কোনো মতে কাটে দিন! এহেন জীবনেও যে প্রেমের আগমন হতে পারে, এবং শেষ পর্যন্ত তা কি পর্যায়ে গড়াতে পারে তা এই দুঃখের প্রেমের গল্প টি না পড়লে আপনি উপলব্ধি করতে পারবেন না!
দুঃখের প্রেমের গল্প- ‘দুটি গোলাপঃ-
সময় জীবনের সব থেকে বড়ো শিক্ষক। আমাদের সবাইকে তা মেনে নিতে হয়। আমার নাম সৌগত, পড়াশোনা প্রায় শেষ। চাকরির জন্য এদিক-ওদিক, মূলত টিউশন পড়ি। বাবা একটি মুদির দোকানে খাতা লেখার কাজ করত, তাই অভাবটা বেশ ভালো বুঝতাম। এমনভাবে দিন কাটছে আর বছরও!
একদিন বাড়ির পাশে একটি পুকুরের সামনে বসে আছি, আনমনাভাবে পাশে তাকিয়ে দেখলাম, একজোড়া গোলাপ, আর সাথে একটা চকোলেট বাক্স! বেশ কয়েকবার আশেপাশে তাকিয়ে, কাউকেই দেখতে পেলাম না। কি মনে হলো আমি এই দুটো ফেলে রেখে বাড়িতে চলে এলাম। এরপর থেকে আরেকটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে শুরু হলো। একটি অপরিচিত ফোন নম্বর থেকে কল আসে, কিন্তু কলটি মিসড হয়ে যায়, তবে, কোনোদিনও আমি আগ্রহ নিয়ে আর ঘুরিয়ে ফোন করিনি।
এর কয়েকদিন পর পাড়ার এক কাকিমা আমাদের বাড়িতে এসে মুচকি হেসে একটা চিরকূট আর সেই আগের দিনের মতো একজোড়া গোলাপ দিয়ে যায়। আমি রেগেমেগে কিছু বলব, তার আগেই তিনি বেরিয়ে গেছেন। কাগজ খুলে দেখলাম এক প্রেমপত্র অতি সযত্নে কেউ লিখেছে, নামটা মনে হয় ‘শুভশ্রী’। চিরকূটটা পুরোটা পড়ে বুঝলাম, একটি মেয়ে, যার নাম শুভশ্রী, সে আমায় প্রায় দুবছর ধরে অনুসরন করছে আর কি! সে আমাকে প্রচন্ড ভালোবেসে ফেলেছে, যার প্রতিফলন এই চিঠি আর এই দুটি গোলাপ। তবে গরীব বাড়ির ছেলেদের এসব বিলাসিতায় মদত দেওয়া সম্ভব নয়। তাই নিজের কাজে বেরিয়ে পড়লাম।
পড়াশোনার জন্য নিজেও প্রাইভেট পড়াতে শুরু করলাম। একদিন পড়াতে যাচ্ছি, দেখি একটা মেয়ে পথ আটকালো তার গোলাপি সাইকেল দিয়ে, মেয়েটা বেশ সুন্দর দেখতে। সে বললো “ফোন ধরতে কি হয়, তোমার সঙ্গে কথা আছে”। কি করবো বুঝতে না পেরে বললাম, “কে তুমি আর কি চাও, আমার এক জায়গায় যাওয়ার আছে, বিরক্ত করো না।” কিছুতেই মেয়েটা পথ ছাড়ে না। সে আবার বললো “আমি তোমাকে ভালবাসি, আর ফোন করলে ধরবে। এই নাও দুটি গোলাপ, আর মাসিমার সাথে দেখা করছি” বলে গোলাপি সাইকেলটা নিয়ে বেরিয়ে গেল।
