gopal bhar golpo. সম্পূর্ণ নতুন আরেকটি সিরিজ শুরু হল। এই সিরিজে গোপাল ভাঁড়ের সমস্ত গল্প আপনাদের কাছে তুলে ধরা হবে। তাহলে শুরু করছি গোপাল ভাঁড় গল্প সমগ্র। গোপাল ভাঁড় একজন অত্যন্ত বুদ্ধিমান মানুষ ছিলেন। শোনা যায় যে এক নাপিতের পরিবারে তার জন্ম হয়েছিল। সে যাই হোক শুরু করা যাক- গোপাল ভাঁড় গল্প সমগ্র পর্ব- ০১
gopal bhar golpo গোপাল ভাঁড়ের গল্প। পর্ব- ০১
মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের রাজবাড়িতে একজন ক্ষৌরকার কাজ করত। গোপালও জাতিতে নাপিত, ক্ষৌরকারও জাতিতে নাপিত, সে গোপালকে ভীষণ হিংসে করত। সে সব সময়ই ভাবত, গোপালের রাজদরবারে এত আধিপত্য , আমার বুদ্ধিই বা গোপালের চেয়ে কম কিসে? আমি আজীবন ক্ষৌরকর্ম করে যাব, আর গোপাল দু-চারটে মজার কথা বলে আজীবন অনেক টাঁকা কামাই করবে।
সে একদিন মন্ত্রীকে বলল – “আমিও গোপালের মতো ভাঁড় হব।”
মন্ত্রীমশায় তা শুনে গোপালকে বললেন-“ওহে গোপাল, শোনো শোনো! রাজবাড়ির ক্ষৌরকারও ভাঁড় হতে চায়। এত লোক ভাঁড় হলে সারা কৃষ্ণনগরই ভাঁড়ে ভাঁড়ে ভরে যাবে যে হে?”
মন্ত্রীমশায়ের কথা শুনে গোপাল, ক্ষৌরকারকে বলল- “বিষ্টু তুমি ভাঁড় হলে বিনে পয়সায় আমার দাড়ি কামাবে কে? ওসব ভাঁড়ামি বুদ্ধি ছেঁড়ে দাও বাপু, যার কর্ম তারই সাজে।“
গোপালের কথা শুনে ক্ষৌরকার মনে মনে ভীষণ চটে গেল। মুখে কিছুই বলল না, গোপালের দাড়ি কামিয়ে সেদিনের মতো বাড়ি ফিরে গেল। মুখে মিষ্টি ভাব বজায় রাখলেও সে মনে মনে গোপালকে জব্দ করার তালে রইল।
একদিন সে মন্ত্রীকে বলল, “দেখুন গোপাল ভাঁড়কে জব্দ করার ক্ষমতা আমি রাখি, আমার নাম বিষ্টু নাপিত।“
মন্ত্রী বললেন- “মুখে বড় বড় বুলি না ছেড়ে একবার কাজে করে দেখাও না বাবু । আমি কথা দিচ্ছি তুমি যদি গোপালকে জব্দ করতে পার এবং গোপাল যদি তোমাকে পাল্টা জব্দ করতে না পারে, তবে অবশ্যই আমি রাজাকে বলে তোমাকে দ্বিতীয় ভাঁড়ের আসন দেব।“
বিষ্টু নাপিত বলল- “আমি যে গোপালকে জব্দ করতে চাই, একথা যেন গোপাল কিছুতেই টের না পায়, মন্ত্রীমশায়।“
মন্ত্রীমশায় বললেন- “ আমি গোপালকে কোন কথাই বলব না। দেখি, তোমার বুদ্ধির দৌড় কত? শেষ পর্যন্ত কার নাক কান কাটা যায়।“
বিষ্টু নাপিত গোঁফে তা দিয়ে বলল- “মন্ত্রীমশায়, আপনি বিষ্টু নাপিতকে চেনেন না। গোপাল ভাঁড়ের ভাঁড় আমি অবিলম্বে ফুটো করে ছেড়ে দেব।“
বিষ্টু নাপিত গোপালকে জব্দ করার জন্য সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। একদিন সে সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে গেল। কথায় বলে ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়।
পড়ুনঃ- নেতাজীর অনুপ্রেরণা মূলক গল্প
বিষ্টু নাপিত একদিন খোঁজ নিয়ে জানল, গোপালের মায়ের ভারী অসুখ। অনেকদিন ধরেই ভুগছে। কবিরাজ বলে গেছে আমার ওষুধ শেষ, এবার ভগবানের হাত। বুড়ি যে কোনদিন মারা যেতে পারে তার কোনো ঠিকঠিকানা নেই। তার দু’দিন পরে গোপাল হাট থেকে একটা রুইমাছ নিয়ে বাড়ি ফিরছিল।
মাঝপথে বিষ্টু নাপিতের সঙ্গে দেখা হলো। বিষ্টু নাপিত দূর থেকে গোপালকে বড় রুই মাছ হাতে ঝুলিয়ে আসতে দেখে মনে মনে ফন্দী এঁটে নিল।
গোপালের কাছাকাছি হতেই সে চোখ মুছতে মুছতে বলল- “খুড়ো তাড়াতাড়ি বাড়ি যাও। তোমার মা…”
গোপাল বলল- “আমার মা?”
