আজ থাকছে দুটি নতুন শিক্ষণীয় ছোট গল্প। আশা রাখছি এই অনুপ্রেরণার গল্প গুলি থেকে নতুন কিছু শিখতে পারবেন নতুন কিছু জানতে পাড়বেন।
নতুন শিক্ষণীয় ছোট গল্প।
গল্পঃ- ০১
রামু এবং সামু দুই বন্ধু। অভাব তাদের নিত্য সঙ্গী। তাই তারা ঠিক করে, শহরে গিয়ে খুব টাঁকা ইনকাম করবে। এরপর তারা একরাতে বাড়ি থেকে লুকিয়ে শহরে চলে আসে। সেখানে প্রায় একবছর এদিক-সেদিক কাজ করার পর তাদের হাঁতে কিছু পরিমাণ টাঁকা আসে। সেই টাঁকা দিয়ে দুইজনে ব্যাবসা শুরু করল।
কিছুদিনের মধ্যেই তাদের দুইজনেরই ব্যবসা বেশ ফুলে-ফেপে উঠতে লাগল। ব্যবসায় আর তেমন আগের মত খাটুনি কিছুই করতে হচ্ছে না। এটি দেখে সামু মনে মনে ভাবে- ব্যবসা তো ভালোই চলছে। চলছেই যখন তখন আর নীচে নামবে না, এইভাবেই চলতে থাকবে। এরপর সে ব্যবসায় আর বিশেষ মন না দিয়ে, সারাদিন ঘুমিয়ে আর এদিকওদিক ঘুরতেই কাটিয়ে দিতে শুরু করে। কারণ ব্যবসা নিজে থেকেই ভালো চলছে, দেখাশোনা করার জন্য লোকজন তো আছেই।
কিন্তু ব্যবসা ছেড়ে এদিকওদিক ঘোরার মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই তার ব্যবসার গতি থেমে গেল, ব্যবসা বাড়ার পরিবর্তে তার লোকসান হতে লাগল। সে হিসেব কষে দেখে, এই কয়েকদিনের মধ্যেই তার বিশাল পরিমাণ লোকসান হয়ে গেছে। তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। সে ভাবল হয়ত বাজার ভালো নেই। এরপর সে রামুর ব্যবসার খোঁজ নিল এবং জানতে পাড়ল যে, তার ব্যবসা বেশ লাভেই চলছে। এরপর সে ঠিক করে, রামুর সাথে দেখা করবে।
পরেরদিন সকালে সে রামুর কাছে এসে হাজির হয়। অনেকদিন পর বন্ধুকে দেখে রামু খুবই আনন্দিত হল। সে সামুর আদরযত্ন করতে লেগে পড়ল। সামু রামুকে বলে, তারা একই জিনিসের ব্যবসা করছে, কিন্তু সে কিছুতেই বুঝতে পাড়ছে না, কেন তার এত বিপুল পরিমাণ লোকসান হচ্ছে! সে জানতে চায় রামু এমন কি করেছে যে এই খারাপ বাজারেও তার ব্যবসা রমরমিয়ে চলছে।
এরপর রামু বলে- বন্ধু আমি কিছুই করিনি আমি শুধু আমার ভুল গুলি শোধরানোর চেষ্টা করেছি, আর আমার সমকক্ষদের করা ভুল গুলি দেখে শিক্ষা গ্রহণ করার চেষ্টা করেছি, যাতে আমাকে সেই ভুল গুলির কবলে পড়তে না হয়। আর তাই যখনই অন্য মানুষের সাথে হওয়া সমস্যাটি আমার কাছে এসে যায়, আমি আরামেই তার মোকাবিলা করতে পাড়ি, কারণ আমি আগে থেকেই সমস্যাটি সম্পর্কে জেনে ফেলেছি। ব্যাস এতটুকুই আমি করেছি, এবং করেই যাচ্ছি। এর থেকে নতুন আর কিছুই করিনি বন্ধু।
রামুর কথা শুনে সামু তার নিজের ভুল বুঝতে পাড়ল। সে বুঝতে পাড়ল যে, সফলতার মোহমায়ায় এসে সে দিকভ্রান্ত হয়ে পড়েছে। সে সফলতা দেখে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়েছে, যার ফলে সে নতুন কিছু অর্জন করা ছেড়ে দিয়েছে। কারণ সে জানে যে সে পাড়বে, কিন্তু তার অজান্তেই জগতে যে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে সে সম্পর্কে সে কিছুই জানে না। এরপর সামু ঠিক করে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস ছেড়ে তাকেও শিখেই যেতে হবে, তবেই সে সফল হবে।