অবাক হয়ে ভাবলাম, এই সেই শুভশ্রী, যে চিঠিটা লিখেছিল, আমি খুব অবাক হয়ে কিছু ভাবতে ভাবতে আমার গন্তব্যে এগোলাম। রাতে বাড়ি ফিরতে দেখি, মেয়েটি আবার সেদিনের মতো বিরক্ত করছে ফোন করে। কিছুদিন আমি এগুলো এড়িয়েই যাচ্ছিলাম। এর মাঝে একটা জয়েনিং লেটার আমার বাড়ীর লেটার বক্সে পেলাম। চাকরীটা একটি বড়ো কোম্পানীতে, বেশ মোটা অঙ্কের মাইনেও হতে পারে দেখে মনে হলো। কিন্তু খুব সম্ভবত, আমি তো এরকম কোনো কোম্পানিতে চাকরির পরীক্ষা বা ইন্টারভিউ দিইনি। কিন্তু বিশ্বাস করেই লেটারে থাকা তারিখে আমি কসবায় গেলাম এবং জয়েনিং করলাম একটা সুপারভাইজারের পদে।
পড়ুনঃ- প্রেমের গল্প- পুনর্মিলন
নিজেকে এ নিয়ে অনেক প্রশ্ন করলাম, কিন্তু কিভাবে চাকরি হলো কিছুতেই বুঝতে পারলাম না। এরপর অনেক মাস কেটে যায়। আমি চাকরি পাওয়ার পরে, মা আমার জন্য মেয়ে দেখতেও শুরু করে বিয়ের জন্য। এরমধ্যে আমার কেন জানি না, মনটা এক অপরাধে ভুগছিল, নানা কারণে, প্রথমত, চাকরী আর সেই মেয়েটা। মোবাইলে কল লিস্ট ঘেঁটেও সেই মেয়েটার ফোন নাম্বার খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করি কিন্তু পাইনা। তাই সেই মেয়েটার দেওয়া চিঠিটির ঠিকানা বের করে সেখানে যাওয়ার কথা ভাবলাম। তবে আমি ভাবতে পারিনি কি আমার জন্য অপেক্ষা করে আছে। যে ঠিকানা খুঁজে আমি গেলাম, সেটা এক অনাথ আশ্রম। আর শুভশ্রী সেখানেই থাকে।
আশ্রমের কর্তৃপক্ষ শুভশ্রীর সম্পর্কে বললো “মেয়েটি পড়াশোনায় খুব ভালো, তবে পড়াশোনা শেষ করে একটা এন.জি.ও র সাথে যুক্ত হয় গরীব, দুঃস্থ বাচ্ছাদের সেবা করার জন্য। কিন্তু ভাগ্যের নিদারুন পরিহাসে সে আজ ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে এক হাসপাতালে ভর্তি। তবে আপনাকে চিনলাম না যে। পরিচয়ে বললাম। আমি সৌগত, সৌগত হাজরা।
অবাক হয়ে উঠে তিনি বললেন, “শুভশ্রী তো আপনার নাম সব সময় করতো, আপনাকে খুব ভালোবাসতো কিনা, আর আপনার জন্যই তো আমাকে বলে, কসবার ওই একটি কোম্পানিতে চাকরি ব্যবস্থা করে দেয়।” কথাগুলো শোনার পর নিজেকে শ্রেষ্ঠতম অপরাধী বলে মনে হলো।
আশ্রম থেকে শুভশ্রী যে হাসপাতালে ভর্তি ছিল, তার নামটা জেনে নিই। ওখান থেকেই একটি বাসে উঠি, যেটা ওই হাসপাতালগামী। গাড়িতে বসে বেশ মনে পড়ছিল, সেই প্রথম জোড়া গোলাপ দেওয়ার কথা, মনে পড়ছে তার ভালোবেসে করা মিসড কলগুলো, আমি স্বার্থপর ভাবে অবহেলা করেছি দিনের পর দিন, মনে পড়ছে সে বলেছিল, সে আমায় ভালোবাসে আর মনে পড়ছে, তার ভালোবাসার শ্রেষ্ঠ দান আমার স্বপ্নের চাকরীটা।
পড়ুনঃ- একটি অন্যরকম প্রেমের গল্প- সন্দেহ
