আজ আমরা ইতিহাসের কিছু খারাপ শাস্তির প্রথা সম্পর্কে জানব। শরীরের লোম খাঁড়া করে দেওয়ার মত এই শাস্তিদানের প্রথা গুলি খুবই হৃদয় বিদারক। চমকে দেওয়ার মত তথ্য। নিষ্ঠুর শাস্তিদানের প্রথা।

প্রত্যেক ভুল কাজের জন্য সাঁজা বা শাস্তিদানের প্রথা নতুন কিছু নয়, সুপ্রাচীন কাল থেকেই ভিন্ন ভিন্ন অপরাধের জন্য ভিন্ন ভিন্ন শাস্তিদানের রেওয়াজ রয়েছে। আবার এই শাস্তিদানের প্রথা গুলির মধ্যে কিছু প্রথা এমনও রয়েছে, যেগুলি খুবই মর্মাহত। চলুন জেনে নিই এরকমই ইতিহাসের কিছু খারাপ শাস্তির প্রথা।

সতর্কবার্তাঃ- গ্রাফিক কন্টেন্ট রয়েছে। অনুগ্রহ করে নিজ দায়িত্বে পড়ুন

ইতিহাসের কিছু খারাপ শাস্তির প্রথা:-

Ling-chi:-

নামটি শুনে হয়ত অবশ্যই বুঝে গেছেন এই সাঁজাটি কোথাকার হতে পাড়ে। বিশ্বের সবচেয়ে নিষ্ঠুর এই শাস্তিটি চিনে দেওয়া হত। আনুমানিক দশম শতাব্দীতে চিনারা এই শাস্তি প্রচলন ঘটিয়েছিল বলে মনে করা হয়। এই সাঁজায় অপরাধীকে প্রথমে তার শরীর থেকে সব জামাকাপড় খুলে নেওয়া হত এরপর তাকে একটি টেবিলের উপর বেঁধে দেওয়া হত। এরপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কেটে দেওয়া হত।

এরফলে অপরাধী যন্ত্রণায় প্রচুর চিৎকার করত। অপরাধী যতই চিৎকার করত, দণ্ডদাতারা আরও বেশি অত্যাচার চালাতেন। অপরাধীর পুরো শরীরে জায়গায়-জায়গায় কেটে দেওয়ার পড় অবশেষে অপরাধীর হাত-পা কেটে দেওয়া হত। সবশেষে বুকের উপর ছুড়ি বসিয়ে কেটে এই সাঁজার সমাপ্তি ঘোষণা হত।

এইভাবেই নির্মমভাবে অপরাধীকে হত্যা করা হত, প্রাচীন চিনে।

কিছু খারাপ শাস্তির প্রথা LING CHI চমকে দেওয়ার মত তথ্য
ইতিহাসের কিছু খারাপ শাস্তির প্রথা LING-CHI চমকে দেওয়ার মত তথ্য

হাতির পায়ের তলায় পিষে সাঁজা দেওয়ার প্রথাঃ-

এমনিতেই হাতির পায়ের তলায় পিষে মারা যাওয়ার ঘটনা আপনি নিশ্চয়ই শুনেছেন, কিন্তু একসময় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশেই, অপরাধীকে হাতির পায়ের তলায় পিষে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার প্রথা প্রচলিত ছিল। এই বিশেষ কাজটির জন্য আগে থেকেই কিছু পোষ মানানো হাতিকে স্পেশাল ট্রেনিং দেওয়া হত।

অপরাধীকে চারদেওয়ালের মধ্যে হাতির সামনে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেওয়া হত, যদি হাতিটি কোনোরূপ প্রতিক্রিয়া না দেখায় তাহলে হাতিটিকে বাইরে থেকে উত্তপ্ত করা হত, এরপর হাতিটি চটে গিয়ে সামনে থাকা অপরাধীর উপর রাগ প্রকাশ করা শুরু করত। হাতি একসময় তার পায়ের তলায় সেই অপরাধীকে পিষে দিয়ে হত্যা করে ফেলত।

