‘ভালোবাসার খুনি’ শীর্ষক এই করুণ প্রেমের গল্প টিতে লেখিকা দেখাতে চেয়েছেন, প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে বা প্রিয় মানুষের অবহেলার যন্ত্রণাকে কাঁটাতে, আমাদের গ্রহণ করা পদক্ষেপ আমাদের নিজের কাছে বিশাল কিছু মনে হলেও, আপনার সেই so called প্রেমিক/ প্রেমিকার কাছে আসলে নিতান্তই খড়ের পুতুল!! অসাধারণ এই গল্প টি পড়ার পর আপনার মূল্যবান মতামত জানাতে ভুলবেন না যেন!

করুণ প্রেমের গল্পঃ-‘ভালোবাসার খুনি’

“মরতে কেন যাচ্ছিলেন আপনি!” মেয়েটিকে কোনোরকম করে ধরে নিয়ে, ধমকে বলে ওঠে ছেলেটা।

মেয়েটা অপরিচিত ছেলেকে তাকে বাঁচাতে দেখে জল ভরা চোখে বলে, “কেন বাঁচালেন আমায়? আমি কি অন্যায় করেছি আপনার যে আমাকে বাঁচানোর মতো এত বড় শাস্তি দিলেন!”  

-“কি বলছেন এসব, আপনার মাথা ঠিক আছে তো?” 

“হ্যাঁ হ্যাঁ আমার মাথাটাই খারাপ হয়ে গেছে তাই আমি আর চাইনা বাঁচতে, আমাকে মরতে দিন!” 

“না।” 

করুণ প্রেমের গল্প
করুণ প্রেমের গল্প

“এত জোর করার আপনি কে? আপনি আমাকে বা আমি আপনাকে চিনি না তাহলে এত জোর কেন করছেন? সরে যান এখান থেকে!”  

কাঁদছে মেয়েটা। ছেলেটার মনে প্রচন্ড কষ্ট হলো মেয়েটার জন্য। তারপর নরম গলায় বলল, “আপনার কি হয়েছে আমাকে বলতে পারেন, হতে পারে আমরা একে অপরের অপরিচিত কিন্তু প্রথম থেকে তো পরিচিতও হয় না তাই না। একদিন সবাই অপরিচিতই থাকে তারপর আস্তে আস্তে বিভিন্ন মাধ্যমে সম্পর্ক নামক সেতু তৈরি হয় আর অপরিচিত মানুষ গুলো কে সম্পর্কের নানান চরিত্র হিসেবে তৈরি করি নিজেদের জীবনের জন্য। আপনি নিজের জীবন শেষ করার মতো ভয়ঙ্কর কাজ করতে চাইছেন , আমি বুঝতে পারছি আপনার বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়া মানসিক অবস্থা টা, তবুও অনুগ্রহ করে বলুন আপনার কি হয়েছিল যাতে আপনি এইভাবে নিজের জীবন শেষ করার মতো…”

পড়ুনঃ- অসম্পূর্ণ ভালোবাসার গল্প- প্রেমিক 

মেয়েটার চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে কাঁদতে কাঁদতে। সে বলে, “শুনবেন তাহলে আমার জীবনের গল্প, যেখানে আমি বাস্তবিক ভাবে নিজেই একটা মৃত চরিত্র ছিলাম!” 

এই বলে সে বলা শুরু করে-

মেয়েটার নাম কাজল। সেদিন পার্কে একা একা বসে কাজল দেখে তার পাশের এক সুন্দর হাসিখুশি জুটিকে। কি সুন্দর একে অপরের প্রতি তাদের খেয়াল আবার খুনসুটি। ছেলেটা কান ধরে সরি চাইছে মেয়েটার কাছে আর মেয়েটাও তার নাকটা মলে হেসে বলে, ‘হয়েছে হয়েছে সরি চাওয়া, বসো এবার।’ 

দুঃখের ভালোবাসার গল্প
দুঃখের ভালোবাসার গল্প

আগে পার্কে প্রতিদিন আসত কাজল। তবে একা নয় তার সাথে থাকত সুজয়। কাজল জীবনে কোনোদিন কারো প্রেমে পড়বে না এইরকম দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ মেয়ে ছিল, কিন্তু সেইই শেষমেষ সুজয়কে সাংঘাতিক ভাবে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবেসে ফেলেছিল।

