২ টি নতুন মোটিভেশনাল ছোট গল্প থাকছে আজ। এই ছোট গল্প দুটি আমাদের শিক্ষা দেবে, যে বিদ্যার ভাঁড়ে অহংকার যেমন ঠিক নয়, তেমনই উচিত সবসময় সবার কাছে থেকে শিক্ষা নেওয়া। আর অপর গল্পটিতে খুঁজে পাবেন, শুধু ভাগ্যকে দোষারোপ করে, কিছুই পরিবর্তন হবার নয়। আপনার জীবনের বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন আপনাকেই করতে হবে।
মোটিভেশনাল ছোট গল্প। ছোট শিক্ষণীয় গল্পঃ-
মোটিভেশনাল ছোট গল্প– বিচারকের বিদ্যার ভাঁড়ঃ-
তখনও ভারত থেকে পাকিস্তান বা বাংলাদেশ ভাগ হয়নি। এই গল্পটি সেই সময়েরই। সেই সময় আমেরিকা থেকে একজন বিখ্যাত বিচারক ভারতে আসেন। তিনি একবার একজন প্রফেসরের কাছে একটি মামলার ব্যাপারে দেখা করতে যান। দুইজনে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে থাকেন, বিচারকটি প্রফেসরকে বললেন- “ আমি অনেক পড়াশোনা করেছি ঠিকই, কিন্তু আমার জ্ঞান সীমিত বলেই আমি মনে করি, আমি আরও বিস্তারিত জ্ঞান লাভ করতে চাই, আমি আপনার কাছে কিছু শিখতে চাই, আপনি কি এই ব্যাপারে আমাকে কিছু সাহায্য করতে পাড়বেন?
প্রফেসর জানতেন যে, এই বিচারক একে তো তিনি ইংলিশ ম্যান, তার-উপর তিনি অত্যন্ত শিক্ষিত এবং কিছুটা অহংকারীও। তাই প্রফেসর কিভাবে সেই বিচারকের কথার উত্তর দিবেন তা ভাবতে লাগলেন। কারণ এই বিচারক নিজের শিক্ষার প্রতি খুবই অহংকারী। প্রফেসর তার নোট খাতা থেকে দুটি পৃষ্ঠা ছিঁড়লেন, এরপর সেই পৃষ্ঠা দুটি সেই বিচারকের হাঁতে দিয়ে বললেন- “আমার তো জানা নেই যে আপনি কি জানেন আর কি জানেন না, তাই আপনাকে এই দুটি পৃষ্ঠা দিচ্ছি।
এর একটিতে আপনি যেগুলি পাড়েন সেগুলি লিখুন, আর অন্যটিতে যেগুলি পাড়েন না সেগুলি লিখুন। আমি আপনাকে এরকম করে লিখতে বলছি কারণ, যেগুলি আপনি জানেন, সেগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা বৃথা। তাই যেগুলি জানেন না, সেগুলির উপরেই আলোচনা করা যুক্তি যুক্ত কাজ হবে বলে আমার মনে হয়।
প্রফেসরের কথা গুলি সহজ সরল হলেও, বিচারক অত্যন্ত ঘাবড়ে গেলেন। তিনি খুজেই পেলেন না, যে তিনি কি জানেন আর কি জানেন না, তিনি মনে মনে প্রফেসরকে নীচ দেখানোর পরিকল্পনা করেছিলেন, কিন্তু এবার তার মনে হতে লাগল, প্রফেসর আইন সম্পর্কে জানেন, ধর্ম সম্পর্কে জানেন, দেশ সম্পর্কে জানেন। কিন্তু কি প্রশ্ন করলে প্রফেসরকে নীচ দেখানো যাবে সেই চিন্তাতে তার মাথা ঘুরে গেল।
প্রফেসর দেখলেন সেই বিদ্যার ভাঁড়ে ভাঁড়ি হয়ে যাওয়া বিচারক এবার ঘামতে শুরু করেছেন, প্রফেসর কিছু বলার আগেই, বিচারক তার হাঁতে সেই কাগজ দুটি ফিরিয়ে দিয়ে কাঁদো কাঁদো সুরে বললেন- “জনাব আমি তো কিছুই জানি না, এই মুহূর্তে কিছুই আমার মাথায় আসছে না।“