গরম জল বা তেলঃ-

আমাদের শরীরে একটু গরম জল বা গরম তেলের ছিটে পড়লেই আমরা যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকি, কিন্তু আজ থেকে প্রায় কয়েক হাজার বছর আগে এশিয়া ও ইংল্যান্ডের কিছু অঞ্চলে অপরাধীকে ধরে একটি বিশাল গরম জল বা গরম তেলের পাত্রে নিক্ষেপ করা হত। এই পাত্র গুলি আগুনের উপর বসানো থাকত। বিশাল পাত্রের নীচে আগুন থাকায় পাত্রে থাকা জল বা তেল ফুটতে থাকে, এবং অপরাধী যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে।

এই সাঁজায় অপরাধীর অবস্থা প্রায় সেদ্ধ করা বস্তুর মত হয়ে যেত।

পড়ুনঃ-পৃথিবীর অমীমাংসিত রহস্য

আগুনে ফ্রাই বানানো সাঁজাঃ-

এই সাঁজায় অপরাধীকে একটি রড বা শক্ত কিছুর সাথে বেঁধে দেওয়া হত, এরপর যেমন ভাবে দুটি লাঠির মাঝখানে চিকেন রেখে পোড়ানো হয় বা ফ্রাই করা হয়, ঠিক সেভাবেই অপরাধীকে ফ্রাই বানানোর প্রক্রিয়া চলত। অপরাধীর ঠিক নীচে থাকত গনগনে কয়লার আগুন। সেই আগুনে ঝলসে গিয়ে অপরাধীর মৃত্যু হত।

তাহলে ভেবে দেখেছেন, অপরাধের জন্য কতটা নির্মম ভাবে হত্যা করা হত।

গিলোটিনঃ-

যারা ইতিহাস বই ভালো ভাবে পড়েছেন তারা নিশ্চয়ই এই যন্ত্রটির কথা শুনে থাকবেন। এই যন্ত্রের মাধ্যমে হত্যা করার জন্য অপরাধীকে একটি তক্তা বা সেইজাতীয় কিছুর উপর হাত বেঁধে শুয়ে দেওয়া হত, এরপর তার গলা যন্ত্রের মুখে রাখা হত। এই যন্ত্রটির উপড়ে একটি ধারালো এবং বড় ব্লেড লাগানো থাকে, হঠাৎ করেই ব্লেডের দড়ি ছেড়ে দেওয়া হত, উপর থেকে প্রচণ্ড গতিতে গলার উপর পড়ে ব্লেড দিয়ে শরীর থেকে মাথা আলাদা করে দেওয়া হত, গলা দিয়ে পিচকারীর মত রক্ত চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ত।

এই হত্যালীলা যারা দেখত তারা অনেকেই পরবর্তীতে নানান সমস্যায় পড়ে যান, সবসময় চোখের সামনে সেই বীভৎস চিত্র উঠে আসে এবং অনেকেই মানসিক সমস্যায় ভুগেন।

GUILLOTINE চমকে দেওয়ার মত তথ্য
GUILLOTINE চমকে দেওয়ার মত তথ্য ছবিঃ Wikipedia ইতিহাসের ভয়ানক কিছু শাস্তির নিয়ম

শরীর ভেদনঃ-

বর্তমান দিনে সরকারের বিরুদ্ধে বললেও তেমন কিছু সাঁজা হয়না, কিন্তু এমন এক সময় ছিল যেখানে সরকার বা দেশের রাজার বিরুদ্ধে কথা বললেই রাজদ্রোহিতার তকমা লেগে যেত, এবং এর শাস্তি হল মৃত্যুদণ্ড। উঁহু তবে এই মৃত্যুদণ্ড সাধারণ মৃত্যুদণ্ড নয়, খুবই ভয়ানক ভাবে হত্যা করা হত অপরাধীর।

