vuter golpo in bangla একটি ভয়ঙ্কর ভূতের গল্প নিয়েই আজ আবার চলে আসা। এই ভয়ের গল্পটি পড়ে আপনি অনেক মজা পাবেন, সেটা নিশ্চিত। সর্বোপরি ভূতের গল্পে যে ভয়ের ভাব থাকে, সেটাকে প্রতিফলিত করার চেষ্টা করা হয়েছে।

vuter golpo in bangla. ভয়ঙ্কর ভূতের গল্পঃ-

শিলিগুড়ির ছেলে অংশু। ভালো নাম অংশুমান চট্টোপাধ্যায়। স্কুল থেকে সে ইতিহাস প্রেমী। কলেজ শেষেও সেই নেশা তার উধাও হয়নি। ২০১৭ সাল, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষায় বেশ ভালো ফল করে সে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতাত্ত্বিক বিভাগে সুযোগও পেয়ে যায় সে।

সেবার ইউনিভার্সিটি থেকে পুরাতাত্ত্বিক বিভাগের ছাত্রদের আলাদা আলাদা প্রজেক্ট করতে দেওয়া হয়েছিল। অংশুকে প্রজেক্ট করতে হবে মানুষের বিবর্তনের উপড়ে, আর এই পুড়ো কাজটাই করতে হবে পাকিস্তানের বর্ডারের কাছে হরপ্পা অর্থাৎ সিন্ধু সভ্যতা যেখানে আবিষ্কৃত হয়েছিল সেখানে।

এই কাজের জন্য তাঁকে মানুষের কবরেও অনুসন্ধান করতে হতে পাড়ে। এই রকম ফিল্ডে নেমে কাজ করার সৌভাগ্য আগে কখনো হয়নি অংশুর, তাই সে প্রচণ্ড উৎসাহিত।

প্রকাণ্ড জায়গা, যতদূর চোখ যায়, ধু-ধু বালি। অংশু দূরে একটি কবর দেখতে পায়, তার বুকটা যেন কেঁপে উঠল, তাড়াতাড়ি সেদিকে গিয়ে নেমে পড়ল সেই কবরটা খুঁড়তে। প্রায় এক-কোমর সমান খোঁড়ার পড় তার মুখে হাঁসি ফুটে এল, ইয়েস ইয়েস সে পেরেছে। এখানে একটা মৃত মানুষের কবর রয়েছে। হুম মৃত মানুষটির হাড়-গোড় প্রায় সবই মাটি খেয়ে ফেলেছে, এটার বয়স নেহাত পাঁচ-হাজার বছরের বেশি হবেই হবে।

পিছন ঘুরতেই তার মনে হল, শক্ত কিছু একটার উপর তার পা পড়ে গেছে, হাত দিয়ে বালি সরিয়ে দেখল মানুষের মাথার খুলি। তার সমস্ত শরীর যেন কেঁপে উঠল। উঁহু ভয়ে নয়, আনন্দে। সে তার প্রজেক্ট আরামেই কমপ্লিট করতে পাড়বে। তার মধ্যে এক অব্যক্ত উত্তেজনার সৃষ্টি হতে লাগল। এদিকে মাথার উপর গনগন করতে থাকা সূর্যটার প্রকোপে আর বালির প্রতিফলিত উত্তাপে সে ঘেমে-নেয়ে একাকার।

vuter golpo in bangla
vuter golpo in bangla ভয়ের গল্প

মানুষের মাথার খুলি আর হাড় গুলি সে তার ব্যাগে নিয়ে নিল। কবর থেকে উঠতে যাবে, ঠিক সেই সময়ে কবরের দেওয়ালের কিছুটা অংশ ধসে পড়ল, অংশু চমকে গিয়ে দেখল, একটা কুকুরের হাড় দেওয়াল থেকে পড়েছে, হাড়ে জড়ানো আছে একটি নীল রঙের চকচকে পাথর দিয়ে তৈরি মালা। সে এতদিন বইয়ে পড়ে এসেছে নীলকান্ত মণির কথা, এটাই হয়ত সেই মণি। অংশু ব্রাশ দিয়ে তাতে লেগে থাকা ময়লা গুলি পরিষ্কার করতে লেগে গেল, ঈশ প্রাচীন কালে ধাতু-বিদ্যায় মানুষগুলি কি পারদর্শীই না ছিল, এত দিন আগের মালা অথচ এখনও প্রায় অক্ষত অবস্থায় আছে।

