আজ আপনাদের জন্য থাকছে তিনটি অনুপ্রেরণার ছোট গল্প। এই অনুপ্রেরণা জাগানো ছোট গল্প গুলির মাধ্যমে নতুন কিছু বার্তা আপনাদের নিকট পৌছে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
অনুপ্রেরণার ছোট গল্প। onuprerona mulok golpo:-
অনুপ্রেরণার ছোট গল্প-০১
ঢোলকপুর গ্রামের বছর কুড়ির একজন ছেলে হল যদু। আমাদের সবারই কিছু না কিছু প্রিয় নেশা বা শখ রয়েছে। তেমনই যদুর প্রিয় শখ হল নতুন নতুন বন্ধু বানানো। গ্রামে তার সমবয়সী প্রায় এমন কোনো ছেলে নেই যার সাথে তার বন্ধুত্ব হয় নি। উঁহু শুধু বন্ধুত্বই নয়, বন্ধুর প্রতিটি কাজে সাহায্য করতে সে বিশেষভাবে সাড়া দিত। যে বন্ধু তার কাছে যখনই সাহায্য চেয়েছে, সে ঠিক তখনই তাকে যথাসাধ্য সাহায্য করেছে।
আমাদের সবার যেমন প্রিয় বন্ধু থাকে, ঠিক তেমনই যদুরও চারজন অত্যন্ত প্রিয় বন্ধু ছিল। তাদের অসময়ে যদু পাশে থাকবে না, এমনটা ভাবাই যায় না। বন্ধু মহলেও যথেষ্ট নাম-ডাক আছে যদুর। তার বন্ধুরা প্রায়ই তার সুনামে মজে থাকত।
একদিন যদু ও তার চারজন প্রিয় বন্ধু পাড়ার বাইরের গ্রাম থেকে বাড়ি ফিরছিল। হঠাৎই তাদের রাস্তায় এসে দাঁড়াল, সেই গ্রামের কিছু খচ্চর ছেলে। তাদের হাঁতে ইয়া মোটা মোটা লাঠি। যেহেতু যদু তার এই চারজন বন্ধুর মধ্যে সবথেকে ছোট, তাই খচ্চর ছেলেগুলি যদুর কাছে এসে, তার কাছে টাঁকা চাইতে লাগল। এদিকে যদু খুবই ভয় পেয়ে গেছে। সে প্রথম বন্ধুর কাছে সাহায্য চাইল। তার সেই বন্ধু বলল- “ভাই আমাকে ক্ষমা করো, আমার এই মুহূর্তে একটি জরুরী কাজ মনে পড়ে গেছে। এই বলে সে সেখান থেকে দৌড়ে পালাল।
যদু এবার দ্বিতীয় বন্ধুর দিকে দেখতেই দ্বিতীয়জন বলে উঠল- “ভাই তুমি তো জানো আমি ব্রাহ্মন বংশের ছেলে। আমাদের ধর্মে কোনো ঝামেলায় পড়া বারণ।“ এই বলে সেই বন্ধুটিও সেখান থেকে চৌ চৌ দৌড় মারল।
যদু তৃতীয় বন্ধুটির কাছে সাহায্য চাইতেই সে বলল- “আরে আমার তো মনেই নেই, আমার মা আমাকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে বলেছিলেন, ইস তাড়াতাড়ি যাই, নাহলে মা আমাকে বকবেন।“ এই বলে সেও সেখান থেকে চলে গেল।
বাকি রইল চতুর্থ জন, সে বলল-“বন্ধু, সবাই চলে গেল, আমি একাই এদের সাথে পেড়ে উঠব না” এই বলে সেও সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে গেল।“
অসহায় যদু, যে সারাজীবন বন্ধুদের ভালো চেয়েছে। বন্ধুদের আপদে-বিপদে পাশে থেকেছে। সেই বন্ধুদের কাছে সাহায্য চেয়েও কিছুই লাভ হল না। এদিকে সেই গণ্ডা মার্কা ছেলে গুলি যদুকে প্রহার করে, তার সাথে থাকা সমস্ত অর্থ নিয়ে চম্পট দিল।
