Spread the love

শিয়াল নাকি শেয়াল!! যাইহোক, আজ আপনাদের জন্য থাকছে কিছু সেরা শেয়ালের গল্প I mean শিয়ালের গল্প। চালাক শিয়ালের গল্প গুলির শেষে উপদেশও দেওয়া রয়েছে, আশা করছি এগুলি আপনাদের ভালো লাগবে।

শিয়ালের গল্প। শেয়ালের গল্প। শিয়াল পণ্ডিতঃ-

গাধা ও শিয়ালের গল্পঃ-

একদা এক বনে এক গাধা আর এল শিয়াল বাস করত। ওদের মধ্যে বেশ গাঢ বন্ধুত্ব হয়েছিল। দুই বন্ধু একদিন খাবারের খোঁজে বেরোলো। কিছুদূর যাবার পড় সামনে এক সিংহ দেখতে পেয়ে বিপদ বুঝে শিয়ালটা নিজেকে বাচাবার জন্য সিংহের একেবারে কাছে গিয়ে বলল- “মহারাজ যদি কিছু মনে না করেন তাহলে একটা কথা বলি। তবে তার আগে আমাকে কথা দিতে যে, আমাকে আপনি ছেড়ে দিবেন। তারপর ফিসফিস করে বলল- ওই গাধাটাকে একেবারে আপনার হাতের মুঠোয় এনে দিতে পাড়ি।”

সিংহ বলল- “বেশ তো তাই হবে। কথা দিলাম আমি।”

সিংহের এই কথা শুনে শেয়াল গাধাটাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে সিংহের কাছাকাছি একটা ফাঁদের মধ্যে ফেলল। সিংহ গাধাটাকে আধমরা করে দিল।

আর এইদিকে সিংহ যখন দেখল গাধার আর পালাবার উপায় নেই, তখন সে প্রথমে শেয়ালটাকে শেষ করল, তারপর ধীরে ধীরে গাধাটার কাছে গেল।

উপদেশ- অপরের সর্বনাশ করার চেষ্টা করা মানেই নিজের দুর্গতি ডেকে আনা।

শিয়ালের গল্প
শিয়ালের গল্প

ভালুক ও চালাক শিয়ালের গল্পঃ-

এক সময় এক বনে এক ভালুক আর এক শেয়াল পাশাপাশি বাস করত। দুইজনের মধ্যে এমন বন্ধুত্ব ছিল যে, বোনের অনেকেই তাদের দেখে হিংসে করত। দুই বন্ধু একসঙ্গে ঘুরতে ঘুরতে একদিন এক নদীর তীরে শ্মশানে এসে হাজির হল। আগের দিন কাছেরই কোনো গ্রামের লোকেরা তাদের এক আত্মীয়ের মৃতদেহ সৎকার করতে এসেছিল। এমন সময় প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি চলে আসায় মৃতদেহটি আধাপোড়া করে রেখে দিয়েই তারা চলে যায়।

শেয়াল ওই মৃত দেহটা দেখে বেজায় খুশি হয়ে গেল, সে ভালুককে বলল- আহা! আজ কার মুখ দেখে উঠেছিলাম! ওঃ দেখছ কি হৃষ্টপুষ্ট মানুষের দেহ, চলো চলো আমরা এক্ষণি গিয়ে ভোজ সেরে ফেলি। জীবনে প্রথম বাড়ের মত মানুষের মাংস খাওয়ার সুযোগ হয়েছে। এই সুযোগ দ্বিতীয়বার আসবে না।”এই কথা বলতে বলতে শেয়ালের মুখ দিয়ে লালা ঝড়তে লাগল।

ভালুক শেয়ালের কথা শুনে হেঁসে বলল- “তুমি খাবে খাও, আমি তোমার মত নীচ নই; আমি মরা মানুষ খাওয়া তো দূরের কথা, স্পর্শও করি না।