কিন্তু সুজয়! নাহ!  তাদের মধ্যে অনেক দিন ধরেই অনেক ভালো বোঝাবুঝি ছিল কিন্তু হঠাৎ সুজয়ের তরফ থেকে গাফিলতি দেখা দেয়। হঠাৎ করেই সে যেন খুব ব্যস্ত হয়ে পড়ে কাজে, আর সময় কম দিতে দিতে একসময় সময় দেওয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর্যায়ে চলে গেল। আর মনের থেকে তার কাছে কাজলের শরীর খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। সবসময় শারীরিক মিলন এর চিন্তা ভাবনা থাকত তার। 

কাজল সমস্ত পরিস্থিতি বুঝত, সুজয়ের ব্যস্ত থাকাকে নিয়ে অভিযোগ তুলত না, কিন্তু অভিযোগ তুলল সেদিন যেদিন সুজয়ের ব্যস্ত থাকাটা চরম ব্যস্ত থাকার পর্যায়ে চলে যায়। 

মনে পড়ে কাজলের, সে অনেক বেশিই খেয়াল রাখত সুজয়ের, অনেক বেশিই চিন্তা করত ওকে নিয়ে, হিসেব মত ওকে মেসেজও অনেক দিত। কিন্তু উল্টোদিকে সুজয় যেন খুব ভালোই আছে। নিজে থেকে কিছু বলেও না কাজলকে। কাজলের বলা কথাগুলোও ভুলে যায়। বড্ড এড়িয়ে যায়, খুব সামান্য সামান্য কারণে কাজলের উপর রেগেও যাওয়া শুরু হয়ে গেল। অদ্ভুত ও আকস্মিক পরিবর্তন!  

পড়ুনঃ- দুঃখের প্রেমের গল্প- দুটি গোলাপ 

আর কথায় কথায় শারীরিক মিলনের প্রসঙ্গ। যদি কাজল বাধা না দেয় তখন সে খুব ভাল, আর বাধা দিলেই সুজয়ের রদই বদলে যেত। কিন্তু কাজল কখনোই সুজয়কে এইসব করার জন্য অনুমতি দেয়নি। 

 এই নিয়ে দুজনের মধ্যে প্রচুর প্রচুর ঝগড়া হয়েছিল। অভিমান করেছিল কাজল, অপমানিত হয়ে কিন্তু সবটাই সুজয় দুহাতে তুলে নিয়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে এসেছিল। যেদিন থেকে কাজল বুঝল তার রাগ, তার কষ্ট, তাকে বিন্দুমাত্র সম্মান যে করে না  , তার চোখের জলের যে দাম নেই যাকে সে এত ভালোবাসে তার কাছে তখন থেকে মনে মনে গুমড়াতে শুরু করে। চারিদিকের এত সুন্দর সম্পর্ক গুলো দেখে কষ্টে, দুঃখে বুক ফেটে যায় আর রাগ হয় নিজের উপর, যে কেন সে প্রতিজ্ঞা করা সত্বেও এমন একটা ছেলেকে ভালোবাসল যার হৃদয়ে তার জন্য একটুও জায়গা নেই।

কাজলের অগুনতি ভালোবাসা সুজয় শত অবহেলা করার পরেও পাবে জেনেই তার অবহেলা, অসম্মানের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছিল। তবুও কখনো সে ‘সরি’ বলেনি কাজলকে, বরং কাজলই বারবার ‘সরি’ বলেছে, ক্ষমা চেয়েছে ভুল করুক বা না করুক। সবাইকে দেখত যে একে অপরের প্রতি খেয়াল, একে অপরের মন বোঝা, সুখ দুঃখ বোঝা, সারাজীবন পাশে থেকে বিশ্বাস আর ভরসার হাত ধরে থাকার নামই ভালোবাসা । সুজয় প্রথমে ছিল না এমন কিন্তু হঠাৎ করেই…!  

পড়ুনঃ- একটি অন্যরকম প্রেমের গল্প- সন্দেহ!  