কিন্তু এই কিছু সময়ে আপনি আমাকে যে শিক্ষাটুকু দিলেন, সেটি আমি জীবনেও ভুলব না। প্রফেসর পুলকিত নয়নে মৃদু হেঁসে বললেন- “ঠিক আছে, আপনার প্রথম শিক্ষা হল, আপনাকে সর্বদা মনে রাখতে হবে যে, আপনি কিছুই জানেন না, এটাই হল জ্ঞানের প্রথম ধাপ। আর দ্বিতীয় ধাপ হল আত্ম-অহংকার এটা ত্যাগ করা। যদি আমরা সর্বদা, শেখার চেষ্টায় থাকি, অর্থাৎ আমরা যদি সব কিছু থেকে জ্ঞান আহরণের চেষ্টা করি তাহলে আমরা আবিষ্কার করব যে, পৃথিবীর প্রতিটি বস্তু বা ব্যাক্তি বা প্রাণীর থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।
যেমন ওই যে রাস্তায় চলতে থাকা পাগল টাকেই দেখুন না, কিরকম হাসছে আর খেলছে। সে সর্বদা হাঁসি মুখে এবং খুশি থাকার শিক্ষা দেয়। তাই বলে আপনাকে কিন্তু তার মত পাগল হতে বলছি না, আপনি সে-টুকুই সংগ্রহ করবেন যেটুকু বাস্তবতা ধরে এগোচ্ছে।
পড়ুনঃ- সেবা করতে কি শুধু অর্থই প্রয়োজন- বাস্তব জীবনের শিক্ষণীয় গল্প
ছোট শিক্ষণীয় গল্প- মাকড়সার ভাগ্যঃ-
প্রাণের শহর জলপাইগুড়ি, সেই শহরেই রয়েছে বিশাল একটি সংগ্রহশালা। এখানে বিভিন্ন সময়ের, বিভিন্ন কালের বিশেষ বিশেষ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রাখা আছে। বছরে দুই-একবার প্রদর্শনীও করা হয়, সংগ্রহশালার তরফ থেকে।
এই সংগ্রহশালাতে ছিল কয়েকটি অতি প্রাচীন ছবির ফ্রেম, ফ্রেমগুলি দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনই সুন্দর এর উপরের কারুকার্য। করোনার প্রকোপের জন্য অনেক দিন ধরে সংগ্রহশালাটি খোলা হয়নি, স্বভাবতই অনেক পোকা-মাকড়ের বাসস্থান হয়ে উঠেছে এই সংগ্রহশালাটি।
এই সংগ্রহশালাতে থাকা সেই অতি প্রাচীন ছবির ফ্রেমটি আরামে বাস করছিল একটি মাকড়শা। সে বিন্দাস এখানে জাল বুনে, শিকার ধরে। তার কাছে এই ছবির ফ্রেমে থাকা তার জালটাই হল সব। সারাটা দিন সে, জালের এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে নজরদারি চালায়।
ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হল, করোনা ভাইরাসের প্রকোপ কমে গেল। সংগ্রহশালাটিও এবার খুলল। কর্মচারীরা একে একে সব জিনিস পরিস্কার করতে লাগলেন, সব জিনিস গুলিতেই পুরু ধুলোর আস্তরণ পরেছে। এটি দেখে, সেই সংগ্রহশালার কিছু মাকড়শা নিজেদের প্রিয় জাল গুলি ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে গেল, কিন্তু সেই মাকড়শাটি কোথাও পালাল না। কারণ সে বিশ্বাস করত, এই ফ্রেমটি লোকগুলির নজরে আসবে না।
প্রথমদিন, মাকড়শার ভাবনাই ঠিক হল, কেউই সেই ফ্রেমটির দিকে ফিরেও তাকাল না। কিন্তু পরের দিন, একজন লোক এসে সেই ফ্রেমটি পরিস্কার করতে নিয়ে যেতে লাগল। মাকড়শাটি তবুও ভাবতে লাগল যে, হাজার হলেও এই ফ্রেমটিতে বানানো তার জালটি লোকটি ভাঙবে না। আর এটাই তো তার প্রিয় জায়গা। এই জায়গা ছেড়ে সে অন্যত্র পালাতে পাড়বে না। তাই সে নিজের জাল ধরেই আঁকড়ে থাকল।
