অনেক দিন পর আজ আবার একটি ছোট গল্প ছাড়পত্রে নিয়ে আসা হয়েছে। এই গল্পটিতে খুঁজে পাবেন যে, পৃথিবীর অন্য প্রজাতি গুলো হয়তো মানুষ কে সবচেয়ে বেশি অবিশ্বাস করে মানুষের স্বভাবের জন্যই। একজন রক্ষাকর্তা হলে, দশজন হয় ধ্বংস কর্তা। এভাবেই মনুষ্য জাতি হয়তো গড়ে তুলেছে নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রজাতি হিসেবে । এমন কথা কেন বললাম! তাহলে চলুন আপনাকে গল্পটি শোনাই।
একটি ছোট গল্পঃ– পথিক জনের ছাতা
মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা ওই গাছটার বয়স কত তা কেউই ঠিক করে বলতে পারে না । গাছটাকে জন্মের পর থেকে দেখছি ওই মোড়ে দাঁড়িয়ে কত পথিক জনের ছাতা রূপে আবার কত মানুষের স্বাদ পূরণকারী রূপে। ওখানে দাড়িয়ে ও যেন পাহারা দেয় গোটা শহরতলী টাকে। গাছটাকে নিয়ে অনেকের আবার কৌতুহলের ও শেষ নেই ।
কবে উৎপত্তি , কে লাগিয়েছিল , কে জত্ন করে একে মোড়ের ধারে বড়ো করে তুললো , সেসব নানান প্রশ্ন । প্রশ্নের অভাব নেই তবে উত্তর এর অভাব । স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাই হোক বা কোনো অপেক্ষমান যাত্রীই হোক , বা ওই ট্রাফিক পুলিশ কাকু যাকে আমি ছোট থেকে ওখানটাতেই দেখি দাড়িয়ে ট্রাফিক জ্যাম ক্লিয়ার করে কিভাবে সবার গন্তব্য সুনিশ্চিত করছে সঠিক সময় মতো, এরা সবাই যেন অজান্তেই ওই গাছটির ওপর নির্ভরশীল।
গাছটিকে দেখতে দেখতে ছোট থেকে বড়ো হয়ে গেলাম কিন্তু গাছটির কোনো পরিবর্তন হলো না। সে শিরদাঁড়া উঁচু করে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকে নির্ভয়ে। লক্ষ্য করেছি ট্রাফিক পুলিশ কাকুর ওই গাছের সাথে যেন একটা নিবিড় সম্পর্ক আছে , কারণ সবাই নিরাশ করলেও গাছটি কখনো তাকে নিরাশ করেনি । জিজ্ঞাসা করলে বলেন “মা তুই যেমন আমার বুড়ি মা, ঠিক তেমন এই গাছ ও আমার আশ্রয় দাত্রী মা , তোরা আমার হতাশার সময় ঠিক পাশে থাকিস ।”
তবে কিছুদিন ধরে দেখছি ট্রাফিক পুলিশ কাকুর কাজে মন নেই , সেদিন তো একটা অ্যাকসিডেন্ট হতে হতে বাঁচলো । সে নিয়ে কাকুকে অনেকেই শাঁসালো আবার অনেকে ‘কাজ কেড়ে নেওয়ার ক্ষমতা রাখে’ সেটাও বুঝিয়ে গেল। এই সব এর পর একদিন গিয়ে জিজ্ঞাস করলাম কাকু তোমার কি হয়েছে ? কাকু বললো জানিস মা,
মিউনিসিপ্যালিটি এর লোক এসেছিল কদিন আগে, বলে গেলো ‘এই গাছটা এখানে থাকলে নাকি অনেক সমস্যা। বারবার দুর্যোগ হচ্ছে। যদি ঝড়ে গাছটা ভেঙে পড়ে যায় তাহলে সামনের ওই মূর্তিটা , যেটা বানাতে নাকি কোটি কোটি টাকা খরচ হয়েছে , সেটাও ভেঙে যাবে আর রাস্তারও ক্ষতি হবে । এটা মেন রোড কোনো কারণে এটা ব্লক হয়ে গেলে ক্ষমতাবান মানুষদের সমস্যায় পড়তে হবে , তাই এটাকে কেটে ফেলাই শ্রেয়।” লক্ষ্য করলাম কাকুর দুই চোখ বেয়ে ঝরে পড়া অশ্রুবিন্দু গুলোকে। যেগুলো প্রমাণ করছিলো, কাকুর কাছে এই গাছ সত্যি মাতৃসম।
