স্বপ্নকে পাশ থেকে দূরে সরে যেতে দেখার পরেও সেই অসম্পূর্ণ স্বপ্নকে পুনরায় অর্জন করা সার্থক ভাবে অঙ্কিত হয়েছে এই ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প টিতে। t.g/একজন মেয়ের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প

ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পঃ-

গল্পের প্রধান চরিত্রের নাম হলো তিতির । শান্তিপুর গ্রামের তুহিন সরকার এর কনিষ্ঠতম কন্যা । ছোট থেকে মেয়ের সব ইচ্ছে পূরণ করে এসেছেন তুহিন বাবু তাই মেয়ে যখন মাধ্যমিক পাশের পর সায়েন্স নিয়ে পড়ার জন্য বাঁকুড়া তে থাকার কথা বললো তখন সেখানেই মেয়েকে রেখে এলেন। মেয়েটা পড়াশোনাতে যেমন ভালো ঠিক তেমন খেলাধুলা তেও পারদর্শী । নতুন স্কুলে ভর্তি হয়েই সে স্কুলের জন্য ফুটবল কাপ বিগত দশ বছর পর ওই স্কুলের নামে করলো। তাই গোটা স্কুল কেন গোটা বাঁকুড়াতেই ওর নাম ছড়িয়ে পড়লো। এক কথায় বলতে গেলে ‘মিনি সেলিব্রিটি।’

তিতির ক্রমে পড়াশোনা থেকে দূরে আর ফুটবল এর প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়ে পড়লো। কোনরকমে উচ্চমাধ্যমিক পাশের পর সিদ্ধান্ত নিলো আর পড়াশোনা নয় ,এবার শুধু ফুটবল নিয়েই গড়বো আমার ভবিষ্যত। তুহিন বাবুও অপারক হয়ে মেয়ের কথায় রাজি হলেন । মেয়ের উজ্জ্বল ভবিষ্যত এর জন্য পাঠিয়ে দিলেন কলকাতা ।

তিতির প্রথমে একটি ক্লাবের হয়ে খেলতে শুরু করলো । প্রথম প্রথম ভালো খেলে সেই টীম কে এক কথায় একার দমেই সেমি ফাইনাল অব্দি নিয়ে গেলো ।” তিতির” কম “গোল কুইন ” নামেই ও বেশি পরিচিত পেলো। তবে সেমি ফাইনাল এর দিন অপজিসেন টিমের এক প্লেয়ারের ধাক্কায় ও মাথায় খুব জোর আঘাত পেলো । তারপর সুস্থ হয়ে উঠতে ওর চারমাস সময় লাগলো । কিন্তু সুস্থ হবার পর তিতির আবার সেই ক্লাবে ফিরে গেলে তারা একটি টেস্ট ম্যাচ দিয়ে তিতির এর সুস্থতার পরীক্ষা করতে চাইলো ।

ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প
ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প

দীর্ঘ চার মাস পর তিতির খেলার ময়দানে নামলেও ৫ মিনিটের মধ্যেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলো । তাই ওই ক্লাব তিতির কে নিজেদের টিম থেকে বের করে দিলো। এরপর তিতির অন্যান্য ক্লাবের সাথে দেখা করলেও তারা কেউই তাকে নিজেদের টিমে নিতে রাজি হলো না ।

ভবিষ্যত গড়তে আসা মেয়েটা নিজের ভবিষ্যত এর দিশা খুঁজে না পেয়ে কলেজে ভর্তি হলো। ভর্তি হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই নিজের দক্ষতার জোরে পুরো ডিপার্টমেন্টের প্রিয় হয়ে উঠলো । তবে সবার প্রিয় হয়ে ওঠার আগে রিহান নামে একটি ছেলের কাছে একটু বেশিই প্রিয় হয়ে উঠলো তিতির। একসাথে কলেজ আসা , যাওয়া , মাঝে মধ্যে কফি হাউস , ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল ছাড়াও গঙ্গার ঘাটে শান্ত সন্ধ্যায় হাতে হাত রেখে সময় কাটাতে সচ্ছন্দ বোধ করতে শুরু করলো। বন্ধু থেকে ভালোবাসা টা স্বাভাবিক হলেও ওরা এর গণ্ডি পেরিয়ে রেজিস্ট্রি করে নিলো।

পড়ুনঃ- গল্পের মাধ্যমে নৈতিক শিক্ষা। 

তিতির বারবার রিহান কে শান্তনা দিয়ে বললো “কোনো ভয় নেই রিহান , ধর্মে বিশ্বাস রাখো তাহলে একটা কথা মনে রেখো মানব ধর্মই শ্রেষ্ঠ ধর্ম তাই ওসব নিয়ে চিন্তা করোনা। আমি বললে বাবা ঠিক তোমার মেনে নেবে । বাবা কোনোদিনও আমার কিছুতে মানা করেন নি । “