প্রথমেই একটি সুচালো মাথা যুক্ত এবং লম্বা বস্তু বা বাঁশ বা রড জোগাড় করা হত, অপরাধীর হাত বেঁধে দিয়ে এরপর অপরাধীর পায়ু পথ দিয়ে সেটি প্রবেশ করে মুখ দিয়ে বেড় করে দেওয়া হত। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে অপরাধীকে সাঁজা দেওয়ার জন্য সেই সূচালো বাঁশ বা রডটিকে মাটিতে শক্ত ভাবে পুতে রাখা হত, এরপর অপরাধীকে ধরে উপড়ে উঠানো হত এবং পায়ু পথের সোজাসুজি সেই সূচালো বাঁশটির মাথাটি রেখে ছেড়ে দেওয়া হত। শরীরের ভাঁড়ে সূচালো বস্তুটি শরীরের অভ্যন্তরভাগ ভেদ করে মুখ দিয়ে বেড়িয়ে আসত, কাতরাতে কাতরাতে অপরাধীর মৃত্যু হত। 

শরীর থেকে চামড়া আলাদা করে শাস্তিঃ-

আপনি পাড়ার অলিগলি বা বাজারে কাউকে ঝগড়া করতে দেখলে হয়ত কোনো সময় নিশ্চয়ই বলতে শুনেছেন- “আমাদের পাড়ায় আসিস তোর চামড়া খুলে নিব” কিন্তু সত্যি কি মানুষের চামড়া খুলে নেওয়া যায়। কিন্তু এরকমই একটি শাস্তির প্রথা প্রচলিত ছিল প্রাচীন মেসোপটেমিয়াতে। মুরগী বা ছাগলের শরীর থেকে যেভাবে চামড়া খুলে নেওয়া হয় ঠিক একই ভাবে মানুষের চামড়াও খুলে নেওয়া হত।

প্রবল যন্ত্রণায় ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হত অপরাধীর।

পড়ুনঃ-মজার সাইকোলজি হ্যাক

হাত-পা ছিঁড়ে দেওয়াঃ-

কয়েকদিন আগেই একটা টিভি শো-তে world’s strongest man নামে একটি অনুষ্ঠান হচ্ছিল। যেখানে দেখিয়েছিল, হাত-পায়ে দড়ি বেঁধে সেই দড়ি দিয়ে চারটি বাইক দিয়ে একটি লোককে চারদিকে টানা হচ্ছে, এমতাবস্থায় তার হাত পা ছিঁড়ে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা হয়নি। খুজলে ইউটিউবে ভিডিওটি পেতে পাড়েন।

 তবে সে যাই হোক আসল আলোচনায় আসি। এই শাস্তির ক্ষেত্রে অপরাধীর হাত-পায়ে চারটি দড়ি বেঁধে দেওয়া হত এরপর চারদিক থেকে ঘোড়া বা অন্য কিছুদিয়ে সেই ব্যক্তিকে টানা হত, এই টানার প্রক্রিয়া ততক্ষণ পর্যন্ত চলত যতক্ষণ না পর্যন্ত অপরাধীর হাত পা ছিঁড়ে যায়, আর হাত পা ছিঁড়ে গেলেই সঙ্গে সঙ্গে অপরাধীর মৃত্যু হত।

ইতিহাসের ভয়ানক কিছু শাস্তির নিয়ম drawn and quartered
ইতিহাসের ভয়ানক কিছু শাস্তির নিয়ম drawn and quartered
<

নিজ জাতির বাইরে বিবাহের শাস্তি:-

ধরুন রাস্তায় চলতে কোনো মেয়েকে/ছেলেকে আপনার পছন্দ হল, এরপর প্রেমে পড়লেন, অবশেষে বিবাহ হয়ে গেল, একটু বাবা-মা পরিবারের গালাগালি ছাড়া আর বিশেষ কোনো শাস্তি আপনাদের দেওয়া হল না। কিন্তু ফরাসি বিপ্লবের সময় এই পরিস্থিতি একদমই ভিন্ন ছিল। আমরা জানি যে, প্রাচীন কালে জাতিভেদ বা ধর্ম বিষয়টা খুবই সংবেদনশীল ছিল।