কিন্তু এই রত্ন খোচিত মালাটি কুকুরের হাড়ের সাথে এভাবে একই কবরে এসেছে কিভাবে! তার মনে পড়ে গেল, প্রাচীন কালে মৃতের সাথে তার পোষ্য প্রাণীটিকেও কবর দেওয়া হত। ঈশ কুকুরের গায়েই এত দামী রত্ন, না জানি লোকটি কত ধনী ছিল তাহলে! তবে লোকটির মূল কবরে খুঁজেও সে কোনো রত্ন বা সেই জাতীয় কিছু খুঁজে পেল না সে।

এবারে বাড়ি ফিরবার পালা, শকের বসে আজ সারাটা দিন সে এই ধু ধু প্রান্তরে একাই কাটিয়েছে সে। গনগনে সূর্যটা আজ তার মাথার উপর দিয়ে গেছে। কবর থেকে উঠে মাথাটা কেমন যেন টনটন করতে লাগল তার। ব্যাগে সেই কুকুরের হাড় জারানো মালাটি রেখে দিয়ে সে তার কোয়ার্টারে পা বাড়াল। ক্লান্তি থাকলেও সে ভীষণ আনন্দিত, তার অনেক দিনের ইচ্ছে আজ পূরণ হতে চলেছে, বাড়ি গিয়ে পরিষ্কার হয়েই সে ওই মাথার করোটি আর হাড় নিয়ে থিসিস লিখবে সে, চলবে অনুসন্ধান।

পড়ুনঃ- মাঠের সেই ভূতুড়ে গাছ 

কি ভয়ানক ছিল সেই রাত!

কোয়ার্টারে এসে আরে ঝামেলা, নীচের কুকুর গুলি তাকে দেখে এরকম মরা-কান্না কাদছে কেন? আজব তো, এই কুকুরগুলি তো এরকম করে না।

নিজের রুমে ফিরে এসে, সে ব্যাগ থেকে সেই করোটি আর মালাটি বেড় করে রাখে, ঈশ কতো সুন্দর এই মালাটি, এত দামী বস্তুটি সেখানে পড়ে ছিল। উঁহু উঁহু লোভ নয়, লোভ নয়, আমি তো পুরাতাত্ত্বিক বিভাগের একজন ছাত্র, আমার লোভ মানায় না, এরকম আরও কতো কিছু অপেক্ষা করছে আমার জন্য!

তার যেন আর দর সইছে না, তার ইচ্ছে হচ্ছে এক্ষণই করোটি টিকে নিয়ে থিসিস লিখতে বসি। তবে তার সমস্ত শরীর নোংরা। সে পরিষ্কার হওয়ার জন্য বাথরুমে যায়। বাথরুমে ঢুকেই তার মাথাটা ঘুরে গেল, একি একি এই সব কি, এগুলো কোথা থেকে এল, বাথরুমে ভর্তি আরশোলা। উফ কি বিচ্ছিরি গন্ধ, আর পাড়া যাচ্ছে না। এত মোটা মোটা আরশোলা সে জীবনেও দেখেনি। তার মাথায় যেন মুহূর্তে পারদ চড়ে গেল। টাওয়েল টা জড়িয়ে সে নীচে গিয়ে কোয়ার্টারের দেখভাল কারীকে ডাকতে লাগল।

“আপনারা কি কাজ করেন? আমার বাথরুমে এত্ত এত্ত আরশোলা কিভাবে এল, সেদিকে খেয়াল আছে আপনার?”

“আরশোলা! এই কোয়ার্টারে? হতেই পাড়ে না। আপনি ভাট বকছেন।“ “আপনার কি মনে হচ্ছে আমি মশকরা করছি, চলুন নিজের চোখে দেখে আসুন।“

“আজ আর সেগুলি পরিষ্কার করার লোক পাওয়া যাবে না, কাল আমি লোক নিয়ে যাব ক্ষণ, তবে আপনার কথা আমার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না, এখানে কোনো আরশোলার চিহ্ন খুঁজেও পাওয়া মুশকিল।“

অংশু আর কিছু বলে না, রাগে গজ গজ করতে করতে বাথরুমে চলে যায় সে। ছিঃ গন্ধ আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে, স্নান তো দূরের কথা এখানে মুখ পর্যন্ত পরিষ্কার করতে পাড়বে না সে।

এই সব দেখে তার কেমন যেন নিজেকে পাগল পাগল মনে হচ্ছে, তার ইচ্ছে হচ্ছে যেন গিয়ে কোয়ার্টারের লোকটাকে গলা টিপে ধরি। তার হঠাৎ মনে হচ্ছে যেন ছুটে গিয়ে সেই আরশোলা গুলিকে আগুন জ্বালিয়ে দিই। এভাবে স্নান না করে তাকে থাকতে হবে। কি আর করা যাবে।