এসব ভাবতে ভাবতে বাস থেকে নেমে একটা ফুলের দোকান দেখতে পেলাম, কিনলাম দুটি গোলাপ। হাসপাতালটিকে দূর থেকে দেখে খুব ভয় লাগছিল, ভাবছিলাম কীভাবে শুভশ্রী কষ্ট পেয়ে চলেছে ক্যান্সারের আঘাতে। দুটি গোলাপ হাতে হাসপাতালে ঢুকে রিসেপশানে জিজ্ঞেস করলাম, শুভশ্রীর রুমটা। সেই মত পৌঁছালাম সেই ঘরটার সামনে।
এক নার্স বলল “আসুন আপনি ঢুকতে পারেন”। ঘরে ঢুকে দেখলাম, শুভশ্রীর অসুস্থ শরীরটা যেন এলিয়ে রয়েছে সাদা বিছানায়। তার বিমর্ষ চোখ যেন আমার ভালোবাসায় আজও কাঙ্ক্ষিত। আলতো ভাবে ডাকলাম “শুভশ্রী আমি এসেছি, তুমি চোখটা একবার খোলো” কথাটা শুনে শুভশ্রী তার ম্লান চোখটা ধীরে ধীরে খুলল। আমাকে দেখে সে এতো খুশি হলো যে আমাকে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো। বুঝলাম তার আঁকড়ে ধরে ভালোবাসাটা কতটা অমলিন। আমি বললাম ” আমাকে ছাড়ো, এটা হাসপাতাল, কেউ দেখলে কি ভাববে সে।
“আমি ছাড়বো না, আর ছাড়ছি না, তোমার বুকেই আমি মরতে চাই” ধরা ধরা গলায় শুভশ্রী বলল। আমি প্রচন্ড রেগে গিয়ে কাঁদো গলায় বলে উঠলাম, “তুমি আমায় ভালোবেসে এভাবে ছেড়ে যেতে পারবে না, আমি যেতে দেব না” বলে আমার হাতের দুটি গোলাপ ওকে দিলাম। ও বাবা !! তুমি আমায় এতো ভালোবাসো ? শুভশ্রী বলল। উত্তরে বললাম, এ জন্মে শুধু নয়, জন্ম জন্মান্তর ধরে যেন তোমাকেই জীবন-সঙ্গী হিসেবে পাই।
শুভশ্রী বলল, “এই দুটি গোলাপ হলো, একটি তুমি আর একটি আমি, কেমন!! বলে খুব হাসলো ও। আরো শক্ত করে যেন আমাকে জড়িয়ে ধরলো। কিছুক্ষন পর খেয়াল করলাম, শুভশ্রীর কোনো সাড়া নেই, সামনের দিকে ব্লাড প্রেসারের মেশিনটি একটি সরল ভাবে এক অদ্ভুত শব্দ করে উঠল। বুঝলাম আমার বুকের ওপর ওই নিথর দেহে আর স্পন্দন নেই। কিন্তু কতক্ষন জানিনা, এবুকে আমি তার শেষ দেহখানি আদরে আগলে রেখেছিলাম। আর আমার ভেজা চোখের সামনে দেখেছিলাম দুটি বৃক্ত যার ওপরে শাশ্বত ভালোবাসার কোমল দুটি গোলাপ।
গল্পের ভাবনায়-
সৌগতের ভাবনায় আরও কিছু লেখা- জীবন যুদ্ধের কাহিনী ভালোবাসার গল্প বাছাই করা কয়েকটি ছোট গল্প
আমাদের সমস্ত আপডেটের জন্য- ফেসবুক Group - গল্প Junction ফেসবুক- ছাড়পত্র টেলিগ্রাম- charpatraOfficial (লিংক broken হলে টেলিগ্রামে সার্চ করুন- charpatraofficial) WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
“দুঃখের প্রেমের গল্প। দুঃখের প্রেম কাহিনী। করুন প্রেম কাহিনী। 1 new bengali sad love story”
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।