রাজার হারিয়ে যাওয়া ধন সম্পদকে কিভাবে দুই বন্ধু রাক্ষসের কবল থেকে পুনরায় নিয়ে আসে, তাইই দেখানো হয়েছে এই অসাধারণ রাক্ষসের গল্পটিতে।
অসাধারণ রাক্ষসের গল্পঃ-
এখন সেখানে দৈত্যের রাজত্ব । রাজা দৈত্য আর প্রজা রাক্ষস। অথচ সে রাজ্য ছিল এক বিশাল ঐশ্বর্যশালী রাজার। ছিল বিরাট বিরাট অট্টালিকা, সুন্দর রাজপ্রাসাদ। মনোরম বাগান। সুদৃশ্য রাজপথ। রাজার ছিল প্রচুর ধন-সম্পত্তি, মণি-মুক্তা-মাণিক্য। অভাব ছিল না প্রজাদেরও। তারপর কোথা থেকে এলো এক বিশাল দৈত্য। এল রাক্ষসের দল। সারা রাজ্য ধ্বংস করে দিল। একজন মানুষকেও জীবন্ত রাখল না। সারাটা রাজ্য জুড়ে সেখানে এখন গভীর জঙ্গল। আর সে জঙ্গলের অধিপতি সেই দৈত্য।
সেই দৈত্যরাজ্যের রাজপ্রাসাদের দক্ষিণের দ্বিতীয় ঘরে সে মণি-মুক্তা-মাণিক্য ভর্তি তা পৃথিবীর সকল রাজাও জানে। কিন্তু কারও সাধ্য নেই ঐ রাক্ষস আর দৈত্যদের মেরে সেই ধনসম্পত্তি উদ্ধার করে।
প্রতিদিন রাত্রে শুয়ে শুয়ে মহুল রাজপুত্র বুদ্ধিকুমার ঠাকুমার কাছে সেই দৈত্য রাজ্যের গল্প শোনে আর ভাবে কেন কারও সাধ্য নেই সেই ধনসম্পদ উদ্ধার করার। দৈত্য আর রাক্ষসরা যতই শক্তিমান হোক না কেন তারা তো মানুষের মতো এতটা বুদ্ধিমান নয়। তবে কেন তা দুঃসাধ্য?
![অসাধারণ রাক্ষসের গল্প](http://charpatra.com/wp-content/plugins/a3-lazy-load/assets/images/lazy_placeholder.gif)
রাজপুত্র বুদ্ধিকুমারের প্রাণের বন্ধু সাহসকুমার। সাহসকুমার মন্ত্রীর ছেলে। দুজনে একই সাথে খেলে। একই সাথে স্কুলে যায়। ইদানিং রাজকুমার সব সময় কি যেন ভাবে। সাহসকুমার একদিন বুদ্ধিকে জিজ্ঞাসা করল –বুদ্ধি, তুই কি এত ভাবিস? এই তো ক’দিন আগেও কত খুশিতে ছিলিস। রাজা-রাজা খেলা করতাম। কত বুদ্ধি করে তুই রাজ্য জয় করতিস। বুদ্ধি তখন ঠাকুমার কাছে শোনা সেই দৈত্যরাজের গল্প বলে। আর বলে – সেই চিন্তাই করছি কেমন করে সেই দৈত্যেররাজ্য জয় করা যায়। সব কথা শুনে সাহস বলে—তবে চল্, আমরা একদিন বেরিয়ে পড়ি। দেখবি আমরা ঠিক জয় করে ঘরে ফিরব।
বুদ্ধিকুমার আর সাহসকুমার তাদের মাকে বলল, মা আমরা দেশ ভ্রমণে বেরুচ্ছি। তোমরা একদম চিন্তা করবে না। তারপর একদিন বুদ্ধি সাহসকে আর সাহস বুদ্ধিকে সাথী করে বেরিয়ে পড়ল।
পড়ুন- রূপকথার রাজকন্যার গল্প
কত রাজ্য, কত গ্রাম-নগর পার হয়ে চলল তারা। কত মনোরম দৃশ্য, প্রকৃতির হাতছানি। কিন্তু উদ্দেশ্য তাদের একটাই, দৈত্য আর রাক্ষসদের ধ্বংস করা। গাছের ফল-মূল আর পানীয় জলকে প্রধান খাদ্য করে তারা এগিয়ে চলল। তারা জনমানব শূন্য এক পথ ধরে চলেছে। যেতে যেতে সাহসকুমার দেখে রাস্তার মাঝে একটা ছেঁড়া চট পড়ে আছে। বুদ্ধি বলে,—সাহস, ওটাকে সঙ্গে নে। হয়তো কাজে লাগতে পারে। সাহস চট টাকে নিল।