ভালুকের এইরকম কথা শুনে শিয়াল কিছুমাত্র লজ্জিত না হয়ে তৎক্ষণাৎ বলে উঠল- বন্ধু তুমি যা বললে সবই ঠিক, কিন্তু আমার কথা হচ্ছে, তুমি যদি জ্যান্ত মানুষ দেখলেই তাকে মেরে না ফেলে খেয়ে ফেলো, তাহলে আমি অবশ্যই জোর গলায় বলতাম- তুমিই আমার চেয়ে উচ্চশ্রেণীর প্রাণী এবং মহৎ।

চালাক শিয়ালের গল্প ভালুক ও শিয়ালের গল্প
চালাক শিয়ালের গল্প ভালুক ও শিয়ালের গল্প
পড়ুনঃ- বিদেশী শিক্ষণীয় গল্প

বোকা ছাগল ও চতুর শিয়ালের গল্পঃ-

এক ছিল চালাক শিয়াল। জল খেতে গিয়ে সে একবার এক কুয়োর মধ্যে পড়ে গিয়েছিল। অনেক চেষ্টা করেও সে কিছুতেই উপড়ে উঠতে পাড়ল না।

ইতিমধ্যে এক বোকা ছাগল কুয়োর কাছে এসে সিয়াল্কে জিজ্ঞাসা করল, “ভাই, এই কুয়োর জলটা কেমন?”

শিয়াল বলল- “সত্যি ভাই আমি তো এর চেয়ে মিষ্টি জল আজ পর্যন্ত খাইনি। এসো, তুমিও খেয়ে দেখ একবার।”

জল খেতে বোকা ছাগলও কুয়োর মধ্যে ঝাঁপ মারল। তখন সেও একই সমস্যায় পড়ল। শিয়াল বলল আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে, যাতে আমরা দুইজনেই এই কুয়ো থেকে বেড়তে পাড়ব। তুমি তোমার পেছনের পায়ের উপর ভড় করে উপড়ে দাড়াও। আমি তোমার গা বেয়ে উঠে আর তোমার সিং ধরে এক লাফে কুয়ো থেকে বাইরে বেড়িয়ে যাব।

ছাগল বলল- “তাহলে আমি বেড় হব কিভাবে?” শিয়াল বলল- “যেভাবে আমি বেরোব ঠিক সেইভাবেই। আমি নীচে নামব, তুমি আমার উপর পা দিয়ে উপড়ে উঠে যাবে।”

বোকা ছাগল শেয়ালের কথার মর্মার্থ কিছুই বুঝতে পাড়ল না। চালাক শেয়াল ছাগলের পীঠে পা দিয়ে তার শিং ধরে কুয়োর বাইরে বেড়িয়ে এল।

যখন ছাগলকে বাইরে বেড় করার প্রসঙ্গ এল তখন সে বলল- “ভাই আমি নীচে নামলে আমি উপরে উঠব কিভাবে। তাছাড়াও আমার বড্ড খিদে পেয়েছে, আমি বরং একটু ঘুরে আসি।”

বেচারা ছাগল কুয়োর মধ্যে থেকেই -“আমাকে বাঁচাও আমাকে বাঁচাও বলে ব্যর্থ চিৎকার করতে লাগল।”

<

শিয়াল বলল- “বোকা ছাগল, বয়স বেড়েছে ঠিকই কিন্তু বুদ্ধি বাড়েনি।

উপদেশ- অসৎ কে বিশ্বাস করা অনুচিত। যখনই আপনার মনে বিন্দু মাত্র কারও চাতুরির আভাস ধরা পড়বে, তৎক্ষণাৎ তার থেকে দূরে চলে যাওয়াই মঙ্গল।

পড়ুন- শিক্ষামূলক গল্প

শিয়াল ও কাঁটাঝোপঃ-

একবার এক শেয়াল এক বাড়িতে চুরি করতে গেছে। কিন্তু পাছে তাড়া খেয়ে সে বেড়া ডিঙিয়ে পালাতে গিয়ে পা ফসকে পড়ে যেতে যেতে নিজেকে সামলাতে একটা গাছে ধরল।

এমন ভাগ্য তার, গাছটা ছিল একটা কাঁটা গাছ। ঝোপের কাঁটায় পা লেগে, তার পা অনেক খানি ছড়ে গেল। যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে সে কাঁটা-ঝোপটাকে বলল- এক কি কাণ্ড, তোমার শরণাপন্ন হলাম আমি আর তুমি কিনা আমার এমন দুরবস্থা করে ছাড়লে?

