এক বৃদ্ধার সাথে পরিচয়, এরপর বৃদ্ধার অবর্তমানে সেই বাড়িতে আস্তানা, এরপর নানান রহস্যময় ঘটনা। সব মিলিয়েই আজকের এই রহস্যময় গল্প টি।

রহস্যময় গল্প:- সেই রাত

টেবিলের সামনে নামিয়ে রাখা গ্লোব, মিশরের ফ্যারাও এর ডিজাইনের পেনবক্সটা , পাশে নামানো বই গুলো , সব জিনিস গুলোকে ভালো করে দিনের আলোয় শ্রুতি পরখ করে দেখলো কিন্তু কিছুই আলাদা মনে হলো না । সব তো একই ভাবে সাজানো তাহলে গতকাল রাত্রে যেটা ওর সাথে ঘটলো সেটা কি ছিল ?

গ্রামের মেয়ে শ্রুতি পড়াশোনার খাতিরে শহরে এসেছে এই একবছর আগে। অজানা রাস্তা আর অচেনা মানুষের ভিড়ে প্রথম প্রথম ওর দম বন্ধ হয়ে আসতো। এই ব্যস্ততায় ঘেরা শহরে ওর আপন বলতে কেউ নেই। একদিন রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় ধাক্কা হলো এক বৃদ্ধার সাথে। তারপর শ্রুতির ব্যস্ত শহরে সঙ্গী হলো ওই বৃদ্ধা মহিলা । বৃদ্ধা শ্রুতির অসুবিধার কথা শুনে নিজের বাড়িতে থাকার কথা বললেন। শ্রুতি ও না করতে পারে না। চলে আসে ওই বৃদ্ধার কাছে। অকস্মাৎ ওই বৃদ্ধার মৃত্যু হলে তার কোনো আত্মীয়ের অভাবে শ্রুতিকেই তার শেষ কাজ সম্পন্ন করতে হয় । এরপর শ্রুতি ওই অত বড়ো বাড়িতে একা থাকতে শুরু করে। মনে মনে ওর ও একটা লোভ ছিল এই বাড়ির প্রতি।

সময় সুযোগ বুঝে এই বাড়ি বিক্রি করে শ্রুতি চেয়েছিল ‘কুবেরের ধন’ অর্জন করতে। সেই আশায় ও বাড়ি বিক্রির লোক খুঁজতে শুরু করলে অদ্ভুত অদ্ভুত কাণ্ড কারখানা শুরু হয় । শ্রুতি প্রতিদিন রাত্রে একটা আওয়াজ শুনতে পায়, কিছু মানুষের কোলাহলের। কিন্তু ঘরের বাতি জ্বালানোর পর সব আওয়াজ থেমে যায়। দিনের রান্না করা খাবার ফ্রিজে তুলে রাখার পর রাত্রে সেই খাবার নিতে গেলে ফ্রিজ ফাঁকা তাতে কিছুই থাকে না । ঘটনা গুলো কেমন যেন সন্দেহ লাগলেও শ্রুতি পাত্তা না দিয়ে বাড়ি বিক্রির জন্য তৎপর হয়।

রহস্যময় গল্প
রহস্যময় গল্প

দিন যত পেরোতে থাকে ততই অদ্ভুত অদ্ভুত কান্ডকারখানা বাড়তে থাকে। ছাদের দেয়াল টা তে যেন কেউ খুব জোরে জোরে লাথি মারছে এমন আওয়াজ উঠতে শুরু করে। শ্রুতি আওয়াজ এর কারণ আবিষ্কার করতে গেলে একটি বাদুর ছাড়া আর কিছুর সন্ধান পায়না।সবকিছুকে হাওয়ায় উড়িয়ে দেওয়া স্বপ্ন ভাবলেও, শ্রুতি সেই রাত্রের কথা কিছুতেই ভুলতে পারেনা ।

রাত আট টা নাগাদ বাড়ি ফেরার সময় শ্রুতি চাবিটা বের করে দরজা খুলতে গেলে নিজে থেকেই দরজা টা একটা প্রবল ঝড়ের ধাক্কায় খুলে গেলো । মুহুর্তের মধ্যে আসা সেই ঝড় কখন উঠলো আর কখন থামলো সেটা বোঝার আগেই শ্রুতির গোটা শরীরে একট শিহরণ জেগে উঠলো। ঘরে ঢোকা মাত্র সব বাতি গুলো নিজে থেকেই জ্বলে উঠলো । শ্রুতি পর পর ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলোকে নিয়ে যখন ভাবনায় ব্যস্ত তখন হটাৎ করে মনে হলো কে যেন ওকে পেছন থেকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে।

পেছন ফেরা মাত্রই সেই বাঁধন যেন উন্মুক্ত হয়ে গেলো। না না এসব আমার মনের ভুল। আমি অতিরিক্ত ভেবে ফেলেছি তাই এসব হচ্ছে, বলতে বলতে শ্রুতি ফ্রিজ থেকে জলের বোতল টা নিতে গেলে ফ্রিজ থেকে বেরিয়ে এলো পোড়া মাছের গন্ধ।
ছি ছি! কি বিশ্রী গন্ধ, কিন্তু আ আ মি তো সকালে মাছ রান্না করে রেখে গেছিলাম তাহলে পুড়লো কি করে এটা !