“তোমার মা আর নেই। আমি এইমাত্র তোমার বাড়ি থেকে এলাম। খবর পেয়েই আমি ছুটে গিয়েছিলাম, হাজার হলেও তোমরা আমার স্বজাতি।“
গোপাল অতি বড় চালাক হয়েও, পথিমধ্যে আকস্মিকভাবে মায়ের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে বিচলিত হল। কেঁদেই ফেলল। বিষ্টু নাপিত সান্ত্বনা দিয়ে বলল- “ খুড়ো কেঁদ না। মা কি কারও চিরদিন বেঁচে থাকে। বয়সও হয়েছিল। ঠিক সময়েই গেছে। তবে দুঃখ কি জানো, তোমার সঙ্গে শেষ দেখা হলো না। আর একটু আগে ফিরলেই শেষ দেখা হতো।“
গোপাল রুই মাছটা বিষ্টু নাপিতকে দিয়ে বলল- “এ মাছ আর কি হবে। এটা তুমি তোমার বাড়ি নিয়ে যাও। মাছটা রেখেই চলে এসো- তোমরাও আমার স্বজন, এই বিপদের সময়ে তোমরাই আমার সান্ত্বনা।“
মাছটা হাতে নিয়ে বিষ্টু বলল- “তা তো বটেই, আমি যাব আর আসব।“
গোপাল হন্তদন্ত হয়ে বাড়ি গিয়ে দেখল, তার মা অন্যদিনের থেকে ভালই আছেন। বিছানায় বসে মুড়ি খাচ্ছেন।
বিষ্টু নাপিত যে গোপালকে ঠকিয়ে রুই মাছটা হাতিয়ে নিয়েছে, সে কথা গোপাল কারো কাছে প্রকাশ করল না। এদিকে বিষ্টু নাপিত তো রুই মাছ হাতে করে নিয়ে গিয়ে তার পাড়ার সবাইকে বলেছে– ভাঁড়ের উপরও ভাঁড় আছে। তা আমি প্রমাণ করে দিয়েছি। গোপালকে জব্দ করে, এই মাছ বাগিয়ে নিয়ে এসেছি।
বিষ্টু নাপিতের কথা কেউ কেউ বিশ্বাস করে তাকে খুব বাহবা দিল। সংসারে আবার অবিশ্বাসী লোকও থাকে, কেউ কেউ ভাবল- গোপালকে ঠকানো এত সোজা নয়। কোত্থেকে একটা মাছ নিয়ে এসে বড়াই করছে।
এদিকে গোপালও চুপচাপ বসে ছিল না। সে ভাবল বিষ্টু নাপিত নিশ্চয়ই রুইমাছের কথা বলে সকলের কাছে বাহবা নেওয়ার চেষ্টা করবে। অতএব তার বাহবা নেওয়ার পথ বন্ধ করে দিতে হবে।
গোপাল তার পরমুহূর্তেই ছেলেকে নিয়ে হাটে গেল। একজন জেলের কাছে ছেলেকে পাঠিয়ে বলল- “ বিষ্টু নাপিতের নাম করে জেলের কাছ থেকে একটা রুই মাছ ধারে নিবি, বলবি ফেরার পথে বিষ্টু নাপিতের বাড়ি থেকে পয়সাটা নিয়ে নিতে।“
গোপালের ছেলে জেলের কাছে বিষ্টু নাপিতের নাম করে একটা বড় রুই মাছ ধারে চাইতেই জেলের সন্দেহ হলো। গোপাল এগিয়ে এসে বলল- “ছেলেটিকে আমি চিনি, তুমি রুইমাছটা দিয়ে দাও। ফেরার পথে বিষ্টু নাপিতের বাড়ি থেকে পয়সা নিয়ে নিও” জেলে বলল- “সে যদি না দেয়?”