বন্ধুদের ভিড়ের তুলনায়, সীমিত কিন্তু লয়েল বন্ধু বানানো জরুরী।
পড়ুনঃ- সফলদের ব্যর্থতার গল্প।
অনুপ্রেরণার ছোট গল্প-০২
রাজারহাট গ্রামের একজন ধনী ব্যক্তি, ঠিক করলেন, তিনি কিছু সম্পত্তি ঈশ্বরের নামে দান করবেন। তার পরিকল্পনা মতে, তিনি সেখানে একটি মন্দির বানাবেন, তারপর সেখানে একটি ফুলের বাগান লাগাবেন। কিছু চাষের জমি সেখানে থাকবে, আর সেখানে সারাবছর ধরে চাষাবাস হবে। আর সেই দিয়েই যেন মন্দিরের খরচা চলে যায়। তিনি ঠিক করলেন যে, তিনি সেখানে একটি বিশ্রামালয় বানাবেন। দুরদিগন্ত থেকে আসা পুণ্যার্থীরা সেখানে চাইলেই দুই-তিন দিন থাকতে পাড়বেন। তাদের খাওয়ার যেন সু-বন্দবস্ত হয় সেই দিকেও তিনি খেয়াল দেওয়ার কথা ভাবলেন। তার পরিকল্পনা সব কিছুই তিনি ঠিক করে রেখেছিলেন। কিন্তু তিনি কিছুতেই নিজের মনের মত একটি লোককে খুঁজে পাচ্ছেন না, যার উপর তিনি এই সব কাজের ভাঁড় দিবেন।
তার এমন পরিকল্পনার কথা শুনে, অনেক মানুষই তার কাছে এলেন, এটা ভেবে যে, কোনো মতে সেখানে ঢুকে গেলে, আর পয়সার অভাব হবে না। কিন্তু সেই ধনী ব্যক্তিটি কিছুতেই কাউকে দায়িত্ব দিলেন না। কারণ তার কাউকেই পছন্দ হল না।
এরপর তিনি নিজেই মন্দির নির্মাণ কাজে দেখাশোনা করতে লাগলেন। কিন্তু এত ব্যস্ততার মধ্যে তিনি এদিকে সময় দিতে পাড়েন না। তাই আবারও তিনি একজন ভালো মানুষের খোঁজ শুরু করলেন। এবারও অনেক মানুষ তার কাছে এল, কিন্তু ব্যক্তিটির কাউকেই পছন্দ হল না। আগন্তুক লোকগুলি ব্যক্তিটিকে পাগল বলে গালাগালি দিতে দিতে চলে গেল।
প্রতিদিন সেই ব্যক্তিটি মন্দিরের সামনের বিশ্রামাগারে বসে আগন্তুক মানুষদের দিকে দেখে থাকত। তার চোখ এমন কোনো ব্যাক্তিকে খুঁজছে , যে সাধারণ হবে, দায়িত্ব পরায়ণ হবে। এত মানুষের ভিড় উপেক্ষা করে, তার চোখ একজন মানুষের দিকে গেল, যার পায়ে কোনো জুতো নেই, শরীরের বস্র স্থানে স্থানে ছিঁড়ে গেছে।
এই মানুষটিকেই তার পছন্দ হল। এরপর সেই মানুষটি যাওয়ার রাস্তা ধরতেই, ধনী ব্যাক্তিটি তাকে কাছে ডেকে বললেন- “আমি তোমাকে এই বিশাল মন্দিরটির দায়িত্বভাঁড় দিতে চাই। তুমি এই মন্দিরটির দায়িত্বভাঁড় গ্রহণ করতে রাজী আছো কি নেই?” সেই লোকটি অবাক হয়ে বলল- “বাবু, আমি পড়তে জানিনা লিখতে জানিনা, কিভাবে এত সুবিশাল মন্দিরের দায়িত্বভাঁড় পালন করব বলুন।“ ধনী ব্যক্তিটি বললেন- “আমি আপনাকেই এই মন্দিরের দায়িত্ব দিতে চাই। আপনার সাধারণ স্বভাব দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। আমি দেখছিলাম, যখন আপনি মন্দির থেকে নীচে নামছিলেন, সামনে থাকা একটা পাথরে সবাই ধাক্কা খাচ্ছিল, কিন্তু কেউই সেটাকে সেখান থেকে উঠিয়ে ফেলছিল না। আমি আপনাকেই দেখলাম, পাথরটিকে সেখান থেকে সরিয়ে ফেললেন। এরপর সেখানাকার মাটিও আপনি সমান করে দিলেন। আপনার সিধে-সাধা গুনে আমি মুগ্ধ।“