পড়ুনঃ- 
ভয়ানক ভুতের গল্প- বদলা

ব্লাডি মেরীর সম্পূর্ণ রহস্য

শ্রুতি দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে সজোরে দড়াম করে কপাট টা লাগিয়ে দিলো। পড়ার টেবিলের ওপর ব্যাগ টা ছুড়ে দিতেই টেবিলের ওপর রাখা গ্লোব টা নিজে থেকেই ৩৬০° অ্যাঙ্গেলে বারবার ঘুরতে শুরু করলো আর নর্থ প্যাসিফিক ওসিয়ান এর কাছে এসে একটু থেমে আবার ঝড়ের গতিতে ঘুরতে লাগলো। শ্রুতি নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না । আজ ক্লাসে স্যার এই টপিক টা নিয়ে পড়িয়েছিল না, হ্যাঁ হ্যাঁ এটাই তাহলে এটাতেই এসে থামছে কেন?

মিশরের ফ্যারাও এর ডিজাইনের পেনবক্স থেকে যেন ফ্যারাও টা বেরিয়ে আসছে । আর ওদের ভাষায় কি যেন বলেই চলেছে । আর ফ্যারাওয়ের মাথার ওই সাপের যে চিন্হ টা ওটা থেকে বেরিয়ে আসছে একটা প্রকান্ড থ্যাবড়া মাথা ওয়ালা বড়ো রকমের সাপ । ধীরে ধীরে সাপ টা বড়ো হয়েই যাচ্ছে গোটা ঘরটা ঘিরে ফেলেছে ওর দেহ। আর ওর চোখ গুলো থেকে কেমন যেন একটা লাল বাতি জ্বলে উঠছে। শ্রুতি সবটা দেখে ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ে দিশেহারা হয়ে গেল।

সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় কেউ যেন ওকে ধাওয়া করছে। সিঁড়ির শেষে ছাদে পৌঁছালে পা স্লিপ কেটে ও খুব জোরে আছাড় খেয়ে পড়ে গেলো । পড়ার পর বুঝতে পারলো চারিদিকে সর্ষে ছড়ানো। সর্ষের দানা গুলো আস্তে আস্তে বড়ো হচ্ছে। এতটাই বৃহৎ আকার নিয়েছে যে এবার শ্রুতিকেই ঢেকে ফেলবে । শ্রুতি তার সাথে সংঘটিত হওয়া এই কুহেলিকাময় ঘটনায় নিজেকে স্থির না রাখতে পেরে, শেষমেশ ছাদ থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ল।

ভুতের গল্প
ভুতের গল্প রহস্যময় গল্প

ঘণ্টা দুই পর ওর জ্ঞান ফিরলে দেখলো সকাল হয়ে গেছে আর ও নিজের বিছানাতেই শুয়ে আছে । পরে সব দেখলে ওর মনে হলো সব তো ঠিক এই আছে তাহলে কাল যেটা হলো ওর সাথে সেটা কি কোনো দুঃস্বপ্ন ছিলো? সে যাই হয়ে থাক আর এই বাড়িতে থাকাটা নিরাপদ নয় ভেবে ও আবার আগের ভাড়ার বাড়িতে ফিরে এলো।

তবে ফেরার পর এই দুই মাসে শ্রুতিকে কেউ চিনতে পারেনি ও কথা বলতে গেলেও কেউ ওর সাথে কথা বলেনি ও খুব একা হয়ে গেছে। তবে এরকম অপ্রত্যাশিত ব্যবহার ওর সাথে কেন করা হচ্ছে তা ও নিজেও বুঝতে পারছে না ।

মাস দুই পর শ্রুতি জানতে পারলো ওই বাড়িটিতে একটি যুবতী মেয়ের লাশ উদ্ধার হয়েছে তবে লাশটি যে মাস দুই আগের তাই অনুমান করেছে সবাই। শ্রুতি আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে জিজ্ঞাসা করলো বারবার ” তুমি জীবিত নাকি মৃত”?

আলোরানি মিশ্র

গল্পের রোমাঞ্চকর ভাবনায়-
আলোরানির আরও কিছু লেখা- 

বাংলা ছোট হাসির গল্প

রোগা মানুষের উপাখ্যান

ছাত্রদের জন্য একটি প্রেরণা মূলক গল্প- বিজয়ী
এক ক্লিকেই ছাড়পত্রের সঙ্গে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

ফেসবুক Group - গল্প Junction

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial
(টেলিগ্রাম লিংকটি broken হলে, টেলিগ্রামের সার্চ বারে "charpatraofficial"লিখে সার্চ করলেই ছাড়পত্রের টেলিগ্রাম গ্রুপ খুঁজে পাবেন)

“রহস্যময় গল্প। ভুতের গল্প। 1 new bengali rohossomoi golpo. horror story”

Spread the love

Leave a Reply