তিতির রিহান সমেত গ্রামে পৌঁছালে তুহিন বাবু আর সহ্য করতে পারলেন না । যে মেয়ের সব আবদার তিনি ছোট থেকে পূরণ করে এসেছেন আজ সেই মেয়ে এত বড় সিদ্ধান্ত তাকে ছাড়া নেবে , সেটা তিনি স্বপ্নেও কল্পনা করেন নি। এত বড় আঘাত সহ্য করতে না পেরে নিজের কেনা বন্দুক যেটা সেফটির জন্য কিনেছিলেন সেটাতেই নিজের মাথায় চালিয়ে সবার সামনে প্রাণ ত্যাগ করলেন । রিহান ভয়ে গ্রাম থেকে পালিয়ে গেলো । আর এদিকে তিতির তার বাবার মৃত্যুর জন্য নিজেকে দোষারোপ করে আত্মহত্যা করতে গেলো । কিন্তু চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো ।

bengali motivational story
bengali motivational story

‘মরে যাবো’ বলাটা ঠিক যতটা মুখে বলা সহজ , কাজে করে দেখানো টা ঠিক ততটাই কঠিন, এই কথাটা বুঝতে পেরে তিতির ওই পথে আর পা বাড়ালো না । এরপর তিতির বারবার রিহানের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও “সুইচ অফ আর ব্লক ” ছাড়া কোনো উত্তর পেলো না । যার জন্য নিজের বাবাকে হারালো সে নিজেই তাকে ছেড়ে চলে গেলো, ভেবে তিতির আগাগোড়াই ভেঙে পড়লো ।

বছর দুই পর তিতিরের বাড়ি থেকে একটি ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করা হলো । ছেলেটি ডাক্তার আর ব্যবহারেও বেশ ভালো তাদের মেয়ের খেয়াল ভালো রাখতে পারবে ভেবে তার সাথেই তিতিরের বিয়ে দিয়ে দিল। সত্যিই ছেলেটি যে ভালো তার প্রমাণ তিতির নিজেই পেলো কারণ তিতিরের অতীত শোনার পরেও সে তিতির কে আপন করে নিয়েছে , আর তিতিরের খুব যত্নও করে ।খুব সুখেই ছিল দুজন।কিছু মাস পর ছেলেটির কথায় বিয়ের পর প্রথম বার তিতির তার নিজের গ্রামে আসার জন্য রাজি হলো।

পড়ুনঃ- অসাধারণ দুটি শিক্ষণীয় গল্প 

” ডাক্টার বাবু সাবধানে ড্রাইভ করুন নইলে গ্রাম পৌঁছানোর আগেই যে জমের ঘাটে পৌঁছাবো ” বলতে বলতে তিতির তার স্বামীর হাতটা ধরতে গেলে , ডাক্তার তার দিকে তাকাতে গিয়ে ডিস ব্যালান্স হয়ে একটি গাছে ধাক্কা মারলো । সেখানেই ডাক্তার বাবুর মৃত্যু হলো তবে তিতির ১৫ দিন পর নিজেকে হাসপাতালের বেডে পেলো কিন্তু সিথিতে সিঁদুর বা হাতের শাখা কোনোটাই পেলো না । স্বপ্ন ,বাবা তারপর স্বামী একে একে সব হারিয়ে পাগলের মত হয়ে গেলো তিতির ।

অনেক ডাক্তার দেখানো , কঠিন চিকিৎসার পর তিতির আবার সুস্থ হয়ে উঠলো । তবে এই তিতির আর আগের তিতির রইলো না । সম্পূর্ণ ভাবে নতুন রূপে আত্মপ্রকাশ করলো । ২৬ বছর বয়সে আবার নতুন করে শুরু করলো ফুটবল খেলা । নিজের গ্রামের মেয়েদের মধ্যে থেকে বেছে নিয়ে তৈরি করলো একটা ফুটবল টিম। এই বয়েসে তার ফিটনেস নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও কথাতে নয় কাজে প্রমাণ করলো নিজেকে। পরের পর ম্যাচ জিতে নিজের সেই কলকাতার ক্লাবের বিপরীতে খেলে নিজের টীম কে জিতিয়ে কলকাতার নামি দামী টিমের মধ্যে নিজের টীমের নাম প্রতিষ্ঠা করলো ।

হতাশা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প
হতাশা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প
<

নিজের নামে একটা ক্লাব খুলে, নিজেই কোচ হয়ে গরীব দুস্থ বাড়ির মেয়েদের বিনা মূল্যে ট্রেনিং দিতে শুরু করলো । একজন কোচের সাথে সাথে একজন ভালো গৃহিণী ও হয়ে উঠেছে তিতির। ওর ছোট্ট পরিবারে ও একটি অনাথ মেয়েকে দত্তক নিয়েছে সাথে আছে একটা ছোট্ট পোষা কুকুর। তিন জনের ছোট্ট সংসার । নিজেই নিজের কোম্পানি খুলেছে তার সাথে সাথে একটা NGO চালায় নিজে।

বারবার ব্যর্থ হওয়ার পরেও তিতির উঠে দাঁড়িয়েছে । বড়রা প্রায় বলেই থাকেন ” রাজা ছাড়া রাজ্য আটক হয়না ” । সত্যিই তাই , জীবন নদীর স্রোতে পাশে থাকা নুড়ি বালি কাকর ধুয়ে স্রোতে বয়ে যায়, প্রবহমান জীবন শেষ নিশ্বাস অব্দি কারুর জন্য থেমে থেমে থাকেনা। তাই দমে যাওয়া নয় ফিরে দাড়ানো টাই জীবনের মূল অর্থ।

আলোরানি মিশ্র

গল্পের সুন্দর ভাবনায়-
আলোরানির আরও কিছু লেখা- 

রহস্যময় সেই রাত! 

ছাত্র শিক্ষক সম্পর্ক নিয়ে গল্প- প্রকৃত শিক্ষা 

মা- কে নিয়ে একটি হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া গল্প 
আমাদের সমস্ত আপডেট পাবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

“ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। হতাশা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। অনুপ্রেরণা মূলক গল্প। bengali motivational story”

Spread the love

Leave a Reply