গোপাল বলল- “আমি বাপু জামিন রইলাম, তুমি আমার কাছে মাছের দাম নিয়ে নিও।“
গোপালকে জেলে বিলক্ষণ চিনত। অতএব সে বিষ্টু নাপিতের নামে গোপালের ছেলের হাতে একটা বড় রুইমাছ দিয়ে দিল। গোপালের ছেলে রুইমাছটা নিয়ে কিছুটা ভিড়ের মধ্যে এগিয়ে যেতেই গোপাল ছেলের কানে কানে বলল- “একটা থলের মধ্যে মাছটা পুরে নিয়ে, তুই তোর মামাবাড়ি চলে যা। খবরদার এখানকার কেউ যেন মাছটা না দেখতে পায়। ছেলেও চালাক। সে সঙ্গে সঙ্গে একটা থলেতে মাছ পুরে নিয়ে মামাবাড়ি চলে গেল।
গোপাল হাট থেকে একটা বড় ইলিশ মাছ কিনে সবাইকে দেখাতে দেখাতে বাড়ি ফিরল। পথে মন্ত্রীর ছেলে আর রাজসভার নৈয়ায়িক পণ্ডিতের সঙ্গে দেখা হ’লো। তারা দাম জিজ্ঞেস করতেই গোপাল বলল- “বড্ড বেশী দাম পড়েছে, দু’গণ্ডা পয়সাই দিতে হলো।“
এদিকে কিছুক্ষণ পরেই হাটের সেই জেলে বিষ্টু নাপিতের কাছে গিয়ে বলল- “ওহে বাপু, মাছের দামটা দিয়ে যাও।“
বিষ্টু নাপিত অবাক হয়ে বলল- “মাছের দাম! আমি কি তোমার কাছ থেকে মাছ এনেছি?”
জেলে বলল- “তুমি না আনো, তোমার ছেলে এনেছে।“ বিষ্টু নাপিত ভাবল, এ নিশ্চয় গোপাল ভাঁড়ের চালাকি। সে বলল- “আমার ছেলে হাটেই যায়নি, আমি দাম দিতে পারব না।“
জেলে বলল- “ বেশ, তুমি না দাও যিনি জামিন ছিলেন তাঁর কাছ থেকেই দাম আদায় করে নেব।“
বিষ্টু নাপিতও বলল- “ তাইই আদায় করে নাও গে!”
পড়ুনঃ- অনুপ্রেরণার ছোট গল্প।
পরদিন গোপাল ভাঁড় রাজসভায় পৌঁছাবার আগেই বিষ্টু নাপিত রাজা আর মন্ত্রীর কাছে গোপালকে জব্দ করে রুই মাছ বাগাবার কথা বেশ বুক ফুলিয়েই ঘোষণা করল। রাজা খুশী হয়ে বিষ্টু নাপিতকে একশ টাকা পুরস্কার দিলেন। মন্ত্রীমশায় বিষ্টু নাপিতের পিঠ চাপড়ে খুব বাহবা দিয়ে বললেন- “সত্যি, বিষ্টু, তোমার এলেম আছে বটে। তুমি যে ভাঁড়ের উপর ভাঁড়ামি করেছো হে!”
বিষ্ণু নাপিত রাজার কাছ থেকে পুরস্কারের টাকা নিয়ে বুক ফুলিয়ে বাড়ি ফিরে গেল।
একটু পরেই গোপাল ভাঁড় রাজসভায় পৌঁছাতেই সভাস্থ সকলেই হোঃ হোঃ করে হেসে উঠল। গোপাল ব্যাপারটা মনে মনে বুঝতে পেরেও মুখে বলল- “ কি ব্যাপার? এত হাসির ধুম কেন?”
রাজা বলল- “গোপাল, তোমার মার নাকি গঙ্গাপ্রাপ্তি ঘটেছে।“
গোপাল বলল – “কই না তো! কে বলল?”
মন্ত্রীমশায় বললেন- “ কাল রুইমাছ কেমন খেলে? বিষ্টু তোমায় জব্দ করেছে বটে!”
সভায় আবার হাসির ধুম পড়ল। গোপাল যেন কিছুই জানে না, বলল- “আমি রুইমাছ খাব কি করে? আমি তো হাট থেকে ইলিশ মাছ কিনেছি এবং ইলিশ মাছই খেয়েছি। আর বিষ্টু আমায় জব্দ করবে কেন? আর চেষ্টা করলেই বা পারবে কি করে?”