সে কিচেনে গিয়ে দেখে, সেখানেও আরশোলায় ভর্তি। সব খাবার আরশোলার পরিবার সাপার করে দিয়েছে। সে যাই হোক অন্তত ফ্রিজ থেকে একটু জল খাওয়া যেতে পাড়ে। সে ফ্রিজের দরজা খুলতেই চমকে গেল। আরশোলার দল, এখানে কিভাবে ঢুকল! ছিঃ ছিঃ এই গুলি দেখলেই কেমন যেন ঘেন্না জাগে।

রান্না ঘড় থেকে বেড়িয়ে আসে অংশু। রাগে সে একটা তেলাপোকাকে ধরে পিষে দিল, কিন্তু তেলোপোকাটির যেন কিছুই হল না, আশ্চর্য, দিব্যি উড়ে পালাল। যেন পাগল হয়ে যাবে অংশু এমন অবস্থা তার।  

হঠাৎ করেই তার থিসিসের কথা মনে পড়ল। সে তার বেডরুমে এসে সিরিজ কাগজ আর ব্রাশ দিয়ে করোটিটা পরিষ্কার করতে থাকে। হঠাৎ কারেন্ট চলে যায়, এবার তার মনে হল, তার মাথা রাগে ফুটে যাবে। করোটিটি নামিয়ে রেখে সে চেয়ার থেকে উঠতেই আবার কারেন্ট চলে এল।

সে আবার করোটিটি হাঁতে নিয়ে ঘষতে যাবে, আবার কারেন্ট চলে গেল। যখন ভাগ্য খারাপ থাকে, তখন সবাই লাথি মারে। সে রান্না ঘড়ে দেশলাই আনতে যাওয়ার জন্য চেয়ার ছেড়ে উঠে, আবার কারেন্ট চলে আসে।

আশ্চর্য, করোটিটি হাঁতে নিলেই কারেন্ট চলে যাচ্ছে, রেখে দিলেই চলে আসছে, অথচ অতক্ষণ সে দিব্যিসে এটাকে বয়ে নিয়ে এসেছে। মনটা তার চরম বিক্ষিপ্ত হয়ে যাচ্ছে। মনে একটু একটু করে খটকা লাগছে তার, সব কিছুই কেমন যেন অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে সে ঘড়িতে দেখে রাত ১ টা, বড়ই তাজ্জব ব্যাপার, এত তাড়াতাড়ি রাত ১ টা!

বাইরে থেকেও কেমন যেন অদ্ভুত অদ্ভুত শব্দ শোনা যাচ্ছে। মন ও শরীর দুটাই ভীষণ ক্লান্ত। আজ আর এগুলি ঘেঁটে লাভ হবে না। এই ভেবে সে করোটি আর কুকুরের হাড়টি আলমারিতে তুলে রেখে দেয়।

সে দরজা বন্ধ করতে যাবে, হঠাৎই কিছু একটার শব্দে সে চমকে গেল, পিছন ফিরে দেখে করোটিটি মেঝেতে পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আশ্চর্য এটিতো পড়ে যাওয়ার কথা নয়! করোটিটি তুলে রাখার জন্য সে ঝুকবে এমন সময়, বাইরের একটা গাছ থেকে প্যাঁচার আওয়াজ ভেসে এল, আবার কারেন্ট চলে গেল।

অংশু এবার কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়াল, কি রকম যেন ভয়ংকর পরিবেশের সৃষ্টি হচ্ছে। আবার কারেন্ট চলে এল, একি করোটিটি কোথায় গেল! অংশু আলমারির তাঁকে দেখল, করোটিটি  আগের জায়গায় রয়েছে। বড়ই অদ্ভুত ব্যাপার।

horror story in bengali vuter golpo in bangla
horror story in bengali vuter golpo in bangla ভয়ের গল্প

কি জানি এরকম আশ্চর্য জিনিস কেন হচ্ছে তার সাথে। তার মনে হল, সে ক্লান্ত তাই এই অদ্ভুতুড়ে ঘটনা ঘটছে মনে হচ্ছে তার সাথে। এতক্ষণে তার শরীরটাও বেশ ঠাণ্ডা হয়ে গেছে, ঘড়টা কেমন জানি A.C লাগানো ঘড়ের মত মনে হচ্ছে, অনেক ঠাণ্ডা।

