sটry// jibon// জীবন নিয়ে গল্প//জীবনের গল্প/

বাংলা ছোট গল্প- ‘জীবন’

ভালো না! একলা আমি, নির্ঝঞ্ঝাট সকাল থেকে রাতের প্রহর, বেশ কেটে যায়। সকালের টুথপেস্টের সাথে জীবনের নিবিড়তা খুবই দৈনন্দিন। এরপর গরম চায়ে ঠোঁট আর গলা ভিজিয়ে ‘ইয়ে জিন্দেগী গলে লাগা লে’। মহাকরনের পাশে, একটু ডানদিকের দুহাত গেলেই ঘটিগরম! ঘটিগরম! ঘটিগরম! বসে থাকে। আর শিবুদার বাটার টোস্ট, উফ্ কি দারুন। দেখবেন, কিছু বেশ ইস্ত্রি করা চকচকে শার্ট প্যান্ট পরা বছর তিরিশের যুবক, যুবতী ছুটে চলেছে। আমি ফুরফুরে বাতাস খাবো বলে গাছতলায় দাঁড়িয়ে, তবে সেটা বৃক্ষ বোধ হয় নয়।

মণ্টুদা লস্যিতে খুব মালাই দিচ্ছে , আর প্রচুর লোক ভিড় করে আছে। প্রফুল্লদা, আবার মাংস রাঁধছে সঙ্গে আরো অনেক পদ। যেমন- চিকেন বিরিয়ানি, মটন বিরিয়ানি, পোলাও, মিক্স ভেজিটেবল, মিক্স ফ্রায়েড রাইস আরো অনেক কিছু সবই দেখি আমি কিন্তু খাই না। মিলনদার অফিসপাড়ায় খুব নাম ডাক কারন, দারুন চিকেন টিকিয়া রোল বানায়। সবই দেখি সকাল থেকে রাত অবধি, হয়তো তারপরের সময়ও দেখি তবে থাক সেটা পরেই বলবো।

সকালে প্রায় দেখতাম, প্রবীরের মা নিজের টিফিনের পাঁউরুটি তার ছেলের জন্য নিয়ে আসতো, দেখে খুব ভালো লাগতো। বিভাস ঘোষ একটি এম. এন . সিতে চাকরী করতো। সকাল ৮ টার দিকে বের হতো, অফিসে ঢুকতে হত ঘন্টাখানেকের ভেতর। মানুষটা সারাদিন কিবোর্ডের সাথে লড়াই করে যখন ফিরতে বাড়ির দিকে তখন দেখতাম একহাতে কিছু চিপস আর পিজ্জা থাকতো স্ত্রী-কন্যার জন্য, কারন বাড়ি ফিরে বাচ্চা মেয়ের হাসিকে বড়ো ভালোবাসতো, যেখানে কোনো ক্লান্তির ছোঁয়া মাত্র থাকে না নিমেষে মিলিয়ে যায়।

জীবন নিয়ে গল্প
জীবন নিয়ে গল্প

এস. বোস লেনে থাকতেন শঙ্কর দেবনাথ, ওনার বাবা ছিলেন বিশেষ নাম করা উকিল, ভবতোস হাজরার নামে একজনের মৃত্যুদন্ড পর্যন্ত রোধ করে দেন, আইনটা ভালোই বুঝতেন আর মা ছিলেন গৃহবধূ, তবে এত দয়ালু ছিলেন যে নিজে ৫ টি অনাথ আশ্রম আর দুটি বৃদ্ধাশ্রম চালাতেন এবং ওনার অনুকূলে তৎকালীন সরকার একটি ফান্ডও চালু করেন, দুঃস্থ মানুষদের জন্য। এদিকে সুমিত রায় ছিলেন এক বেকার যুবক, অনেক বছর ধরে ঘুরে ঘুরে চাকরীর পরীক্ষা দিয়েই যাচ্ছিল, কিন্তু প্রেম করেছিল এক বিত্তবান ঘরের কন্যাকে আর তাকেই ভালোবেসে বিয়ে করে, প্রথমে মেয়েটির না মেনে না নিলেও মেয়ে জামাই এর অভাবটা বেশ প্রভাব ফেলে সুমিতের শ্বশুরের।

তাই ই.এম বাইপাসের ধারে প্রায় দু একর জমি লিখে দেয় সুমিতকে। এখন সুমিত ওই জমিতে চারটে টাওয়ার আর পাঁচটা ফ্ল্যাট তৈরি করছে, আর প্রোজেক্টের নাম তার স্ত্রী সোনালীর নামে রেখেছে। এছাড়া আরো ৪ টে হোটেলের মালিক এখন ও। সুমিতের ছেলে বিলাসবহুল গাড়ি চেপে স্কুলে আসে, টিফিনে খায় স্প্যাগিটি আর চিকেন মাঞ্চুরিয়ানের মতো পদ। সুমিতের জীবনও বদলে গিয়ে অনেক উন্নত হয়েছে। ও আর ওর গ্রামের শীতেষ বাগচীকে মনে রাখেনি, যে সম্পর্কে ওর গ্রামের পাড়াতুতো জেঠু হলেও নিজের বুকে করে সুমিতকে মানুষ করে শহরে পাঠিয়েছিল, কিন্তু শীতেষ বাবুর দিকটা একবারও ভাবেনি ও। সৌমেন রায় কলকাতার ওই নিউ আলিপুরের দিকে থাকে।

