে জন্মগত প্রতিভা তো ছিল না, কিন্তু কঠোর পরিশ্রম থেকে বাঁচার প্রবৃত্তিও আমার মধ্যে কক্ষনোই জন্ম নেয় নি।”

০৮. “আমরা সংঘর্ষ এবং তার সমাধানের চেষ্টার দ্বারাই সামনে এগিয়ে যেতে পাড়ি।”

০৯. পৃথিবীতে মানুষের এত দুঃখ এবং কষ্ট প্রসঙ্গে নেতাজীর বাণী- “শ্রদ্ধার ঘাটতিই কষ্ট এবং দুঃখের মত জড়তার জন্ম দেয়।“

১০. “যেখানে মধুর অভাব থাকে, সেখানে গুঁড় দিয়েই মধুর অভাব পূরণ করাটাই শ্রেয়।”

১১. “অসফলতাই কখনো কখনো সফলতার মূল চাবিকাঠি হয়ে উঠে।”

১২. “সময়ের আগেই পরিপূর্ণতা প্রাপ্তি , মোটেই ভাল নয়। হতে পাড়ে, সে কোনো গাছ বা কোনো ব্যক্তি। সময়ের আগেই পরিপক্কতা প্রাপ্তি অচিরেই বিপদ ডেকে আনে।”

১৩. “মায়ের ভালোবাসা সবথেকে গভীর হয়, স্বার্থহীন হয়। একে কোনোদিনও পরিমাপ করা সম্ভব নয়।”

১৪. “স্বাধীনতা কখনো পাওয়া যায় না, স্বাধীনতা কেড়ে নিতে হয়।”

১৫.” একজন সৈনিক সর্বদা সত্যতা, কর্তব্য এবং বলিদান এই তিন আদর্শের উপরেই পরিচালিত হয়ে থাকেন। যে সৈনিক সর্বদা নিজের সত্যতা বজায় রেখে নিজের কর্তব্যের প্রতি আজ্ঞাপরায়ণ এবং দেশের জন্য বলিদান দিতেও প্রস্তুত সেই সৈনিক সর্বদা অজেয়। তাকে জয় করা সম্ভব নয়। আর তুমিও যদি অজেয় হতে চাও তাহলে তোমাকেও এই তিন আদর্শে রাঙিয়ে তুলতে হবে।”

১৬. “আমাদের জীবনে আশা নামক একটি কিরণ আসে, আর এই কিরণই আমাদের আগের রাস্তা আলোকিত করে দেয় ও আমাদের এগিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করে।”

নেতাজি সম্পর্কে কিছু কথা নেতাজী QUOTES
নেতাজি সম্পর্কে কিছু কথা নেতাজী QUOTES
<

১৭. “আমাদের চলার রাস্তা যতই কঠিন হোক না কেন, রাস্তা যতই কষ্টদায়ক হোক না কেন, আমাদের হাল ছাড়লে হবে না, আমাদের সর্বদাই এগিয়ে যেতে হবে। সফলতা দূরে থাকতে পাড়ে, কিন্তু একদিন আমরা অবশ্যই সফলতার দোর-গড়ায় পৌঁছে যাব।”

১৮. “আমরা বলিদান এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে যে স্বাধীনতা পাব, আমাদের মধ্যে অন্তত সেই স্বাধীনতা রক্ষা করার শক্তি থাকতেই হবে।”

১৯. “সফল হওয়ার জন্য আপনাকে একলাই চলতে হবে, মানুষ আপনার পাশে তো সেদিনই আসবে যেদিন আপনি সফল হবেন।”

২০. “যে ব্যক্তির মধ্যে উন্মাদনা পা পাগলামিপনা থাকে না, সেই ব্যক্তি কক্ষনোই সফল হতে পাড়ে না।”

২১. “সফলতার ভিত্তি প্রস্তর অসফলতা দিয়েই তৈরি হয়। তাই ব্যর্থ হলেই হাল ছাড়লে হবে না।”

২২. “আপনাকে নিজের শক্তির উপরেই ভরসা করতে হবে, কারণ ধার করা শক্তি আপনার জন্য ক্ষতিকারক হয়ে দাঁড়াতে পাড়ে।”

আমাদের FACEBOOK PAGE LINK- গল্প আর গল্প

JOIN WITH US ON TELEGRAM FOR REGULAR UPDATES:- CharpatraOFFICIAL

নেতাজী সুভাষ চন্দ্রের বাণী। নেতাজীর অনুপ্রেরণা মূলক গল্প। netaji subhash chandra bose quotes in bengali.
Spread the love

Leave a Reply