কাজল তাই আপনমনে নিজেকে বলত,  ‘হয়ত আমি নিজেই নিজের জায়গা হারিয়েছি অতিরিক্ত উপস্থিতি দেখিয়ে , সবসময় তোমার সাথে কথা বলতে চেয়েছি, না বলতে পেরে ঝগড়া করেছি, তোমাকে আমার জন্য অপেক্ষা করতে দেওয়া তো দূরে থাক তুমি অনলাইনে আসলে আমিও কিছু একটা টের পেয়ে ঠিক ঐসময়তেই অন হয়ে যেতাম। আর অনেক অনেক মেসেজ দেখে তুমি ভেবেই নিতে তুমি না দিতেই যখন কাজল এত মেসেজ করে তখন আমার আর দেবার দরকার কি! অনেক বেশি খেয়াল, অনেক বেশি শাসন আর সবথেকে বড় দুঃখের বিষয় এটাই যে আমি তোমার থেকে অধিক প্রত্যাশা করেছিলাম তবে সম্পত্তি, টাকাপয়সা বা সুখের নয়। করেছিলাম প্রত্যাশা ভালোবাসার, যত্নের, মনে রাখার !’  

চোখের পাতা দুটো ভিজে গেলেও, সুজয় বুঝতে পারে না কাজলের না বলা পর্যন্ত। নিজের ইমোশন নিজেকেই যদি খুলে বলতে হয় তাহলে আর কি ভালোবাসে সুজয় তাকে! 

না সম্পর্কটা এখনো ভাঙেনি ওদের। জোড়াতালি দিয়ে আছে। আসলে সুজয় ওর জীবনে থাকলে ও অনেক কষ্ট পাবে জেনেও সুজয়কে ছাড়তে পারবে না কারণ সুজয়কে ছাড়লে হয়ত কাজল…

নিজেকে নিজের থাপ্পড় মারতে ইচ্ছা করে মাঝেমাঝে। এত কিসের দরকার শুনি, যে বারবার এত অবহেলা করছে, চলে যেতে চাওয়ার বাহানা দেখাচ্ছে তাকে কেন ধরে রেখে দিয়েছে সে? ও থাকলে তো তিলে তিলে কষ্ট পেতে হবে আর ও না থাকলে একেবারেই সমস্ত কষ্ট পেয়ে নিয়ে কিছুদিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। 

পড়ুনঃ- প্রেমের শেষ পরিণতি 

কিন্তু ভালোবাসা তো অন্ধ! যতোই দৃঢ় মনে যা ভাবুক, কার্যত ভাবে কিছুই করে উঠতে পারে না আর এটাও ভাল করে কাজল জানে যে ও সুজয়কে ছাড়া থাকতে পারবে না বলেই সুজয় এই ব্যাপারটা কে খুব অমানবিক  মজা হিসেবে নেয়। বারবার নিজে অশান্তি করার চেষ্টা করে আর দোষ চাপিয়ে দেয় কাজলের উপর। কাজল যতক্ষণ না কাঁদতে কাঁদতে সরি বলছে ততক্ষণ অবধি কিছুতেই থামে না সুজয়।  

পার্কে আজকেও সুজয়ের আসার কথা ছিল কিন্তু পৌনে এক ঘন্টা হয়ে গেল এখনো সুজয় আসেনি তাই একা একা কাজল নিষ্ফল দৃষ্টিতে অন্য জুটিদের ভালোবাসা দেখে। মনে মনে হাসে আর ভাবে হয়ত এইসব জুটির মধ্যেও সব জুটি আসলে আনন্দে নেই, কেউ কেউ হয়ত তাদের মতোই আছে। ভেতরে ভেতরে ক্ষত কিন্তু বাইরে থেকে দেখলে অসম্ভব হাসিখুশি। 

কাজল ফোন করে না সেদিন আর। সেদিন সে সুজয় কে কিছুতেই ফোন করে ডাকবে না। ও যখন জানে সেদিন দেখা করতে হবে, তাহলে এসব কেন? 

ও উঠে যাবে হঠাৎ ফোন এলো সুজয়ের। কাজল অনেক চেষ্টা করে রাগত কন্ঠে বলে ওঠে, “আমি তোমাকে মুক্তি দিতে চাই সুজয়।”

-“মানে?”

