দুটি অসাধারণ শিক্ষনীয় ছোট ঘটনা থাকছে আজ। জীবনের সাথে গল্প গুলিকে পাশাপাশি রেখে সেগুলির অন্তর্নিহিত অর্থ বোঝার চেষ্টা করুন।
অসাধারণ শিক্ষনীয় ছোট ঘটনাঃ- ০১
একদিন রাহুল বাড়ি থেকে কিছু সুন্দর সুন্দর চকমকি পাথর নিয়ে আসে মিতাকে দেখানোর জন্য। অপরদিকে মিতা বাড়ি থেকে কতকগুলি চকোলেট নিয়ে আসে।
মিতা রাহুল কে বলে তুমি কি আমাকে এই পাথর গুলো দেবে? রাহুল জানায়, সে পাথর গুলি দিতে রাজী আছে, যদি মিতা তার সব চকোলেট রাহুলকে দিয়ে দেয় তবেই।
মিতা রাজী হয়ে যায়। সে তার সব চকোলেট রাহুলকে দিয়ে দেয়। অন্যদিকে রাহুল সেই সেই সুন্দর পাথর গুলির মধ্যে যেটি সবথেকে সুন্দর আর যেটি সব থেকে বড় সেটি লুকিয়ে লুকিয়ে পকেটে রেখে দিয়ে বাকি গুলো মিতা কে দিয়ে দেয়।
এরপর কিছুক্ষণ দুইজনে খেলা করে, শেষে বাড়ি ফেরে।
সেই রাতে মিতা আরামে ঘুমাতে পারলেও, রাহুল ঘুমাতে পারল না। তার মনে শুধু সন্দেহ হতে লাগল যে, যেভাবে সে পাথর গুলির মধ্যে থেকে ভালো সুন্দর পাথরটি সরিয়ে নিয়েছে, মিতাও কি সেভাবে কোন চকলেট সরিয়ে রেখেছে! এইসব ভেবেই তার রাত কেটে যায় কিন্তু ঘুম আসে না।
অন্যদিকে মিতা খুব আরামে ঘুমায় কেননা সে কোন ছলচাতুরী করে নি, সে যেমন রাহুল কে বলেছিল পাথরের বিনিময়ে সে সব চকোলেট রাহুলকে দিয়ে দেবে, সে দিয়েও দেয় সবগুলো। তাই তার মনে রাহুলকে নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।
কিন্তু রাহুলের মনে মিতাকে নিয়ে সন্দেহ রয়েই গেছে।
ঠিক এরকমই হয় আমাদের রিলেশন এ। কোন রিলেশন এ আপনি যদি আপনার পুরো ১০০% যোগদান দিতে না পারেন আপনি যদি ছলচাতুরী করেন, নিজে কোনোদিন সুখী হতে পারবেন না। কেননা রিলেশনশিপ এ নিজেদের পুরো ১০০% একে অপরকে দেওয়াই সব থেকে খাটি কাজ। যদি রিলেশন এ নিজের পুরোটা দিতে না পারেন আপনার মনে সবসময় সন্দেহ চলতেই থাকবে, আপনার মনেও চলতে থাকবে যে অপর জনও আপনার সাথে এমন করেছে কি না!