পরিবারের অমতে বিবাহ করা কোনো ছেলে মেয়েকে ধরে নিয়ে এসে জবরদস্তি তাদের শরীর থেকে সমস্ত জামাকাপড় মাঠ ভর্তি মানুষের সামনে খুলে নেওয়া হত, এরপর তাদের পালিয়ে যেতে বলা হত, কিন্তু পিছন থেকে সৈনিকরা তাদের ধাওয়া করত, এরপর তলওয়ার বা বর্শা দিয়ে নির্মম ভাবে প্রেমিক যুগলকে হত্যা করা হত।

শরীরের মধ্যভাগ বরাবর কেটে দেওয়াঃ-

এই সাঁজায় দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির হাত বেঁধে দিয়ে শরীর থেকে সমস্ত বস্ত্র খুলে নেওয়া হত। এরপর তাকে উল্টো করে কোনো খুঁটিতে দুই পা ফাঁকা করে বেঁধে দেওয়া হত, এরপর যেমন ভাবে কড়াত দিয়ে ঘষে ঘষে গাছ কাঁটা হয় ঠিক সেভাবেই ধারালো কিছু অস্ত্র দিয়ে বা কড়াত দিয়ে আসামীর মাঝ বরাবর কাঁটা হত, তবে পুরোপুরি নয়, অর্ধেক কেটে আসামীকে ছেড়ে দেওয়া হত। প্রবল যন্ত্রণায় ঘটনাস্থলেই মারা যেত অপরাধী।

স্ত্রীপুরুষ নির্বিশেষে এরকম শাস্তি দেওয়ার প্রথা প্রচলিত ছিল।

ভয়ানক কিছু শাস্তির নিয়ম
ইতিহাসের ভয়ানক কিছু শাস্তির নিয়ম image

কুমীরের পুকুরে ছুঁড়ে দেওয়াঃ-

আমি সাধারণ জোঁকের ভয়ে জলে নেমে সাঁতার পর্যন্ত আজ অবধি শিখতে পারলাম না, কুমিরের কথা তো দূরে থাক। মধ্যযুগে এরকম একটি শাস্তির প্রথা প্রচলিত ছিল, যেখানে অপরাধীকে কুমীর ভর্তি একটি জলাশয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হত। খাবার পেয়ে কুমীর গুলি সেই অপরাধীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ত এবং কয়েক মিনিটেই আস্ত একটা মানুষকে কড়মড় করে চিবিয়ে খেয়ে শেষ করে দিত কুমীরের দল।

এই ছিল ইতিহাসের কিছু খারাপ শাস্তির প্রথা (cruel punishment in the history).

লেখাটি অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে তাই আজ এখানেই ইতি টানছি। এগুলি ছাড়াও আরও অনেক নিষ্ঠুর শাস্তি দানের প্রথা প্রচলিত ছিল, যেগুলি এখানে আলোচনা করা সম্ভব নয়। আশা করছি বুঝেছেন আমি কি বলতে চাইছি। দেখা হচ্ছে নতুন আরেকটি ব্লগে। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। আর হ্যাঁ প্রতিদিনের আপডেটের জন্য আমাদের অবাক বিশ্ব ফেসবুক পেজ তো রয়েছেই।

আমাদের গল্প পাঠাতে চাইলে যোগাযোগ করুন পেজের ম্যাসেঞ্জারে অথবা নীচের লেখা প্রকাশ করার বোতামে ক্লিক করুন।

ধন্যবাদ।  

ইতিহাসের কিছু খারাপ শাস্তির প্রথা cruel punishment in the history. নিষ্ঠুর শাস্তি দানের প্রথা চমকে দেওয়া মত তথ্য

Spread the love

Leave a Reply