জিজ্ঞাসা করলাম কেন কাকু আমরা কি কিছুই করতে পারিনা? কাকু বললো কি করবো মা আমরা , আমাদের ক্ষমতা নেই যে , ওদের সাথে লড়াই করার মতো। বই-এ পড়েছি তাই বললাম, কেন গাছ বাঁচানোর জন্য যদি চিপকো আন্দোলন হতে পারে, মেয়েরা এত লড়াই করতে পারে তাহলে আমরা কেন পারি না কাকু ? কাকু বললো মা আমাদের পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ নেই যে । ওদের কাছে কোটি টাকার মূর্তি, এই অমূল্য গাছের থেকে বেশি দামী ।
পড়ুনঃ- কয়েকটি বাছাই করা ছোট গল্প হুমায়ুন আহমেদের কিছু সুন্দর উক্তি
এরপরেও কাকু নানান গণ্যমান্য ব্যক্তির দোরগোড়ায় তার আর্জি নিয়ে গিয়েছিল। তবে প্রতিবার ফাঁকা হাতেই তাকে ফিরতে হয়েছে।
দিন পনেরো অতিক্রম করার পর খবর পেলাম ট্রাফিক পুলিশ কাকু নাইট শিফট এর সময় এক গাড়ির ধাক্কায় নিহত হয়েছেন। এর কিছুদিন পর থেকে সবাই রাত্রে ওই গাছের তলা দিয়ে পেরোতে ভয় পেতে লাগলো। কলোনিতে রব উঠলো ওই ট্রাফিক পুলিশের ভুত ওই গাছে চড়াও হয়েছে আর অনেকেই নাকি রাত্রে ওখানে কান্নার আওয়াজ , কালো ছায়া ,আরো সব ভিন্ন ভিন্ন ভুতুড়ে কাণ্ড লক্ষ করেছে । মিউনিসিপ্যালিটি এর লোকেরা কলোনি তে এসে মিটিং ডাকলো ,বললো গাছটা না কেটে ফেললে , বাচ্চারা ঘর থেকে বেরোতে ভয় পাচ্ছে ,এমনকি বড়রাও। আর যা সব ভুতুড়ে কাণ্ড ঘটছে তাতে কলোনির বদনাম হচ্ছে ,সবাই ভয় পাচ্ছে ।
সবাই কে বোঝাতে সক্ষম হল ওই জ্ঞানীগুণী বিদ্বান ব্যক্তিরা যে সমস্যার গোড়া, ওই গাছ আর গাছ কেটে ফেললেই সব সমস্যার সমাধান সম্ভব। সবাই রাজি হয়ে গেলো মিউনিসিপ্যালিটির লোকেদের কথায়। গাছটিকে টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলা হলো। ফাঁকা হয়ে গেলো মোড়টা। রইলো না আর পথিক জনের ছাতা। অনেক পথিকই প্রখর রোদ্দুরে সান স্টোক এর শিকার হয়েছে। কারন এই তল্লাটে রাস্তার উপর তেমন কোন বড় গাছ নেই। গাছটা যে কতটা দামী ছিল তা আজ অনেকেই কলোনির বুঝতে সক্ষম।
সেদিন রাস্তার পাশে পার্টি অফিস দিয়ে পেরোনোর সময় মিউনিসিপ্যালিটি এর এক জ্ঞানী ব্যক্তি ওই গাছ টা নিয়ে কথা বলছিল ,, শুনে দাড়িয়ে গেলাম । কথা গুলো শোনার পর বুঝলাম ট্রাফিক পুলিশ কাকুর মৃত্যু ও গাছটিকে নিয়ে ভুয়ো ভুতের গল্প , গাছটিকে কেটে ফেলা কোনোটাই কাকতালীয় ঘটনা ছিল না । সবটাই ছিল সাজানো দাবা খেলার গুঠি যা ঠিক সময় চেক মেট দিয়ে বাজিমাত করিয়েছে নিজেদের উদ্দেশ্য । ‘একটি গাছ একটি প্রাণ’ – এই স্লোগান প্রচার যারা করে তারাই আবার ধ্বংস করে এই স্লোগানের নীতিকে । কাজেই ‘একটি গাছ একটি প্রাণ’ এই কথাটি প্রতিনিয়ত ধোঁয়াশার মত ফিকে হয়ে উঠছে।
গল্পের কলমে-
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
আলোরানির যে লেখা গুলি আপনার পছন্দ হতে পারে- হারিয়ে যাওয়া প্রেমের গল্প ফিরে পাওয়া ভালবাসার গল্প- মনের মানুষ এক সন্তান হারা মায়ের বেদনা- সন্ন্যাস
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে-
ফেসবুক Group - গল্প Junction
ফেসবুক- ছাড়পত্র
টেলিগ্রাম- charpatraOfficial
WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
একটি ছোট গল্প। পরিবেশ নিয়ে ছোট গল্প। একটি গাছের গল্প।
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।