তারপর যেতে যেতে দেখে একটা কোদাল পড়ে আছে রাস্তার মাঝে। বুদ্ধির কথায় সাহস বলে, বলা যায় না কখন কোনোটা কী কাজে লাগবে। হয়তো ক্ষুদ্র জিনিসও কখনো বড়ো উপকার করতে পারে। তারপর যেতে যেতে দেখে রাস্তায় ভীষণ মোটা একটা কাছি পড়ে আছে। সাহস বলল, বন্ধু এটাকেও নিশ্চয় সঙ্গে নিতে বলবে? বুদ্ধি বলল, চারিদিকে কোনো জনমানব নেই। গাঁ-গল্প নেই। এই নির্জনে আমাদের চলার পথের মাছে এটা পড়ে আছে মানে এটাও আমাদের নিশ্চয়ই কোনো উপকারে লাগবে।
![ভয়ংকর রাক্ষসের গল্প](http://charpatra.com/wp-content/plugins/a3-lazy-load/assets/images/lazy_placeholder.gif)
এইভাবে যেতে যেতে তারা এক জঙ্গলে ঢুকে পড়েছে। গভীর জলাল। আস্তে আস্তে বেলা পড়ে এল। এতদিন তারা কখনও কোনো মন্দিরের বারান্দায়, কখনও কোনো গাছের ডালে বা গাছের তলায় রাত কাটিয়েছে। কিন্তু আজ ভীষণ গা ছম ছম্ করছে। হঠাৎ দেখে জঙ্গলের মধ্যে একটা পোড়ো বাড়ি। বুদ্ধি আর সাহস ঠিক করল আজ ওরা এই বাড়িতেই রাত কাটাবে। কিছু ফলমূল খেয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে দুজন একটু শুয়েছে। যেই না একটু ঘুম এসেছে অমনি বাইরে শব্দ – হাউ-মাউ খাউ। মানসের গন্ধ পাউ। কেঁ হেঁ এই ধরে? কেঁরও তোঁদের খাঁ।
সাহস ভাবল এ নিশ্চয়ই রাক্ষসের দল। বুদ্ধি তখন ভয়ে ঠক্ঠক্ করে কাঁপছে। সাহসকুমার তখন সাহস করে বল, আমাদের খাবি সে শক্তি নেই তোদের।
—বেশ তবে বেরিয়ে আয় দেখি, কাঁদের শক্তি বেশি। বুদ্ধিকুমারের মাথার হঠাৎ একটা বুদ্ধি খেলে গেল। সে বলে, দেহের শক্তি নয় আগে দেখা যাক সামান্য মাথার চুলের শক্তি কাদের কত বেশি।
—বেশ। বলে, রাক্ষসরা একগোছা চুল ছিঁড়ে দেয়ালের ফোকর দিয়ে বাড়িয়ে দিল। বুদ্ধিকুমার দেখল চুলগুলো সহজে বেঁকে যায় এবং একটু মোটা। বুদ্ধিকুমার তখন সেই ঝাটা থেকে একগোছা কাঠি বের করে দিল। সাহসকুমার বলল, এই দেখ আমাদের মাথার চুল। রাক্ষসরা অবাক হলো, এত মোটা আর এত খাড়া-খাড়া। তখন তারা একটু ভয় পেল। খবর দিল অন্য রাক্ষসদের। তারা এসে বলল, – আমাদের নখ দিয়েই খুবলে খাব তোঁদের।
পড়ুন- রূপকথার রাজপুত্রের গল্প
তখন বুদ্ধিকুমার বলল, বন্ধু এবার চট আর কোদালকে কাজে লাগাও। সাহসকুমার আচ্ছা করে চটটাকে জড়িয়ে নিল পিঠে আর বলল, ঠিক আছে তবে দেখা যাক কাদের নখ কত ধারাল, আর কাদের পিঠ কত শক্ত। এই বলে সাহসকুমার একটা জানালা খুলে দাঁড়াল পিঠ পেতে। আর রাক্ষসরা একের পর এক আঁচড়াতে লাগল সাহসকুমারের পিঠ। পিঠ তো নয়। যতই চটের উপর আঁচড়ায় ততই রাক্ষসের হাতের নখ যায় ভেঙে। আঙুলের ডগা দিয়ে রক্ত বেরুতে থাকে। সাহসকুমার বলল, এবার তোরা পিঠ পাত দেখি। যেমনি রাক্ষসরা পিঠ পেতেছে তেমনি দুজন কোদাল দিয়ে রাক্ষসের পিঠ আঁচড়াতে থাকল। আর ধারাল কোদাল দিয়ে রাক্ষসদের পিঠ কেটে ঝর-ঝর করে রক্ত পড়তে লাগল। সব রাক্ষস ভয়ে পালিয়ে তখন রাজা দৈত্যতে খবর দিল।