সেই মানুষটি বলল- “বাবু এটা তো প্রতিটা মানুষের কর্তব্য। রাস্তায় পড়ে থাকা পাথর, ডাল, কাটা ইত্যাদি যাতে অন্য কোনো মানুষের বাঁধা ন হতে পাড়ে, যার নজরে সেই বাঁধাটি আসবে সেইই সেখান থেকে নিরাপদ জায়গায় সেটিকে রেখে দিবে।“
শুধুমাত্র একজন নাগরিক হলেও হয় না, হতে হয় একজন দায়িত্ববান নাগরিক। এমন নাগরিক হতে হবে যেন প্রত্যেকের কাজে আসতে পাড়ি। মানুষকে যতই আপনার গুনের কথা বলুন না কেন, সবথেকে বড় প্রমান হল আপনার সাধারণ মানের স্বভাব। এটিই আপনার সামনে থাকা ব্যাক্তিকে মুগ্ধ করে, এটিই আপনার সামনে থাকা ব্যাক্তিকে আপনার দিকে আকর্ষিত হতে বাধ্য করে। তাই নিজের চরিত্রের মাধুর্যতা এবং নিজের মুক্ত মনোভাব বজায় রাখুন। দেখবেন মানুষ নিজে থেকেই আপনার দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে।
পড়ুনঃ- সফল ও অসফল ব্যক্তিদের পার্থক্য
অনুপ্রেরণার ছোট গল্প-০৩
রমানাথ শিকদার। পত্নী মারা যাবার পড়, একা হয়ে গেলেন। তারও বয়স কিন্তু নেহাতও কম নয়। জীবনের ৭৫ টা বসন্ত পেড়িয়ে গেছেন তিনি। চারিদিকে জঙ্গল আর পাহাড় ঘেরা গ্রামে তার পরিবারের বাস। পরিবারের সদস্য এক চার বছরের নাতি, আর ছেলে এবং বৌমা।
বয়সের ভাঁড়ে ঠিকমত চলাচল করতে পাড়ে না রমানাথ। উঠোনের পাশেই একটি চেয়ারে দিন কাটে তার। এদিকে আবার ঠাণ্ডা এগিয়ে আসছে। রমানাথের আরও মুশকিল এবার। কারণ বৃদ্ধ শরীর, কিছুতেই ঠাণ্ডা সইতে চায় না। এইসময় সে খাবারের প্লেট থেকে খাবার পর্যন্ত ঠিক মত তুলে খেতে পাড়ে না। হাত থেকে জলের গ্লাস মাটিতে পড়ে যায়। কারণ একটাই, বার্ধক্য। হাঁটতে গেলেও তার শরীর কাঁপতে থাকে।
ঠাণ্ডা আসতেই তার এই অসুবিধা শুরু হয়ে গেল। কিন্তু বৌমার কিছুতেই শ্বশুর মশাইয়ের এই অভ্যেস পছন্দ হত না। কারণ খাবার খেতে গিয়ে রমানাথের হাত থেকে খাবার মাটিতে পড়ে যেত, জলের গ্লাস মাটিতে পড়ে গিয়ে ভেঙ্গে যেত। এই সব কিছুতেই বৌমা খুবই বিরক্ত হয়ে যায়।
রাতে বৌমা তার স্বামীর সাথে পরামর্শ করে- “তোমার বুড়ো বাবাকে নিয়ে আর কিছুতেই পাড়া যাচ্ছে না, কিছু একটা আমাদের করতেই হবে।“