“তুমি তো এটাই চাও যে আমি তোমার জীবন থেকে চলে যাই। তাই হবে। আমি তোমাকে মুক্তি দিলাম। বিদায়, ভালো থেকো। বলে ফোন কেটে দেয় আর বুকের ভিতর একটা ভার অনুভব করে।”  

পড়ুনঃ- টাকার কাছে ভালোবাসা হেরে যায়- প্রেম বনাম পরিবার 

সুজয়কে সমস্ত যোগাযোগ থেকে ব্লক করে দেয় অনেক কষ্ট পেয়ে। ঠিক মত সে খাওয়া-দাওয়া করে না, রাতে ঘুমায় না, শুধু পুরোনো সেই সুন্দর স্মৃতি গুলো চোখের সামনে ভেসে ওঠে আর বেয়ে নেমে আসে চোখের জল হয়ে। 

ছয় মাস কেটে গেছে। অনেক অনেক কষ্ট হয়েছে ঠিকই তবে আজ অনেক ভালো আছে কাজল। এটা যদি সে আরো আগে করত… কে বলেছে সে সুজয়কে ছাড়া বাঁচবে না? এই তো দিব্যি বেঁচে আছে। যে তাকে ভালোই-বাসেনা তার উপর কি না বাঁচা  নির্ভর করে, হতেই পারে না!

কিন্তু তবুও সে আর পারছে না রোজ যেন কেউ তাড়া করছে তাকে সবসময় দুঃস্বপ্ন এর মতো। প্রচন্ড কষ্ট আর নকল হাসি হাসতে হাসতে ক্লান্ত কাজল। তাই আজ সে এই ক্লান্তির অবসান চায়! 

“ছেলেটা সব শুনে মৃদু হাসে। মেয়েটা অস্ফুটে বলে ওঠে, আমি জানতাম আপনি এই রকমটাই করবেন।”

-“সব ছেলেরাই আসলে এমন ধরণের!” বলে আবার কাঁদে সে। 

ছেলেটা এবার বলে ওঠে , “আমি আপনাকে অনেক কিছু বলব না, তবে সামান্য কটা কথাই বলব, যার কাছে আপনার ভালোবাসার দাম নেই ,তার কাছে আপনার লাশেরও কোনো দাম নেই। আপনি মারা গেলে তার কিছু যায় আসে না কারণ কারোর জন্য কিছু থেমে থাকে না। আর নকল মানুষের মধ্যে আসল ভালোবাসা মূর্খরা করে, তাই অপেক্ষা বলেও আর কিছু নেই এখন। আপনি শেষ হয়ে গেলে সে দু’দিন তো দূরে থাক, দু’সেকেন্ডের জন্যও আপনার কথা ভাববে কিনা সন্দেহ আর আপনার সাথে তার নিজেকে শেষ করার কথা তো ছেড়েই দিন। 

bengali very sad love story
bengali very sad love story
<

আর দুঃখ, অনুশোচনা, কষ্ট- ওসবের স্থান এই যুগে নেই গো!” 

বলতে বলতে ছেলেটা কেমন অস্পষ্ট হয়ে যায় চোখের সামনে থেকে আর পড়ে থাকে একটি কাগজ, যেখানে লেখা, ‘আমিও ভালোবেসেছিলাম একজনকে মনেপ্রাণে,  নিজের থেকেও বেশি। কীরকম স্বাদের, কীরকম মারণ অবহেলা পেয়েছিলাম সেটা না হয় নাই বললাম..!’  

‘আজ আমি আত্মহত্যা করে দুঃখী আত্মা হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি আর সে নবজীবন শুরু করে সুখী আছে। নিজেকে শেষ না করলে হয়ত আমি বুঝতেই পারতাম না ভালোবাসার খুনী কাকে বলে!’ 

কাজল কাগজের লেখাটা পড়ার পর দেখতে পায় যেই জলে সে মরতে চেয়েছিল সেখানেই একটা ছেলের পচা, গলা, ফুলে ওঠা লাশ ভাসছে! 

আপনার গল্প আমাদের পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ WhatsApp -এ আমাদের গল্প পাঠানোর জন্য নীচের লিংকে ক্লিক করুণ - গল্প পাঠানোর জন্য এখনে ক্লিক করুন 

সুস্মিতা গোস্বামী

গল্পের কলমে-
লেখিকার পক্ষে গল্পের সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির অন্যত্র প্রকাশে (youtube/facebook etc.) ছাড়পত্র কপিরাইট আইনের আওতায় উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য হবে। 
সুস্মিতার আরও কিছু গল্প - 

শিক্ষণীয় গল্প- মানবিকতা 

অবহেলা থেকে ভালোবাসা 

দেখা আর হল কই- স্কুল লাইফের প্রেম 
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

করুণ প্রেমের গল্প। দুঃখের ভালোবাসার গল্প। 1 bengali very sad love story

Spread the love

Leave a Reply