সব শুনে রাজা দৈত্য অবাক হয়ে গেল। কী এমন প্রাণী, যা মানুষের মতো গন্ধ অথচ তাদের চেয়ে শক্তিশালী। তখন রাজা দৈত্য রেগে সদলবলে এগিয়ে আসতে লাগল সেই পোড়ো বাড়িটার দিকে। কী ভীষণ তার গর্জন। যেন সাইক্লোন, টাইফুন বা টর্নেডো আসছে। এবার দুই বন্ধু খুব ভয় পেল। তবুও সাহসকুমার বলল, বন্ধু তুমি বুদ্ধি দাও। আমি সাহস করে এগিয়ে যাব। দেখ আমরা জিতবই। বুদ্ধিকুমার বলল, তবে আমাদের আর এক সাথী এই মোটা কাছি। এবার এটাকে কাজে লাগাতে হবে।
![বাচ্চাদের রাক্ষসের গল্প](http://charpatra.com/wp-content/plugins/a3-lazy-load/assets/images/lazy_placeholder.gif)
গর্জন করতে করতে দৈত্য এসে বলল, এই তোঁরা কী প্রাণী? তোঁদের কত শক্তি? সাহসকুমার বলল, কী প্রাণী জেনে লাভ নেই। তবে কত শক্তি তা যদি জানতে চাস্—এই নে আমার লেজটা। টেনে আমাকে এক পা সরাতে পারলে ভাববো, তোদের গায়ে শক্তি বেশি। এই বলে সেই মোটা কাছি দিল। দৈত্য সেই বিশাল লেজ দেখে চমকে উঠল। তারপর দৈত্য আর সকল রাক্ষসরা মিলে সেই লেজটাকে টানতে শুরু করল। যখন খুব জোরে টান দিচ্ছে ঠিক তখনই বুদ্ধিকুমার কাছিটাকে দিল কেটে। আর যায় কোথায়! হুড়মুড় দুমদাম করে সব রাক্ষস দৈত্য রাজার উপরে গিয়ে পড়ল, আর দৈত্য রাজা রাক্ষস সেনার চাপে সেখানেই দম বন্ধ হয়ে মারা গেল। পরদিন সকালে বুদ্ধিকুমার আর সাহসকুমার সেই দৈত্যপুরীর রাজপ্রাসাদ থেকে সব মণি-মুক্তা-মাণিক্য উদ্ধার করল।
তারপর বাড়ি ফিরলে মহুলরাজ বুদ্ধিকুমারের অসাধ্য সাধনে অভিভূত হয়ে গেলেন। খুশিতে তিনি সারা পৃথিবীর সকল রাজ্যের সকল লোককে আমন্ত্রণ জানালেন এক বিশাল ভোজসভায়। সকলকে এই দুর্গের কাহিনি শোনালেন। আর পেট ভরে মণ্ডা-মিঠাই-মাংস খাওয়ালেন।
গল্পের লেখক- স্বপন কুমার রায়
এই অসাধারণ রাক্ষসের গল্প টির পূর্ণতা প্রাপ্তি যার কলমে-
পড়ুন- পোড়ো বাড়ির সেই ভূতুড়ে আয়না ভয়ঙ্কর ভুতের গল্প- বদলা
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- ফেসবুক Group - গল্প Junction ফেসবুক- ছাড়পত্র টেলিগ্রাম- charpatraOfficial WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
বাচ্চাদের রাক্ষসের গল্প। অসাধারণ রাক্ষসের গল্প। ভয়ংকর রাক্ষসের গল্প।
![charpatra.com ছাড়পত্র](http://charpatra.com/wp-content/plugins/a3-lazy-load/assets/images/lazy_placeholder.gif)
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।