গোপালের কথা শুনে রাজা জিজ্ঞেস করলেন- “সে কি! তুমি কাল বিকেলে হাট থেকে রুই মাছ কেননি?”
গোপাল বলল- “কই না তো।“
“তুমি হাট থেকে ইলিশমাছ কিনেছ এমন প্রমাণ দিতে পার?” রাজা গোপাল কে জিজ্ঞাসা করলেন।
গোপাল বলল- “নিশ্চয়ই পারি, মহারাজ। সবাই দেখেছে। এমন কি মন্ত্রীমশায়ের ছেলে এবং নৈয়ায়িক পণ্ডিতও দেখেছেন।“
রাজা মন্ত্রীমশায়ের ছেলে এবং নৈয়ায়িক পণ্ডিতকে রাজসভায় ডেকে পাঠালেন। তারা এসে গোপালের উক্তিকেই সমর্থন করল।
গোপাল বলল- “বিষ্টু নাপিতের ছেলে বরং একটা গরীব জেলেকে ঠকিয়ে রুইমাছ নিয়ে গিয়েছে।“ একটু পরে জেলেও এসে সভায় গোপালের কথা সমর্থন করল।
রাজামশায় বললেন- “তবে বিষ্টু তোমাকে ঠকিয়ে রুইমাছ নিতে পারে নি!”
গোপাল বলল- “না মোটেই না।“
মন্ত্রীমশায় মাথা চুলকে বললেন- “তবে যে বিষ্টু নাপিত তোমার কাছ থেকে রুইমাছ ঠকিয়ে নিয়ে গেছে বলে রাজামশায়ের কাছ থেকে পুরস্কার নিয়ে গেল।“
গোপাল মন্ত্রীমশায়ের কথা শুনে হোঃ হোঃ করে হেসে উঠে বলল- “তাই বলি, রাজসভায় এত হাসির ধূম কেন। নিজেরাই ঠকে গিয়ে নিজেরাই হাসছিলেন। ভাঁড়ামি ভাল, কিন্তু ঠকানো কি ভাল?”
রাজামশায় বিষ্টু নাপিতের ওপর ভীষণ চটে গেলেন, কয়েকজন রক্ষীকে বললেন-“বিষ্টুকে এক্ষুণি রাজসভায় ধরে নিয়ে এস।“
রক্ষীরা গিয়ে বিষ্টু নাপিতকে বেঁধে রাজসভায় নিয়ে এল। রাজামশায় বললেন- “বিষ্টু রুইমাছের দামটাও দিয়ে দাও।“
বিষ্টু নাপিত ভয়ে ভয়ে আর কোন কথা বলল না। পুরস্কারের একশ টাকা ফিরিয়ে দিল আর জেলেকে রুইমাছের দাম দিয়ে দিল।
গোপাল বলল-“ হুজুর পুরস্কারের একশ’ টাকা কিন্তু আমারই প্রাপ্য।“
রাজামশায় গোপালকেই একশ’ টাকা দিয়ে দিলেন।
মন্ত্রী রাজাকে বললেন- “বিষ্টুকে এত সহজে রেহাই দেওয়া উচিত নয়, বেটা মিথ্যে কথা বলে আমাদের নাজেহাল করেছে।“
রাজা রক্ষীদের বললেন- “বিষ্টুকে বাইরে নিয়ে গিয়ে একশ’ ঘা চাবুক লাগাও।“
একশ’ ঘা চাবুক খাবার পর বিষ্টু ল্যাংচাইতে-ল্যাংচাইতে এবং ককাতে ককাতে বাড়ি ফিরে যাচ্ছিল। গোপাল ইতিমধ্যে তার দেখা পেয়ে বলল- “কি ভাইপো, কেমন বুঝছ? অপরকে হিংসে করলে এই ফল হয়। ভাঁড়ের ওপর ভাঁড়ামি করতে যাওয়া ভাল নয়। যার যে কাজ, সে কাজ নিয়ে তার থাকা উচিত। আর আমার সঙ্গে লাগতে এসো না বাছাধন। পালাবার পথ পাবে না।“
এই পুড়ো সিরিইজ টির মজা যেন নিতে পাড়েন, তা নিশ্চিত হতে আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত হতে ভুলবেন না যেন- CharpatraOFFICIAL
আমাদের ফেসবুক পেজের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য ক্লিক করুন- গল্প আর গল্প
gopal bhar golpo. new fabulous story of gopal bhar in bengali. গোপাল ভাঁড়ের গল্প। গোপাল ভাঁড়ের নতুন গল্প। গোপাল ভাঁড় গল্প সমগ্র
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।