“হ্যাঁ আমিও ভাবছি কিছু একটা করতেই হবে এই বুড়োর। প্রতি দিন গ্লাস আর খাবার নষ্ট করে।“
-“উফফ অসহ্য, এই বুড়োটা, মরেও না।“
এরপর রাতের পরামর্শ মত, সকাল হতেই ছেলে বাবাকে নিয়ে গিয়ে জঙ্গলের মধ্যে একটি চালা ঘড় বানিয়ে সেখানে রেখে আসে। আর তার খাবার থালা এবং গ্লাসের বদলে একটি কাঠের গ্লাস এবং স্টিলের থালা দিয়ে বলে- “যা নোংরা করার এখানে কর, আর এই যে এই গ্লাস আর থালা ধরো, এখন থেকে তোমাকে প্লেটে খাবার দেওয়া হবে না, কাঁচের গ্লাসেও আর জল দেওয়া হবে না, এগুলিতেই তোমাকে খাবার আর জল দেওয়া হবে, এবার দেখি, কেমন নষ্ট করো। উম্মম জিনিস নষ্ট করার ভূত চেপেছে মাথায়।“
রমানাথ কিছুই বলে না, শুধু এক হাত দিয়ে চোখ মুছে মাথা নীচে করে, সেই থালা আর গ্লাসের দিকে তাকিয়ে থাকে।
এভাবেই কেটে যায় কিছু দিন। একদিন রমানাথের ছেলে তার বাবা-মায়ের কাছে এসে জিজ্ঞাসা করল- “আচ্ছা মা, স্টিলের থালা, আর কাঠের গ্লাস কোথায় পাওয়া যায় গো?”
-“কেন রে, তুই আবার ওগুলো দিয়ে কি করবি?”
-“ওই যে, তোমরা যেমন দাদুকে স্টিলের থালা আর কাঠের গ্লাসে খাবার দিচ্ছ, আমাকেও তো তোমাদের সেরকম ভাবে খাবার দিতে হবে না কি? আমি বড় হলে ঠিক দাদুর মতই তোমাদের একটি ঘড় বানিয়ে দেব।“
সেই বাচ্চাটি কিছুই জানেনা যে, তার দাদুর সাথে কি ঘটছে, কিন্তু তার চোখের সামনে যা ঘটছে, সেগুলি থেকেই সে শিক্ষা গ্রহণ করার চেষ্টা করছে।
এরপর বাবা-মা কিছুক্ষণের জন্য থ হয়ে থাকেন। এরপর নিজেদের ভুল বুঝতে পেড়ে, বাবাকে আবার নিজেদের ঘড়ে নিয়ে এলেন, এরপর নিজের হাঁতে খাবারও খাইয়ে দিলেন।
এরপর সেই ছোট্ট ছেলেটি বলল- “আচ্ছা, কিছুদিন সেখানে রাখার পড় আবার নিয়ে এসে খাবারও খাইয়ে দিতে হয়? হুম্ম বুঝলাম, আমিও ঠিক এরকমই নিয়ম পালন করব।“
তাহলে বুঝলে তো বন্ধুরা। একটি নবজাতক শিক্ষা গ্রহণ করে বড়দের কাছ থেকেই। তার চোখের সামনে যা কিছু ঘটে চলেছে, তাইই সে অনুসরণ করার চেষ্টা করে থাকে। তাই ছোটদের সামনে এমন কোনো কাজ করবেন না, যা সমাজের চোখে নিন্দনীয়। আর হ্যাঁ অতি অবশ্যই বৃদ্ধ পিতামাতার যত্ন নিন। আমরা ছোট বেলায় কত বারই না তাদের কোল নোংরা করেছি, কিন্তু তাই বলে কি তারা আমাদের ফেলে দিয়েছেন? উঁহু মোটেই নয়। তাই এমন কোনো আচরণ তাদের সাথে করবেন না, যাতে তারা মানসিক এবং দৈহিক ভাবে কষ্ট পান।
Telegram group link:– CharpatraOFFICIAL
আমাদের ফেসবুক পেজ:- গল্প আর গল্প
অনুপ্রেরণার ছোট গল্প। অনুপ্রেরণা মূলক ছোট গল্প। onuprerona mulok golpo
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।