কিন্তু সে দেখছে পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়ঙ্কর, কারণ মানুষগুলি সেগুলি শুধু পরিষ্কারই করছে না, বরং তার সাথে সাথে জিনিস গুলির উপর কি যেন স্প্রে করছে। সে চমকে উঠল, তার কষ্টে বানানো এই জালটি ধরেই সে যদি থেকে যায়, তাহলে হয়ত তার জীবন সংশয়ে পড়তে পাড়ে। বাধ্য হয়েই সে তার ভাগ্যকে দোষারোপ করে তার অত্যন্ত প্রিয় জালটি ছেড়ে দিল।
কিন্তু সেই জালে কাটানো তার স্মৃতি যেন কিছুতেই সে ভুলতে পাড়ছে না। সত্যি পৃথিবীতে ঈশ্বর নামে কিছুই হয়না, নাহলে তার সাথে এত্ত বড় বিপদ ঘটল কিভাবে! সে আর যাই হোক, তাকে তো আবার জাল বানাতেই হবে, নাহলে সে থাকবে কোথায়!
একদিন ঘুরতে ঘুরতে সে, সেই সংগ্রহশালার বাগানে পৌছাল। সেখানে একটি জায়গা দেখে, তার খুবই পছন্দ হল, পূর্বের সব দুঃখ ভুলে সে আবার জাল বুনতে শুরু করে দিল। সে দেখল তার এই জালটি বোনার সাথে সাথেই বেশ কিছু পোকা এতে এসে পড়েছে। আর এই জালটি পূর্বেরটির তুলনায় খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। এবার সে খুবই খুশি হল, তার সেই খুশির আমেজ, পূর্বের দুঃখকে কখন যে ধামাচাপা দিল, তা সে টেরও পেল না।
আমাদের জীবনে কখনো কখনো এমন পরিস্থিতির মুখে আমাদের পড়তে হয়, যখন আমাদের মনে হয়, আমাদের জীবন থেকে সবকিছু বুঝি হারিয়ে গেল, এরপর শুরু হয়, কপাল চাপড়ানো ও ঈশ্বরকে দোষারোপ করা! অথবা দোষারোপ করতে থাকি, আমাদের ভাগ্যকে। কিন্তু আমরা এটা বুঝি না যে, সব কিছু আবার নতুন করে শুরু করা যায়, আর এই নতুন করে শুরু করাতে থাকে, এক আলাদাই উদ্যম, এক আলাদাই প্রেরণা। আর সেই প্রেরণাই আমাদের সফলতার সিঁড়িতে উঠতে সাহায্য করে।
তাই আপনার কোনো কাজ অসফল হয়েছে ভেবে ভাগ্যকে দোষারোপ করে সময় নষ্ট করবেন না, মুখে হাঁসি রেখে শুধু বিশ্বাস করুন যে, আপনার আগের কাজে হয়ত কোনো ত্রুটি ছিল, তাই ঈশ্বর সেই ত্রুটিটি ধরিয়ে দিয়েছেন, আর লেগে পড়ুন কাজে। দেখবেন আপনার সফলতা একদিন আপনার সেই প্রথমের ব্যর্থতা থেকে কয়েকগুণ বেশি আনন্দ দিচ্ছে, আর আপনার গর্ব হবে নিজেরই উপর।
পড়ুনঃ- আসল হীরের সন্ধানে। ব্যর্থ মানুষের সফলতার গল্প
© সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্রের অধীনে। অনুমতি ব্যতিত যে-কোনো গল্পের পুনঃব্যবহার করলে, ছাড়পত্র উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হবে।
“বাংলা বেস্ট মোটিভেশনাল ছোট গল্প। ছোট শিক্ষণীয় গল্প।”
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবেঃ- ফেসবুক- ছাড়পত্র ফেসবুক গ্রুপ- গল্প-Junction টেলিগ্রাম- CharpatraOfficial WhatsApp group- ছাড়পত্র
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।