কাঁটা গাছটা বলল- “বন্ধু আমাকে ধরতে গেছ তুমি, এইখানেই যে তুমি মস্ত বড় ভুল করেছো। আমি নিজেই যাকে পাই তাকেই ধরি, তার উপর তুমি চলে এলে চিনি দেওয়া দুধে মিশ্রী মেশাতে, এতে আমার কোনো দোষ নেই।

উপদেশ- খারাপের শরণাপন্ন হলে ক্ষতির স্মভাবনাই বেশি।

বাঘ ও শিয়ালের গল্পঃ-

পশুদের রাজা সিংহ। যেমনি তার চেহারা তেমনই তার গর্জন। তাকে দেখলে তো বটেই, দূর থেকে তার গর্জন শুনলেই পশুরা ভিরমি খেয়ে প্রায় আধমরা হয়ে যেত।

এক শিয়াল এক বনে বাস করত, যেখানে কনো সিংহ ছিল না। একদিন খিদের জ্বালায় অস্থির হয়ে শেয়াল ঘুরতে ঘুরতে এমন এক বনে এসে পড়ল যেই বনে পশুরাজ সিংহ বাস করত। শেয়াল তখন খাবারের খোঁজে ওই বনে ঘুরছিল, এমন সময় দূর থেকে সিংহের গর্জন তার কানে এল। সেই ডাক শোনা মাত্রই শেয়াল ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে মাটিতে বসে পড়ল। একটু পড়ে সিংহ যখন তার সামনে এল তখন সিংহের বিশাল চেহারা দেখে ঝোপের আড়ালে ভয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে রইল।

আরেক দিন শেয়াল সেই বনে এসে আবার সিংহের দেখা পেল। এবার যে তার ভয় করল না তা কিন্তু নয়, তবে এবারে কিন্তু সে আগের মত অজ্ঞান হয়ে গেল না। বরং কিছুক্ষণ তার দিকে চেয়ে রইল। “হ্যাঁ বিরাট চেহারা বটেই, তবে সেও তো আমার মত পশু।” আমায় তো সেই দিন খেয়ে ফেলেনি এই ভেবে শেয়াল তাকে দেখে আর পালাল না।

এর কিছুদিন পড়ে আবার বনে এসে সিংহের সাথে যখন তার দেখা হল- তখন তাকে দেখে ভয় যে তার একেবারেই করল না তা নয়, বরং আগের থেকে অনেক কম। তবু ভিতরে ভয় নিয়ে এবং বাইরে ভয়ের কিছু না দেখিয়ে শিয়ালটি সিংহের সামনে দিয়ে স্বচ্ছন্দে চলে গেল।

এরপর অবশেষে এমনও একদিন এল, যখন সে সিংহকে দেখে তাকে বিন্দুমাত্র ভয় না পেয়েই তার সামনে গিয়ে বলল- “মহারাজ ভালো আছেন তো?”

শিয়ালের মুখে নিজের প্রশংসা শুনে সিংহ বেজায় খুশি তো হলই, তার সাথে সাথে শেয়ালকে উপহার স্বরূপ সিংহের গুহাতে থাকা হাড় গুলি চিবিয়ে খাবারও সুযোগ দিয়েছে।

উপদেশ- সমস্যা দেখে সমস্যার মুখোমুখি না হয়ে তাকে না দেখেই সমস্যা নিয়ে ভয় পাওয়া অহেতুক চিন্তা করা আমাদের স্বভাব। তাই সমস্যা দেখে ভয় নয়, সমস্যার মুখোমুখি দাঁড়ালে বোঝা যায়, আমরা সমস্যাটিকে যতটা কঠিন ভাবী, আদতেও সেটি ততটাও কঠিন নয়। তাই দূর থেকে অনেক কিছু ভাবা উচিত নয়।