সারাদিনের ক্লান্তিতে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই তার ঘুম চলে এল। কতক্ষণ সে ঘুমিয়ে কাটিয়েছে ঠিক জানে না, হঠাৎ তার মনে হল তার কেমন যেন অস্বস্তি হচ্ছে। তার মনে হল সে স্নান করেনি তাই হয়ত এরকম মনে হচ্ছে। সে আবার ঘুমানোর চেষ্টা করল, কিন্তু এবার যেন অস্বস্তিটি আরও কিছুটা বেড়ে গেল। তার মনে হতে লাগল, কেউ যেন তার হাত পা খাটের খুঁটিতে প্রচণ্ড শক্ত করে বেঁধে রেখেছে।

সে তার হাত পা নাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করতে লাগল। হঠাৎ অংশুর সামনে দুটি সাদা চকচকে চোখের মত বস্তু ভেসে উঠল, অংশুর মনে হল সেই বস্তুগুলি যেন তার পেটের উপড়ে বসেছে। খুব ভাঁড় অনুভূত হচ্ছে। হঠাৎ তার কানে কর্কশ কণ্ঠে ভয়ংকর আওয়াজ আসতে লাগল-

“আমি কি তোর কোনো ক্ষতি করেছি রে, তুই আমার ঘুম কেন ভেঙ্গেছিস! তুই আমার মাথায় বারংবার আঘাত করছিস কেন? আমার পোষ্যটাকেও তুই ছাড়লি না, তুই ওরও ঘুম ভাঙলি! আমার প্রিয় মালাটা সেটাকে দেখেও তুই লোভ করছিস? তোর আজ আর বাঁচার উপায় নেই।“

অংশু কাঁপা গলায় উত্তর দিল- “তু তু তু তুমি কে? আমি তোমাকে দেখতে চাই। তুমি আমাকে বেঁধে রে রে রে রেখেছো কেন?”

এক ভয়ংকর অট্টহাসিতে গোটা ঘড় ভড়ে গেল, আমি যাচ্ছি আমার বাকি কাজ আমার সৈন্য বাহিনী আরশোলারা করে দিয়ে যাবে। এর আগেও আমার একবার ঘুম ভেঙেছিল। আমি ওদের ছাড়ি নিই। তোকেও ছাড়ব না।

একটা বিকট চিৎকার শোনা গেল, এরপর জানালার কাঁচ গুলি প্রকাণ্ড শব্দ করে ভেঙ্গে গেল। অংশু অনেক চেষ্টা করেও তার হাত-পায়ের অদৃশ্য বাঁধন খুলতে পাড়ল না। হঠাৎ তার কানে এল, কেমন যেন অনেক গুলি আরশোলা উড়ে আসার শব্দ হচ্ছে। এরপর সবই শেষ-

ভয়ঙ্কর ভূতের গল্প ভয়ের গল্প
ভয়ঙ্কর ভূতের গল্প ভয়ের গল্প vuter golpo in bangla
<

পরের দিন, বাথরুম পরিষ্কার করার লোককে নিয়ে কোয়ার্টারের লোকটি অংশুর দরজায় এসে বেল বাজাতে লাগল, কিন্তু সাড়া-শব্দ কিছুই পেল না। অবশেষে সে বিরক্ত হয়ে গেল, তার কাছে থাকা অন্য চাবি দিয়ে সে অংশুর ঘড়ের দরজা খুলেই হতচকিত হয়ে গেল, তার সাথে থাকা লোকটি সেখানেই জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেল।

অবাক বিস্ময় আর আতঙ্কে ভঁরা অংশুর চোখ সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে আছে, চোখ যেন ঠিকরে বেড়িয়ে আসছে। বাকি দেহ আর নেই, শুধু মুখ ছাড়া বাকি শরীরের কঙ্কাল পড়ে রয়েছে। আর সেই করোটিটি আলমারির তাকেই রয়েছে।

মেঝেতে লিখা রয়েছে, আরবি শব্দ aintiqam অর্থাৎ বদলা।  

***vuter golpo in bangla ভয়ঙ্কর ভূতের গল্প ভয়ের গল্প

প্রতিদিনের আপডেটের জন্য ফেসবুক- ছাড়পত্র

“vuter golpo in bangla. ভয়ঙ্কর ভূতের গল্প। ভয়ের গল্প। new horror story in bengali ”

পড়ুনঃ- এক ভয়ঙ্কর রাতে আমি আর সুলেখা!
Spread the love

Leave a Reply