তাই রিলেশন এ নিজের পুরো ১০০% দিন, এতে বন্ধন মজবুত হবে।
পড়ুনঃ- জীবন নিয়ে লেখা অসাধারণ গল্প
অসাধারণ শিক্ষনীয় ছোট ঘটনাঃ- ০২
প্রতিদিনের মত আমি আমার দোকানে বসি। আমার দোকানের সামনেই রয়েছে একটি চিড়িয়াখানা। সেই চিড়িয়াখানার প্রবেশপথে বছর কুড়ির একটি ছেলে রুমাল পেতে বসে। সে চোখে দেখতে পারে না, প্রতিদিন সকালে এক মহিলা তাকে সেখানে বসিয়ে রেখে যায়, হয়ত বা সেই মহিলা তার মা অথবা কোন আত্মীয় হতে পারে।
সেদিনও এমন দোকানে আমি বসে আছি, আর আমার সামনের চিড়িয়াখানার প্রবেশ পথের পাশে সেই ছেলেটা প্রতিদিনের মত সেদিনও রুমাল পেতে বসে আছে। সে সর্বদা তার সামনে একটি কার্ড বোর্ড লাগিয়ে রাখে, সেই কার্ড বোর্ড এ লিখা থাকে, “আমি অন্ধ, আমাকে দয়া করে সাহায্য করুন।“
যে সমস্ত দর্শনকারী চিড়িয়াখানায় আসেন, তাদের মধ্যে যদি কারো দয়া হয় তবে সেই পেতে রাখা রুমালে দুই টাকা বা পাঁচ টাকার কয়েন ছুড়ে দেন। মাত্র গুটি কয়েক টাকা সেই রুমালে থাকে। আমি দেখলাম, ছেলেটি তার রুমালের মধ্যে থাকা গুটি কয়েক টাকা হাতড়ে হাতড়ে অন্য হাতে নিল এরপর সে টাকা গুলি থেকে কিছু তার পকেটে রাখল আর বাকি গুলো পুনরায় রুমালে রেখে দিল।
দুপুরে আমি দেখলাম একজন লোক, পরনে সাধারণ জামা কাপড় হাতে একটি চামড়ার ব্যাগ নিয়ে সেই ছেলেটির সামনে এসে দাঁড়াল। দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ ছেলেটির সামনে রাখা সেই কার্ড বোর্ডে লিখে থাকা লেখা টির দিকে একমনে তাকিয়ে থাকল, এরপর সে ছেলেটির সাথে কি যেন বলতে লাগল।
আমি দেখলাম সে তার ব্যাগ থেকে একটি মার্কার বেড় করল। এরপর সেই কার্ড বোর্ড টি হাতে নিয়ে সেটার বিপরীত পাশে কি যেন লিখল তারপর, যে পাশে সে লিখেছে সেই পাশে ঘুরিয়ে বোর্ড টা রেখে দিয়ে একটু দাঁড়িয়ে চলে গেল চিড়িয়াখানার ভিতরে।
পড়ুনঃ- শিক্ষণীয় গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এরপর আমার দোকানে ভিড় বেড়ে যায় বলে সেদিকে আর তাকাই নি। যখন ভিড় কমল আমি দেখে অবাক হয়ে গেলাম যে, ছেলেটার সামনের রুমালে অনেক গুলো টাকা জমেছে এমনকি সেখানে কিছু কিছু নোট ও রয়েছে।
আমার প্রবল জানতে ইচ্ছে হল, যে সেই ভদ্র লোক কার্ড বোর্ডে এমন কি লিখল যাতে জাদুর মত এতগুলি টাকা জমা হয়েছে।
আমার উৎকণ্ঠা বেড়েই চলল। আমি দোকান ছেড়ে বেড়িয়ে সেই ছেলেটির সামনে চলে গেলাম, আর দেখলাম কার্ড বোর্ডে লিখা আছে- “আজ একটি সুন্দর দিন, কিন্তু এই সুন্দর দিনটির সৌন্দর্য উপভোগ করা থেকে আমি বঞ্চিত।“
কথাটা দেখে আমি নিজে থেকেই ইমোশনাল হয়ে গেলাম। ছেলেটির আগের কথাটি আর লোকটির এই কথাটি দুটোই একই দিকে ইঙ্গিত করছে কিন্তু শব্দের বাচন ভঙ্গি জাদুর মত প্রভাব ফেলেছে।
নীতিকথা:- অন্যদের থেকে আপনাকে পৃথক ভাবতে হবে, অন্যরা প্রথাগত যে পথে চলে সেই পথে না হেঁটে নিজের বিবেচনা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আপনাকে সৃষ্টিশীল হতে হবে।
শব্দ যেমন মানুষকে রাগিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে তেমনই সেই শব্দই মানুষকে শান্ত করার ক্ষমতা রাখে, মূল রহস্য লুকিয়ে আছে আপনার শব্দ এবং ভাষার চয়নে। আপনার শব্দ চয়নের পারদর্শিতা কারো মন জয় করে নেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
রাহুল এবং মিতা দুইজনে খুব ভালো বন্ধু। দুইজনে একই স্কুলে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে। স্কুল ছুটির পর দুইজনে একসাথে হাত ধরে বাড়ি ফেরে, দুইজনে একসাথে মাঠে খেলা করে।
পুনঃলিখনের পশ্চাতে-
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
পড়ুনঃ- নিজেকে বদলে ফেলার গল্প হতাশা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- ফেসবুক Group - গল্প Junction ফেসবুক- ছাড়পত্র টেলিগ্রাম- charpatraOfficial WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
অসাধারণ শিক্ষনীয় ছোট ঘটনা। নতুন শিক্ষামূলক গল্প। 2 outstanding bengali motivational story.
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।