পড়ুনঃ- শিক্ষণীয় মোটিভেশনাল গল্প

ছোটো বয়স থেকে চিনি, দারুন পড়াশোনায়, কিন্তু চাকরী পায় একটা খাবার দোকানে খাতা লেখার, তবে ভালো চাকরীর সুযোগ পায়নি বললে ভুল হবে,আসলে এক মোটা অঙ্কের ঋণের টাকার জন্য সে বাধ্য হয়েই কাজটা করছে। বালিগঞ্জের সুনন্দা বাগ সৌমেনকে খুব ভালোবাসে, তবে বাস্তবের সঙ্গে সে নিজেকে খাপ খাইয়ে গড়িয়ার এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে প্রজাপতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। যতই হোক, “আপনি বাঁচলে বাপের নাম”, এটা সুনন্দা ভালোই বুঝেছে। আর বর্তমানে ভালোবাসা ওই ভেলপুরির কাগজের ঠোঁঙা, খাওয়া হলে গেলেই ব্যস ফেলে দেওয়া।

যাই হোক ভালোবাসা তো সব সময় ভালো থাকার কাছে হেরে যায়। আর আমি দেখে যাই। সেদিন শ্যামনগরে তুষার মিত্রকে দেখলাম, বেশ ভালো আঁকে, রাস্তার ধারে এক শূন্য ক্যানভাসে জীবন্ত ছবি বা কিংবদন্তিদের ফুটিয়ে তোলে। সারাদিনে ওই খাবার বলতে অল্প চিঁড়ে আর ছেঁড়া পাউরুটি খেয়ে সারাদিন কাটিয়ে দেয়। ওর ছোটোবেলায় মা মারা গিয়েছিল কিন্তু ওর প্রতিভা দারিদ্রে চাপা পড়েনি। ছোটো বেলা থেকেই ইটের টুকরো দিয়ে রাস্তায় আঁকতো আর তাতেই একজনের চোখে পড়ে সে ফ্রান্সে চলে যায়, তারপরে আর জীবনের পেছনে তাকাতে হয়নি কিন্তু ওর হাঁটা চলায় কখনোই দম্ভ নেই মাটির টানে সে এই শহরে দুদিন স্ট্রিট ক্যানভাস পেন্টিং করে।

ekti জীবনের গল্প
ekti জীবনের গল্প

আর আমার চোখে সবই পড়ে, দেখুন না, হেদুয়ার মোড়ে ফুচকা অনেকে দাঁড়িয়ে খেলেও কালু পাশে দাঁড়িয়ে থাকে কেউ একটা ফুচকাও দেয় না। আসলে কালু তো কুকুর, কিন্তু নগেনদা পারেন না রাস্তার ও ফুট থেকে দুটো লেড়ো বিস্কুট দেয় কালুকে। কালু লেজ নেড়ে নেড়ে খেয়ে নগেনদার জুতোয় নাচানাচি করে। খুব ভালো লাগে দেখতে। ভিক্টোরিয়ার পাশ থেকে একটু দূরে একটা গাছ আছে দেবদারু না বট মনে করতে পারছি না। ছাড়পত্র

তবে ওই গাছের বৃদ্ধ দেহে কত প্রেমিক প্রেমিকা দাগ করে করে নিজের প্রেমের প্রমান রেখে যায়। তবে কেউ অর্থের প্রাচুর্যের কাছে ভালোবাসাকে মেরে ফেলে আর কেউ পরিবারের অমতেও নিজেদের একান্তে সংসার সাজায়। ভালোবাসা বেঁচে থাকো। এতক্ষন ধরে আমি বকবক করেই গেলাম, পরিচয়টা দেওয়াই হয়নি। আমি পদবী হীন, অন্তহীন প্রতিটি স্পন্দনের প্রতীক “জীবন” বলছি। আমি বয়ে যাই, শুধু দেখি, ভালোবাসি আর হয়তো ঘুরে ফিরে এই সবার মাঝে বেড়ে উঠি। আমি এক পথ এ পথেই কেউ পায় প্রেম আর কেউ বিরহ, কেউ বাঁচে আর কেউ মরে। তবুও স্রোতের মতো বায়ুর মতো বয়ে যাই, আর থেকে যাই সবার অগোচরে কিন্তু আবার সবার মধ্যমনি হয়ে।

সৌগত প্রামাণিক

জীবন শীর্ষক লেখাটির প্রাণ সঞ্চারে-
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও  বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
পড়ুনঃ- 

জীবন নিয়ে সেরা কিছু উক্তি 

 দুর্বলদের সফলতার গল্প 
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

জীবন নিয়ে গল্প। জীবনের গল্প। bengali story on life

Spread the love

Leave a Reply