পড়ুনঃ- ইতিহাসের কিছু খারাপ শাস্তির প্রথা।
গল্প- ০২
প্রতি মাসের চতুর্থ রবিবার অরুন, পাড়ার সেলুনের দোকানে চুল কাটতে যায়। সেখানে নানান জনের সাথে দেশ-বিদেশ, রাজনীতি, সিনেমা ইত্যাদি নিয়ে কথা হয়। সেদিন কিভাবে যেন, ঈশ্বরের কথা চলে এল। ঈশ্বর নিয়ে যে যার বক্তব্য পেশ করেই যাচ্ছে।
এদিকে নাপিত গলা ঝেড়ে বললেন- “দেখুন, দাদা আপনারা যেই যা বলুন না কেন, আপনাদের মতো আমি ঈশ্বরে বিশ্বাসী নই।“
“আরে তুমি এরকম কেন বলছ?” অরুন জিজ্ঞাসা করল।
এরপর নাপিত বলতে শুরু করল- “এই যে পৃথিবীতে মানুষের এত দুঃখ, এত কঠিন কঠিন অসুখ, কারও আবার একবেলারই খাবার জোটে না, কারও আবার ঘুমানোর মত জায়গাটুকুও নেই। কেউই অনাথ, কেউ ভিক্ষা করে। যান তো গিয়ে দেখে আসুন, আমাদের পাড়ার পাশের গলিতে দেখবেন সেখানকার মানুষেরা কত কষ্টে দিন কাটাচ্ছে! ঈশ্বর যদি থেকেই থাকে, তাহলে মানুষের এত কষ্ট কেন। তিনি কি মানুষের দুঃখ দেখতে পান না? আসল কথা হল পৃথিবীতে ঈশ্বরে নামের কিছুই নেই। বলুন আপনিই আছে ঈশ্বর?”
পড়ুনঃ- ইউনিভার্সিটি প্রেমের গল্প
কথাটি শুনে অরুন খুব খারাপ পেল। কিন্তু কি আর করবে সে, সে যে কিছুই প্রমান দিতে পাড়বে না। তাই সে কিছুক্ষণ পর চুল কেটে রাস্তায় বাড়ি যাওয়ার জন্য নেমে পড়ল। সে রাস্তায় নামতেই দেখল, পাগলের মত ঝাঁকরা-ঝাঁকরা চুল-দাঁড়ি ওয়ালা একটি লোক হেঁটে আসছে, এটি দেখে অরুন আবার দৌড়ে দোকানের ভিতরে চলে গেল।
সে দোকানে গিয়েই চেঁচিয়ে বলতে লাগল- “তোমরা কি জানো এই পৃথিবীতে কোনো নাপিতই নেই।“
নাপিত বলল- “এ ভাই এ, আপনার কি মাথা খারাপ হল নাকি? আমি সাক্ষাৎ আপনার সামনে দাঁড়িয়ে আছি, আর আপনি বলছেন পৃথিবীতে কোনো নাপিত নেই?”
অরুন আবার বলল- “না পৃথিবীতে কোনো নাপিত নেই, যদি পৃথিবীতে নাপিত থাকত, তাহলে কি আর মানুষের এত বড় বড় চুলদাড়ি হত? ওই যে সামনের লোকটিকে দেখ তার কত বড় বড় চুলদাড়ি। পৃথিবীতে নাপিত থাকলে কি আর এরকমটি হত?”
নাপিত বলল- “আরে ভাই, মানুষ আমাদের কাছে আসলে তবেই না আমরা চুলদাড়ি কেটে দিব।“
অরুন বলল- “ঠিক একদম ঠিক, এই কথাটাই শুনতে চেয়েছিলাম। যেমন ভাবে তোমার কাছে কেউ না এলে তুমি চুলদাড়ি কেটে দিতে পাড়বে না, ঠিক সেভাবেই ঈশ্বরের কাছে না গেলে তিনি কিভাবে তোমার দুঃখ কষ্ট দূর করবেন? এই পৃথিবীতে ঈশ্বর আছেন, কিন্তু আমরা তাকে খোঁজার চেষ্টা করিনা, আর তাই আমাদের মধ্যে এত দুঃখকষ্ট।
আশা করছি এই নতুন শিক্ষণীয় ছোট গল্প দুটি ভালো লেগেছে।
যদি লেখালেখি করা তোমার প্যাশন হয়ে থাকে, WhatsApp-এ আমাদের গল্প পাঠাও – 6296 096 634 এই নাম্বারে। অথবা আমাদের পেজের ম্যাসেঞ্জারে।
নতুন শিক্ষণীয় ছোট গল্প। মোটিভেশনাল গল্প। top 2 life-changing sikhnio golpo. best bangla motivational story শিক্ষণীয় গল্প
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।