পড়ুনঃ- মোটিভেশনাল গল্প

সিংহ ও শিয়াল পণ্ডিতের গল্পঃ-

একদা এক বনে এক সিংহ, শিয়াল আর নেকড়ে অন্যান্য জীবজন্তুদের সাথে থাকতো। একদিন সিংহ শিয়াল আর নেকড়ে কে সঙ্গে নিয়ে শিকারে বেড় হল। শিকারে বেরোবার সময় সিংহ সবাইকে বলে দিয়েছিল, আমরা তিনজনে যখন একত্রে বেড়িয়েছি তখন শিকার যা পাবো তিনজনেই সমান ভাগে ভাগ করে নেব। সিঙ্ঘের প্রস্তাব সকলেই মেনে নিল।

জঙ্গলের ভেতরে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরির পর শিকার মিলে গেল। একটা নাদুস-নুদুস হরিণ। তিনজনে মিলেই হরিণটাকে মারল। তখন সিংহ নেকড়ে কে বলল ভাই নেকড়ে তুমি হরিণটাকে আমাদের মধ্যে ভাগ করে দাও।

নেকড়ে তখনই মাংস ভাগ করতে বসল। সে অনেকক্ষণ ধরে হরিণটাকে সমান তিনভাগে ভাগ করল। তারপর সিংহকে বলল, নাও ভায়া এর যে কোনো এক ভাগ পছন্দ করে নাও।

নেকড়ের কথা শুনে আর মাংসের ভাগ দেখে সিংহ তো রেগে উদ্যম হয়ে গেল। সে হুংকার দিয়ে একলাফে নেকড়ের ঘাড়ে লাফিয়ে পড়ল। তার থাবার এক চাপড়েই নেকড়ে মরে গেল।

রাগ কিছুটা ঠাণ্ডা হয়ে এলে সিংহ শিয়ালের দিকে তাকাল। বলল, পণ্ডিত ভাগটা এবার তুমিই করে ফেল। তুমি তো আর নেকড়ের মত বোকা নও।

শিয়াল এতক্ষণ চুপচাপ সব কাণ্ডকারখানা দেখছিল, আর সবকিছুর অর্থ বোঝার চেষ্টা করছিল। পরিস্থিতি দেখে ইতিমধ্যে সে বুঝে গেছে যে মাংস ভাগ করার ব্যাপারটা ছিল সিংহের একটা ছল মাত্র। সিংহ মুখে সমান ভাগের কথা বলেছে বটে কিন্তু নিজের ভাগ অপছন্দ হলেই এই কথা তার মনে থাকবে না। তার তুলনায় সিংহের গায়ে জোরও বেশি। সে যা করবে তাইই তাকে মেনে নিতে হবে।

বাঘ ও শিয়ালের গল্প শেয়ালের গল্প
বাঘ ও শিয়ালের গল্প শেয়ালের গল্প
<

শত হোক শিয়াল পণ্ডিত বলে কথা। নেকড়েকে নিজের চোখের সামনে মরতে দেখে তার শিক্ষা না হবার কথা নয়। সে সিংহের ভাগে সমস্ত মাংস সাজিয়ে দিল আর সামান্য এক টুকরো নিজের জন্যে রাখল।

সিংহ শিয়ালের ভাগ দেখে বেজায় খুশি। মুখে আর হাঁসি ধরে না তার। সিংহ হাসিমুখে বলল, বন্ধু সত্যিই তুমি শিয়াল পণ্ডিত। তুমি যেভাবে মাংস ভাগ করে দিয়েছ, এমনটি আর কেউ করতে পারত না।

উপদেশঃ- অপরের দেখে শিক্ষা নেওয়াটা অনেক জরুরি, অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা করতে হয়।

পড়ুনঃ- ঈশপের শিক্ষামূলক গল্প

ব্যর্থতা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক-ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp- ছাড়পত্র

“শিয়ালের গল্প। শেয়ালের গল্প। চতুর শিয়ালের গল্প। শিয়াল পণ্ডিতের গল্প। চালাক শিয়ালের গল্প”


Spread the love

Leave a Reply

আমাদের পরবর্তী আপডেট কি পেতে চান হ্যাঁ পেতে চাই না